নতুন কৃষিনীতি দেশের অগ্রগতিতে অবদান রাখবে

2680

Published on জুলাই 30, 2018
  • Details Image

ড. মো. হুমায়ুন কবীরঃ

আমরা জানি বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছে কৃষিখাত। সেজন্য কৃষিতে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতিকে নিম্নতম পর্যায়ে রেখে অত্যাধুনিক ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহারের উপর জোর দিয়ে কৃষিনীতির খসড়া চূড়ান্ত করেছে মন্ত্রিসভা। এসব নীতিমালার বিবেচ্য বিষয় হিসেবে প্রাধান্য পাচ্ছে- কৃষি ক্ষেত্রে পরিবেশবান্ধব ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহার, প্রতিকূল পরিবেশ অঞ্চলের জন্য কৃষি কর্মসূচি গ্রহণ ইত্যাদি। তাছাড়া সংকটাপন্ন অঞ্চলের পানি উত্তোলনের সতর্কতা অবলম্বনের বিষয়গুলোকে যুক্ত করে নতুন জাতীয় কৃষিনীতি অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

২০১৩ সালে প্রণীত জাতীয় কৃষিনীতিকে এবারে আরেকটু হালনাগাদ ও সমৃদ্ধ করা হয়েছে। অনেক বিষয় এখানে নতুন করে সংযোজন করা হয়েছে। বর্তমান কৃষিনীতি বেশ বিস্তারিত এবং সমৃদ্ধ। নতুন কৃষি নীতিতে ২২টি অধ্যায়, ১০৬টি অনুচ্ছেদ ও উপ-অনুচ্ছেদ যুক্ত করা হয়েছে। আগে ছিল ১৮টি অধ্যায় এবং ৬৩টি অনুচ্ছেদ। নতুন কৃষিনীতির অধ্যায়গুলো ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরে সঠিকভাবে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হয়েছে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে। জাতীয় কৃষিনীতি-২০১৮ এর প্রথম অধ্যায়ে রয়েছে ভূমিকা এবং দ্বিতীয় অধ্যায়ে রয়েছে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং তৃতীয় অধ্যায়ে রয়েছে কৃষি উন্নয়নে গবেষণা। গবেষণার ক্ষেত্রে ১৯টি ক্ষেত্র নির্দিষ্ট করা হয়েছে। ন্যানো প্রযুক্তি সংক্রান্ত বিষয়টি নতুন কৃষি নীতিতে সংযুক্ত করা হয়েছে যা আগে ছিল না। তাছাড়া মান ঘোষিত বীজ উত্পাদন, নগরকেন্দ্রিক কৃষি সম্প্রসারণ সেবা; এটিও আগের নীতিতে ছিল না। এছাড়া কৃষিকে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য শুধু কৃষি মন্ত্রণালয়ই নয় সংশ্লিষ্ট হিসেবে বাণিজ্য, শিল্প মন্ত্রণালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ও এ লক্ষ্যে কাজ করছে যাদের নীতির মাধ্যমে সংযুক্ত করা হয়েছে।

সম্প্রতি জাতীয় কৃষিশুমারি বাস্তবমুখী করতে ১৭০টি কৃষি পণ্যের জন্য তথ্যভাণ্ডার তৈরি করা হচ্ছে। সেই তথ্যভাণ্ডার ব্যবহার করে সেই ১৭০টি কৃষিপণ্য দেশ-বিদেশে আমদানি রপ্তানি করার ক্ষেত্রে বিরাট অবদান রাখবে। অপরদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে ইলিশ মাছকে একটি জিআই পণ্যের তালিকায় সংযুক্ত করতে পেরেছে। কাজ চলছে পাটসহ আরো কিছু কৃষিপণ্যের আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে নিয়ে যাওয়ার। ১৪০টি কৃষিপণ্যের রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে নিয়ে জাতীয় কৃষিপণ্য রপ্তানি নীতিমালা অনুযায়ী এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা এমনিতেই জানি বর্তমান সরকার কৃষি ক্ষেত্রকে উন্নয়নের সবচেয়ে বড় মাধ্যম হিসেবে মনে করেন। কাজেই বর্তমান সরকারের কৃষিনীতি কৃষি ও কৃষক এবং সর্বোপরি দেশের সার্বিক অর্থনীতিবান্ধব হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কাজেই জাতীয় কৃষিনীতি ২০১৮ অবশ্যই দেশবান্ধব একটি কৃষিনীতিই হবে। পরিবর্তিত জলবায়ু এবং পরিবর্তনশীল বিশ্বে টিকে থাকতে হলে নিরাপদ খাদ্য উত্পাদন এখন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করতে হলে একটি বাস্তবসম্মত কৃষিনীতির বিকল্প নেই। এবারে প্রণীত কৃষিনীতি তারই একটি সফল ও বাস্তব প্রতিফলন বলেই মনে হচ্ছে। আমাদের দেশ দ্রুত অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে চলেছে। এ উন্নয়নের ধারায় একটি পালক লাগাবে এ কৃষিনীতি- এটিই সকলের প্রত্যাশা।

লেখকঃ কৃষিবিদ ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত