৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র ও জাতীয় অগ্রগতির দিন

7148

Published on জানুয়ারি 5, 2018
  • Details Image

গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। নির্বাচনের মাধ্যমেই ক্ষমতার পালাবদল হয়। নির্বাচনের সময়ই রাজনৈতিক দলগুলো তাদের ইশতেহারগুলো নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে তাদেরকে নিজেদের পক্ষে টানেন। পৃথিবীর প্রতিটি গণতান্ত্রিক দেশেই মোটামুটি নির্বাচন পদ্ধতি এক ও অভিন্ন।

কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য বাংলাদেশর মানুষের জন্য এই নির্বাচন সব সময় সুখকর হয়নি। এমনিতেই এদেশের মানুষ সব নির্বাচনেই উৎসবমুখর ভাবে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে থাকে। তারপরেও বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক সহিংসতা বা সন্ত্রাসের কারণে কখনো কখনো উৎসবের ভোট ভয় ও আতঙ্কের হয়ে দেখা দেয় দেশের মানুষের কাছে। এর প্রকৃত উদাহরণ বিগত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন।

বাংলাদেশের মানুষ ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি প্রাক্কালে বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের নামে নজিরবিহীন সন্ত্রাস প্রত্যক্ষ করেছে। ওই নির্বাচন প্রতিহতের নামে দেশজুড়ে আগুন সন্ত্রাস চালিয়ে দেশের মানুষকে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতির মধ্যে ঠেলে দেয়া হয়। নির্বিচারে দেশজুড়ে চলে বৃক্ষনিধন। নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্র জ্বালিয়ে দেয়া, স্কুল পুড়িয়ে দেয়া, নির্বাচনী অফিসারকে হত্যা করার মত নির্মম ঘটনা দেখেছে দেশের মানুষ। কেন এমন ঘটনা ঘঠেছিল তার কারণ জানাটাও দরকার।

বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল হয়ে গেলে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং তাদের জোট তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে অনড় থাকলে রাজনীতিতে অচলাবস্থার মত পরিস্থিরি সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারে বিএনপিকে আহবান জানান। তিনি স্বরাষ্ট্র, অর্থমন্ত্রণালয়সহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদে বিএনপিকে দিতে চেয়েছিলেন। এনমকি এইসব বিষয়ে আলোচনার জন্য তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে টেলিফোন পর্যন্ত করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দু:খজনক ব্যাপার হলো এইসবের কিছুই বিএনপি আমলে নেয়নি। তাদরে ধারণা ছিল তারা সরকারকে যেকোন ভাবেই হোক নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে পারবেন এবং তাদের দাবি আদায় করতে পারবেন। কিন্তু শুরু থেকেই বিএনপি-জামায়াত জোটের আন্দোলনের সাথে সাধরণ মানুষের কোন সম্পৃক্ততা ছিল না। তারা জনগণকে সাতে নিয়ে আন্দোলন না করে সন্ত্রাস ও সহিংসতার পথে হাটতে থাকে প্রথম থেকেই। এই কারণে তাদের আন্দোলন সম্পর্কে জনমনে বিরূপ ধারণা হতে থাকে। তারা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এক সময়।

বিএনপি শুধু ২০১৪ সালেই তাদের সন্ত্রাস ও সহিংসতা করে ক্ষান্ত হয়নি। পরের বছর ২০১৫ সালে নির্বাচনের বর্ষপূর্তিতে আবারো দেশজুড়ে পেট্রোলবোমার আন্দোলন শুরু করে। বিএনপির ওই আন্দোলন কতটা সহিংস ছিল তার ছোট্ট একটা উদাহরণ দিলে বোঝা যাবে। 

বিএনপি-জামাতের ০৫ জানুয়ারি- ৩১ জানুয়ারি, ২০১৫ পর্যন্ত যে আন্দোলনের নামে যে সহিংসতা করেছে তাতে নিহত হয়  ৪২জন সাধারণ মানুষ, আহত হয় ১ হাজার ১৪২ জন। এই সময় যানবাহন ভাংচুর করা হয় ৩৮৭টি, ৪৭৯ টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করা হয়, ৫ রেল লাইনে নাশকতা করা হয় এবং ৭টি লঞ্চে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ থেকেই বোঝা যায় কতটা সহিংস ছিল আন্দোলনের নামে সেই রাজনৈতিক সন্ত্রাস।

এত কিছুর পরেও বাংলাদশ কোন কিছুর কাছে মাথা নত না করে এগিয়ে চলেছে দুর্বার গতিতে। একটি প্রশ্ন সবাই করে, কি হতো যদি শেখ হাসিনা আবারো নির্বাচিত না হতেন? ২০১৪ সালের নির্বাচনে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হয়ে তৃতীয়বারের মত প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা। তার টানা দ্বিতীয় মেয়াদে এসে বাংলাদেশ অনেক কিছুর সাক্ষী হতে পেরেছে যা এক দশক আগেও কল্পনা করা সম্ভব ছিল না। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন বলেই বাংলাদেশের চিরস্থায়ী কলঙ্ক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা সম্ভব হয়েছে যা এখনো চলমান রয়েছে। শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারী জেনারেল আলি আহসান মুহম্মদ মুজাহিদ, কামারুজ্জামান, মীর কাশেম আলী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মত যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি কার্যকর করা সম্ভব হয়েছে। ক্ষমতাধর  এই যুদ্ধাপরাধীদের বাংলার মাটিতে কখনো বিচারের আওতায় আনার সাহস শুধুমাত্র জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার পক্ষেই সম্ভব ছিল এবং তিনি তা করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ গড়তে তিনি তার দৃঢ়চেতা নেতৃত্ব থেকে এক চুল পরিমাণও সরে আসেননি।   

শেখ হাসিনার টানা দ্বিতীয় মেয়াদে বাংলাদেশ এমন কিছুর সাক্ষী হয়েছে যা আমাদের কল্পনাতীত ব্যাপার ছিল। দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে কথিত দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক যখন বাংলাদেশর স্বপ্নের পদ্মাসেতু প্রকল্প থেকে অর্থায়ন প্রত্যাহার করে তখন শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্ব বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ পারে, আমরাও পারি। সম্পূর্ণ দেশের টাকায় বাংলাদেশর ইতিহাসে সবচে বড় মেগা প্রজেক্ট এই পদ্মাসেতুর কাজ এরই মধ্যে অর্ধেক শেষ হয়েছে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে সেতুর মূল কাজ শুরু হয়ে গত বছরেই সেতুর প্রথম স্প্যান বসেছে। এভাবেই চলতি বছরের শেষ নাগাদ আমাদের ইতিহাসে সবচে সফল মেগাপ্রজেক্টটি শেষ হবে। আর বাংলাদশে অর্থনৈতিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে এক বিস্ময় বিশ্ববাসীর কাছে। সদ্য শেষ হওয়া ২০১৭ সালে অর্থনৈতিক সাফল্যে সারা বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশকে কান্ট্রি অব দ্যা ইয়ার ঘোণষা করেছে বিশ্ববিখ্যাত পত্রিকা দ্যা ইকোনোমিস্ট।  অর্থনৈতিক অগ্রতিতে বাংলাদেশ প্রত্যাশার চেয়েও বেশি সাফল্য দেখিয়ে যাচ্ছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে বাংলাদেশ ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। আর এমন উচ্চ গতির প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশ এই মুহূর্তে বর্তমানে আর একটিও নেই। বাংলাদেশর মোট জিডিপির পরিমাণ এখন ২৫০ বিলিয়ন ডলার। মজার ব্যাপার হলো দেশের মোট জিডিপি ১৫০ বিলিয়ন ডলার হতে সময় লেগেছে প্রায় ৩৯ বছর আর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিগত ৯ বছরেই দেশ ১০০ বিলিয়ন ডলারের জিডিপি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। উন্নয়নের পূর্বশর্ত হলো বিদ্যুৎ ও জ্বালানী। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বর্তমানে ১৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছে। চলতি বছর বাংলাদেশ প্রথমবারের মত বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে যাচ্ছে। জ্বালানী সংকট মেটাতে চলতি বছরেই এলএনজি আমদানি করছে সরকার। এইসবই বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রেখেছে এবং উন্নয়নের কাঙ্খিত ধারা অব্যাহত রাখছে। 

৫ই জানুয়ারি হলো গণতন্ত্রের নবযাত্রা এবং জাতীয় সমৃদ্ধির দিন হিসবে স্বীকৃত। এইদিনে যদি একটি নির্বাচন না হতো তবে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হতো এবং অনির্বাচিত লোকদের হাতে ক্ষমতা চলে গেলে বাংলাদেশকে আবারো উল্টোপথে হাটতে হতো। এমনিতেই ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার মধ্যে দিয়ে সামরিক শাসকরা বাংলাদেশকে কয়েক দশক পিছিয়ে দিয়ে গেছে। ৫ই জানুয়ারি থেকে শিক্ষা নিয়ে বিএনপিও আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে বলে আমার বিশ্বাস। কারণ গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় নির্বাচনের কোন বিকল্প নেই। এই উপলদ্ধি বিএনপির যত দ্রুত আসবে ততই গণতান্ত্রিক রাজনীতির জন্য ভালো। কারণ পেট্রোল বোমা মেরে, অনির্দিষ্টকালের জন্য হরতাল-অবরোধ করে কোন সরকারকে বিপদে ফেরা যায় না এবং কোন দাবিও আদায় করা সম্ভব নয়। দাবি আদায় করতে হলে জনগণকে সম্পৃক্ত করা ছাড়া কোন বিকল্প নেই। বিএনপি তাদের অতীতের ভুল স্বীকার করে সুস্থ ধারার রাজনীতি করবে এমনটাই আশা করে দেশের মানুষ।

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত