বোরো ধানের বাম্পার ফলনঃ ড. মো. হুমায়ুন কবীর

3510

Published on এপ্রিল 26, 2018
  • Details Image

গত বছর (২০১৭) হাওরসহ অন্যান্য নি¤œাঞ্চল এবং সেইসঙ্গে সারাদেশে পাহাড়ি ঢল ও আগাম বন্যায় বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। তারপর আবার বোরো ফসলের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আমন ফসলটিও বন্যার কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ফলে দেশে খাদ্যের মজুদে কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছিল। তার কারণ আমরা দেখেছি ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা ছাড়ার সময় দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে রেখে গিয়েছিল। তারপর কয়েক বছর আবার দেশ খাদ্য ঘাটতিতে পতিত হয়েছিল। পরে যখন ২০০৯ সালে আবার আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করল তখন থেকেই দেশ আবারো খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হিসেবেই চলে আসছিল।

সেই গতিতে একটু ছন্দপতন হওয়ার উপক্রম হয়েছিল ২০১৭ সালে। সে বছর দেশে উপর্যুপরি কয়েকটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে খাদ্য উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কিছুটা কম হয়েছিল। তার অন্যতম কারণ ছিল হাওরের একমাত্র ফসল বোরো ধান উঠাতে না পারা এবং আমন মৌসুমে বন্যায় ধান ফসলের উৎপাদনকে ক্ষতিগ্রস্ত করা। সে জন্য তখন দেশের খাদ্য মজুদকে নিরাপদ করার অংশ হিসেবে ২০ লাখ টন চাল আমদানি করে রাখা হয়েছিল। কিন্তু তারপরও দেশে পর্যাপ্ত খাদ্য থাকা সত্ত্বেও বাজারকে অস্থিতিশীল করার অংশ হিসেবে অফ মৌসুমে ধানচালের দাম কিছুটা বাড়িয়ে দিয়েছিল। তবে এটি ঠিক যে দেশে মৌসুমি ধান ফসলের উৎপাদন ঠিকমতো হলে হয়তো ব্যবসায়ীদের কারসাজি এখানে খাটাতে পারত না।

কিন্তু এবারে সবকিছুই যেন পুষিয়ে দিয়েছে প্রকৃতি। সঠিক সময়ে সরকারের সঠিক ব্যবস্থা নেয়ার কারণে, কৃষকরা নির্বিঘ্নে তাদের ফসলের মাঠে নিরলস খাটুনির ফলে এ বছর দেশের বোরো ধানের আধারখ্যাত হাওরাঞ্চলসহ সারা দেশেই বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। হাওরাঞ্চল বিস্তৃত রয়েছে দেশের এক-পঞ্চমাংশ এলাকাজুড়ে। কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ইত্যাদি জেলার কোনোটার কিয়দংশ আবার কোনোটার আংশিক অথবা পুরোটা নিয়ে দেশের অন্যতম বিশেষ শস্যভাণ্ডার এ হাওর এলাকা। এ হাওর এলাকাতেই উৎপাদিত হয় দেশের উৎপাদনের সিংহভাগ বোরো ধান।

আমরা সবাই জানি হাওরে সারা বছরে একটি মাত্র ফসল হলো এ বোরো ধান। যে বছর ধান উৎপাদন ও মাড়াইয়ে সমস্যা দেখা দেয় সে বছর সেসব এলাকার কৃষকরা দিশাহারা হয়ে পড়ে। আর যে বছর বাম্পার ফলনসহ মাড়াইয়ে কোনো সমস্যা থাকে না সে বছর কৃষকরা স্বস্তিতে থাকেন। তাদের চোখেমুখে থাকে হাসির ঝিলিক। বোরো ফসলের নিরাপদ উত্তোলনে কয়েকটি বিষয় জড়িত থাকে। সর্বপ্রথমে হলো সঠিকভাবে কৃষি উপকরণগুলো সহজে পাওয়া। তারপরে সেচের সুবিধা সঠিকভাবে পাওয়া। সেখানে ডিজেল কিংবা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থার নিশ্চয়তা পাওয়া। পাহাড়ি ঢল কিংবা আগাম বন্যায় ফসলহানি না হওয়া। শিলাবৃষ্টি কিংবা ঝড়-তুফানে ক্ষেতের ফসলহানি না করা এবং সবশেষে নিরাপদভাবে ক্ষেতের ফসল মাড়াই করে বাজারজাত করা এবং প্রয়োজনে গোলায় ভরা।

এসবের কোনো না কোনো পর্যায়ে যদি সমস্যা সৃষ্টি হয় সেখানেই উৎপাদন ব্যাহত হয় এবং তার ফলে যে ক্ষতি সেটা শুধু ওই এলাকার কৃষকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। তা জাতীয় ক্ষতিতে রূপান্তরিত হয়। ব্যাহত হয় জাতীয় উৎপাদন এবং সর্বোপরি জাতীয় অর্থনীতি অর্থাৎ দেশের অগ্রগতি। আর এসব কারণেই সরকার এ বিষয়গুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে থাকে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ওপর একমাত্র মহান সৃষ্টিকর্তা ছাড়া আর কারো হাত নেই। কাজেই এসব প্রাকৃতিক লীলা সংঘটিত না হলে আমরা ভালো থাকি। বোরো ফসল উৎপাদনের শেষের দিকে এবং মাড়াইয়ের মৌসুমটিই (এপ্রিল থেকে মে) প্রাকৃতিক দুর্যোগকাল। সে জন্য এ সময় কৃষকদের একটু আতঙ্কে কাটে। তবে আশার কথা এখনো তেমন কোনো সমস্যা পরিলক্ষিত হয়নি। হাওরসহ সারা দেশে বোরো মাড়াইয়ের পুরো ধুম চলছে। বোরো ধানের বাম্পার ফলন ও উৎপাদনের জন্য কৃষক হাসিখুশিতে ভরপুর। তারপরও কিছু কিছু বিষয়ে আরো নিরাপদ থাকার জন্য সকর্তকতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। যেমন বোরো ফসল শতকরা ৮০ ভাগ পেকে গেলেই তা ক্ষেতে না রেখে যতদ্রুত সম্ভব কেটে বাড়িতে নিয়ে এসে মাড়াই করে রাখা প্রয়োজন। ফসল কেটে জমিতে না রেখে বাড়িতে নিয়ে আসতে হবে। কৃষি বিভাগ এসব বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করার কারণে কৃষক ভাইয়েরা আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি তৎপর। কাজেই বাম্পার ফলনের সুফল পাচ্ছেন কৃষক, ফলে কৃষককুলের মধ্যে এখন স্বস্তি বিরাজ করছে।

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত