2367
Published on জুন 15, 2019প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
শুভ সকাল। আজকের এই সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
আপনারা জানেন, গত ১৩ জুন জাতীয় সংসদে মাননীয় অর্থমন্ত্রী ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ ৫ লক্ষ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। মাননীয় অর্থমন্ত্রীর অসুস্থতার কারণে প্রথমবারের মতো গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমপি বাজেট উপস্থাপনের মাধ্যমে দক্ষ নেতৃত্বের এক অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। দেশের সর্বস্তরের জনগণ ও বিশেষজ্ঞ মহল এই বাজেটকে স্বাগত জানিয়েছেন।
আজকের এই সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যুগোপযোগী ও জনকল্যাণমুখী বাজেট প্রণয়নের জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মানননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এমপি, মাননীয় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামালসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জ্ঞাপন করছি।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে- এবারের বাজেট জনকল্যাণমুখী বাজেট। সাফল্য আর অগ্রগতির নবতর সম্ভাবনা সঞ্চারি বাজেট। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্মিত উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের ভিত্তিমূলকে আরও সুদৃঢ় ও গতিশীল করণে নব-উদ্যোম সৃষ্টিকারী বাজেট। যুগান্তকারী পদক্ষেপের সমাহারে পরিপুষ্ট এই বাজেট।
২০২০ সাল সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর জন্মশতবার্ষিকী। ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর স্বপ্নের সোনার বাংলা এবং আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের লক্ষে চলমান অগ্রযাত্রাকে দুর্বার গতিতে এগিয়ে নেওয়ার বাজেট। গত নির্বাচনের আগে ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ শিরোনামে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করা হয়। এ বাজেটে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ঘোষণাপত্র ও নির্বাচনী ইশতেহারের প্রতিফলন ঘটেছে।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
২০০৯ সাল থেকে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ১১টি বাজেট ঘোষণা করেছে। বিগত দশটি বাজেট ও কর্মপরিকল্পনার ফসল আজকের বাংলাদেশের অর্থনীতির সুদৃঢ় ভিত্তি। সকলেই মানবেন যে কোন মানদণ্ডে বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতি একটি শক্তিশালী কাঠামোতে রূপ লাভ করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা বাংলাদেশকে ‘উন্নয়নের রোল মডেল’ হিসেবে বিবেচনা করে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, মেট্রোরেল, পারমানবিক বিদ্যুৎ, কর্ণফুলী টানেল, এলএনজি টার্মিনালের মতো দুঃসাহসী প্রকল্প বাস্তবায়ন জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের আর্থিক সক্ষমতা প্রমাণ করে। ২০০৮ সালের বাজেট ছিল মাত্র ৮৭ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা পরবর্তীতে যা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের ধারাবাহিক সফলতার ফলে আজ তা ৫ লক্ষ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।
সাংবাদিক বন্ধুগণ,
আমাদের মনে রাখতে হবে- ১৯৭১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা শুধু একটি ভুখণ্ডই স্বাধীন করেনি। বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির মাধ্যমে সোনার বাংলা তথা উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্নও দেখেছিলেন।
১৯৭২ সালে সদ্য স্বাধীন-বাংলাদেশের শূন্য-কোষাগার নিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু’র সরকার স্বাধীন বাংলাদেশের ৭৮৬ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছিলেন। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ মাত্র সাড়ে তিন বছরে শূন্য কোষাগার ও যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশকে জাতির পিতা একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক কাঠামোতে পৌঁছে দিয়েছিলেন। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের ইতিহাসে যা ছিল নজিরবিহীন ও রেকর্ড সৃষ্টিকারী ঘটনা।
বিশ্বব্যাংকের হিসাব মতে- ১৯৭২-৭৫ সালে বাংলাদেশের জাতীয় আয় বৃদ্ধির বার্ষিক হার ছিল গড়ে শতকরা ৫ ভাগ। বাংলাদেশ সরকারের পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসেবে এ সময়ে আয় বৃদ্ধির বার্ষিক হার ছিলো শতকরা ৭ ভাগ। ১৯৭৬-১৯৮০ সালে (মুশতাক-জিয়া আমল) জাতীয় আয় বৃদ্ধির হার কমে দাঁড়ায় ৪.৭ ভাগ এবং ১৯৮০-৮১ হতে ১৯৮৫-৮৬ সালে (জিয়া-এরশাদ আমল) জাতীয় আয় বৃদ্ধির হার আরও হ্রাস পেয়ে মাত্র ৩.৬ ভাগে দাঁড়ায়।
জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ আরও অনেক আগেই বিশে^র বুকে উন্নত সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত হতো। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘৃণ্য ঘাতকরা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারকেই হত্যা করেনি তারা হত্যা করেছিল বাংলাদেশের সম্ভাবনাকেও। তারা বুলেট বিদ্ধ করে বাংলাদেশের অগ্রগতিকে থামিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা করেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির অগ্রগতিকে বিলম্বিত করেছে। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রায় তিন দশক জিয়া-এরশাদ-খালেদা’র অপশাসনে বাংলাদেশের অর্থনীতি ছিল পর্যুদস্ত।
১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব গ্রহণ করলে বঙ্গবন্ধু-কন্যা নেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আবার পুরুজ্জীবিত হয় বাঙালি জাতির দুঃখজয়ের সংগ্রাম। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা, স্বৈরশাসনের অবসান, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়াবার সংগ্রাম। সে সময় জননেত্রী শেখ হাসিনার সাহসী ও ডাইমানিক নেতৃত্বের ফলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশের উপরে পৌঁছায়। কিন্তু ২০০১-এর কারচুপির নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিএনপি-জামাত অশুভ জোট ক্ষমতায় গেলে প্রবৃদ্ধি আবারও হ্রাস পায়। অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক নিম্নগামী হয়ে পড়ে।
অথচ আজকে সেই বিএনপি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির স্মারক ‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ; সময় এখন আমাদের সময় এখন বাংলাদেশের’ শীর্ষক বাজেটকে নিয়ে নিলর্জ্জ মিথ্যাচার করে চলেছে। আমি বিএনপি’র বন্ধুদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই- জাতীয় সংসদে তো আপনাদের প্রতিনিধি রয়েছে। বাজেট নিয়ে সংসদে আলোচনা হবে। শুধু বিরোধীতার খাতিরে বিরোধীতা না করেÑ জনগণের কল্যাণে কোনো প্রস্তাব থাকলে তা সুনির্দিষ্টভাবে সংসদে উপস্থাপন করুন। যুক্তিসঙ্গত প্রস্তাব গ্রহণের মতো উদারতা সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা সরকারের রয়েছে। নির্বাচনের পূর্বে সকল রাজনৈতিক দলের সাথে সংলাপ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তা প্রমাণিত হয়েছে।
দেশেবাসী ভুলে যায় নি, বিএনপি নেতারা গত ১০টি বাজেট ঘোষণার পর বাজেট নিয়ে নানা ধরনের মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করেছেন এবং বরাবরই বলেছেন বাজেট বাস্তবায়ন হবে না, অর্থনীতি মুখথুবড়ে পড়বে এ ধরনের বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করতে দেখা গেছে। এবারও তারা একই কায়দায় অযৌক্তিকভাবে জনকল্যাণকর এই বাজেটের বিরুদ্ধে তাদের চিরাচরিত বিরোধীতার রাজনীতি শুরু করেছে। অবশ্য বিএনপি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় মাত্র ৫০ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রণয়ন করেছিল। তাদের পক্ষে জনগণের কল্যাণের লক্ষে জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের দেওয়া ৫ লক্ষ ২৩ হাজার কোটি টাকার বাজেটের ব্যাপকতা অনুধাবন করা সম্ভব নয়। এটাই স্বাভাবিক।
আপনারা দেখেছেন- দেশবাসী যখন অগ্রগতির সোপান জনকল্যাণকর এই বাজেটকে সাধুবাদ জানিয়েছে- তখন গুটি কয়েক মানুষ শুধুমাত্র সরকারের বিরুদ্ধাচারণের জন্যই মনগড়া ও বিভ্রান্তমূলক মন্তব্য করে যাচ্ছেন। তাদের কেউ কেউ বলার চেষ্টা করেছেন- বাংলাদেশের অর্থনীতি নাকি ঝুঁকির মুখে পড়বে! তাদের উদ্দেশ্যে বলবো- অর্থনৈতিক ঝুঁকি তখনই বৃদ্ধি পায় যখন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়, রিজার্ভ ঝুঁতিতে থাকে এবং বৈদেশিক ঋণ অস্বাভাবিক পর্যায়ে পৌঁছায়। বর্তমানে অর্থনীতির এই তিনটি খাতেই শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। বর্তমানে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি ৫.৫০ শতাংশ, রিজার্ভ ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং বৈদেশিক ঋণের পরিমাণও জিডিপি’র ১৫ ভাগের নিচে রয়েছে। বর্তমানে মাথাপিছু আয় ১৯০৯ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। এই অর্থবছরেই ২০২০ সালে মাথাপিছু আয় ২ হাজার মার্কিন ডলার ছাড়াবে। যা ২০০৮ সালে ছিল মাত্র ৬১৯ ডলার।
সাংবাদিক বন্ধুগণ,
এবারের বাজেট আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তা ও প্রবৃদ্ধিকে শক্তিশালী করণের বাজেট। বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্ববৃহৎ এই বাজেটের মূলভিত্তি হলো ভিশন-২০২১। বঙ্গবন্ধু-কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা’র এই ভিশন বা রূপকল্প একটি মৌলিক সামাজিক রাজনৈতিক দর্শনের প্রতিফলন; যেখানে সকল উন্নয়ন জনগনের কল্যাণার্থে। ভিশন-২০২১ এর বিস্তৃত মাইলফলক অর্জনের জন্য বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নির্দেশে বাংলাদেশ ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা এবং ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা নামে দুটি বিস্তারিত ও সমৃদ্ধ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়। যার ধারাবাহিকতায় জননেত্রী শেখ হাসিনা’র নেতৃত্বে শুধু ভিশন-২০২১ ও রূপকল্প-২০৪১-ই নয় বাংলাদেশের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সুদূরপ্রসারী ডেল্টাপ্ল্যান-২১০০ পর্যন্ত নির্ধারণ করে কর্মপরিকল্পনা করা হয়েছে।
এই পরিকল্পনা বা রূপকল্পের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সময়োপযোগী কর্ম-কৌশল বাস্তবায়নে নিরলস প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট ২০১৯-২০ এবং বিগত শেষ দশ বছরের বাস্তবায়িত সমস্ত পূর্ববর্তী বাজেটগুলো নিরূপণ এবং বাস্তবায়ন করা হয়েছে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার ভিত্তিতে। যার সুফল ভোগ করছে বাংলাদেশের মানুষ। বর্তমানে অর্থনীতিতে বিশ্বে ৩০তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের পরই দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি বাংলাদেশের। চলতি মেয়াদেই বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবে ইনশাল্লাহ।
এবারের বাজেটে জিডিপি ধরা হয়েছে- ৮.২ শতাংশ। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির এই ধারাবাহিক অর্জন সম্ভব হয়েছে গত দশ বছরে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় শেখ হাসিনা সরকারের দক্ষতার কারণে। যার মধ্যে অন্যতম হলো জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের প্রাজ্ঞতা-সমৃদ্ধ বাজেট ব্যবস্থাপনা। বাজেট ব্যবস্থাপনা ও বাস্তবায়নে সরকারের সফলতার কল্যাণেই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে।
এবারের বাজেট আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তা ও প্রবৃদ্ধিকে দৃঢ় করার বাজেট। এই বাজেট প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়নের বাজেট। বাজেটে প্রতিবন্ধী, গ্রামের মানুষ, দুস্থ ও পিছিয়ে পড়া মানুষ, প্রবাসী শ্রমিক ভাইদের কল্যাণের জন্য বিশেষ কর্মসূচি ও প্রণোদনা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে মোট বাজেটের ১৪.২১ শতাংশ। যাতে সামাজিক নিরাপত্তা আওতাধীন সুবিধাভোগীর সংখ্যা দাঁড়াবে ১ কোটি ১৪ লক্ষ। এবারের বাজেটে প্রথমবারের মতো বেসরকারি খাতকে পেনশন সুবিধার আওতায় আনার জন্য ‘সার্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষ’ গঠন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। যা একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
এবারের বাজেটের অন্যতম একটি বিষয় হলো- ১ কোটি প্রবাসী শ্রমিকদের কষ্টার্জিত অর্থ প্রেরণের উপর ২ শতাংশ প্রণোদনা প্রদান। অর্থাৎ কোন প্রবাসী ১ লক্ষ টাকা প্রেরণ করলে তার পরিবার ১ লক্ষ ২ হাজার পাবে। অর্থাৎ প্রবাসীরা টাকা পাঠালে এখন থেকে লাখে ২ হাজার টাকা সরকারের পক্ষ থেকে প্রদান করা হবে।
২০০৮ সালে যেখানে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ ছিল মাত্র ২০ হাজার কোটি টাকা সেখানে বর্তমানে তা ২ লাখ ২ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। শুধু অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্যই এই বাজেট নয়, এই বাজেট একটি মানবিক বাজেটও। বাজেটে সমাজের সকল প্রতিবন্ধীদের ভাতা দেওয়ার লক্ষে ভাতাভোগীর সংখ্যা ১০ লক্ষ হতে ১৫.৪৫ লক্ষ্যে উন্নীত করা হয়েছে।
সাংবাদিক বন্ধুগণ,
এবারের বাজেট টেকসই অর্থনীতির মজবুত ভীত রচনার একটি সফল পদক্ষেপ। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন অব্যাহত রাখা ও উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে আধুনিক নিরাপদ এবং পরিবেশবান্ধব পরিবহন ও যোগাযোগ অবকাঠামো নির্মাণে বহুমাত্রিক উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। যেখানে ২০০৮ যোগাযোগ খাতে বরাদ্দ ছিল মাত্র ৭ হাজার কোটি টাকা সেখানে আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৬১ হাজার ৪৫৫ কোটি টাকা।
শুধু অবকাঠামাগত উন্নয়ন-ই নয়, তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পেও বিপ্লব সাধিত হচ্ছে। দেশরতœ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে ডিজিটাল বিপ্লব সাধিত হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের ধারাবাহিকতায় ন্যানো টেকনোলজি, বায়োটেকনোলজি, রোবটিক্স, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ম্যাটেরিয়াল সাইন্স, ইন্টারনেট অফ থিংস্, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, ব্লক চেইন টেকনোলজি ইত্যাদি বিষয়ে তরুণ প্রজন্মকে দক্ষ করে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে এই বাজেটে। ডিজিটাল বাংলাদেশে বিনির্মাণের মধ্য দিয়ে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব-খ্যাত তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের নেতৃত্ব নিশ্চিতকরণে এবারের বাজেটে বরাদ্দ ২০ শতাংশ বৃদ্ধি করে ১৫ হাজার ৭৭৩ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। যা আমাদের তরুণ প্রজন্মের কর্মসংস্থান ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যত নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারেও স্লোগান ছিল- ‘তারুণ্যের শক্তি, বাংলাদেশের সমৃদ্ধি’। তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগানোর জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ফলে ২০৩০ সালের মধ্যে ৩ কোটি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। শিক্ষিত যুবকদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ‘স্টার্ট-আপ’ সৃষ্টির জন্য বিশেষ অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল- আমার গ্রাম- আমার শহর। গ্রামে উন্নত নাগরিক সুবিধা সম্প্রসারণের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে এবারের বাজেটে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। পল্লী এলাকায় উন্নত যোগাযোগ অবকাঠামো স্থাপন, আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি, নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা প্রবর্তন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধি এবং কম্পিউটার ও দ্রুতগতির ইন্টারনেট সুবিধা নিশ্চিতকরণের মধ্য দিয়ে আধূনিক শহরের সকল সুবিধা গ্রামে গ্রামে সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। আগামী অর্থবছরে পল্লী সেক্টরের ৫ হাজার ৫০০ কিলোমিটার নতুন সড়ক ও ৩০ হাজার ৫০০ মিটার ব্রীজ/কালভার্ট নির্মাণসহ গ্রোথসেন্টার/হাট-বাজার, সাইক্লোন শেল্টার ইত্যাদি নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন খাতে আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট ৬৬ হাজার ২৩৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। দেশের মানুষের কল্যাণ, উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য এই বাজেটে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই বাংলাদেশের অগ্রগতি হয়। জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় থাকলে দেশের সম্পদ জনকল্যাণে ব্যয় হয় বলেই গত এক দশকে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের সকল সূচকেই কাক্সিক্ষত সাফল্য অর্জন করেছে। বঙ্গবন্ধু-কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সকল সঙ্কট ও সমস্যা মোকাবিকলা করে এক সময়ের তলাবিহীন ঝুঁড়ি থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। এবারের বাজেট বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের রাষ্ট্রের মর্যাদা লাভ করবে। বঙ্গবন্ধু-কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ক্রমান্বয়ে এগিয়ে যাবে- ২০৪১ সালে উন্নত সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত হবে। আমরা আগামী প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত সমৃদ্ধশালী কল্যাণকর সুখী রাষ্ট্র বিনির্মাণ করে যেতে চাই। জয় আমাদের হবেই, বাঙালির স্বপ্নজয়ের সংগ্রামে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গৌরবোজ্জ্বল অভিযাত্রা অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাবে ইনশাল্লাহ্।
আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।