খাদ্যশস্য উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের স্থান এখন দশম। এক ও দুই ফসলি জমি অঞ্চল বিশেষে প্রায় চার ফসলি জমিতে পরিণত করা হয়েছে এবং দেশে বর্তমানে ফসলের নিবিড়তা ১৯৪%।
দক্ষিণ অঞ্চলে ভাসমান বেডে চাষাবাদ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সবজি উৎপাদন করা হচ্ছে।
সরকার সার, ডিজেল, বিদ্যুৎ ইত্যাদি খাতে আর্থিক সহযোগিতার পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করেছে। ২০২১ সালে সারে ভর্তুকির পরিমাণ প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা।
২০০৮-০৯ অর্থবছর হতে কৃষি প্রণোদনা/পুনর্বাসন কর্মসূচির মাধ্যমে ৮২৭ কোটি ১৭ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে, যার মাধ্যমে ৭৪ লাখ ৫৪ হাজার ৩১৩ জন কৃষক উপকৃত হয়েছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া এবং বিভিন্ন ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বিনামূল্যে কৃষি উপকরণ ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
২ কোটি ৮ লাখ ১৩ হাজার ৪৭৭ জন কৃষককে কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড প্রদান করেছে।
১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খোলার সুযোগ করে দেওয়ায় ১ কোটি ১ লাখ ১৯ হাজার ৫৪৮টি ব্যাংক হিসাব খোলা সম্ভব হয়েছে, যেখানে বর্তমান স্থিতি প্রায় ২ শত ৮২ কোটি টাকা।
ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে চতুর্থ। লবণাক্ততা, খরা, জলমগ্নতা সহনশীল ও জিংকসমৃদ্ধ, ধানসহ এ পর্যন্ত ধানের ১০৮টি উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে।
নিবিড় সবজি চাষের মাধ্যমে বছরে ১ কোটি ৬০ লাখ মেট্রিক টন সবজি উৎপাদন করে বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে।
আম উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে ৮ম। দেশে বছরে প্রায় ২৪ লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদিত হয় এখন।
কৃষি পণ্য রফতানি থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ ১০২ কোটি ৮১ মার্কিন ডলার আয় করেছে।
২০০৮-০৯ অর্থবছরে ধান, গম, পাট, ভূট্টা, আলু, সবজি, তৈল ও মসলাসহ বিভিন্ন ফসলের গুণগত মানসম্মত বীজ সরবরাহের পরিমাণ ছিল ১ লক্ষ ৯৯ হাজার ৮ শত ৭৪ মে.টন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তা দাঁড়িয়েছে ৩ লক্ষ ২৯ হাজার ৯ শত ২২ মে.টনে।
২৮ হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ১২টি আলুবীজ হিমাগার নির্মাণ এবং ৪টি টিস্যু কালচার ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হয়েছে।
২০২১-২২ অর্থবছরে কৃষিখাতে মোট ২৮ হাজার ৩ শত ৯১ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদঃ
গত ১০ বছরে মাছের উৎপাদন ৫৩ শতাংশ বেড়েছে। আর মাছ রপ্তানি বেড়েছে ২০ শতাংশের বেশি।
মাংসের উৎপাদন ১০.৮০ লাখ মেঃ টন থেকে বেড়ে ৭৬.৭৪ লাখ মেঃ টনে উন্নীত হয়েছে।
দুধের উৎপাদন ২২.৯ লাখ মেঃ টন থেকে বেড়ে ১ কোটি ৬ লাখ ৮০ হাজার মেঃ টনে উন্নীত।
ডিমের উৎপাদন ৪৬৯.৬১ কোটি থেকে বেড়ে বর্তমানে ১৭৩৬ কোটিতে উন্নীত।
২০২০-২১ অর্থবছরে জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ১৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
২০২০-২১ অর্থবছরে মৎস্যপণ্য রপ্তানি করে প্রায় ৪হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়েছে, যা ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ছিল ৩২৪৩.৪১ কোটি টাকা।
ঐতিহাসিক সমুদ্রবিজয়ের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে ১ লক্ষ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটার জলসীমায় আইনগত একচ্ছত্র অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে।
ইলিশের উৎপাদন ২.৯৮ লক্ষ মে.টন থেকে বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ৫.৩৩ লক্ষ মে. টনে উন্নীত।
সামজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় জাটকা সমৃদ্ধ ১৭ জেলার জাতীয় ৮৫টি উপজেলায় জাটকা আহরণে বিরত থাকতে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৭৩জন জেলে পরিবারকে মাসিক ৪০ কেজি হারে ৪ মাসের জন্য মানবিক সহায়তা কর্মসূচির আওতায় মোট ৩৮,১৮৭.৬৮ মে. টন চাল প্রদান করা হয়েছে।
বিভিন্ন নদ-নদী ও অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে ৫৩৪টি মৎস্য অভয়াশ্রম স্থাপন।
কুচিয়ামাছ অত্যন্ত পুষ্টি সমৃদ্ধ ও ঔষধি গুণসম্পন্ন। কুচিয়া রপ্তানি করে ১৪ মিলিয়ন ডলার মূল্যের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত।
৬৩টি উপজেলায় প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
প্রাণিসম্পদ লালনপালন, চিকিৎসা সেবাসহ যেকোন ধরনের সমস্যার জন্য যেকোন মোবাইল হতে ১৬৩৫৮ নম্বরে বিনামূল্যে এস.এম.এস এর মাধ্যমে পরামর্শ পাওয়া যাচ্ছে।
খাদ্য উৎপাদনঃ
দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারি পর্যায়ে খাদ্যশস্য ধারণক্ষমতা ২০২১ সালের মধ্যে ৩০ লক্ষ মেট্রিক টনে উন্নীত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
বর্তমানে ৬.৪০ লক্ষ মেট্রিক টন ধারণক্ষমতার আধুনিক খাদ্য গুদাম/সাইলো নির্মাণের লক্ষ্যে কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।
দেশের উত্তরাঞ্চলে ১.১০ লক্ষ মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন খাদ্যগুদাম নির্মাণ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের উত্তরাঞ্চলে মোট ১৪০টি গুদামসহ অন্যান্য আনুষাঙ্গিক স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে।
সারাদেশে ১০০০ মেট্রিক টন ধারণক্ষম ৭০ টি গুদাম এবং ৫০০ মেট্রিক টন ধারণক্ষম ১৩০টি গুদাম নির্মাণ।
মংলা বন্দরে ৫০ হাজার মেট্রিক টন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন কনক্রিট গ্রেইন সাইলো, আনলোডার, সাইলো জেটি নির্মাণ, সাইলো ভবনসহ বিভিন্ন ধরনের কনভেয়িং সিস্টেম ও ওজন যন্ত্র স্থাপন।
বগুড়া জেলার সান্তাহার সাইলো ক্যাম্পাসে বহুতল গুদাম নির্মাণ করা হয়েছে। সোলার প্লান্টসহ ২৫,০০০ মেট্রিক টন ধারণক্ষমতার মাল্টিস্টোরিড ওয়্যারহাউজ নির্মাণ কাজ সমাপ্ত।
ভিজিডি, ভিজিএফ, জিআর ইত্যাদি খাতে ২০১৬-১৭ অর্থ-বছরে ৮.৩৭ মেট্রিক টন পরিমাণ খাদ্যশস্য সরবরাহ।
ভিজিডি খাতে পুষ্টি চাল বিতরণ; হাওর এলাকায় ১০০ দিন কর্মসূচিতে ১০ টাকা মূল্যে চাল বিতরণ ও ওএমএস কার্যক্রম গ্রহণ।
২০১৫ সালে শ্রীলংকায় ২৫ হাজার মেট্রিক টন চাল রপ্তানি।
২০১৬ সালে নেপালে ২০ হাজার মেট্রিক টন চাল সাহায্য হিসেবে প্রেরণ।
২০১৬ সাল হতে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ৫০ লক্ষ হতদরিদ্র পরিবারের মাঝে প্রতি মাসে পরিবার প্রতি ৩০ কেজি করে প্রতি বছর ৫ মাস (সেপ্টেম্বর, নভেম্বর ও মার্চ-এপ্রিল) চাল ১০ টাকা কেজিতে বিতরণের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চলমান রয়েছে।
করোনাকালে সারাদেশে নিম্ন আয়ের মানুষদের ১০ টাকা কেজি দরে ৯০ হাজার টন চাল দেওয়া হয়েছে।