আওয়ামী লীগের ঘোষণাপত্র, কর্মসূচি ও লক্ষ্য

8242

Published on জুন 10, 2018
  • Details Image

নূহ-উল-আলম লেনিনঃ

মুসলিম লীগের বিশ্বাসঘাতকতা, অঙ্গীকার ভঙ্গ, দুঃশাসন এবং ভিন্নমতের কণ্ঠরোধের প্রতিবাদে আওয়ামী লীগের জন্ম। জন্মলগ্নে, ১৯৪৯ সালের ২৩ ও ২৪ জুন আওয়ামী লীগের প্রথম সম্মেলনে গৃহীত খসড়া ঘোষণাপত্রে ‘মূল দাবি’তে বলা হয়েছিল, পাকিস্তানের দুই ইউনিটের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার, সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে সাধারণ নির্বাচন, গণতন্ত্র ও মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি উত্থাপন করেছিল। সম্মেলনে গৃহীত ১২ দফাঃ

“১. পাকিস্তান একটি স্বাধীন-সার্বভৌম ও জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র হবে। পাকিস্তানের সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী হবে জনসাধারণ।
২. রাষ্ট্রে দুটি আঞ্চলিক ইউনিট থাকবে পূর্ব ও পশ্চিম।
৩. অঞ্চলগুলো লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে স্বায়ত্তশাসন ভোগ করবে। প্রতিরক্ষা-বৈদেশিক সম্পর্ক ও মুদ্রা ব্যবস্থা কেন্দ্রের হাতে থাকবে এবং অন্য সকল বিষয় ইউনিটগুলোর হাতে ন্যস্ত থাকবে।
৪. সরকারী পদাধিকারী ব্যক্তিরা কোন বিশেষ সুবিধা বা অধিকারভোগী হবেন না কিংবা প্রয়োজনাতিরিক্ত বেতন বা ভাতার অধিকারী হবেন না।
৫. সরকারী কর্মচারীরা সমালোচনার অধীন হবেন, কর্তব্য সম্পাদনে ব্যর্থতার জন্য তাদের পদচ্যুত করা যাবে এবং অপরাধের গুরুত্ব অনুসারে তাদের ছোটখাটো বা বড় রকমের সাজা দেয়া যাবে। আদালতে তারা কোন বিশেষ সুবিধার অধিকারী হবেন না। কিংবা আইনের চোখে তাদের প্রতি কোনরূপ পক্ষপাত প্রদর্শন করা হবে না।
৬. জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকল নাগরিক সমান অধিকার ভোগ করবেনÑ যথা বাকস্বাধীনতা, দল গঠনের স্বাধীনতা, অবাধ গতিবিধি ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের অধিকার।
৭. সকল নাগরিকের যোগ্যতানুসারে বৃত্তি অবলম্বনের অধিকার থাকবে এবং তাদের যথাযোগ্য পারিশ্রমিক দেয়া হবে।
৮. সকল পুরুষ ও নারীর জন্য শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হবে।
৯. পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলোতে সকল নাগরিকের যোগদানের অধিকার থাকবে। একটি বিশেষ বয়সসীমা পর্যন্ত সকলের জন্য সামরিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক হবে এবং পূর্ব পাকিস্তানের জন্য নিজস্ব স্থল, নৌ ও বিমান বাহিনীর ইউনিট গঠন করা হবে।
১০. মৌলিক মানবিক অধিকারসমূহ দেয়া হবে এবং কোন অবস্থাতেই কাউকে বিনা বিচারে আটক রাখা হবে না। বিনা বিচারে কাউকে দ-দান বা নিধন করা হবে না।
১১. বিনা খেসারতে জমিদারী ও অন্য সকল মধ্যস্বত্ব বিলোপ করা হবে। সকল আবাদযোগ্য জমি পুনর্বণ্টন করা হবে।
১২. সকল জমি জাতীয়করণ করা হবে।”

সামাজিক অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে খসড়া ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছিল, ভূমি সংস্কার বিনা খেসারতে জমিদারি উচ্ছেদ এবং প্রকৃত কৃষকদের মধ্যে জমি বণ্টন, যৌথ খামার ও সমবায় ব্যবস্থা গড়ে তোলা, সকল শিল্প-কারখানা জাতীয়করণ, শিল্প-কারখানা পরিচালনায় শ্রমিকদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ, শ্রমিকদের সন্তানদের বিনামূল্যে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা এবং তাদের ধর্মঘটের অধিকার প্রভৃতি।

এছাড়া দেশের শিল্পায়ন, শিক্ষার বিস্তার ও নারীর অধিকারের কথাও প্রথম ঘোষণাপত্রে লিপিবদ্ধ ছিল। কৌতূহলোদ্দীপক বিষয় হলো, প্রথম ঘোষণাপত্রের ২২ দফা আশু কর্মসূচির ১৮নং দফায় আওয়ামী লীগ ব্রিটিশ কমনওয়েলথের সাথে সম্পর্কোচ্ছেদ এবং ১৯নং দফায় “আগামী তিন মাসের ভিতরে জাতিসংঘ গণভোট দ্বারা কাশ্মীর সমস্যার সমাধান না করিলে পাকিস্তান কর্তৃক জাতিসংঘ ত্যাগ।”-এর ঘোষণা দিয়েছিল।

আওয়ামী লীগের প্রথম ঘোষণাপত্রের তাৎপর্য বুঝতে হলে প্রতিষ্ঠালগ্নের পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিবেশ, জনগণের মনস্তত্ত্ব এবং চেতনার স্তর এবং প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যেও ভাবাদর্শগত টানাপোড়েন সম্পর্কে ধারণা থাকা বাঞ্ছনীয়। প্রথম ঘোষণাপত্রে ঘোষিত খিলাফত প্রতিষ্ঠার ঘোষণা, ধর্মাশ্রিত রাজনৈতিক সেøাগানের আড়ালে বাঙালির অধিকার এবং এমন কী ‘পূর্ণ স্বাধীন ও সার্বভৌম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রসংঘ’ প্রতিষ্ঠার ঘোষণার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য বোঝা যাবে না।
আমাদের বিবেচনায় রাখতে হবে, মুসলিম লীগের গর্ভেই ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ’র জন্ম। ১৯৪৯ সালে যারা স্বতন্ত্র রাজনৈতিক দল গঠন করেন, তারা প্রায় সবাই ছিলেন ১৯৪৭-এর আগের নিখিল ভারত তথা অবিভক্ত বাংলার মুসলিম লীগের সদস্য। দেশভাগের আগেই, পাকিস্তান আন্দোলন যখন তুঙ্গে, তখনই বেঙ্গল মুসলিম লীগে রক্ষণশীল ও উদারনীতির অনুসারী দুটি অংশের মধ্যে সুস্পষ্ট বিভাজন সৃষ্টি হয়েছিল। উত্তর ভারতের অভিজাত ও প্রতিক্রিয়াশীল মুসলিম লীগ নেতারাই কার্যত দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দখল করেছিল। এদের আশীর্বাদপুষ্ট ছিল বেঙ্গল মুসলিম লীগের জমিদার, সাম্প্রদায়িক ও প্রতিক্রিয়াশীল অংশের প্রতিনিধিত্বকারী খাজা নাজিমুদ্দিন গ্রুপ। আর এর বিপরীতে ছিল অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশিমের নেতৃত্বাধীন প্রগতিশীল এবং উদারপন্থি অংশ। ১৯৪৭ সালে এই অংশটিই সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে বাংলাভাগের বিরুদ্ধে ছিল। এই অংশটি তখন দলে সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল। বেঙ্গল মুসলিম লীগের অফিসিয়াল নেতৃত্ব ছিল সোহরাওয়ার্দী-আবুল হাশিম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে। বেঙ্গল কংগ্রেসের নেতা শরৎবোস (নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর বড় ভাই) এবং প্রভাবশালী কংগ্রেস নেতা কিরণ শঙ্কর রায় এবং মুসলিম লীগের সোহরাওয়ার্দী-আবুল হাশিম গ্রুপ বাংলাকে ভাগ না করে ‘অখ- সমাজতান্ত্রিক বাংলা’ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন। তারা স্বাধীন অখ- বাংলার সংবিধানের একটা রূপরেখাও প্রণয়ন করেছিলেন। কিন্তু বেঙ্গল কংগ্রেসের হিন্দুত্ববাদী শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির নেতৃত্বে হিন্দু জমিদার, বড় ব্যবসায়ী, উচ্চবিত্ত, বর্ণহিন্দু মধ্যবিত্ত শ্রেণি বাংলাভাগের প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। মুসলিম লীগ ভারত ভাগ করে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা তথা ভারত ভাগের আনুষ্ঠানিক দাবি নিয়ে মুসলমানদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক ও ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করেছিলÑ এ কথা সত্য। কিন্তু রেডক্লিফ রোয়েদাদ অনুযায়ী বাংলাভাগের ব্যাপারে প্রথম আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বঙ্গীয় আইনসভার কংগ্রেস দলীয় সদস্যগণ (কংগ্রেস পার্লামেন্টারি পার্টি) এবং কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি। ফলে যুক্ত বাংলা করার উদ্যোগ ভেস্তে যায়।

বাংলাভাগ ঠেকাতে না পারায় মুসলিম লীগের নেতৃত্ব ও সোহরাওয়ার্দী আবুল হাশিম গ্রুপের হাতছাড়া হয়ে যায়। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পূর্ব বাংলার (পূর্ব পাকিস্তান) প্রথম মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পান খাজা নাজিমুদ্দিন। মুসলিম লীগে সোহরাওয়ার্দীর অনুসারীরা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর দলের নেতৃত্ব থেকেই বাদ পড়েন নি, তারা শাসক মুসলিম লীগের নির্যাতনের শিকারে পরিণত হন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আগে থেকেই সোহরাওয়ার্দী অনুসারী মুসলিম লীগের নেতৃস্থানীয় সদস্যরা ১৫০ মোগলটুলিতে অফিস বা ক্যাম্প স্থাপন করেছিলেন। তারা মুসলিম লীগ কর্মী শিবির নাম দিয়ে এই অফিস চালু করেন। বস্তুত দেশভাগের পর এই কার্যালয়টিই হয়ে ওঠে অফিসিয়াল মুসলিম লীগের প্রতিপক্ষ এবং প্রগতিশীল অংশের আশ্রয়কেন্দ্র এবং সকল কর্মকা-ের কেন্দ্র।

আসাম মুসলিম লীগের সভাপতি মওলানা ভাসানী তখন আসাম ত্যাগ করে ঢাকায় চলে আসেন। সিলেটকে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করার গণভোটে আসাম মুসলিম লীগের সভাপতি মওলানা ভাসানীর ছিল উদ্যোগী ভূমিকা। অথচ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর মওলানা ভাসানীকে নাজিমুদ্দিনের মুসলিম লীগ চরম উপেক্ষা করে। স্বাভাবিকভাবেই মওলানা ভাসানী ১৫০ মোগলটুলির মুসলিম লীগ কর্মীদের সাথে একাত্ম হয়ে কাজ করতে শুরু করেন। পাকিস্তান সরকার হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে পূর্ব পাকিস্তানে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে এবং তার প্রদেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

পাকিস্তানের জন্মলগ্ন থেকেই পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠী একদিকে পূর্ব বাংলা (বাংলাদেশ)-কে কার্যত তাদের উপনিবেশে পরিণত করে। জন্মলগ্ন থেকেই দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী, বাঙালিরা তাদের জাতিগত নিপীড়ন, আঞ্চলিক বৈষম্য, গণতন্ত্রহীনতা এবং ভাষা-সংস্কৃতির প্রশ্নে বঞ্চনার শিকারে পরিণত হয়। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর ‘উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা’ ঘোষণার পটভূমিতে গড়ে ওঠে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলন। জিন্নাহর ঢাকা সফরের প্রাক্কালে ছাত্র ধর্মঘটকে কেন্দ্র করে তরুণ ছাত্রনেতা শেখ মুজিবসহ বহুসংখ্যক ছাত্র নেতা, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবীকে গ্রেফতার করা হয়। ’৪৮-এ সূচিত এই আন্দোলনই, ’৫২-এর ভাষা সংগ্রামে পরিণত হয়।

’৪৮-এর ভাষা আন্দোলন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারীদের আন্দোলন, খাদ্যের দাবিতে আন্দোলন, দ্রব্যমূল্য হ্রাসের আন্দোলন এবং জমিদারি প্রথা বাতিলের দাবিতে জনমত প্রভৃতির পটভূমিতে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ ক্রমেই জনবিচ্ছিন্ন হতে থাকে। একইসঙ্গে মুসলিম লীগ তীব্র দমননীতির আশ্রয় গ্রহণ করে। তারা আওয়ামী লীগের প্রতিবাদী অংশটিকে পাকিস্তান-বিরোধী, ইসলাম-বিরোধী এবং ভারতের দালাল হিসেবে মিথ্যা প্রচারণা চালায়। একই সময়ে কমিউনিস্ট পার্টিসহ অন্যান্য সেকুলার গণতান্ত্রিক দল ও বুদ্ধিজীবীদের ওপরও চালায় অত্যাচারের স্টিম রোলার। পাকিস্তান সৃষ্টির মাত্র দুই বছরের মধ্যেই এমন এক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে, যার ফলে দেশপ্রেমিক, উদার গণতন্ত্রী এবং সোহরাওয়ার্দীর অনুগত মুসলিম নেতা-কর্মীদের ঐ দলে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়ে। টাঙ্গাইলের প্রাদেশিক পরিষদের শূন্য আসনে উপনির্বাচনে অফিসিয়াল মুসলিম লীগ প্রার্থীকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে জয়লাভ করে স্বতন্ত্র (মুসলিম লীগ কর্মী) প্রার্থী শামসুল হক। টাঙ্গাইলের উপনির্বাচনে শোচনীয় পরাজয়ের পর মুসলিম লীগ আর কোনো উপনির্বাচন দিতে সাহস পায়নি।

আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশের আগে শাসক মুসলিম লীগের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে একটা কার্যকর বিরোধী দল গড়ে তোলার প্রশ্নে ব্যক্তিগত, সমমনাদের ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপ এবং বড় নেতাদের পর্যায়ে বহু মতবিনিময় ও আলাপ-আলোচনা হয়। গ্রেফতারের পূর্বে শেখ মুজিবুর রহমান ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীগণ নারায়ণগঞ্জের খান সাহেব ওসমান আলীর বাসভবনে একাধিকবার বৈঠক করেছেন। বলা যেতে পারে খান সাহেব ওসমান আলীর বাড়িতেই আওয়ামী লীগের ‘ভ্রƒণ’ জন্ম নেয়।

১৯৪৯ সালের ২৩ ও ২৪ জুন ঢাকার টিকাটুলির রোজ গার্ডেন প্রাঙ্গণে মুসলিম লীগের গণতান্ত্রিক কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। আতাউর রহমান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণ দেন মওলানা ভাসানী। এই সম্মেলন থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ নামে নতুন রাজনৈতিক দল। দলের উদ্বোধনী অধিবেশনে শেরে বাংলা একে ফজলুল হকও উপস্থিত ছিলেন। কথা ছিল তিনিও আওয়ামী লীগে যোগদান করবেন। কিন্তু পরে তিনি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন।

সম্মেলনে ৪০ সদস্য বিশিষ্ট সাংগঠনিক কমিটি গঠিত হয়। মওলানা ভাসানীকে সভাপতি ও শামসুল হককে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। কারাবন্দি শেখ মুজিবুর রহমান যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২৪ জুন সম্মেলন শেষে আরমানিটোলা মাঠে আওয়ামী লীগের প্রথম জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতিত্ব করেন মওলানা ভাসানী।

আমরা আগেই বলেছি এই সম্মেলনে শামসুল হকের ১২-দফা মূল দাবি গৃহীত হয়। পরবর্তীতে খসড়া ম্যানিফেস্টো রচিত হয়।

ম্যানিফেস্টোতে তখনকার বাস্তবতায় ‘খিলাফত’ প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয় পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অপপ্রচারের মুখ বন্ধ করার কৌশল হিসেবে। আওয়ামী লীগকে যাতে ইসলাম-বিরোধী, পাকিস্তান-বিরোধী এবং ভারতের দালাল হিসেবে প্রচার করেও জনগণকে বিভ্রান্ত করতে না পারে সে জন্য এই রক্ষণশীল এবং প্রগতিবিরোধী লক্ষ্য কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু এই একই ম্যানিফেস্টোতেই আবার সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ঘোষিত হয়। সকল ধর্মের মানুষের সমান অধিকারের ঘোষণাও দেওয়া হয়।

নবগঠিত আওয়ামী লীগের নেতাদের ধারণা ছিল ব্রিটিশ কমনওয়েলথ-এর সদস্য থাকা মানে দেশের পূর্ণ স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অর্জিত না হওয়া। সে জন্যই কমনওয়েলথের প্রশ্নে সম্পর্কোচ্ছেদের ঘোষণা দেওয়া হয়। অন্যদিকে কাশ্মীর ইস্যুটি তখন পাকিস্তানের উভয় অংশের মানুষের কাছে খুবই আবেগ ও স্পর্শকাতর বিষয় ছিল। আওয়ামী লীগ তাই আগ বাড়িয়ে তিন মাসের আলটিমেটাম দিয়ে জাতিসংঘ ত্যাগের হুমকি দেয়। এসব দাবিই ছিল তখনকার বাস্তবতায় জনগণের মনোস্তত্ত্বকে তুষ্ট করার কৌশল।

তবে ম্যানিফেস্টোতে ভূমি সংস্কার ও বিনা খেসারতে জমিদারি উৎখাতের দাবিটি যথার্থ ছিল। কিন্তু যৌথ খামার ও জমির সমবণ্টন এবং সকল শিল্প-কারখানা জাতীয়করণ ও শ্রমিকদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে কারখানা পরিচালনার দাবিগুলো ছিল কিছুটা স্বপ্ন-কল্পনা বা ইউটোপিয়া।

আমার মতে, আওয়ামী লীগের জন্মলগ্নের প্রথম সম্মেলনের ১২-দফা মূল দাবিই ছিল এই দলটির গড়ে ওঠা ও বিকাশধারার মূল ভিত্তি।

মূল দাবির সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ হচ্ছে ২নং ও ৩নং দাবি অর্থাৎ, ২নং. “রাষ্ট্রের দুটি আঞ্চলিক ইউনিট থাকবে, পূর্ব ও পশ্চিম”, ৩নং “অঞ্চলগুলো লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে স্বায়ত্তশাসন ভোগ করবে। প্রতিরক্ষা-বৈদেশিক সম্পর্ক ও মুদ্রাব্যবস্থা কেন্দ্রের হাতে থাকবে এবং অন্য সকল বিষয় ইউনিটগুলোর হাতে ন্যস্ত থাকবে” এবং ৯নং দাবি “পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলোতে সকল নাগরিকের যোগদানের অধিকার থাকবে। একটি বিশেষ বয়সসীমা পর্যন্ত সকলের জন্য সামরিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক হবে এবং পূর্ব পাকিস্তানের জন্য নিজস্ব স্থল, নৌ ও বিমান বাহিনীর ইউনিট গঠন করা হবে।” Ñ বলা যেতে পারে এই ৩টি দাবির মধ্যেই ৬-দফা দাবির বীজ উপ্ত ছিল।

১৯৫৩ সালে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনী ইশতেহার ঐতিহাসিক ২১-দফা প্রণয়ন করেছিল আওয়ামী লীগ। ২১-দফার ১নং দফায় প্রকৃতপক্ষে ২, ৩ ও ৯নং দফার মর্মবাণীই পুনরুচ্চারিত হয়েছে। ’৫৪-এর নির্বাচন বাংলার মানুষ মুসলিম লীগকে চূড়ান্তভাবে এবং ২১-দফা কর্মসূচির পক্ষে রায় দেয়। নানা প্রাসাদ ষড়যন্ত্র, উত্থান-পতন ও চড়াই-উৎরাইয়ের ভেতর দিয়ে ১৯৫৪ থেকে ১৯৫৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত পূর্ব বাংলায় ও পাকিস্তানের কেন্দ্রে বেসামরিক, নির্বাচিত সরকারের ধারা অব্যাহত থাকে। ১৯৫৬-৫৮ এই দুই বছর পূর্ব বাংলায় আওয়ামী লীগ সরকার এবং ১৯৫৬-৫৭ পাকিস্তানের কেন্দ্রে সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে কোয়ালিশন সরকার ক্ষমতায় ছিল। ’৫৪ থেকে ’৫৮ সালের যুক্তফ্রন্ট ও আওয়ামী লীগের শাসনামলে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করা হয়, মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন বর্ধমান হাউসকে বাংলা একাডেমির কার্যালয়ে রূপান্তরিত করা হয়, আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের নির্মাণকাজ শুরু করা হয়, চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন গঠনসহ বেশ কিছু গণমুখী কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের প্রথম সংবিধান প্রণীত হয়। সিদ্ধান্ত হয় এই সংবিধানের ভিত্তিতে অবিলম্বে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

এছাড়া ভাষা আন্দোলনের পটভূমিতে প্রথমে ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে আওয়ামী লীগের নামের সাথে মুসলিম শব্দটি বাদ দেওয়া তথা আওয়ামী লীগকে ধর্মনিরপেক্ষ দলে রূপান্তরিত করার প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। ৫৭ সদস্যের ওয়ার্কিং কমিটির ২৭ জন সদস্য খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে ধর্মনিরপেক্ষতার প্রস্তাবের বিরোধিতা করে। অবশ্য ১৯৫৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘মুসলিম’ শব্দ বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ সেক্যুলার দলে পরিণত হয়।

এই সময়ে আরও দুটি ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনা সংঘটিত হয়। ১৯৫৭ সালের ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলের কাগমারীতে আওয়ামী লীগের বিশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী উপস্থিত ছিলেন। মওলানা ভাসানী পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি। সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান। কাগমারী সম্মেলনে পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে অত্যন্ত সুনির্দিষ্টভাবে উত্থাপিত হয়। কিন্তু এই সম্মেলনেই মওলানা ভাসানী ও সোহরাওয়ার্দীর মধ্যে তথা পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের মধ্যে প্রধানত পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে চূড়ান্ত মতপার্থক্য সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। কাগমারী সম্মেলনের এক মাসের মধ্যেই মওলানা ভাসানী আওয়ামী লীগ ত্যাগ করেন। ১৯৫৭ সালের ১৩ ও ১৪ জুন ঢাকায় আরমানিটোলা নিউ পিকচার হাউসে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। ভাসানী দল ত্যাগ করলেও আওয়ামী লীগ তাকে সভাপতির পদে বহাল রাখে। কিন্তু ভাসানী সাহেব তখন নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করার উদ্যোগ নেন। ১৯৫৭ সালের ২৫ ও ২৬ জুলাই এক নিখিল পাকিস্তানভিত্তিক সম্মেলনের মাধ্যমে মওলানা ভাসানী ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) নামে স্বতন্ত্র রাজনৈতিক দল গঠন করেন।

ইতোমধ্যে পাকিস্তানে প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের রাজনীতি চূড়ান্ত রূপলাভ করে। ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর এক সামরিক অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। প্রথমে ইস্কান্দার মির্জা এবং পরে ‘লৌহ মানব’ আইয়ুব খাঁ সামরিক শাসক হিসেবে আবির্ভূত হন। দীর্ঘ চার বছর (১৯৫৮-১৯৬২) সামরিক শাসন অব্যাহত থাকে। সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। চলে জেল জুলুম অত্যাচার। ১৯৬২ সালে সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনের ফলে সামরিক শাসন প্রত্যাহৃত হয়। আইয়ুব খাঁ ‘মৌলিক গণতন্ত্র’ নামে সীমিত ও নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র চালু করে। ১৯৬৪ সালের মার্চ মাসে আওয়ামী লীগ পুনরুজ্জীবিত হয়।

পুনরুজ্জীবিত আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রস্তাবে পূর্ব বাংলায় স্বায়ত্তশাসনের নিশ্চয়তা দান, পাকিস্তানের দুই অংশের সমান উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক বৈষম্যের অবসান, সামরিক দিক থেকে পূর্ব বাংলাকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে গড়ে তোলা এবং ফেডারেল ধরনের পার্লামেন্টারি সরকার ব্যবস্থা চালুর দাবি উত্থাপিত হয়।

১৯৬৪ সালের ৬ জুন প্রকাশিত হয় পুনরুজ্জীবিত আওয়ামী লীগের ১১-দফা খসড়া ম্যানিফেস্টো। এই ম্যানিফেস্টোতেও লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে পূর্ব বাংলার পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের দাবি উত্থাপিত হয়। এবারই প্রথম কেন্দ্রের হাতে মুদ্রা থাকার প্রস্তাবটি বাদ দেওয়া হয়।

১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী দলগুলোর গোলটেবিল বৈঠকে ৬-দফা আলোচনার এজেন্ডাভুক্ত করতে চাইলে গোলটেবিল বৈঠক ভেস্তে যায়। লাহোরেই বঙ্গবন্ধু ৬-দফা দাবি প্রকাশ করেন।

৬-দফাকে বঙ্গবন্ধু বাঙালির মুক্তিসনদ হিসেবে ঘোষণা করেন। ১৯৪৯ সালের প্রতিষ্ঠালগ্নের যে তিন-দফা দাবির কথা আমরা ইতোমধ্যে উল্লেখ করেছি, সেই তিন দফা, যুক্তফ্রন্টের ২১-দফা, ১৯৬৪ সালের ১১-দফা প্রভৃতি দাবিকে ভিত্তি করেই প্রণীত হয় ঐতিহাসিক ৬-দফা। জন্মলগ্নের স্বপ্ন ৬-দফায় আরও সুস্পষ্ট অবয়ব লাভ করে। ১৯৪৯-এ পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও মুদ্রাব্যবস্থা কেন্দ্রের হাতে রেখে অবশিষ্ট সকল ক্ষমতা প্রাদেশিক সরকারের হাতে ন্যস্ত করার দাবি করা হয়েছিল। কিন্তু আইউবের শাসনামলে দুই অংশের অর্থনৈতিক বৈষম্য প্রকট রূপ ধারণ করে। পূর্ব বাংলার অর্থে পশ্চিম পাকিস্তানে শিল্পায়ন, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং শক্তিশালী সেনাবাহিনী গড়ে তোলা হয়। ১৯৬৫-এর ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে পূর্ব বাংলার নিরাপত্তাহীনতা দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। তার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই বঙ্গবন্ধু ৬-দফা দাবিতে স্বায়ত্তশাসন বা ফেডারেল ধরনের সরকার ব্যবস্থার কথাই নয়, তিনি স্পষ্টভাবে দুই অর্থনীতি, দুই মুদ্রা, দুই রিজার্ভ ব্যাংকের কথা যেমন উপস্থাপন করেন; তেমনি পূর্ব বাংলায় নৌবাহিনী সদর দফতর এবং নিজস্ব মিলিশিয়া বাহিনী গড়ে তোলার কথা বলেন। কার্যত কেন্দ্রের হাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব আংশিক প্রতিরক্ষা ক্ষমতা রেখে পূর্ব বাংলার পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের দাবি উত্থাপন করেন। ৬-দফা কার্যত প্রকারান্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার দাবিতে পরিণত হয়।

১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগ ৬-দফার পক্ষে গণভোট দাবি করেন। ৬-দফা তখন ছাত্রসমাজের ১১-দফার অন্তর্ভুক্ত। নির্বাচনী ইশতেহারে বঙ্গবন্ধু সে কথা উল্লেখ করেন। কিন্তু নির্বাচনী ইশতেহারে ও নির্বাচন উপলক্ষে প্রদত্ত ভাষণে তিনি বারবার বলেছেন, প্রাণের দাবি ৬-দফা হচ্ছে বাঙালির মুক্তির সনদ বা ম্যাগনাকার্টা। ’৭০-এর নির্বাচনকে তিনি তাই ৬-দফার পক্ষে ‘গণভোট’ হিসেবে উল্লেখ করেন। বাংলার মানুষ সেই ঐতিহাসিক গণভোটে যেমন ৬-দফার পক্ষে নিরঙ্কুশ রায় প্রদান করে তেমনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তাদের অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে বরণ করে নেয়।

প্রবন্ধটি শেষ করব এ কথা বলে যে, সময়ের পরিবর্তনে, যেমন রাজনৈতিক আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে নানা পরিবর্তন সাধিত হয়েছে, তেমিন অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বাংলাদেশের মানুষের চিন্তাধারা ও মন-মানসিকতার পরিবর্তন হয়েছে। পাকিস্তানের সাম্প্রদায়িক দ্বি-জাতিতত্ত্বের যে মোহজালে বাঙালি মুসলমান আচ্ছন্ন ছিল ভাষা-সংগ্রাম থেকে ৬-দফা, ১১-দফা আন্দোলনের ভেতর দিয়ে সেই মোহজাল যেমন ছিন্ন হয়েছে, তেমনি তাদের বাঙালি আত্মপরিচয় নিয়ে নতুন চেতনার উন্মেষ হয়েছে। একইসঙ্গে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে তাদের আশা-আকাক্সক্ষা ও চেতনার স্তর নতুন উচ্চতায় বিকশিত হয়েছে। অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতীয়তাবাদ, নিজেদের জাতি-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আকাক্সক্ষার পাশাপাশি ‘সমাজতন্ত্রের’ প্রতিও এক ধরনের প্রত্যাশা বাঙালি জাতিকে উজ্জীবিত করেছে। ১৯৪৯ সালের প্রথম খসড়া ম্যানিফেস্টোতে তখনকার রাজনৈতিক পরিবেশের সঙ্গে ধর্মাশ্রিত নানা আপ্তবাক্য বলা হলেও, ঐ ম্যানিফেস্টোতেই প্রথম উচ্চারিত হয়েছিল স্বশাসনের কথা, গণতন্ত্রের কথা, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকল মানুষের সম-অধিকার এবং শোষণমুক্ত সমাজ তথা সমাজতন্ত্রের কথা। ১৯৪৯ সালে রোপিত বীজটিই ’৭০ সালে মহীরুহে পরিণত হয়েছিল এবং ’৭১-এ মহান মুক্তিযুদ্ধের ভেতর দিয়ে তা যৌক্তিক পরিণতি লাভ করেছিল।

সৌজন্যেঃ উত্তরণ

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত