বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংবাদ সম্মেলন - ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপি

10013

Published on মে 8, 2018
  • Details Image

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংবাদ সম্মেলন

ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপি

সভাপতিমন্ডলীর সদস্য
তারিখ : ১২ মে ২০১৮ শনিবার
সময় : বিকাল ৪টা
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়, ধানমন্ডি, ঢাকা


প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
আপনারা আমাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিবাদন গ্রহণ করুন।

আপনারা অবগত আছেন, বিএনপি’র অপপ্রচার ও মিথ্যাচারের রাজনীতি নতুন নয়। তারা তাদের অতীত অপকর্ম লুকাতে চিরাচরিত অপপ্রচারের আশ্রয় নেয়। আমরা দেখেছি গত কয়েকদিন বাংলাদেশের বিভিন্ন অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে নির্লজ্জ মিথ্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। আমরা এ ধরনের মিথ্যাচারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

বাংলাদেশ আজ প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সারাবিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু-কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক মেধা, যোগ্যতা, প্রজ্ঞা, দক্ষতা, সততা ও নেতৃত্ব আজ বিশ্বনন্দিত। পৃথিবীর উন্নত রাষ্ট্রের প্রধান ও বিশ্ব গণমাধ্যম তার প্রতিনিয়িত স্বীকৃতি দিচ্ছে।

ইতোমধ্যে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত রাষ্ট্র থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উন্নীত হয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে আমরা স্বপ্নের পদ্মাসেতু নির্মাণ করছি। গত রাতেই বিশ্বের ৫৭তম রাষ্ট্র হিসেবে স্যাটেলাইট ক্লাবের গর্বিত সদস্য হয়েছে বাংলাদেশ। এ সকল অর্জন সারা বিশ্বের সামনে বাঙালি জাতিকে শুধু বিশেষ মর্যাদায় অভিষিক্ত করেনি একই সাথে আমাদের জাতীয় অর্থনীতির শক্ত বুনিয়াদের বর্হিপ্রকাশ।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
আমরা যখন ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করার পর রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করি তখন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল অত্যন্ত ভঙ্গুর। বিএনপি আমলে সৃষ্ট হাওয়া ভবন বাংলাদেশে দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান করে যার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ টানা পাঁচবার দুর্নীতিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার এক কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সৃষ্টি করে। এমন একটি ভগ্ন-রুগ্ন অর্থনৈতিক কাঠামোয় দাঁড়িয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বহুমাত্রিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। একই সাথে বিভিন্ন দুর্নীতির ঘটনার বিচার ও দুর্নীতি রোধে বিভিন্ন আইন প্রণনয়ন করেন এবং ই-টেন্ডারিং ও ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক কার্যক্রমে অধিকতর স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা করেন। যার কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা স্বত্ত্বেও বাংলাদেশ অব্যাহত অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলেছে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল ৬১ হাজার ৫৭ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে বাজেটের আকার প্রায় ৪ লাখ ২৬৬ কোটি। মাথাপিছু আয় ২০০৫ সালে ৫৪৩ ডলার থেকে ১ হাজার ৭৫২ ডলারে উন্নীত হয়েছে। দারিদ্র্যের হার ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ছিল ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ যা আজ ২২ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে।

২০০৫-০৬ অর্থবছরে জিডিপি’র আকার ছিল ৪ লাখ ৮২ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা ১৯ লাখ ৭৫ হাজার ৮১৭ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। ১৯৯১-৯৬ সময়ে বিএনপি আমলে মূল্যস্ফীতি ছিল ৭ শতাংশ। ২০০১-এ আওয়ামী লীগ যখন দায়িত্ব হস্তান্তর করে তখন মূল্যস্ফীতি ছিল মাত্র ১ ডিজিটের নিচে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বিএনপির সময় মূল্যস্ফীতি আবার দুই ডিজিটের উর্ধ্বে পৌঁছায়। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি দাঁড়ায় ১২ দশমিক ৩ শতাংশে। যা ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে ৫ দশমিক ৬০ শতাংশে নেমে আসে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বৈদেশিক বিনিয়োগ ছিল শূন্য দশমিক ৭৪৪ বিলিয়ন ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বৈদেশিক বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ৩.৮৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি।

২০০৫-০৬ অর্থবছরে রপ্তানি আয় ছিল ১০ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা ৩৪ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা ৩৩ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। ২০০৫ সালে ২ লাখ ৭০ হাজার মানুষের বিদেশে কর্মসংস্থান হয় আর সেখানে ২০১৭ সালে বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে ১০ লাখ ৮ হাজার ১৩০ জনের। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ২০০৫-০৬ বছরে ছিল ৪ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছে ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

২০০৬ সালে ব্যাংকিং সেক্টরে মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ১,৫২,৮৫৮ কোটি টাকা এবং এসময় খেলাপী ঋণের বা শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ১৩.১৫%। ২০১৭ সালে ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৭,৯৮,১৯৬ কোটি টাকা এবং এর বিপরীতে খেলাপী বা শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমাণ হ্রাস পেয়ে হয়েছে ৯.৩১%। যেখানে ঋণের পরিমাণ প্রায় ৪২২% বৃদ্ধি পেয়েছে সেখানে শ্রেনীকৃত ঋণের পরিমাণ বাড়ার কথা থাকলেও এর পরিমাণ ৩.৮৪% হ্রাস পেয়েছে যা এই সেক্টরের উন্নয়নকেই নির্দেশ করে।

এছাড়া ২০০৬-০৭ সালে জিডিপি’র পরিমাণ ছিল ৪,৭২,৪৭৭ কোটি টাকা এবং এসময় মোট ঋণের পরিমান ছিল ১,৫২,৮৫৮ কোটি টাকা যা জিডিপি’র ৩২% এবং শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমান ছিল জিডিপি’র ৪.৩৪%। অপরদিকে ২০১৭-১৮ সালে জিডিপি’র পরিমাণ ছিল ২২,৩৮,৪৯৮ কোটি টাকা এবং এসময় মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৭,৯৮,১৯৬ কোটি টাকা যা জিডিপি’র ৩৫.৬৬% এবং খেলাপী বা শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল জিডিপি’র ৩.৩২%।

২০১৪-২০১৫ সালের বিএনপি-জামাত জোটের জ্বালাও-পোড়াও রাজনৈতিক কর্মকা- না হলে এর পরিমাণ আরও অনেক কম হতো। এছাড়া দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার আরও বৃদ্ধি পেতো। এসব ধ্বংসাত্মক কর্মকা-ের ফলে যে বিরূপ প্রভাব পড়েছিল তার রেশ শিল্প-কারখানা ও ব্যবসা-সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি।

উল্লেখ্য, অর্থনৈতিক উন্নয়নে বর্তমান সরকারের সমন্বিত উদ্যোগের ফলে অর্থনীতির আকার বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং একই সাথে ব্যাংকিং কার্যক্রমে নতুন নতুন বিষয়াদি যুক্ত হয়েছে। কৃষকের হিসাব, স্কুল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে ছাত্র/ছাত্রীদের হিসাব, পথশিশুদের হিসাব খোলার মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় ব্যাংকিং কার্যক্রম পৌছে দেয়ার জন্য বর্তমান সরকার সফলভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। এছাড়া মোবাইল ব্যাংকিং, এজেন্ট ব্যাংকিংসহ অন্যান্য সেবা প্রদানের মাধ্যমে ব্যাংকিং সার্ভিসকে আরও বেশি যুপোগোযোগী করার জন্যও সরকারের নীতির প্রতিফলন হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাজ করে যাচ্ছে।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
বর্তমানে দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক তদন্তাধীন ও বিচারাধীন প্রায় ৩২টি পাচার সংক্রান্ত মানিলন্ডারিং মামলা রয়েছে যার মধ্যে বেশিরভাগই বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ। এখানে যেসব উল্লেখযোগ্য নেতা রয়েছেন তাদের মধ্যে তারেক জিয়া, গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, মোর্শেদ খান ও খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে দুদক কর্তৃক দায়েরকৃত বিদেশে অর্থপাচার ও মানিলন্ডারিং মামলা চলমান রয়েছে এবং লুৎফজ্জামান বাবর, আলী আসগর লবী, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ ও তার স্ত্রীসহ অনেক বিএনপি নেতাদের বিদেশে অর্থ পাচারের বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
বিএনপি’র শাসনামলে ব্যাংকের টাকা চুরির সংস্কৃতি শুরু হয়। শুরু হয় ঋণ খেলাপী সংস্কৃতি। তৎকালীন বিএনপি প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ভাই সাঈদ ইস্কান্দার, তার পুত্র তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকো এবং তাদের ব্যবসায়িক পার্টনার গিয়াস উদ্দিন আল মামুন ড্যান্ডি ডায়িং, খাম্বা লিমিটেড, ওয়ান স্পিনিংসহ ১৫টি প্রতিষ্ঠানের নামে ভূয়া সম্পত্তি দেখিয়ে ৯৮০ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করে। এমনকী ক্ষমতার অপব্যবহার করে এই অবৈধ ঋণের সুদ মওকুপ করেছে এবং পরবর্তীতে ওই ঋণের টাকাও মাফ করা হয়েছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী পরিবার ভুয়া সম্পত্তি দেখিয়ে এভাবে ঋণ গ্রহণ ও ঋণ মওকূপের নজির পৃথিবীর আর কোথাও নেই। তাদের সম্পদের অভাব ছিল না। জনগণের এই টাকা তারা এখনো ফেরত দেয়নি।

মেসার্স ইউনিটেক্স এপারেল লিমিটেডের নামে ভুয়া কাগজ দিয়ে ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ নেয় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর পুত্র তারেক রহমান, ভাই সাঈদ ইস্কান্দারসহ ছয় জন। ’৯৬ সালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুই লাখ টাকায় কেনা জমি, সোয়া কোটি টাকা মূল্য দেখিয়ে আইএফআইসি ব্যাংক থেকে ৬০ লাখ টাকার ঋণ নেয়া হয়। এই অভিযোগে মতিঝিল থানায় মামলা দায়ের করা হয়। মামলার তদন্ত শেষে ঘটনার সত্যতা থাকায় বিচারের জন্য ১৯৯৭ সালের ২৯ জুলাই আদালতে চার্জশীট দাখিল করা হয়। পরবর্তীতে ক্ষমতার অপব্যবহার করে তাদেরকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোর্শেদ খানের বিরুদ্ধে ভুয়া সম্পত্তি বন্ধক দেখিয়ে ব্যাংক থেকে ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণ করার অভিযোগে মামলা হয়।

রাষ্ট্রক্ষমতা ব্যবহার করে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সচিব মোসাদ্দেক আলী ফালু কয়েক বছরের মধ্যে অবৈধভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নামে বেনামে পাহাড়সম অবৈধ অর্থ উপার্জন করেন। স্ব-নামে বেনামে ভুয়া কাগজ দেখিয়ে ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করে জনগণের অর্থ লুটপাট করেছে। তিনি রাতারাতি ব্যাংকসহ ১৬টি কোম্পানির মালিক বনে যান।

হাওয়া ভবনের প্রভাব খাটিয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর পুত্র তারেক রহমানের ব্যবসায়িক পার্টনার গিয়াস উদ্দিন আল মামুন ওরিয়েন্টাল ব্যাংক থেকে ৫৯৫ কোটি টাকা লোপাট করেছে।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
টিএন্ডটির মোবাইল ফোন প্রকল্পে কাজ পাইয়ে দিতে প্রধানমন্ত্রীর কনিষ্ঠ পুত্র আরাফাত রহমান এবং অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের পুত্রের তদবিরে ‘একনেক’ প্রথমে ৪৩৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করে। কিন্তু বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগেই এই বরাদ্দ প্রস্তাব দ্বিগুণ করার প্রচেষ্টা করা হয়। বিষয়টি ক্রয় সংক্রান্ত ক্যাবিনেট কমিটিতে তিনবার উত্থাপিত হলেও একনেকের অনুমোদন না থাকায় এ পর্যায়ে ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়নি। এর কিছুদিন পর খোদ প্রধানমন্ত্রী খালেদার নিজস্ব উদ্যোগে প্রকল্পটি পুনরায় একনেক সভায় উপস্থাপন করা হলে এক লাফে প্রকল্প ব্যয় ৪৩৫ কোটি থেকে ৭০০ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কনিষ্ঠ পুত্র আরাফাত রহমান ‘সিমেন্স কোম্পানির’ পক্ষে ওকালতির কারণে ওই বে-আইনি বরাদ্দ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া অনুমোদন করেন। অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের পুত্র একই প্রকল্পে চীনা কোম্পানি HUWEL-এর পক্ষে তদ্বির করেছিলেন।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বোন খুরশীদ জাহান হক (চকলেট)-এর পুত্র তাহসিন আকতার হক ও খালেদা জিয়ার ভাই মেজর (অব.) সাঈদ ইস্কান্দারকে ঢাকা বিমান বন্দরের কাছে সরকারি জমিতে দুটি সিএনজি ফিলিং স্টেশন ও পেট্রল পাম্প করতে দিয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। ‘মামা-ভাগিনা’ পাম্প হিসেবে পরিচিত এ দুটি পাম্পের জমি অবৈধভাবে বরাদ্ধের অভিযোগ রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ ২০০৯ সালে সিমেন্সের কাছ থেকে খালেদা জিয়ার কনিষ্টপুত্র আরাফাত রহমান কোকো কর্তৃক ৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঘুষ গ্রহণের অভিযোগের তদন্ত শুরু করে। এই টাকা সিঙ্গাপুরের একটি ব্যাংকে পাচার করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে বর্তমান সরকার সিঙ্গাপুরের ব্যাংক থেকে পাচারকৃত অর্থ থেকে ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বাংলাদেশে ফেরত এনেছে।

তারেক রহমান ‘নির্মাণ কনস্ট্রাকশন’-এর কাছ থেকে ৭৫০ হাজার মার্কিন ডলার ঘুষ গ্রহণের মামলায় সাক্ষ্য দিতে এসে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)-এর কর্মকর্তা ‘ডেবরা লাপ্রিভোট্টি’ বলেছিলেন- থাইলান্ড ও আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশে তারেক রহমানের অবৈধ সম্পদের খবর তাদের কাছে রয়েছে এবং তারা তদন্ত করছে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে তারেক রহমানের অবৈধ সম্পদের বিবরণী বাংলাদেশের গণমাধ্যম ছাড়িয়ে বিশ্ব গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে।

উইকিলিক্স-এর প্রকাশিত এক গোপন প্রতিবেদনে জানা যায়, ২০০৮ সালে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের এ্যাম্বাসেডর জেমস এফ মরিয়াটি এক তারবার্তায় যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে বলেছিলেন,
Tareq Rahman is guilty of egregious political corruption that has had a serious adverse effect on US National interest.

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
বর্তমান সরকারের সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়ের করা বিভিন্ন দুর্নীতি মামলার বিচার কার্যক্রম নিরপেক্ষভাবে পরিচালিত হচ্ছে। এসব দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হয়ে খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান দ-িত হয়েছেন। বিএনপি নিজেদের লুটপাটের ও দুর্নীতির রাজনীতি ঢাকতে গিয়ে আজ বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে।

বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি কর্তৃক দুই লাখ কোটি টাকা লুটের তথ্য ও অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমরা এ ধরনের মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবী জানাচ্ছি।

বর্তমান সরকার আর্থিক খাতসহ দেশ পরিচালনার সর্বক্ষেত্রেই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতায় বিশ্বাসী। সেকারণে রাষ্ট্রের বিভিন্ন অংগগুলো তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব অনুসারে স্বাধীনভাবে কাজ করছে। এরই ধারাবহিকতায় ব্যাংকিং খাতে সংগঠিত বিভিন্ন অনিয়ম কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক স্বাধীনভাবে চিহ্নিত করাসহ যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থাদি গ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে এবং এক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক কখনোই কোন ধরণের হস্তক্ষেপ করা হয়নি। এ ধরণের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার ফলেই বিষয়গুলো সকলে অবহিত হতে পেরেছেন যা পূর্বে প্রকাশিত হয়নি।

সাংবাদিক বন্ধুগণ,
২০১৩ সালে ব্যাংকিং সেবাকে জনগণের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে এবং দেশের বিকাশমান অর্থনীতির প্রয়োজনে অন্যান্য ৮টি ব্যাংকের সাথে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণপূর্বক বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ফার্মার্স ব্যাংক লিঃ-কে ২০১৩ সালে লাইসেন্স প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনাকালে নানাবিধ অনিয়মের বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরে আসলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ব্যাংকটির কার্যক্রম নিয়মিত পর্যবেক্ষণের আওতায় নিয়ে আসা হয়। এছাড়াও একজন বিদ্যমান সাংসদসহ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের প্রভাবশালী সদস্যদেরকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ ও জড়িত পরিচালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিষয়টি দুদকের তদন্তাধীন রয়েছে। একইসাথে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অপসারণ করেছে । উল্লেখ্য, ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট ৪ জন কর্মকর্তা এবং অডিট কমিটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও ব্যাংকের পরিচালক দুদকের মামলায় বর্তমানে কারাগারে অন্তরীণ রয়েছে। ফারমার্স ব্যাংক আমানতকারীদের চাহিদা অনুযায়ী আমানতের অর্থ ফেরত দিতে না পারায় আমানতকারীদের মধ্যে কিছুটা ভীতি সঞ্চার হলেও সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংক আইনানুগ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষায় সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছে, যার ধারাবাহিকতায় ব্যাংকটির সকল ব্যক্তি উদ্যোক্তা পরিচালকদের বাদ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে বিদ্যমান ৪জন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচালকসহ ৪টি রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাংক ও ১টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান এর মাধ্যমে ৭১৫ কোটি টাকা মূলধন হিসেবে ব্যাংকটিতে সরবরাহ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এর বিপরীতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংকটির বৃহৎ অংশের শেয়ার মালিকানা অর্জন করবে ও পরিচালনা পর্ষদে অংশগ্রহণ করে আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা করবে ও এর ফলে সকলের আস্থা ফিরে আসবে বলে আমরা মনে করি।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংক লিঃ এর মালিকানা পরিবর্তনের ফলে ব্যাংকটিতে আর্থিক সংকটের সৃষ্টি হয়েছে এ ধরণের তথ্য ভিত্তিহীন এবং বিভ্রান্তিকর। বাংলাদেশ ব্যাংক হতে প্রাপ্ত তথ্যমতে ব্যাংকটির মালিকানা পরিবর্তনের পর হতে ব্যাংকের আমানত ও ঋণ উভয়ের পরিমানই বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ব্যাংকের কোন ধরণের তারল্য সংকট নেই।
দেশের অর্থনেতিক কর্মকান্ডের সাথে ব্যাংকিং খাতের বিভিন্ন সূচকের পরিবর্তন বা পরিবর্ধন মুদ্রা নীতির আলোকে স্বাভাবিক ও নিয়মিত ঘটনা। প্রয়োজন অনুযায়ী সময়ে সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অতীতেও বিভিন্ন পরিবর্তন এনেছে এবং বর্তমানেও তা অনুসরণ করা হচ্ছে। দেশের অর্থনীতি বেগবান থাকায় এবং উৎপাদনমুখী শিল্পের প্রসার ঘটায় উৎপাদনমুখী শিল্পের কাঁচামাল ও মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানীর পরিমান বৃদ্ধি পেয়েছে যা আমাদের রপ্তানী আয় এবং রেমিটেন্স প্রবৃদ্ধিকেও ছাড়িয়ে গেছে। আমদানী মূল্য পরিশোধের জন্য বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন হওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর নিকট ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেশীয় মুদ্রার বিনিময়ে বিক্রয় করে এবং এর ফলে ব্যাংকিং সেক্টর হতে সমপরিমান প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে চলে আসে। এতে ব্যাংকে দেশীয় মুদ্রার সরবরাহের উপর চাপ সৃষ্টি হওয়ার ফলে দেশীয় মুদ্রার সরবরাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ঈজজ-এর পরিমান ১% হ্রাস করা হয়েছে। এর ফলে ব্যাংকিং খাতে যে পরিমান তারল্য বৃদ্ধি পেয়েছে তা জনগনের নিয়মিত ব্যাংকিং প্রয়োজন মেটাতেই ব্যবহৃত হচ্ছে। এক্ষেত্রে ব্যাংকিং খাত হতে অনিয়মিতভাবে অর্থ লোপাটের কোন সুযোগই নেই এবং এতে সরকারের যে কোন পর্যায়েই হস্তক্ষেপ করার বিষয়টি কাল্পনিক। অথচ যুক্তরাজ্য একই ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় ‘ব্যাংক অব ইংল্যান্ড’ কোয়আনটিটেটিভ ইজিং নামে নীতি প্রণয়ন করে। যাতে অর্থনীতিতে প্রণোদনা দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে মুদ্রা ছাপিয়ে জনগণকে দিতে হয়েছে, যাতে কৃত্রিমভাবে তারল্য সঙ্কট নিরসন করা যায় এবং প্রবৃদ্ধি হয়। সেদিক দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতি অনেক বেশি পরিপক্ক এবং টেকসই ছিল। ফলে মুদ্রা ছাপানোর মতো কৃত্রিম প্রণোদনা দিতে হয় নি।

২০০৭-এ শুরু হওয়া বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার সময় যুক্তরাষ্ট্রে সাব-প্রাইম মর্টগেইজ তথা ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ বিতরণ, ভুয়া হিসাব রক্ষণ পদ্ধতি, আগ্রাসি ঋণ প্রদান ও সঠিক মনিটরিংয়ের অভাবে ওয়ালস্ট্রিট-এ ব্যাংকসহ অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এবং বড় বড় অনেক প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়ে বন্ধ হয়ে যায়। লক্ষ লক্ষ আমেরিকান বেকার হয়ে পড়ে এবং প্রায় ৪৪২টি ব্যাংক বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলশ্রুতিতে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ৭০ বছরের মধ্যে সব সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক মন্দার সৃষ্টি হয়। যার থেকে পরিত্রাণের জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে প্রায় ট্রিলিয়ন ডলারের উপর আর্থিক প্রণোদনা, ভর্তুকি ইত্যাদি দিয়ে অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রাখতে হয়েছিল।

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার মাঝেও ২০০৮ সালে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর জননেত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্ব ও সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহণের কারণে বাংলাদেশ এ ধরনের বিপর্যয় এড়িয়ে অর্থনৈতিক উচ্চ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সক্ষম হয়।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ
সফল রাষ্ট্রনায়ক দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এক অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করেছে। যা সারা বিশ্বে আজ নন্দিত ও প্রশংসিত হচ্ছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির এই ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের রাষ্ট্র এবং ২০৪১ সালের মধ্যেই বাংলাদেশ সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে উন্নীত হবে। আমি বাংলাদেশের জনগণকে সকল ধরনের অপপ্রচার ও মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাবো। একটি উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে অতীতের ন্যায় জননেত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য ও সুদৃঢ় নেতৃত্বে প্রতি পূর্ণাঙ্গ আস্থা রাখার মাধ্যমে এগিয়ে চলার সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

জয় বাংলা
জয় বঙ্গবন্ধু
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।

 

 

 

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত