7305
Published on মার্চ 16, 2018ফিদেল ক্যাস্ত্রো বঙ্গবন্ধুকে তুলনা করেছিলেন হিমালয়ের সঙ্গে। তিনি বলেছিলেন, ‘আই হ্যাভ নট সিন দ্য হিমালয়াস। বাট আই হ্যাভ সিন শেখ মুজিব। ইন পারসোনালিটি অ্যান্ড ইন কারেজ, দিস ম্যান ইস দ্য হিমালয়াস। আই হ্যাভ দাজ হ্যাড দি এক্সপেরিয়েন্স অব উইটনেসিং দ্য হিমালয়াস।’
ক্যাস্ত্রোর এই মন্তব্যের বাংলা প্রতিরূপ হলো, ‘আমি হিমালয় দেখিনি, তবে আমি শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তিত্ব ও সাহসে এ মানুষটি হিমালয়ের সমতুল্য আর এভাবেই আমি হিমালয় দেখার অভিজ্ঞতা লাভ করেছি।’ এখন প্রশ্ন হলো বাঙালি যাকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দিল। ‘বঙ্গবন্ধু’ হিসেবে আপামর মানুষের মণিকোঠায় যাকে দেওয়া হলো স্থান তাকে কেন ক্যাস্ত্রো হিমালয়ের সঙ্গে তুলনা করলেন? আমরা এই লেখায় এই কেন তালাশের চেষ্টা করব।
বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ১৭ মার্চ। এ উপলক্ষেই এ অনুসন্ধান এবং বঙ্গবন্ধু কেন মহামানব হিসেবে জারি আছে আমাদের মাঝে এবং আগামীতেও কেন থাকবে সেই প্রশ্নের সুলুকসন্ধান।
আমরা জানি, আজকের যে হিমালয়, পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট যেখানে অবস্থিত, সেই স্থানটিও একদা সমতল ছিল। এবং হাজার লক্ষ কোটি বছর আগে সেখানে ছিল গভীর সমুদ্র। পৃথিবীপৃষ্ঠে কোনো এক সময় বড় রকমের একটি ভূমিকম্প হয় এবং সেই ভূমিকম্প থেকেই আজকের হিমালয় উত্থিত হয়, সৃষ্ট হয় মাউন্ট এভারেস্ট।
বঙ্গবন্ধুও ঠিক হিমালয়ের মতো উত্থিত হন বাঙালি জাতির বুকে। হাজার বছরের বাঙালি জাতির স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বেও যে আকাক্সক্ষা তার পূর্ণরূপ পায় বঙ্গবন্ধুর সাহস ও নেতৃত্ব গুণে। ১৯৪৭ থেকে ৭১ পর্র্যন্ত সময়কালে আমরা পেয়েছি অনেক নেতাকেই। তাদের অবদানও হয়তো কোনো অংশে কম নয়, কিন্তু সব কিছু ছাড়িয়ে জনগণের আকাক্সক্ষা ও ভালোবাসার কেন্দ্র হয়ে ওঠা, জনগণের পাশে থেকে জনমানুষের নেতা হয়ে ওঠার বিরল গুণাবলি ছিল তার মধ্যে। জনগণের ভাবনা, চেতনা, স্বপ্ন, অভিলক্ষ, প্রত্যাশা সব কিছু তিনি ধারণ করতে পেরেছিলেন।
বঙ্গবন্ধু জন্মেছিলেন ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ। তখন ব্রিটিশের শাসন চলছে এই উপমহাদেশে। বঙ্গবন্ধু ব্রিটিশদের সেই বঞ্চনাকে উপলব্ধি করেছিলেন মর্মে মর্মে। এ কারণে ছাত্রাবস্থাতেই তিনি যুক্ত হয়েছিলেন রাজনীতির সঙ্গে।
বঙ্গবন্ধুর জীবনপর্ব যদি আমরা অবলোকন করি তা হলে দেখব, তিনি আগাগোড়াই ছিলেন আপসহীন এবং দেশ ও জনগণের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ। তার আপসহীন সত্তার কারণেই সম্ভব হয়েছে অজেয়কে জয় করা। তার সম্পর্কে ড. কামাল হোসেনের একটি মন্তব্য স্মরণ করা যেতে পারে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের প্রারম্ভিকলগ্নে একটা অভিজ্ঞতার উদাহরণ টেনে তিনি বলেছিলেন, বলা হতো অসম্ভবকে সম্ভব করা হলো, সেটা বঙ্গবন্ধু করেছেন। এবং আমার মনে আছে কিসিঞ্জার উনাকে যে ট্রিবিউটটা দেন, ‘ইউ হ্যাভ ডিফাইড হিস্ট্রি।’ আমাদের ইতিহাসসেবীদের দৃঢ়বিশ্বাস ছিল এভাবে একটি রাষ্ট্র ১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠা হতে পারে না, কিন্তু তোমরা করে ফেললে।
যা হওয়ার নয়, যা অসম্ভব, যা সমীকরণে মেলে না, যা অসাধ্য তার সবটাই যেন ধরা দিয়েছিল বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের কাছে। বঙ্গবন্ধুকে বিবিসি বাংলার জরিপে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বলা হয়েছিল। এই জরিপেও প্রতীয়মান হয় তিনি বাঙালির আশা-আকাক্সক্ষার প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন। এই যে হয়ে ওঠা, মানুষের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আন্দোলন সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এসবের জন্য যে বিরল গুণ থাকা দরকার তা বঙ্গবন্ধুর মধ্যে ছিল।
উপমহাদেশের রাজনীতির ইতিহাস এবং রাজনীতির নেতৃত্বে যারা ছিলেন, রাজনীতি যাদের হাত ধরে বিকশিত হয়েছে তাদের সবারই ছিল উত্তরাধিকারের বড়াই। এবং তারা প্রত্যেকেই ধন-দৌলতের বদৌলতে রাজনীতির কেন্দ্রে আসেন।
সেদিক দিয়ে বঙ্গবন্ধুর মতো রাজনীতিবিদের নজির মেলা ভার। যিনি একেবারে শুন্য থেকে জনতার ভালোবাসা-সমর্থনকে পুঁজি করেই রাজনীতির বরপুত্রে পরিগণিত হয়েছেন, জাতির জনক হয়েছেন। মনে রাখা জরুরি যে, বঙ্গবন্ধু প্রথমত সাহসী ছিলেন, আপসহীন ছিলেন, দৃঢ়চেতা ছিলেন এবং জনপ্রত্যাশা বুঝতে পারঙ্গম ছিলেন। যার অভাব আমরা আমাদের দেশের নেতৃত্বে বারবার দেখছি।
বঙ্গবন্ধু ১৯৫৫ সালের ২৫ আগস্ট করাচিতে পাকিস্তান গণপরিষদে বলেন:
‘...স্যার আপনি দেখবেন ওরা পূর্ববাংলা নামের পরিবর্তে পূর্ব পাকিস্তান নাম রাখতে চায়। আমরা বহুবার দাবি জানিয়েছি যে, আপনারা এটাকে বাংলা নামে ডাকেন। বাংলা শব্দটার একটা নিজস্ব ইতিহাস আছে, আছে এর একটা ঐতিহ্য।’
মার্টিন লুথার কিং এর ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’-এর মতো বঙ্গবন্ধুও এখানে স্বপ্নের কথা বলেছেন, এ কারণেই প্রিয় জন্মভূমিকে ‘বাংলা’ নামে ডাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বাংলা নামের ঐতিহ্যের কথা বলে তার সুবর্ণ অতীতের প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে এটাই সত্যি যে, বঙ্গবন্ধুরও মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের মতো একটা স্বপ্ন ছিল, যার পুরোটাই আবর্তিত ছিল বাংলাভাষা, বাঙালি জাতি, বাংলাদেশ ও তার জনগণকে ঘিরে, প্রিয় স্বদেশকে স¦াধীনতা ও সার্বভৌমত্বের গৌরব ও মর্যাদা দেওয়ার।
এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্যই শেখ মুজিব ১৯৪৮ সালেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মিছিল বের করেছিলেন ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ বলে। সক্রিয় ছিলেন রাষ্ট্রভাষা বাংলা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে। অসাম্প্রদায়িক সমাজ বাস্তবায়নের স্বপ্ন ছিল তার। সেই লক্ষ্যেই তিনি ১৯৫৫ সালের ২১ অক্টোবর আওয়ামী মুসলিম লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে দলের নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দ প্রত্যাহার করেন।
স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্যই তিনি ৬৬ সালে ৬-দফা দাবি পেশ করেন। যা ছিল প্রকৃতপক্ষে বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ।
স্বপ্ন প্রতিষ্ঠার জন্য, সেই লক্ষ্য থেকে ১৯৭০ সালের ৫ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আওয়ামী লীগের আলোচনাসভায় বলেন : এক সময় এ দেশের বুক হইতে, মানচিত্রের পৃষ্ঠা হইতে ‘বাংলা’ কথাটির সর্বশেষ চিহ্নটুকুও চিরতরে মুছিয়া ফেলার চেষ্টা করা হইয়াছে। ... একমাত্র ‘বঙ্গোপসাগর’ ছাড়া আর কোনো কিছুর নামের সঙ্গে ‘বাংলা’ কথাটির অস্তিত্ব খুঁজিয়া পাওয়া যাই নাই। ... জনগণের পক্ষ হইতে আমি ঘোষণা করিতেছি, আজ হইতে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশটির নাম ‘পূর্ব পাকিস্তান’-এর পরিবর্তে শুধুমাত্র ‘বাংলাদেশ’।
বাঙালি জাতিকে জাগ্রত করতে বহু সাহিত্যিক, বহু রাজনীতিক এবং সংগ্রামী অবদান রেখেছেন। কিন্তু বাঙালি জাতি যদি হয় একটি স্বপ্নের নাম, আকাক্সক্ষার নাম, সংগ্রামের নাম এবং সফলতার নাম, তবে তার রূপকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আবহমান কালের শাশ্বত বাঙালি সংস্কৃতি এবং রাজনৈতিক স্বপ্নকে তিনি বাস্তবায়িত করেন ১৯৭১ স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। এই বাঙালি জাতি কেবল মুসলিম নয়, হিন্দু নয়Ñ এ জাতি মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান বৌদ্ধসহ সবারÑ যার ভিত্তি বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি।
বঙ্গবন্ধুর জনগণের প্রতি ভালোবাসা, সহমর্মিতার নজির পাওয়া যায়Ñ তেমনি দৃষ্টান্ত মেলে ছাত্রজীবনের একটি ঘটনাতেও।
তখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ১৯৪৯ সালের ২১ জানুয়ারি কারাগার থেকে মুক্তি পান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা তাদের দাবি-দাওয়া আদায়ের উদ্দেশ্যে ধর্মঘট ঘোষণা করলে বঙ্গবন্ধু ধর্মঘটের প্রতি সমর্থন জানান। কর্মচারীদের এ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগে ২৯ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অযৌক্তিকভাবে তাকে জরিমানা করে। তিনি এ অন্যায় নির্দেশ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হন। বঙ্গবন্ধুর এই ত্যাগও প্রকারান্তরে জনগণের জন্যই। এই ঘটনায় প্রতীয়মান হয়, ছাত্রজীবন থেকেই তিনি ছিলেন জনগণের জন্য নিবেদিতপ্রাণ।
পশ্চিম পাকিস্তানিরা যে আমাদের বন্ধু নয়, তা ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর যত দিন গেছে তত স্পষ্ট করে হয়েছে প্রতিভাত। তাদের কূটকৌশল ও চক্রান্ত শেখ মুজিব পাকিস্তান রাষ্ট্রের সূচনালগ্নেই উপলব্ধি করেছিলেন। তার প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের দাবি ছিল যৌক্তিক। যার অকাট্য প্রমাণ ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়। যার মধ্য দিয়ে বিশ্বের মানচিত্রে বাঙালি জাতি খুঁজে পেয়েছে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ। যে স্বপ্ন প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের মধ্য দিয়ে প্রথম দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু।
প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন প্রশ্নে প্রায় দুই যুগ অপেক্ষা করার পর, নানামুখী লড়াই আর সংগ্রাম শেষে অর্জিত হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধুই হলেন অনন্য এক রাজনীতিক যিনি অহিংস উপায়ে আন্দোলন-সংগ্রাম করে জনমত সংগঠিত করেছেন এবং সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে একটি জাতিরাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটিয়েছেন। জনমতকে সংগঠিত করে চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধ প্রতিহত করেছেন। বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখেছিলেন, স্বপ্ন দেখাতে পেরেছিলেন। যেমন স্বপ্ন একদিন দেখেছিলেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র (১৯২৯-১৯৬৮)। ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’ শিরোনামে ১৯৬৩ সালে ওয়াশিংটন ডিসিতে দুই লক্ষ নিগ্রো শ্বেতাঙ্গের উপস্থিতিতে তিনি বলেছিলেন :
‘বন্ধুগণ যদিও হতাশায় নিমগ্ন আমাদের ভবিষ্যৎ, তবুও আমি স্বপ্ন দেখি। এই স্বপ্ন আমাদের সত্তার উৎস থেকে উঠে আসা স্বপ্ন। আমার স্বপ্ন প্রকৃত সত্যের মূলেÑ এই জাতি একদিন সোজা হয়ে দাঁড়াবে। আমাদের মুক্তির জন্য একসঙ্গে রুখে দাঁড়াতে পারব এই আশায়, একদিন আমরা স্বাধীন হব। সেদিন আর দূরে নয়, যেদিন সমগ্র মানুষ মুক্তির আনন্দে নতুন করে গাইবে, ‘জয় হে স্বাধীনতা।’
বঙ্গবন্ধুও তার স্বদেশকে নিয়ে এরকম স্বপ্নই দেখেছিলেন। এ কারণে বাংলাদেশ (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান), বাংলাভাষা আর বাঙালির সুখ-দুঃখ-স্বপ্ন-আশা-আকাক্সক্ষাকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে তার জীবন ও রাজনীতি।
তাত্ত্বিক ও নেতা দ্বিবিধ এই গুণের সমাহার একজন মানুষের মধ্যে খুব কমই দেখা যায়। অর্থাৎ বড় কোনো তাত্ত্বিকের মধ্যে খুব কমই একজন বড়মাপের সংগঠক ও নেতার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। আবার বড় কোনো নেতার মধ্যে একজন তাত্ত্বিক কিংবা দার্শনিক উপস্থিতি খুব কমই পরিলক্ষিত হয়। বাঙালি জাতির সৌভাগ্য হলোÑ শেখ মুজিবের মতো একজন রাজনীতিবিদকে পাওয়া, যিনি একই সঙ্গে একজন বড়মাপের রাজনীতিবিদ ও তাত্ত্বিক। এ কারণেই বঙ্গবন্ধুকে বলা হয় ‘পোয়েট অব পলিটিক্স।’ যার সবটাই সম্ভবপর হয়েছিল তার দেশ ও জাতির প্রতি প্রত্যয়ের কারণে।
পাকিস্তানের ২৪ বছরের জিঞ্জিরে বঙ্গবন্ধুর জীবনের প্রায় পুরোটা সময় কেটেছে কারান্তরে। জেলগেট থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তাকে অন্য মামলায় আবার করা হয়েছে গ্রেপ্তার। তবুও তিনি কখনই করেননি আপস। মুচলেকা দিয়ে মুক্তির সুযোগ এসেছে অজস্রবার, কিন্তু সেসবে করেননি ভ্রুক্ষেপ। নিজের চাওয়া, স্বপ্নের প্রতি থেকেছেন অবিচল। এই বিরল গুণই ক্যাস্ত্রোর কাছে মনে হয়েছে হিমালয়ের মতো অবিচল, আপসহীন। জনগণের জন্য শেখ মুজিব যেমন প্রকৃত বন্ধুর দূতস্বরূপ, তেমনি বন্ধুর অধিকার আদায়ে তিনি ছিলেন হিমালয়ের মতো। রবীন্দ্রনাথ যেমন বলেছেন মধ্যাহ্ন সূর্যের কোনো সঙ্গী থাকে না। ঠিক তেমনি বঙ্গবন্ধু ছিলেন আমাদের স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের গৌরবজনক অধ্যায়ে মধ্যাহ্ন সূর্যস্বরূপ, তার কোনো সঙ্গী ছিল না। আর এ কারণেই তিনি বাঙালি জাতির কাছে বঙ্গবন্ধু আর ফিদেল ক্যাস্ত্রোর কাছে হিমালয়স্বরূপ। আমরা যদি বিশ^ মানচিত্রে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে চাই স্বতন্ত্র মহিমা ও মর্যাদায় তা হলে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের নিবিড় পাঠ এবং তার অমেয় শক্তিসমূহ ধারণ করা জরুরি ও অবশ্যম্ভাবী।