9229
Published on ফেব্রুয়ারি 5, 2018‘জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট মামলা’য় বেগম জিয়ার দুর্নীতির রায়কে সামনে রেখে বিএনপি পুলিশের ওপর জঙ্গি হামলা চালালো কেন? জামায়াতে ইসলামী এ ধরনের হামলা ২০১১ এর শেষদিকে ঢাকা শহরে শুরু করেছিলো। নকশালরা ষাটের দশকে কোলকাতায় করেছিলো। নকশালরা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। জামায়াতও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। বিএনপি কেন এ পথ নিল?
যাকে সত্যিকার রাজনৈতিক দল বলে বিএনপি সে দল নয়। বিএনপি নানান মতের ও সুবিধাভোগী লোকদের একটি সংমিশ্রণ। তাও কোনও ঐতিহাসিক প্রয়োজনে হয়নি, এটা হয়েছে সামরিক সরকারের স্বার্থ রক্ষায়। বিএনপি নীতিগতভাবে এতটাই সামরিক সরকারকে পছন্দ করে যে বেগম জিয়া নয় বছর সামরিক শাসক এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে রাজপথে থাকলেও কোনদিন তাঁর মুখ দিয়ে ভুলেও সামরিক স্বৈরাচার কথাটা বের হয়নি। তিনি সব সময়ই বলতেন, স্বৈরাচার। সামরিক কথাটি ব্যবহার করতেন না। তবে তারপরও নকশাল বা জামায়াতে ইসলামীর থেকে বিএনপির ভোটের সংখ্যানুপাত অনেক বেশি। এ ধরনের একটি দল কেন জঙ্গি হামলায় গেলো?
শুরু থেকে বিভিন্ন সূত্র মাধ্যমে যে খবর পাচ্ছিলাম তাতে জেনেছিলাম বিএনপি ৮ তারিখ একটা বড় ধরনের জনসমাগম করবে ঢাকা শহরে। এভাবেই তারা তাদের ২০ দলীয় জোটকে নির্দেশ দেবে যেন ২০ দলীয় জোটের প্রত্যেকটি দল সারা দেশ থেকে ঢাকায় লোক নিয়ে আসে। বিএনপি সেভাবেই ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে আলাপ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো। ২৭ জানুয়ারির দিকে স্পষ্ট হয়ে যায় ২০ দলীয় জোটের অন্যান্য দলের পক্ষে খুব বেশি কর্মী সমাবেশ ঢাকায় ঘটানো সম্ভব হবেনা।
অন্যদিকে বিএনপি তাদের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন ও ঢাকার ওয়ার্ড কমিটি গুলোর সঙ্গে আলাপ করে বুঝতে পারে তাদের অল্প কিছু কর্মী ছাড়া সাধারণ সমর্থকদের খালেদা জিয়ার মামলাকে কেন্দ্র করে রাজপথে নামানো সম্ভব নয়। কারণ, মামলাটি একেবারে খালেদার ব্যক্তিগত দুর্নীতির বিষয়। এবং এতদিনে পত্রপত্রিকায় ও সোশ্যাল ফোরামের মাধ্যমে মানুষ জেনে গেছে মামলাটিতে খালেদা জিয়া সত্যি সত্যিই দুর্নীতি করেছেন। তাই খালেদার ব্যক্তিগত দুর্নীতির বিষয়ে যাই ঘটুক না কেন তার জন্যে সাধারণ মানুষ খালেদার পক্ষ হয়ে রাজপথে আসবে না।
বিএনপির জন্য আরো ভয়ের হয়ে দাঁড়ায়, ২৫ জানুয়ারির পর থেকে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বলতে শুরু করেন ৮ তারিখ পাড়া মহল্লায় রাজপথে তাদের কর্মীরা থাকবে যাতে কোনরূপ নৈরাজ্য বিএনপি করতে না পারে। বিএনপির অতীত অভিজ্ঞতা সুখের নয় এ বিষয়ে। পাড়া মহল্লায় আওয়ামী লীগ কর্মীরা রাজপথে নামলে তারা রাজপথে নামার সুযোগ পায় না। সব মিলে বিএনপি এখন বুঝে গেছে ৮ তারিখ খালেদার রায়ের দিন তাদের পক্ষে বড় কোন জনসমাবেশ ঘটানো সম্ভব হবে না।
অন্যদিকে ৮ তারিখ তৃতীয় কোন সন্ত্রাসী গ্রুপ বেগম জিয়ার ওপর হামলা করে যাতে সরকারকে বেকায়দায় না ফেলে সে জন্যও সরকার সচেষ্ট থাকবে। বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীর কর্মীরা এ ধরনের কাজ করতে পারে। তাতে তাদের এক ঢিলে দুই পাখি মারা হবে। কারণ, বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী মনে করে বেগম জিয়ার অধ্যায় শেষ হলে বিএনপি আর খুব বেশি দূর এগুতে পারবে না। তখন তারা আওয়ামী লীগ বিরোধী মূল জনসমর্থনের মালিক হবে। সে সময়ে যদি তাদের নাম কিছু পরিবর্তন করেও রাজনীতি করতে হয় তাও তারা করবে।
তারাই তখন হবে প্রকৃত আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ। তাই ৮ তারিখ কোনরূপ হট্টগোল হলে জামায়াতে ইসলামীর জন্যে একটা মোক্ষম সুযোগ। কারণ, তাদের কর্মীরা যতবেশি খালেদার কাছে যেতে পারবে অন্যদের পক্ষে তা সম্ভব নয়।
এ কারণে, সরকার তার নিজ গরজেই ৮ তারিখ কোনরূপ ঝামেলা ছাড়া অধিক পুলিশ প্রটেকশনে, অধিক নিরাপত্তার মাধ্যমে বেগম জিয়াকে কোর্টে নেবে এটা যেকোনো সাধারণ মানুষ বোঝে। কারণ, সরকারের সব ধরনের সক্ষমতা থাকা সত্ত্বে কেন এমন একটি বিপদ ঢেকে আনবে? এজন্য ৮ তারিখের অনেক আগের থেকেই সরকার বেগম জিয়ার নিরাপত্তা বাড়াবে। তাছাড়া ওইদিন ঢাকা শহরেও পুলিশ বা সকল আইন শৃঙ্খলাবাহিনী বাড়তি নিরাপত্তা দেবে। সব মিলিয়ে বিএনপির পক্ষে বড় কোনও সমাবেশ বা জন সমাগম ঘটানো সম্ভব নয়।
বিএনপি যখন বুঝতে পেরেছে তাদের পক্ষে জনসমাগম ঘটানো সম্ভব হচ্ছে না তখন তারা বিকল্প পথ হিসেবে কোন শান্তিপূর্ণ পথ খোঁজেনি। তাদের ধারণা বাংলাদেশের রাজনীতিতে শান্তিপূর্ণ পথের থেকে শক্তির পথ অনেক বড়। এ কারণে, জামায়াতে ইসলামী যেমন তাদের নেতাদের রায় হবার আগেই ওয়ার্ম আপ শুরু করেছিলো ঢাকা শহরের রাজপথে পুলিশের ওপর হামলা করে বিএনপিও সেই পথ নিয়েছে।
বিএনপি মনে করছে তাদের ঢাকার কর্মীরা যদি বেগম জিয়ার রায়ের আগে এমন বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটাতে পারে তাহলে সারা দেশে তাদের কর্মীরা এভাবে উজ্জীবিত হবে। তারা রায়ের আগে ও পরে দেশের বিভিন্ন স্থানে এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারবে। যেমনটি জামায়াতে ইসলামী করতে পেরেছিলো সাঈদীর রায়ের আগে ও পরে। বিএনপিও মনে করছে তারা বেগম জিয়ার এই রায়কে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসী হামলা করে বড় ধরনের প্রতিবাদ হিসেবে দেখাবে।
আর এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলার মিডিয়া কাভারেজও বেশি আসে। এক্ষেত্রে তারাও জামায়াতে ইসলামীর মত কিছু মিডিয়া কর্মীর সহায়তাও নেবে। সর্বোপরি তারা মনে করছে, এখন থেকে যদি এভাবে তারা তাদের উগ্র কর্মীদের জাগাতে পারে তাহলে বেগম জিয়ার যদি সাজা হয় তাহলে ঢাকায় না পারুক, সাঈদীর ক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামী যেমন দেশের বেশ কয়েকটি স্থানে কয়েক দিন পরে হলেও বড় ধরনের হামলার মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়েছিলো তেমনটি তারা করতে পারবে। তারা বেশ কিছু মানুষ হত্যা ও বিশেষ করে সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করতে পারবে।
বিএনপির একটি অংশের কথাবার্তা শুনে মনে হয়, তারা এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে শতভাগ সমর্থন করতে পারছে না। তাদের মতে এতে তাদের জনপ্রিয়তা আরো কমবে। অন্যদিকে তারেক রহমান ও তার সমর্থক গোষ্ঠি মনে করে, এই সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি যতবেশি শক্তি প্রদর্শন করতে পারবে তাতে ভবিষ্যতে বিএনপির লাভ হবে বেশি। যে কারণে বিএনপি শেষ পর্যন্ত জঙ্গি পথই গ্রহণ করবে।
কারণ, বিএনপিতে যে যত বড় নেতা হোক না কেন, তারেক রহমানের কথাই সেখানে শেষ কথা। অন্যদিকে যে জঙ্গি গ্রুপ এই হামলা চালাবে এদের সকলের নেতা তারেক রহমান। তারেক রহমানই বিএনপির ভেতর ছাত্র শিবিরের কর্মীদের মাধ্যমে, পাকিস্তানি আইএসআই ট্রেনিং প্রাপ্ত জঙ্গিদের মাধ্যমে একটি জঙ্গি গ্রুপ গড়ে তুলেছে। এরা যে কোনও গণপ্রতিরোধ করে না, জঙ্গি কায়দায় হামলা করে- তা হাই কোর্টের ওখান থেকে প্রিজন ভ্যানে থাকা আসামী ছিনিয়ে নেয়া ও পুলিশের ওপর হামলার ছবি ও ফুটেজ ভালো করে লক্ষ্য করলেই বোঝা যায়।
সেখানে কোনও গণপ্রতিরোধ ঘটেনি বরং তার বদলে জামায়াতের জঙ্গিদের বা নকশালের স্টাইলে পুলিশের ওপর হামলা করা হয়েছে। আর বিএনপির ভেতর যেমন জামায়াতের বিভিন্ন ধরনের জঙ্গিরা আছে তেমনি সেখানে নকশালপন্থিরাও রয়েছে।
সৌজন্যেঃ বিডিনিউজ২৪.কম