3818
Published on জানুয়ারি 16, 2019স্বাধীনতার সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি ছিল মূলত কৃষিনির্ভর। আমাদের কৃষির প্রায় পুরোটাই নির্ভরশীল ছিল ক্ষুদ্র চাষিদের ওপর, যারা খুব কম জমি চাষ করে কোনো রকমে জীবনধারণ করতেন। এখন অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। বিগত ৪৭ বছরে খাদ্যশস্য উত্পাদনের পরিমাণ বেড়ে প্রায় চারগুণ। নতুন নতুন প্রযুক্তি যুক্ত হওয়ায় বাংলাদেশের গ্রামীণ অঞ্চলের অর্থনীতিতে এসেছে ব্যাপক বৈচিত্র্য। হাঁস-মুরগির খামার, গবাদিপশু পালন, চিংড়ি চাষ ছাড়াও খামার কার্যক্রমের বাইরে বিস্তৃত হয়েছে গ্রামীণ অর্থনীতি, যা প্রায় অর্ধ শতাব্দী আগেও অকল্পনীয় ছিল। আমরা দক্ষিণ এশিয়ায় এক মালদ্বীপ বাদে অন্যান্য সব দেশকে ছাড়িয়ে গেছি। আমাদের দারিদ্র্যের হার কমেছে। স্রেফ খেতে না পেয়ে এখন আর কেউ মারা যায় না। গ্রামীণ অবকাঠামোয় বিনিয়োগ শিক্ষার প্রসার, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ভাতার মতো কর্মসূচিও দারিদ্র্যের হার কমানোর ভূমিকা রেখেছে। তবে পল্লী এলাকার জীবনমান উন্নয়নে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর সক্রিয়তা এবং উত্পাদন সক্ষমতার রূপান্তর ভূমিকা রেখেছে সবচেয়ে বেশি।
আমরা ধান উত্পাদনে স্বনির্ভর হয়েছি, মাছ, মাংস, সবজি, দুধ, ডিম ইত্যাদির উত্পাদন অনেক বেড়েছে, স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভালো হয়েছে, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত পাকা রাস্তা হয়েছে, যন্ত্রচালিত ভ্যানগাড়ি, নছিমন, করিমন ইত্যাদি ধরনের যানবাহন গ্রামাঞ্চলের মানুষের চলাফেরায় অবিশ্বাস্য রকমের গতি সঞ্চার করেছে। ফলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রাণচাঞ্চল্যে সজীব হয়ে উঠেছে সারা দেশ। গ্রাম অঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে শেখ হাসিনা সরকার গ্রামে গ্রামে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করেছেন। চালু করেছেন ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্রও।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলেই উদ্যোক্তা বিপ্লব ঘটেছে যা কেবল বাংলাদেশেই নয়, সারা বিশ্ব জুড়েই এক বিস্ময়। তাঁর শাসনামলেই নতুন প্রজন্মের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বৈশ্বিক বাজারে স্বাধীনভাবে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা অর্জন করেছে। গত শতকের আশির দশকে যেখানে এই খাত থেকে ২৫ শতাংশ আয় আসত, এখন আয় আসে ৭৫ শতাংশের চেয়েও বেশি। বাংলাদেশ আজ বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। তৈরি পোশাক খাতের গতিশীল উত্পাদন, ওষুধ ও জুতা শিল্প, জাহাজ নির্মাণ, ইস্পাত উত্পাদন এবং নির্মাণ খাত বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে। বহুতল ভবন নির্মাণ প্রযুক্তি তো ঢাকা আর চট্টগ্রামের চেহারাই বদলে দিয়েছে। নতুন প্রজন্মের বেসরকারি ব্যাংক এখন ব্যাংক অর্থায়নের উত্স হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। শিল্প বিনিয়োগে এখন দীর্ঘমেয়াদী ঋণ দিচ্ছে বেসরকারি ব্যাংকগুলো। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে। টাকার মূল্য স্থিতিশীল হয়েছে। রাজস্ব বৃদ্ধি পেয়েছে বিপুল পরিমাণে। আর এসব কারণে জনগণের ব্যয়ের সক্ষমতা বেড়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রাজনৈতিক অস্থিরতা ইত্যাদি গুরুতর প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও আমাদের বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের ওপরে। সম্প্রতি তা আরও বেড়ে ৭ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। এ সবের মূলে রয়েছে শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্ব। তিনি নেতৃত্বে না থাকলে এসবের কোনো কিছুই সম্ভব হতো না।
বর্তমান প্রজন্মের কাছে শেখ হাসিনা এক সাহসী ও দক্ষ নেতৃত্বের নাম, যার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনায় ভবিষ্যতের বাংলাদেশ উন্নয়নের ধারায় এগিয়ে চলছে। শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের সক্ষমতা অর্জন করেছে। তাঁর নেতৃত্বের কারণেই মহাকাশে বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উেক্ষপণ করতে পেরেছে। তাঁর নেতৃত্বেই জনগণের জীবনমানের উন্নয়ন এবং দিনবদলের যাত্রা শুরু হয়েছে। এই অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে হলে আগামী দিনেও শেখ হাসিনার নেতৃত্ব টিকিয়ে রাখতে হবে। কেননা শেখ হাসিনার হাতেই রয়েছে সকল উন্নয়নের মূলমন্ত্র।
লেখক :শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সৌজন্যেঃ দৈনিক ইত্তেফাক