5607
Published on ফেব্রুয়ারি 27, 2018প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্টভাষী। তাঁর খোলামেলা কথা সবাই পছন্দ না করলেও তিনি অতীতের জঞ্জাল কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন। খোলা মানুষ নদীর মতো, তাতে ঢেউ থাকবে ওঠানামা থাকবে কিন্তু আর যাই হোক বদ্ধ জলাশয়ের মতো কচুরিপানা জমবে না। অন্যদিকে খালেদা জিয়াকে কি কারণে আপোসহীন বলা হতো সেটাই এখন প্রশ্নের মুখোমুখি। বেগম জিয়ার আপোসহীন ইমেজ কাজে লাগানো দূরে থাক তার দলে এখন তাকে মুক্ত করার মতো মানুষও আছে বলে মনে হয় না। যেসব নেতা বাইরে হৈচৈ করছেন তাদের মুখের দিকে তাকালেই বোঝা যায় এগুলো নিষ্ফল আক্রোশ। আমরা যত বলি আর যত লিখি না কেন তাদের টনক নড়বে না। তবে তারা বুঝে গেছেন কাজ হওয়ার নয়। এ কারণে তারা যে বিকল্প বা ভুল পথ বেছে নিতে পারে সেটা যে কেউ বলে দিতে পারে। মনে রাখতে হবে খালেদা জিয়ার সর্বনাশ করে ছাড়া কথিত বুদ্ধিজীবীরা এখনও সক্রিয়। তাদের আচরণ আর কথাবার্তা ফলো করা আওয়ামী লীগের জন্য জরুরী। মনে রাখা প্রয়োজন ফখরুল সাহেব বা মওদুদ আহমেদ রাজনীতিবিদ তারা আজ যা বলছেন কাল নাও বলতে পারেন। সময় সুযোগ বুঝে দল মত পাল্টানো মানুষেরা নড়বড়ে। সে কারণে বাইরে থাকা সুবিধাভোগী যাদের খোয়াবনামা অনুসরণ করে বিএনপি পাকিকরণে নেমেছিল তাদের বোঝা জরুরী। এরাই তারা যারা শাপলা ঘটনার জন্মদাতা। এরাই সেই মানুষ যাদের কাজে আর কথায় দুস্তর ফারাক। বাইরে বাম ভেতরে বুড়ো বাম ফরহাদ মযহার কিংবা শফিক রেহমান আপাতত উধাও হলেও মাঠে আছে মাহমুদুর রহমানের মতো সাপের দল। জানি না কিভাবে কোন কারণে তিনি বাইরে। আমাদের অজানা অধ্যায়ে আরও কতকিছু থাকে। কিন্তু মুশকিল হলো তিনি বলছেন খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনের নামে না কি দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের শুরু হবে।
হবে কি হবে না তার বিচারিক সময়। এখন পর্যন্ত মানুষের মনে এমন কোন পরিকল্পনার চিন্তা নেই। থাকার কথাও না। কিন্তু এসব সাপের দল কোন্ গর্তে লুকিয়ে আর কিভাবে ছোবল হানে সেটা জানা দরকার। তার আগে বলি আইনগতভাবে খালেদা জিয়া চাইলেই বেরিয়ে আসতে পারবেন না। একজন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার বিরুদ্ধে বলার আগে আমি তার সম্মান ও মর্যাদার কথা মনে রাখি। মনে রাখি তিনিও এদেশের জন্য কিছু না কিছু অবদান রেখেছেন। কিন্তু তার জীবন ও ভূমিকার সবটাই পাকি মোড়কে মোড়া। তার পেয়ারে পাকিস্তানে কি হচ্ছে বা সেখানকার আদালত কি করছে তিনি কি তা জানেন? না খবর রাখেন? সেখানে মুসলিম লীগের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ এখন দলের নেতৃত্বও রাখতে পারছেন না। খবরটা এমন, দুর্নীতি বা অন্য কোন ব্যক্তিগত অযোগ্যতার কারণে রাজনৈতিক দলের প্রধান হতে পারবেন না পাকিস্তানের রাজনীতিকরা। দেশটির সংবিধানের ৬২ ও ৬৩ ধারার উদ্ধৃতি দিয়ে সুপ্রীমকোর্ট বলেছে, এ দুটি ধারায় অযোগ্যতা প্রমাণিত হলে কোন রাজনীতিক দলের প্রধান হতে পারবেন না। পাকিস্তানের উচ্চতর আদালতের এই দিকনির্দেশনা সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের জন্য বড় এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াল। কারণ, গত বছর জুলাইতে সুপ্রীমকোর্ট পাকিস্তান মুসলিম লীগ এন- এর প্রধান নওয়াজ শরীফকে তার পরিবারের পক্ষ থেকে সম্পদের হিসাব সম্পর্কে যথোপযুক্ত জবাব না দেয়ার কারণে অযোগ্য ঘোষণা করেছিল।
নওয়াজ শরীফ আদালতের ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রিট করলেও উচ্চতর আদালতে তা খারিজ হয়ে যায়। পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতে নওয়াজ শরীফের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। তবে পাকিস্তানে গত বছরের নির্বাচন বিধি অনুসারে নওয়াজ শরীফ তার দলের প্রধান হিসেবে এখনও দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেয়ে আসছেন। সুপ্রীমকোর্টের এ দিক নির্দেশনার পর নওয়াজ শরীফকে তার দলের প্রধানের পদ থেকে সরে যেতে হবে। বিচারপতি নিসারের নেতৃত্বে তিনজন বিচারকের একটি প্যানেল বুধবার এ রায় দেয়।
খালেদা জিয়ার দল পাকিদের অন্ধ অনুসরণ করে অথচ এটা মানে না। বেগম জিয়াকে আইনী লড়াই লড়ে বেরিয়ে আসতে হবে। তিনি যদি দলের নেতৃত্ব হারান সেটার দায় কি সরকারের? না শেখ হাসিনার? অপরাধী আর সহযোগী দুই-ই আইনের চোখে সমান। কিন্তু আমরা দেখছি মাহমুদুর রহমানরা ঘোলা জলে মাছ শিকারে মুক্তিযুদ্ধের মতো মহতী বিষয় নিয়ে মাঠে নামতে চাইছে। এদের রুখতে হবে। এ জন্যই আমি মনে করি বাংলাদেশে বিলেতের গণতন্ত্র চলবে না। শত শত বছর ধরে গণতন্ত্র আর সহিষ্ণুতা চর্চার পর লন্ডনের রাজপথে যেসব হামলা আর হত্যাকা- হয়েছে তার ভেতর আছে সাবধানতার ইঙ্গিত। খেয়াল করবেন সেখানেই একমাত্র আক্রান্ত হয়েছে বাংলাদেশ হাইকমিশন। দুনিয়ার আর কোন দেশে কি আমাদের দূতাবাস নেই? নেই বিএনপির সমর্থক? থাকলেও তারা মারমুখী হতে পারেনি। ফলে অনুমান করা সহজ কোথা থেকে এলো সেই সংকেত আর কোথা থেকে অর্থ বা মদদ। গণতন্ত্রকামী ভুয়া সুশীলরা শেখ হাসিনাকে সরানোর জন্য গণতন্ত্র চাইবে আর এদেশের দরিদ্র মূর্খ কিংবা পশ্চাৎপদ মানুষকে নিয়ে রাজনীতির নোংরা খেলা খেলবে এটা হতে দেয়ার নাম গণতন্ত্র হতে পারে না। যারা আজ না বুঝে লাফাচ্ছেন তাদের বলি, আমার মতো লাখো কোটি মানুষ সরকারের ভেতর ঘাপটি মেরে থাকা চোর বদমাশ লুটেরাদের বিরুদ্ধে। রিজার্ভের টাকা ব্যাংকের টাকা দুর্নীতির অর্থ ফেরত আনা এবং বন্ধ করার বিকল্প নেই। যেসব উটকো চোর ঘাঘু ডাকাত সরকারী দলে ওতপেতে আছে তাদের সাইজ করা জরুরী। সঙ্গে এটাও বলি আওয়ামী লীগ সরকারে এলে উচ্ছিষ্টভোগীরাই সামনে চলে আসে। সাংস্কৃতিক জগত হচ্ছে আওয়ামী লীগের বড় ঘাঁটি। সেখানে হানা দিয়েছে সুবিধাবাদীরা। সাম্প্রতিক সময়ে রাষ্ট্রীয় পদক আর পুরস্কার গেছে সরকারবিরোধী মুক্তিযুদ্ধবিরোধী বঙ্গবন্ধুবিরোধীদের হাতে। সরকারবিরোধীরা পেলে আপত্তির কিছু নেই। কিন্তু আদর্শবিরোধীরা সম্মানিত হলে দলে তো বটেই সাধারণের মনেও প্রশ্ন জেগে থাকে। তাই সব ফ্রন্টে রুখে দাঁড়ানোর সময় এলে সবাইকে পেতে হলে সাবধানতার বিকল্প দেখি না।
শেখ হাসিনাকে টার্গেট করা গণতন্ত্র চাই কি-না সেটা ভেবে দেখার পাশাপাশি এটাও মাথায় রাখতে হবে এই উন্নয়ন এই ধারাবাহিকতা এই আনন্দ বা জোয়ার থাকবে কি-না? যেভাবে সুশীলরা খালেদা জিয়ার জন্য সহমর্মিতার নামে ডুগডুগি বাজাচ্ছেন তাতেই ভয়। আইন চলবে আইনের পথে। মানুষকে ভাবতে হবে নিজেদের নিরাপত্তা আর দেশের মঙ্গল। সেখানে মাহমুদুর রহমানদের মতো উস্কানিদাতাদের জায়গা নেই। এরা চায় দেশ ও সমাজকে উত্তপ্ত করে অশান্ত করে বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র অমজবুত অগণতান্ত্রিক করে পাকিস্তানে ফিরিয়ে নিতে। সাবধানতার মার নেই। কঠোরতার বিকল্প নেই এটাই শেষ কথা।
সৌজন্যেঃ দৈনিক জনকণ্ঠ