8646
Published on মে 23, 2018ডা. মো. ফজলুল হক:
১৯৯৬ সালে উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য গিয়েছিলাম টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ে। এক পিএইচডি ছাত্র জানতে চাইলেন, তোমার দেশ কোনটি? বাংলাদেশ বলায় বেশ কয়েক মিনিট পর বললেন, এটি কোথায় অবস্থিত। ভারতের কোন দিকে। ২০০৯ সালে গিয়েছিলাম সৌদি আরবে হজ পালন করতে। নাইজেরিয়ান এক হাজি সাহেব আমার বাড়ি কোন দেশে জানতে চাইলেন। আমি বললাম বাংলাদেশে। পাল্টা প্রশ্ন করলাম—তুমি বাংলাদেশ চেনো কি? উত্তরে তিনি বললেন, ইয়েস—বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, দ্য ফাদার অব নেশন। এতে বুঝতে পারলাম বাংলাদেশকে চিনতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর পরিচয়টি তাদের কাছে প্রাধান্য পেয়েছে। বঙ্গবন্ধু তাঁর অক্লান্ত চেষ্টা, অদম্য সাহস, দেশপ্রেম ও সততার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার ফসল হিসেবে জাতিকে দিয়েছেন সোনার বাংলাদেশ। তাঁর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা দিয়েছেন আধুনিক বাংলাদেশের রূপরেখা, স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য অদম্য সাহস ও শক্তি। তাঁর রাজনৈতিক জীবন ৩৭ বছর কয়েক মাস। দেশ-বিদেশের অনেক বাধাকে জয় করে একের পর এক অভাবনীয় কাজ করে বিশ্ববাসীকেও তাক লাগিয়েছেন। ১৯৭২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রায় ৪৬ বছরের মধ্যে আওয়ামী লীগ শাসন করেছে সাড়ে সতেরো বছর। এ সময়ের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর শাসনামল মাত্র সাড়ে তিন বছর। সে সময়ে দুর্ভিক্ষ, যুদ্ধবিধ্বস্ত ঘরবাড়ি, যোগাযোগব্যবস্থাসহ বিভিন্ন কাজের জন্য বিদেশের কাছে ধরনা দিয়ে দেশকে উন্নয়নের জোয়ারে আনতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে বঙ্গবন্ধুকে। এরপর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ফলে উন্নয়নের চাকা বন্ধ হয়ে যায়। বিশ্ববাসী আজ আমাদের দেশকে উন্নয়নের মডেল হিসেবে দেখছে। যেমন জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য মডেল দেশ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এক জনসভায় মন্তব্য করেন, উন্নয়নের দিক থেকে বর্তমান বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম পর্যায়ে। এ ছাড়া নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেন বাংলাদেশের অবস্থানকে স্বর্ণোজ্জ্বল বলে অভিহিত করেছেন।
আজ আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্র্রী শেখ হাসিনার প্রচেষ্টায় পেয়েছি মহাকাশের সন্ধান। ১২ মে ২০১৮ শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে নতুন যুগের মহাকাশ যাত্রা শুরু হলো। এ সরকারকে কাজ করার সুস্থ পরিবেশ দিলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়ে যাবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। হেনরি কিসিঞ্জারের মন্তব্য ছিল তলাবিহীন ঝুড়ি, আজ সেই আমেরিকার মাটি থেকেই মহাকাশে উড়ল বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট। বাংলাদেশ আজ ৫৭তম স্যাটেলাইটসম্পন্ন রাষ্ট্রের তালিকায়।
শুধু সম্মানই নয়, প্রতিবছর অতিরিক্ত খরচ ছাড়াও আয় হবে প্রায় ৪০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। বর্তমানে অর্থনীতিতে ৭৪টি উদীয়মান দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৩৪তম অবস্থানে, যা পাকিস্তান, ভারত ও শ্রীলঙ্কার চেয়েও বেশি। এখানেই শেষ নয়, দেশে নতুনভাবে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। বর্তমানে ৩০টি টিভি চ্যানেল রয়েছে বাংলাদেশে, যার স্যাটেলাইট ভাড়া প্রতিবছর ১১৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার তহবিল থেকে চলে যেত। এখন বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট হওয়ায় দেশের টাকা দেশেই থাকবে। তা ছাড়া আয় হবে কোটি কোটি টাকা। পূর্বাভাসের মাধ্যমে দুর্যোগ থেকেও মানুষ রক্ষা পাবে আগাম বার্তার কারণে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে আরো এক ধাপ এগিয়ে যাবে।
উল্লেখ্য, দেশের স্বার্থকে দেখতে হবে সবার ঊর্ধ্বে। ভাবতে হবে বিগত ৪৬ বছরে কোন সরকার কতটুকু ভূমিকা রাখতে পেরেছে। পেশিশক্তির যুগ শেষ অনেক আগেই। এখন প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্ব। প্রযুক্তিতে যে দেশ যত ভূমিকা রাখতে পারবে সে দেশ ততটাই সমৃদ্ধ। ২০০৮ সালেও দেখেছি বিদেশিদের ফেলে দেওয়া কম্পিউটার, প্রিন্টার রাস্তা থেকে কুড়িয়ে তা মেরামত করে ব্যবহার করার মতো অবস্থা। দেখেছি একটি কালভার্ট, ব্রিজ, রাস্তাঘাট তৈরি ও খাল খননের জন্য বিদেশিদের ওপর নির্ভর করতে হতো আমাদের। ২০০৯ সাল থেকে ধীরে ধীরে ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা হ্রাস পেতে শুরু করেছিল। শুধু তা-ই নয়, পর্যায়ক্রমে সফলতা আসছে আমাদের। শেখ হাসিনার সরকার আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে সমুদ্র জয় করেছে। এর মাধ্যমে এক লাখ ১১ হাজার ৬৩১ বর্গকিলোমিটার মিয়ানমারের দখল থেকে এবং ১৯ হাজার ৪৬৭ বর্গকিলোমিটার সমুদ্রসীমা ভারতের দখল থেকে বাংলাদেশের অধীনে আসে। তা ছাড়া ৬৮ বছরের বন্দিজীবন থেকে ছিটমহলবাসীদের মুক্ত করেছেন শেখ হাসিনা। বর্তমান সরকারের ভালো কাজগুলো মূল্যায়ন করে দেশকে আরো এগিয়ে নিতে হবে। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বিগত সময়ে একাধারে প্রায় ২২ বছর রাষ্ট্রক্ষমতায় থেকে দেশটিকে এগিয়ে নিয়েছিলেন বিধায় সে দেশের মানুষ আবার তাঁকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করেছে। আমাদের উন্নয়নের গতি সঠিক পথে রাখতে হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিকল্প নেই বলে বেশির ভাগ মানুষ মনে করে। সততা ছাড়া বা সৎ নেতা ছাড়া দেশই শুধু নয়, নিজের ছোট সংসারও টিকিয়ে রাখা যায় না।
লেখক : ডিন, ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিম্যাল সায়েন্স অনুষদ এবং চেয়ারম্যান, মেডিসিন, সার্জারি অ্যান্ড অবস্টেট্রিকস বিভাগ, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়