7485
Published on সেপ্টেম্বর 2, 2018উলুল আমর অন্তরঃ
বাংলাদেশ নারী ফুটবলে যাত্রা শুরু করে ২০০৫ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় এএফসি অনূর্ধ্ব-১৭ চ্যাম্পিয়নশিপ দিয়ে। মাত্র তিনমাসের প্রস্তুতি নিয়ে সেই টুর্নামেন্টে যাওয়া মেয়েরা ভালো ফল আনতে পারেনি। কিন্তু সেই ব্যর্থ দলটাই কত দ্রুত বদলে গেলো! এর পেছনে রয়েছে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা মুজিব টুর্নামেন্টের অবদান। এই টুর্নামেন্টের মাধ্যমে সারা দেশ থেকে উঠে আসছে নারী ফুটবলাররা।
২০০৫ সালে যে দল মাঠে নামলেই অসংখ্য গোল খেতো, সেই দলটাই সর্বশেষ তিনটি টুর্নামেন্টে ৯ ম্যাচে প্রতিপক্ষের জালে দিয়েছে ৫৪ গোল, বিপরীতে হজম করেছে মাত্র তিনটি গোল। সাফল্যের শুরু ২০১৪ সালে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপ দিয়ে। এরপর অনূর্ধ্ব-১৬ বাছাইপর্বেও সেরা। গতবছর ঢাকায় সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ তে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। এরপর এ বছর হংকং-এ চারজাতির জকি কাপেও চ্যাম্পিয়ন এবং সর্বশেষ কিছুদিন আগে ভুটানে সাফ অনূর্ধ্ব-১৫তে রানার্সআপ হয়। এই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের মেয়েরা গোল দিয়েছে ২২টি, খেয়েছে মাত্র একটি গোল!
ক্রিকেটে নারীদের যাত্রা শুরু হয় ২০০৭ সালে থাইল্যান্ডের বিপক্ষে। শুরুতে এই দলটিও বেশ দুর্বল ছিল। কিন্তু দ্রুতই সাফল্য বয়ে আনতে শুরু করে বাঘিনীরা। সে বছরই মহিলাদের এসিসি টুর্নামেন্ট চ্যাম্পিয়ন হয় তারা। ২০১১ সালে নারী বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ৯ উইকেটে হারিয়ে প্রতিযোগিতায় পঞ্চম স্থান অর্জন করে এবং বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করেন সালমারা। একই সঙ্গে বাংলাদেশ পায় ওয়ানডে স্ট্যাটাস। এরপর একাধিবার বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। এশিয়ান গেমসে দুইবার পায় রৌপ্য পদক। ২০০৮ সালের এশিয়া কাপে চতুর্থ, ২০১২ সালে তৃতীয় এবং সর্বশেষ এ বছরের জুন মাসে শক্তিশালী ভারতকে তিন উইকেটে হারিয়ে এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন হন রুমানা, জাহানারা, সালমারা। নারীদের এশিয়া কাপের ইতিহাসে প্রথমবার শিরোপা হারায় ভারত এবং তা বাংলাদেশের মেয়েদের কাছে। ছেলেদের আগেই বাংলাদেশকে এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন করেছে মেয়েরা। এছাড়া এ বছর বিশ্বকাপের বাছাইপর্বেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ।
ফুটবলের মত ক্রিকেটেও নারীদের পথচলা সহজ নয়। যেখানে ছেলেদের ঘরোয়া ক্রিকেটে মাঝারিমানের ক্রিকেটাররাও লাখ লাখ টাকা বেতন পান, সে তুলনায় জাতীয় দলের মেয়েদের বেতন মাত্র কয়েক হাজার টাকা। অথচ ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের সাফল্য কোনো অংশে কমতো নয়ই, বরং কিছুক্ষেত্রে বেশিই। কিন্তু এসব বৈষম্যের কারণে এবং আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির সংকীর্ণতার কারণে ক্রিকেটে মেয়েদের টিকে থাকতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে। তবে তাতে সাফল্যে ভাটা পড়েনি।
শুধু ক্রিকেট বা ফুটবলই নয়, অন্যান্য খেলাতেও সাফল্য আনছে নারীরা। ২০১৬ এশিয়ান গেমসে কাবাডিতে পদক জিতেছে নারী দল। সর্বশেষ সাফ গেমসে সাঁতারে স্বর্ণপদক জিতেছেন মাহফুজা খাতুন শিলা। একই টুর্নামেন্টে ভারোত্তলনে স্বর্ণপদক জেতার পর স্বদেশের পতাকা হাতে মাবিয়া রহমান সীমান্তের সেই আনন্দাশ্রু কাঁদিয়ে ছিল পুরো বাংলাদেশকে।
সাম্প্রতিক সময়ে ক্রীড়াক্ষেত্রে বাংলাদেশের নারীদের যে জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে এটাকে পরিচর্যা করতে হবে। মেয়েদের জন্য নিয়মিত ঘরোয়া টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে হবে। বেতন বৈষম্য দূর করতে হবে। উন্নত ট্রেইনিং প্রদানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। এক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে পৃষ্ঠপোষকদের। সংকীর্ণ মানসিকতা দূর করে মেয়েদের খেলায় উত্সাহ দেওয়ার দায়িত্ব ১৬ কোটি বাংলাদেশির। তবেই বাংলাদেশের মেয়েরা চার দেয়ালের গণ্ডি থেকে বের হতে পারবে। ক্রীড়াক্ষেত্রকে কর্মসংস্থান হিসেবে নিয়ে হতে পারবে স্বাবলম্বী। দেশ থেকে দূর হবে নারীদের প্রতি নেতিবাচক মানসিকতা, বাল্যবিবাহ। আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে আসবে একের পর এক সাফল্য। ক্রীড়াক্ষেত্রেও সাফল্যে সমৃদ্ধ ও সম্মানিত হবে বাংলাদেশ।
সৌজন্যেঃ দৈনিক ইত্তেফাক