6278
Published on আগস্ট 20, 2019২০২৩ সালের মধ্যে সারাদেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘মিড ডে’ মিল চালুর লক্ষ্য নিয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ‘জাতীয় স্কুল মিল নীতি-২০১৯’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে (পিএমও) অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পরে, সচিবালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে মন্ত্রী পরিষদ সচিব মো. শফিউল আলম বলেন, ‘বিভিন্ন স্থানে যে মিড ডে মিল চালু হয়েছে পাইলট ভিত্তিতে, তাকে কিভাবে সমন্বিতভাবে সারাদেশে ছড়ানো যায় তার জন্য এই নীতিমালাটি করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, এই আইনের খসড়া ২ এর (৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জাতীয় স্কুল মিল কর্মসূচি বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষ নামে একটি কর্তৃপক্ষ থাকবে। এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে একটি সেল বা ইউনিট কাজ করবে। কার্যক্রমের পরিধি সম্প্রসারণে প্রয়োজনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি পৃথক জাতীয় স্কুল মিল কর্মসূচি কর্তৃপক্ষ (ন্যাশনাল স্কুল মিল অথরিটি) গঠন করার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে, এটি সরকারের বিবেচনায় থাকবে।
শফিউল আলম বলেন, এখানে একটি প্রস্তাব করা হয়েছে সরকার মনোনীত উপযুক্ত ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে ‘স্কুল মিল উপদেষ্টা কমিটি’ থাকবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সরকার কর্তৃক নির্ধারিত কোন বিশিষ্ট ব্যক্তির সভাপতিত্বে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য এই কমিটিকে নিয়োগ প্রদান করবে। স্কুল মিল কমিটির প্রধান নির্বাহী এই কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
তিনি বলেন, স্কুল মিল কর্মসূচির কার্যক্রম, ধরন ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে কতগুলো বিধিবিধান দেয়া হয়েছে। যেমন ৩ এর (১) ধারায় বলা হয়েছে প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় ক্যালরীর ন্যূনতম ৩০ ভাগ স্কুল মিল থেকে আসা নিশ্চিত করা হবে। যা প্রাথমিক এবং প্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ৩ থেকে ১২ বছর বয়েসি ছেলে ও মেয়ে শিশুদের জন্য প্রযোজ্য হবে।
সচিব বলেন, এই বয়েসি স্কুল শিক্ষার্থীদের জন্য ন্যূনতম মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট’র ৫০ শতাংশ স্কুল থেকে আসা নিশ্চিত করা হবে। খাদ্যের বৈচিত্র নিশ্চিত করার (মিনিমাম ডায়টরি ডাইভার্সিটি) জন্য ১০টি খাদ্যগোষ্ঠী বিচেনায় নিয়ে তন্মেধ্যে ৪টি খাদ্যগোষ্ঠী নির্বাচন করা হবে এবং তিন পর্যায়ে উপজেলা, জেলা এবং বিভাগ পর্যায়ে স্কুল মিল কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার জন্য যথাক্রমে উপ-পরিচালক প্রাথমিক শিক্ষা, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, সহকারী পরিচালক উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা এবং উপজেলা শিক্ষা অফিসার প্রমুখ সম্পৃক্ত থাকবেন। উপজেলা চেয়ারম্যান এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার, পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে পার্বত্য জেলা পরিষদ, স্থানীয় প্রশাসনের অংশ হিসেবে কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত থাকবে।
ব্রিফিংয়ে উপস্থিত প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) গিয়াস উদ্দিন আহমেদ জানান, মিড ডে মিলের আওতায় বর্তমানে সরকার তিনটি উপজেলায় রান্না করে খাবার পরিবেশন করছে। ১০৪টি উপজেলায় বিস্কুট খাওয়ানে হচ্ছে। যার মধ্যে ৯৩টি উপজেলায় সরকার অর্থায়ন করছে।
তিনি বলেন, এ সময় তাদের বিভিন্ন জরিপ অনুযায়ী মিড ডে মিল চালু এলাকায় বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী বৃদ্ধি, ঝরেপড়া কমে আসা এবং শিশুদের পুষ্টি বৃদ্ধিতে বিভিন্ন সাফল্যের পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বিস্কুট প্রতিদিন বাচ্চারা খেতে না চাওয়ায় আমরা বিস্কুট, কলা এবং ডিম এই তিনটি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পরিবেশনের উদ্যোগ নিয়েছি।
এই কর্মকর্তা জানান, সারাদেশে মিড ডে মিল চালু করতে হলে এবং সেক্ষেত্রে কেবল বিস্কুট সরবরাহ সরকারকে বছরে ২ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা খরচ হবে (৯ টাকা হারে)। আর ৫দিন রান্না করা খাবার দৈনিক শিক্ষার্থী প্রতি ১৬ থেকে ১৮ টাকা হারে) এবং একদিন বিস্কুট দেয়া হয় তাহলে খরচ ৫ হাজার ৫৬০ কোটি ৮০ লাখ টাকা এবং বিস্কুট এবং ডিম, কলা ও রুটি দেয়া হলে ৭ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা (২৫ টাকা হারে)।
অদূর ভবিষ্যতে সারাদেশের ৬৬ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক কোটি ৪০ লাখ শিক্ষার্থীর জন্য মিড ডে মিল চালুতে জন্য সরকার পিপিপি’র ভিত্তিতে প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিচ্ছে বলেও তিনি জানান। একইসঙ্গে বর্তমানে ১০৪টি উপজেলায় ১৫ হাজার ৩৪৯টি স্কুলের ৩০ লাখ শিক্ষার্থীকে এই মিডডে মিল কর্মসূটির আওতায় আনা হয়েছে। এ বছরের জন্য এই বাজেট ৪৭৪ কোটি টাকা এবং ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রকল্পটির মেয়াদ রয়েছে। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হবে।