6481
Published on আগস্ট 30, 2018শাহাব উদ্দিন মাহমুদঃ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার যেসব খাতে অভাবনীয় সাফল্য এনেছে, তার মধ্যে কৃষি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা অন্যতম। বিগত সাড়ে নয় বছরে স্বাস্থ্যখাতের সাফল্যের যে গ্রাফ সারা বিশ্বকে চমকে দিয়েছে, এই সাফল্যের গ্রাফের পথপ্রদর্শক হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীনতার পর জাতির পিতা যখন দেশটির হাল ধরলেন, তখন সারাদেশে চিকিৎসা ব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত বেহাল। তিনি গরিব মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে জাতীয়করণ করেছিলেন। তখন সারাদেশে হাসপাতাল ছিল মাত্র ৬৭টি। তিনি সরকারী চিকিৎসা ব্যবস্থাকে জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে প্রতি থানায় একটি করে হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু শাহাদাতবরণ করার আগ পর্যন্ত এভাবে সারাদেশে ৩৭৫টি থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এলে স্বাস্থ্যখাত পুনরায় জনবান্ধব রূপ পরিগ্রহ করতে শুরু করেছিল। স্বাস্থ্য সেবাকে গণমুখী ও জনবান্ধব করার জন্য ১৯৯৮ সালে দরিদ্র মানুষের প্রতি লক্ষ্য রেখে জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন করেছিলেন। সরকার দেশের জনগণ বিশেষ করে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মৌলিক স্বাস্থ্য সুবিধাসমূহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্যনীতি যুগোপযোগী করেছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি, জাতীয় খাদ্য ও পুষ্টিনীতি এবং জাতীয় জনসংখ্যা নীতি বাস্তবায়িত হচ্ছে। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি)সমূহ অর্জনের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে কিছু সূচক যেমন : শিশু মৃত্যুর হার হ্রাস, শিশু ও মায়েদের টিকা দেয়া, ভিটামিন ‘এ’-এর ঘাটতি দূরীকরণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে অসাধারণ সাফল্য অর্জিত হয়েছে। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন নিশ্চিত করা ও সব বয়সের সবার কল্যাণে কাজ করার যে প্রত্যয় রয়েছে তা নিশ্চিতকল্পে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগ ‘কমিউনিটি ক্লিনিক’কে স্বাস্থ্যখাতে বিপ্লব হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। জনগণের অত্যাবশ্যকীয় চিকিৎসা সেবা বিতরণে প্রথম স্তর ও তৃণমূল পর্যায়ে সাধারণ মানুষের চাহিদা অনুসারে ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার হিসেবে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়েছিল। যা বর্তমান সরকারের যুগান্তকারী সফল উদ্যোগ সমূহের একটি।
কমিউনিটি ক্লিনিক
১৯৭৭ সালে ৩০তম বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ছোট বড় অভিজ্ঞতার আলোকে ২০০০ সালের মধ্যে সবার জন্য স্বাস্থ্য অর্জনের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। আলমা আতা ঘোষণা প্রস্তুত করার আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের অভিজ্ঞতাকে নজির হিসেবে ব্যবহার করেছে। এর পরের বছর রাশিয়ার কাজিকিস্তানের আলমা আতা শহরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৩১তম সম্মেলনে আলমা আতা ঘোষণা গৃহীত হয় যা এখনও প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা এবং রোগ প্রতিরোধ সংক্রান্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে স্বীকৃত। এরপর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কমিউনিটিভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে। এরই অংশ হিসেবে ১৯৭৯ সালে তৃণমূল পর্যায়ে গ্রামীণ জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ার জন্য স্বাধীন বাংলাদেশে প্রতি ৬০০০ জনগণের জন্য ১ একজন করে ২০৮৮১ জন স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োগ করা হয়। মাঠ পর্যায়ে তদারকীর জন্য ১৩৯৮জন স্বাস্থ্য পরিদর্শক এবং ৪২০২ জন সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক নিয়োগ করা। তারা বাড়ি বাড়ি ঘুরে জন্ম মৃত্যু নিবন্ধন, সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ, ঝুঁকিপূর্ণ রোগী শনাক্তকরণ, মা ও নবজাতকের সেবা, স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রদান করে দরিদ্র জনগোষ্ঠী স্বাস্থ্য সচেতন করে তুলেন। সাড়ে চার দশকের অধিক সময় ধরে মরণব্যাধি গুটি-বসন্ত, ম্যালেরিয়ার মহামারী ডাইরিয়া নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন। ১৯৭৯ সালে দেশে মা ও শিশুদের মরণব্যাধি রোগ বালাই থেকে রক্ষার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায় সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচী (ইপিআই) চালু করা হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রথম কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন শুরু করেছিল। দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিয়ে কমিউনিটি ক্লিনিক এখন বিশ্বব্যাপী রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, আর তা বাস্তবায়ন করেছেন তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতোমধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কমিউনিটি ক্লিনিকের মডেল অন্যান্য দেশকে গ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছে। মানুষের দোরগোড়ায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল। তার একটা চিত্র পাওয়া যায় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: হেলথ রেভ্যুলেশন ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামের একটি প্রতিবেদনে। সরকার ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যৌথ প্রতিবেদেনে ২০১৩ সালের ১২ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেয়া একটি সাক্ষাতকারের কিছু অংশ ছাপা হয়েছিল। সাক্ষাতকারে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে তিনি তাঁর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধারণা ও চিন্তার সম্প্রসারণ করেছেন। শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘আমি তাঁর খুব ঘনিষ্ঠ ছিলাম। তাঁর চিন্তা ও পরিকল্পনাগুলো আমি তাঁর কাছ থেকে শুনতাম। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কিভাবে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া যায়, এ নিয়ে তাঁর ভাবনাগুলো তিনি আমাকে বলতেন। পরে ওই চিন্তা-ভাবনাগুলোই আমি আরও বিস্তৃত করেছি। তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেয়ার জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক চালুর ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা মোতাবেক স্থান নির্বাচনসহ জনগণকে বিনামূল্যে জমিদানে উদ্বুদ্ধকরণসহ অব্যাহতভাবে সেবাদান করে কমিউনিটি ক্লিনিককে গ্রামীণ জনগণের দোরগোড়ায় সহজলভ্য সেবার একটি জনপ্রিয় মডেল কর্মসূচীতে পরিণত করা হয়। প্রতি ৬ হাজার গ্রামীণ মানুষের জন্য একটি করে মোট ১৮৫০০ ক্লিনিক তৈরির পরিকল্পনা ছিল। ১৯৯৮ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত প্রায় ১০৭২৩ ক্লিনিকের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছিল এবং ৮ হাজার ক্লিনিক চালু হয়েছিল। ক্ষমতার পালাবদলে কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রমে ছন্দপতন ঘটলে ও ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার পর স্বাস্থ্য খাতের অগ্রাধিকার বিবেচনায় কমিউনিটি ক্লিনিক পুনরায় চালুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। ‘রিভাইটালাইজেশন অব কমিউনিটি হেলথ কেয়ার ইনিশিয়েটিভস ইন বাংলাদেশ’ নামের প্রকল্পের আওতায় ক্লিনিকগুলো মেরামত, নতুন স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ এবং ওষুধ সরবরাহ করার মাধ্যমে ক্লিনিকগুলো চালু করা হয়েছিল। কমিউনিটি ক্লিনিক হচ্ছে সরকারের সর্বনিম্ন পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবা কাঠামো। এখান থেকে স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা ও পুষ্টিসেবা দেওয়া হয়। এখান থেকে বিনা মূল্যে ৩০ ধরনের ওষুধ পায় মানুষ। সেখানে রয়েছে রেজিস্ট্রার্ড গ্র্যাজুয়েট চিকিৎসক, প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী, ইন্টারনেট সার্ভিস, ই-হেলথ, টেলিমেডিসিনসহ আনুষঙ্গিক সহায়তা। ক্লিনিকগুলো পরিচালনা করেন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি)। এই পদে স্থানীয় নারী কর্মীদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। তাঁকে সহায়তা করেন স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবারকল্যাণ সহকারী। কমিউনিটি ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের সর্বেশষ তথ্যে বলা হচ্ছে, ২০০৯ থেকে জুলাই ২০১৮ পর্যন্ত ইউনিয়ন পর্যায়ে ১৩৮৬১ কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবাগ্রহীতার ভিজিট সংখ্যা ৬২ কোটি ৫৭ লাখ, ক্লিনিক থেকে জরুরী ও জটিল রোগী রেফারের সংখ্যা ১ কোটি ১৫ লাখ ৪৮ হাজার, স্বাভাবিক প্রসবের সংখ্যা ৫৫ হাজার ৩০৯টি, গর্ভবতী মায়ের প্রসব পূর্ববর্তী সেবা (এএনসি) ২৪ লাখ ৮৬ হাজার ২০৪টি, প্রসব-পরবর্তী সেবা (পিএনসি) ৮ লাখ ১১ হাজার ৬৬৩টি। এই বিপুল সেবা গ্রামের দরিদ্র ও সাধারণ মানুষ পেয়েছে বিনা মূল্যে। সিংহভাগ কমিউনিটি ক্লিনিক স্থানীয় কোন ব্যক্তির জমিতে গড়ে উঠেছে। এর পরিচালনায় স্থানীয় মানুষ ও জনপ্রতিনিধিরা সম্পৃক্ত। সরকারী বেতনভুক যে তিনজন এখানে সেবা দেন, তাঁদের অধিকাংশ সংশ্লিষ্ট এলাকার। তাই কমিউনিটি ক্লিনিককে সাধারণ মানুষ নিজেদের প্রতিষ্ঠান বলে মনে করে।
ওষুধ উৎপাদন
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী সরকারের সংশ্লিষ্ট অধিদফতরের কঠোর তত্ত্বাবধানে এবং নীতিমালা মেনে ওষুধ উৎপাদন করা হচ্ছে। দেশের উৎপাদিত ফার্মাসিউটিক্যালস প্রডাক্ট পৃথিবীর অর্ধেকেরও বেশি দেশে রফতানি হচ্ছে। বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের উত্থান বিস্ময়কর। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ওষুধ রফতানির মাধ্যমে ইতিহাস সৃষ্টি করে নতুন এক যুগে প্রবেশ করেছে এই শিল্প খাত। বর্তমানে দেশে ওষুধ শিল্পের অভ্যন্তরীণ বাজার প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকার ওপরে এবং আন্তর্জাতিক বাজার ২২০০ কোটি টাকার বেশি। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় ধারাবাহিক অগ্রগতি অব্যাহত থাকলে আশা করা যায়, ২০৩০ সালের মধ্যে এই শিল্প গার্মেন্ট শিল্পকে অতিক্রম করবে। সরকারের ইতিবাচক নীতি কৌশল এই শিল্পের সুস্থ বিকাশ ও মানসম্মত উৎপাদনশীলতার জন্য যথেষ্ট সুনাম অর্জন এবং আন্তর্জাতিক মান অর্জনে সক্ষম হয়েছে। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর সার্টিফিকেশন সনদও পেয়েছে বেশ কিছু কোম্পানি। সম্ভাবনাময় ঔষধ শিল্পের কাঁচামাল উৎপাদনের জন্য মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় অবস্থিত ওষুধ শিল্পনগরী প্রকল্পের এপিআই শিল্পপার্ক (এ্যাক্টিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্ট-এপিআই) প্লট বরাদ্দ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এই পার্কে কাঁচামাল উৎপাদনের সব ধরনের সুবিধা করে দেবে সরকার। পার্কটি পূর্ণাঙ্গ চালু হলে ওষুধ শিল্পের কাঁচামালের জন্য কারও মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না। বরং উল্টো কাঁচামাল রফতানি করতে পারবে বাংলাদেশ। সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী দেশে ওষুধের কাঁচামালের বাজার ১২০০ কোটি টাকার বেশি। হাসপাতাল সমাজসেবা কার্যক্রমের মাধ্যমে দরিদ্র অসহায় রোগীদের মানসিক, অর্থনৈতিক, অসুস্থতা বিষয়ক বিভিন্ন সহায়তার পাশাপাশি ও রোগীর সুচিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে রোগীর রোগমুক্তির জন্য চিকিৎসক, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেও সহায়তা করা হয়।
বর্তমান সরকারের সাড়ে নয় বছরে স্বাস্থ্য-বিষয়ক বেশকিছু সূচকে অসাধারণ সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশ অনেকের কাছেই অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত। পাঁচ বছরের কম বয়সের শিশু মৃত্যুহার রোধে বাংলাদেশ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। মাতৃমৃত্যুর হার কমে প্রতি হাজারে ১.৮১ এবং নবজাতক মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ২৪ জন, ৫ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুর হার বর্তমানে প্রতি হাজারে ৩১ জনে নেমে এসেছে। সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচী, সুপেয় পানি ও স্যানিটেশনের সফলতায় বাংলাদেশ বিশ্বে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। যক্ষ্মা রোগের সফলতার হার ৯৬% শতাংশ, কালাজ্বরে মৃত্যুর হার এখন শূন্যের কোঠায়। হেপাটাইটিস বি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, মামস ও রুবেলার টিকা এখন সরকারী কর্মসূচীর আওতাভুক্ত হয়েছে। পুষ্টি ও স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়ে এখন ৭২ বছর। এইচআইভির বিস্তারের লাগাম টেনে ধরা হয়েছে। ২০১১ সালে বার্ড ফ্লু প্রতিহত করা হয়েছে। বাংলাদেশকে এখন পোলিওমুক্ত রাষ্ট্র ঘোষণা করা হয়েছে। এ ধরনের বিভিন্ন জনবান্ধব ও গরিবমুখী কাজের ফলে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাত আজ তৃতীয় বিশ্বের রোল মডেলে রূপান্তরিত হয়েছে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক চিকিৎসা ও জনস্বাস্থ্য সাময়িকী ল্যানসেটের গবেষণায় স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ ও মানসূচকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ভারত, পাকিস্তান, ভুটান, নেপাল ও আফগানিস্তানের ওপরে, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের নিচে। ল্যানসেটের গবেষণায় বলা হয়েছে, নিম্ন আয়ের যে দেশগুলো ২০০০ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে স্বাস্থ্যখাতে প্রাথমিকভাবে ভালো করেছে বা অগ্রগতি ত্বরান্বিত করেছে, সে তালিকায় আছে বাংলাদেশ, মিয়ানমার, ভুটান, কম্বোডিয়া, লাওস ও রুয়ান্ডা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটেছে। মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি, মাতৃমৃত্যুহার হ্রাস, শিশুমৃত্যুহার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) এবং জলবায়ু পরিবর্তন-বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত ডেভিড ন্যাবারো বলেছেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের সাম্প্রতিক অর্জন বিশ্বের অনেক দেশের কাছেই দৃষ্টান্তস্বরূপ। ডেভিড ন্যাবারো ২০১৭ সালে বাংলাদেশ সফরকালে মা ও শিশু স্বাস্থ্যের উন্নয়নে বাংলাদেশের সাফল্যের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, স্বাস্থ্য সেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে তৃণমূলের জনগণকে সম্পৃক্ত করতে বাংলাদেশ সরকারের সক্ষমতা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। তিনি ম্যালেরিয়া নির্মূল, ডায়াবেটিস, রক্তচাপ, হৃদরোগ, নারীদের ক্যান্সার প্রতিরোধের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত কর্মসূচীর প্রশংসা করেন।