4013
Published on সেপ্টেম্বর 15, 2019দেশের জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস ধরে রাখার জন্য আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগের প্রতি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে। তারা মনে করে কেবল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই তারা কিছু পায়। এই আস্থা ও বিশ্বাস ধরে রাখতে নেতাকর্মীদের সচেতন থাকতে হবে। জনগণের আস্থায় যেন ফাটল না ধরে সেজন্য তাদের সজাগ থাকতে হবে। মানুষের পাশে থেকে তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে হবে।
পাশাপাশি দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন। নেতাকর্মীদের দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।
দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। ইনশাআল্লাহ এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে, কেউ আর ব্যাহত করতে পারবে না। জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ে উঠবেই।
গতকাল শনিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সূচনা বক্তব্যে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। যথাসময়ে সম্মেলনের মাধ্যমে দলকে গতিশীল রাখার জন্য নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান আওয়ামী লীগ প্রধান। তিনি বলেন, নিয়মিত দলের সম্মেলন হবে। এ জন্য সম্মেলনের প্রস্তুতি নিতে হবে। তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত সম্মেলনের মাধ্যমে দলকে গড়ে তুলতে হবে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন আগামী ২০-২১ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের সকল অর্জনের অগ্রবর্তী দল। দেশের সব অর্জনের পেছনে এই দলের অবদান রয়েছে। জাতির পিতার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগই দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে স্বাধীনতা লাভ করেছে। মানুষকে শোষণ ও বঞ্চনার হাত থেকে রক্ষা করতেই জাতির পিতা এদেশ স্বাধীন করেছেন।
যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গঠনে বঙ্গবন্ধু সরকারের পদক্ষেপগুলো তুলে ধরে তিনি বলেন, মাত্র সাড়ে তিন বছরে দেশকে গড়ে তুলেছিলেন বঙ্গবন্ধু। কিন্তু জাতির দুর্ভাগ্য যে, যখনই এদেশ এগিয়ে যেতে শুরু করেছিল, ঠিক তখনই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়।
পঁচাত্তর-পরবর্তী সামরিক স্বৈরশাসক এবং ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই এ দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন শুরু হয়। যে দল সংগ্রাম করে, ত্যাগ স্বীকার করে, মানুষের কল্যাণ করে এবং যাদের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়, তারা ক্ষমতায় থাকলেই মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। মানুষ কিছু পায়। সংবিধান লঙ্ঘনের মাধ্যমে যারা অবৈধভাবে ক্ষমতায় আসে তারা দেশের উন্নয়ন করে না। দেশের মানুষের নয়, তারা কেবল নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন করে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার দারিদ্র্যের হার ২১ ভাগে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ১ ভাগে উন্নীত হয়েছে। মূল্যস্টম্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছে। এর সুফল দেশের মানুষ পাচ্ছে, দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হচ্ছে। একদম তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করাই সরকারের লক্ষ্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগই একমাত্র রাজনৈতিক দল, যাদের সুনির্দিষ্ট অর্থনৈতিক নীতিমালা রয়েছে। শুধু সরকারে থাকতে নয়, বিরোধী দলে থাকতেও অর্থনৈতিক নীতিমালা তৈরি করেছি, যাতে ছিল আগামীতে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কী কী করব, দেশকে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাব। ক্ষমতায় এসে সেই পরিকল্পনা অনুযায়ীই দেশকে আমরা উন্নয়ন ও অগ্রগতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেয়েছে। সেটাকে আরও এগিয়ে নিতে হবে। ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালিত হবে। সেই সময়ের আগেই দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার লক্ষ্য নিয়ে সরকার কাজ করছে। ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে পরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে তার আগেই এটা সম্ভব হবে।
প্রধানমন্ত্রীর সূচনা বক্তব্যের পর তার সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন আগামী ২০-২১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে মেয়াদ শেষে অক্টোবরে নির্ধারিত সময় এই সম্মেলন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হলেও এখন তা দু'মাস পেছানো হয়েছে। বৈঠক শেষে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন। আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৬ সালের অক্টোবরে।
বৈঠকে জাতীয় সম্মেলনের আগে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের দেশব্যাপী সাংগঠনিক সফরের সিদ্ধান্তও হয়েছে। এ ছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ সব জেলা-উপজেলা কমিটির সম্মেলনও শেষ করার তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী।
বৈঠকে নেতাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমার বিদায়ের সময় হয়েছে। নতুন নেতৃত্ব ঠিক করুন।' তবে আওয়ামী লীগের নেতারা এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেছেন।
এর আগে ২৮ সেপ্টেম্বর নিজের জন্মদিনের কর্মসূচি গ্রহণের প্রসঙ্গ উঠলে তাতে আপত্তির কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানান, নিজের জন্মদিন পালনের পক্ষপাতী নন তিনি। তা ছাড়া জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগদানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যেতে হবে তাকে। বেশ কয়েকদিন দেশে থাকতে পারবেন না। তবে বাংলাদেশ এখন ডিজিটাল। দূরে থাকলেও এখন আর সেই দূর নেই। দূরে থাকলেও তিনি আওয়ামী লীগ অফিসের কার্যক্রম দেখতে পারেন। বিদেশে বসেই ই-ফাইলিংয়ের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সরকারি কর্মকাণ্ডও সম্পন্ন করেন। দেশের সবার হাতে হাতে এখন মোবাইল টেলিফোন।
এছাড়া বৈঠকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণসহ অন্য সাংগঠনিক বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়। দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক-সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিষয়েও আলোচনা হয়েছে বৈঠকে।