11077
Published on মে 22, 2018বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন বলে আগের দেওয়া রায় বহাল রেখেছেন কানাডার ফেডারেল কোর্ট। সেখানে আশ্রয়প্রার্থী মো. মোস্তফা কামালের পক্ষ থেকে করা রিভিউ আবেদন খারিজ করে আদালত এ রায় দেন।
পুর্নাঙ্গ রায়টি পড়ুন এখানেঃ Kamal v. Canada (Immigration, Refugees and Citizenship)
এর আগে, ২০১৫ সালে বাংলাদেশ ছেড়ে কানাডায় আশ্রয় প্রার্থনা করেন মো. মোস্তফা কামাল। ওই সময় তার বিষয়ে আদালতকে কানাডা সরকার বলেছিল, তিনি বাংলাদেশে বিএনপি নামে একটি রাজনৈতিক দলের সদস্য পরিচয়ে আশ্রয় চাচ্ছেন। সেই রাজনৈতিক দল সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত।
আদালতে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকারকে উৎখাত প্রচেষ্টাতেও বিএনপির পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন বলে মোস্তফা কামালের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে। কানাডিয়ান বর্ডার সিকিউরিটি এজেন্সির (সিবিএসএ) তৈরি একটি প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে আদালতে কানাডা সরকারের পক্ষে এসব তথ্য উপস্থাপন করেন দেশটির জননিরাপত্তা ও জরুরি তৎপরতা বিষয়ক মন্ত্রী।
কানাডা সরকারের এই বক্তব্য গ্রহণ করে আদালত মোস্তফা কামালের আবেদন খারিজ করে দেন। পরে তিনি আবার দেশটির ফেডারেল কোর্টে রিভিউয়ের জন্য আবেদন করেন। ফেডারেল কোর্ট গত ৪ মে এ আপিলের রায় ঘোষণা করেন, যা ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে গতকাল সোমবার (২২ মে)।
রায়ের ব্যাখ্যা দিয়ে বলা হয়েছে, বিএনপিকে ‘সন্ত্রাসী দল’ বলে মন্ত্রীর বক্তব্যকেই মেনে নিয়েছেন ফেডারেল কোর্ট। রায়ে বলা হয়েছে, মোস্তফা কামালের রিভিউ আবেদনের পর জননিরাপত্তা ও জরুরি তৎপরতা বিষয়ক মন্ত্রীর দাবির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য কানাডার অভিবাসন ও শরণার্থী বোর্ডের অভিবাসন বিভাগকে (আইডি) নির্দেশ দেন ফেডারেল কোর্ট। তখন জননিরাপত্তা ও জরুরি তৎপরতা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিনিধি সিবিএসএ’র প্রতিবেদন রেফারেন্স হিসেবে আইডি’র কাছে তুলে দেন।
ওই প্রতিবেদনসহ সম্পূর্ণ বিষয়টি যাচাই ও পুনর্বিবেচনা করে এবং পরবর্তী শুনানিগুলোতে মন্ত্রীর যুক্তি পর্যালোচনা করে কানাডা সরকারের আগের বক্তব্যই সঠিক বলে সিদ্ধান্তে আসে আইডি। এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি’র বিরুদ্ধে অভিযোগগুলোর যৌক্তিকতা রয়েছে উল্লেখ করে ফেডারেল কোর্ট মোস্তফা কামালের আপিল আবেদন খারিজ করেন এবং তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আপিলের রায়ের পর আইডি’র সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রক্রিয়াগত অন্যায্যতার অভিযোগ করে সিদ্ধান্ত রিভিউয়ের আবেদন করলে এই যুক্তি মেনে নেননি আদালত। আইনি প্রক্রিয়ায় কোনো ত্রুটি ছিল কিনা, তা যাচাই করে কোর্ট এ রায় দেন। আর আগের রায়ে বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন বলাটা তার বিষয় নয় বলেও জানান এই আদালত। তাই প্রক্রিয়ার শুদ্ধতা নিশ্চিত করে বাকি সব বিষয়ে আগের রায়ই বহাল রাখা হয়।
এর আগে, বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবী দলের একজন কর্মীর রাজনৈতিক আশ্রয় সংক্রান্ত জুডিশিয়াল রিভিউয়ের আবেদনে ফেডারেল কোর্টের বিচারক জাস্টিস ব্রাউন বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। ওই নথি থেকে জানা গেছে, ‘এস এ’ আদ্যক্ষরের ব্যক্তিটি ২০০৪ সালে বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির যুব শাখা জাতীয়তাবাদী যুব দলে যোগ দেন। ২০১২ সালে তিনি বিএনপির নির্বাহী কমিটির জয়েন্ট সেক্রেটারির দায়িত্ব পান। ২০১৪ সালে তিনি কানাডায় এসে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন।
২০১৬ সালের আগস্ট মাসে ইমিগ্রেশন ডিভিশন তার আবেদনের শুনানি করে ওই দিনই সিদ্ধান্ত জানায়। ‘এস এ’ নিজেকে বিএনপি নেতা হিসেবে দাবি করেছেন উল্লেখ করে ইমিগ্রেশন ডিভিশন তাকে কানাডায় প্রবেশের অযোগ্য হিসেবে ঘোষণা করে। ইমিগ্রেশন ডিভিশনের সিদ্ধান্তে বলা হয়, ‘বিএনপি সন্ত্রাসী কাজে লিপ্ত আছে, সন্ত্রাসী কাজে লিপ্ত ছিল, সন্ত্রাসী কাজে লিপ্ত হতে পারে’— এটা বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কারণ আছে। কাজেই বিএনপির সদস্য হিসেবে ‘এস এ’ ইমিগ্রেশন ও রিফিউজি প্রোটেকশন অ্যাক্টের ৩৪ (১)(এফ) ধারা অনুযায়ী কানাডায় প্রবেশের অযোগ্য।
ওই সময় রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তি করতে গিয়ে বিচারক বলেন, ইমিগ্রেশন ডিভিশনের পর্যালোচনায় আমি কোনো ভুল খুঁজে পাইনি। বিএনপির ডাকা হরতালে যে সন্ত্রাস ও স্বাভাবিক জীবনের বিঘ্ন ঘটেছে এবং হরতালের ফলে সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে বিএনপি যে সচেতন ছিল— এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে কানাডার আইনে সন্ত্রাসের বিস্তৃত সংজ্ঞা অনুযায়ী ইমিগ্রেশন ডিভিশন যুক্তিসঙ্গত উপসংহারেই পৌঁছেছেন যে বিএনপি হচ্ছে একটি সংগঠন, যেটি সন্ত্রাসে লিপ্ত ছিল আছে বা সন্ত্রাসে লিপ্ত হবে।
আদালত আরও বলেন, ইমিগ্রেশন ডিভিশন দীর্ঘ দালিলিক তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে উপসংহারে পৌঁছেছেন। তারা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকা থেকে তথ্য-উপাত্ত নিয়েছেন। এগুলোর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে কোনো মহলেই কোনো বিতর্ক হয়নি। ইমিগ্রেশন ডিভিশন উপসংহার টেনেছেন, তাদের (বিএনপির) কাজের (হরতাল) ফলে কী ঘটছে বা ঘটতে যাচ্ছে, সে ব্যাপারে বিএনপির যথেষ্ট ওয়াকিবহাল ও সচেতন ছিল। তাদের এই পদক্ষেপের ফলে চরম সন্ত্রাস, নির্বিচারে মানুষ হত্যা ও ভয়াবহ ধরনের অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতার ঘটনা ঘটেছে। ইমিগ্রেশন ডিভিশন তাদের পর্যালোচনায় নিশ্চিত হয়েছে, বিএনপি এইসব সন্ত্রাসের নিন্দা করেনি এবং সেটি না করে তারা সন্ত্রাসকে গ্রহণ করে নিয়েছে।