9516
Published on ফেব্রুয়ারি 4, 2018দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ বাংলাদেশ, ১৬ কোটি ৩০ লাখ লোকের বাস সেখানে। কৃষি তথা শস্য উৎপাদন ও গো-পালন অধিবাসীদের মূল পেশা। আইএমএফের মূল্যায়নে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে দ্রুত বিকাশমান দেশের তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। তবে উন্নয়নবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ও শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদদের মধ্যে উন্নয়নের ধারা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। গোলযোগপূর্ণ অতীত পেরিয়ে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। প্রাকৃতিক গ্যাস, তেল ও কাঠের মজুদ এবং সার্ক ও আসিয়ান অঞ্চলের মধ্যে সংযোগ রক্ষাকারী বিশ্বের একমাত্র প্রাকৃতিক বন্দরের কারণেই বাংলাদেশের এ অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বেশ কিছু পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়েছে। বৈদেশিক অর্থনৈতিক সহায়তা ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে। শক্তিশালী বাজার অর্থনীতির আবির্ভাব ঘটেছে বাংলাদেশে; আরো যে উন্নতি করবে সে লক্ষণও স্পষ্ট। ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র তকমা ঝেড়ে ফেলে অনেক দূর এগিয়েছে দেশটি; বিপুল অর্থনৈতিক সম্ভাবনার কথাও জানিয়ে দিয়েছে।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৬ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ৭.১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। ৩০ বছরের মধ্যে এটিই সর্বাধিক প্রবৃদ্ধি হার। টানা ছয় বছর ধরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের ওপরে। সন্তোষজনক প্রবৃদ্ধির কারণে দারিদ্র্য ব্যাপক হারে কমেছে। ১৯৯১ সালে ৪০ শতাংশেরও বেশি লোক অতি দরিদ্র দশায় ছিল। বিশ্বব্যাংক বলছে, এখন ১৪ শতাংশেরও কম লোক ওই দশায় রয়েছে।
জিইপি (গ্রোথ ইলাস্টিসিটি অব পভার্টি) তালিকার ১৩৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭তম। জিইপি পূর্বাভাস অনুযায়ী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার হবে ৬.৪ শতাংশ। অবশ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে এখনো বড় ধরনের কিছু বাধা রয়েছে। সবচেয়ে বড় বাধা হলো জনসংখ্যার চাপ। অতিরিক্ত জনসংখ্যা সত্যিকার অর্থেই উন্নয়ন প্রক্রিয়ার বড় প্রতিবন্ধক হয়ে দেখা দিয়েছে। এর কারণে বিভিন্ন খাতের ওপর চাপ পড়ছে। দারিদ্র্য বিমোচনের কর্মসূচিতে যে ধীরগতি দেখা যায়, তা বিভিন্ন খাতের ওপর চাপের কারণেই।
জনসংখ্যা বর্ধমান থাকায় উৎপাদন সম্ভব সম্পদের ওপর চাপ পড়ছে। বর্ধমান আবাসন চাহিদার কারণে চাষযোগ্য জমির পরিমাণ কমছে েফলে কৃষির ওপর চাপ পড়ছে, খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্র সীমিত হয়ে পড়ছে। বিপুলসংখ্যক মানুষের জন্য খাদ্য জোগাতে ও কর্মক্ষম মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে সরকারকে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। জাতীয় বাজেটে বর্ধমান জনসংখ্যার চাপ সরাসরিই পড়ছে।
দেশটি দুর্যোগপ্রবণও বটে। বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন—বন্যা, অনাবৃষ্টি, ভূমিকম্প, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস ও ভাঙন বৈশ্বিক পরিসরে বাংলাদেশের শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য। পৌনঃপুনিক প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ভূমির ক্ষতি, ফসলের ক্ষতি, অবকাঠামোর ক্ষতিসহ বিভিন্ন ধরনের ক্ষতির শিকার হতে হচ্ছে। এসবের কারণে সরকারকে আরো অনেক কাজের সঙ্গে বিপুলসংখ্যক মানুষকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও করতে হয়। এসবের প্রভাব পড়ে সরকারের রাজস্ব নীতিতে। যা হোক, বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিষয়ে সতর্কীকরণের একটি কার্যকর ব্যবস্থা তৈরি করেছে। বাংলাদেশের দুর্যোগ মোকাবেলা ও প্রস্তুতি পরিকল্পনার অন্যতম কর্মসূচি হচ্ছে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি। বাংলাদেশ সরকার, জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট কর্মসূচির সমন্বিত উদ্যোগে এ কর্মসূচি প্রণয়ন করা হয়েছে। এ কর্মসূচির মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার জনগণকে তথ্য সরবরাহ করে, সতর্ক করার ব্যবস্থা করে। ঘূর্ণিঝড়বিষয়ক সতর্কীকরণ সংকেত বোঝার বিষয়ে জনগণকে সচেতন করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তথ্য সরবরাহের নতুন উপায়ও বের করা হয়েছে। জনগণের সঙ্গে মতবিনিময়, পোস্টার ও লিফলেট প্রকাশ ও বিতরণ, চলচ্চিত্র বা তথ্যচিত্র প্রদর্শন এবং ব্যক্তিগত উপস্থাপনার মাধ্যমে সচেতনতা বাড়ানোর এ কাজ করা হয়। বেশ কয়েক বছর ধরে এসব উদ্ভাবনী প্রয়াসের মধ্য দিয়ে কোটি কোটি লোককে সতর্ক করা সম্ভব হয়েছে, অসংখ্য মানুষের প্রাণরক্ষা করা সম্ভব হয়েছে।
স্বাধীনতার পর অর্থাৎ পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ হওয়ার পর অনেক দূর এগিয়েছে তারা। ১৯৭১ সালের পূর্ববর্তী পরিস্থিতি ছিল ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ। সেই পরিস্থিতি অতিক্রম করে সামনে এগিয়েছে বাংলাদেশ। আবার মুদ্রা ও প্রাকৃতিক সম্পদের প্রচুর মজুদ থাকার পরও বাংলাদেশ সেই যুদ্ধজনিত অনেক ক্ষতিই কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এর বেশ কিছু কারণও রয়েছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কারণ হলো, জাতীয় অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সরকারের অব্যবস্থাপনা। নজরদারির অভাবে, সুশাসনের অভাবে বৈদেশিক সাহায্য ও ঋণ যথাযথভাবে কাজে লাগানো যায়নি। শুরুর বছরগুলোতে অবনতিশীল অর্থনীতির গতিমুখ পরিবর্তনে প্রশাসনিক ব্যবস্থা উল্লেখ করার মতো কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। সেই পরিস্থিতি পেছনে ফেলে এসেছে বাংলাদেশ।
কালের কন্ঠ
সূত্র : নিউ দিল্লি টাইমসের সম্পাদকীয়।
ভাষান্তর : সাইফুর রহমান তারিক