4011
Published on মে 15, 2018উন্নয়ন ও দুর্যোগ ঝুঁকি কর্মসূচিতে প্রতিবন্ধিতাকে অন্তর্ভুক্ত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি জোরালো আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীতে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধকতা ও দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা সম্মেলনের উদ্বোধনীতে তিনি এ আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, “আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সকলকে তাদের উন্নয়ন ও দুর্যোগ ঝুঁকি কর্মসূচিতে প্রতিবন্ধিতা বিষয়ে অন্তর্ভুক্তিকরণের জোরালো আহ্বান জানাচ্ছি।”
দুর্যোগপ্রবণ দেশ হিসাবে বাংলাদেশের পরিচিতির কথা উল্লেখ করে তিনি হাসিনা বলেন, “দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ পারদর্শিতা অর্জন করেছে। এখন যে কোনো দুর্যোগ আমরা মোকাবেলা করতে পারি।”
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। সাইক্লোন, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, টর্নেডো, বজ্রপাত, ভূমিধসের মত বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাংলাদেশকে প্রায়শই মোকাবিলা করতে হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তিন দিনের এই আন্তর্জাতিক সম্মেলন হচ্ছে। এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, পারস্পরিক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে সেন্দাই ফ্রেমওয়ার্ক, আঞ্চলিক পরিকল্পনা এবং ২০১৫ সালের ঢাকা ঘোষণার কর্মপন্থাগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা।
২০১৫ সালের ডিসেম্বরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘প্রতিবন্ধিতা ও দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা’ বিষয়ক প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ‘ঢাকা ঘোষণা’ সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়েছে।
জার্মানওয়াচ প্রকাশিত গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স ২০১৮ অনুযায়ী, ১৯৯৭ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রায় ১১ হাজার চরম আবহাওয়াজনিত দুর্যোগ সংঘটিত হয়েছে। এর ফলে প্রায় ৫ লাখ ২৪ হাজার লোকের মৃত্যু হয়েছে। এসব দুর্যোগে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩ দশমিক ১৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার।
২০১৪ এবং ২০১৫ সালে পরপর দুবার চরম আবহাওয়াজনিত দুর্যোগ কবলিত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ষষ্ঠ।
নয়াদিল্লীতে ২০১৬ সালে এশিয়ান মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্স অন ডিজাস্টার রিস্ক রিডাকশন সম্মেলনে নেওয়া ‘নয়াদিল্লী ঘোষণা ২০১৬’ তে ‘ঢাকা ঘোষণা’কে স্বীকৃতি প্রদানে সহায়তা ইউনাইটেড নেশনস অফিস ফর ডিজাস্টার রিস্ক রিডাকশন (ইউএনআইএসডিআর) ও অন্যান্য অংশগ্রহণকারী দেশকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ওই সম্মেলনে বাংলাদেশের ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচিকে (সিপিপি) আন্তর্জাতিকভাবে অনুসরণের জন্য উত্তম কর্মসূচি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।”
সরকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায়ও এখন সাইক্লোন প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) অনুসরণ ও সম্প্রসারণ করছে বলে জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, “দুর্যোগ-পরবর্তী ত্রাণ কার্যক্রমের পরিবর্তে আমরা টেকসই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নীতি গ্রহণ করেছি, যা আমাদের সেন্দাই ফ্রেমওয়ার্ক, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্যারিস চুক্তি-২০১৫ এর মতো আন্তর্জাতিক নীতি কাঠামোর সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সহায়তা করেছে।”
দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে গত সাড়ে ৯ বছরে সারা দেশে চার হাজার ৮৮টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, ২৫৫টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২২০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের এবং ৪২৩টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র ও ৬৬টি ত্রাণ গুদাম নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে।
“দেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগকালে খাদ্যাভাব মেটাতে দুর্যোগপ্রবণ ১৯টি জেলার ৬৩টি উপজেলার পাঁচ লাখ পরিবারের মধ্যে ৫৬ কেজি চাল বা ৪০ কেজি ধান ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি করে ফুডগ্রেড প্লাস্টিকের তৈরি পারিবারিক সাইলো বিতরণ করা হচ্ছে।”
ঢাকায় তিনদিনের এই সম্মেলন থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জীবন ও জীবিকা উন্নয়নে এবং দুর্যোগ সহনশীলতা শক্তিশালী করতে সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে সুনির্দিষ্ট কর্মপন্থা গ্রহণে সহায়তা করবে বলেও প্রধানমন্ত্রী আশাপ্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদশের অটিজম বিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক পরার্মশক প্যানেলের সদস্য সায়মা ওয়াজেদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী তার মেয়েকে প্রতিবন্ধিতা অন্তর্ভুক্তিমূলক দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বিষয়টিকে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে গুরুত্বপূর্ণভাবে তুলে ধরার আহ্বানও জানান।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন থাই পার্লামেন্টের সদস্য মুনথেইন বুন্টান।
অনুষ্ঠানে ইউএনআইএসডিআরের বিশেষ প্রতিনিধি মামি মিজোতুরির বার্তা পড়ে শোনান বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সেপ্পো।
সেলফ হেল্প গ্রুপের কাজলরেখাও অনুষ্ঠানে তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শাহ্ কামাল।