স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল; ইতিহাসে উজ্জল এক নামঃ আসিফ ইকবাল

2599

Published on ডিসেম্বর 17, 2017
  • Details Image

লন্ডন, মেলবোর্ন, সিডনি, কেপটাউন থেকে ডানেডিন— যেখানেই মাশরাফি, সাকিবরা এখন ক্রিকেট খেলেন, সেখানেই সুনীল আকাশে পতপত করে উড়তে থাকে লাল-সবুজ পতাকা। ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ জাতীয় সংগীত যখনই গাইতে থাকেন, তখন হাজার হাজার মাইল দূরের ১৬ কোটি বাঙালি তাদের সঙ্গে গলা মেলান, কণ্ঠের মাধুর্য ঢেলে গাইতে থাকেন। অথচ ৪৬ বছর আগে ১৯৭১ সালে এমনটি ছিল না। তখন একটি স্বাধীন ভূখণ্ড, একটি পতাকা, একটি জাতীয় সংগীতের জন্য পাকিস্তানের বিপক্ষে স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিল সাড়ে সাত কোটি বাঙালি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ৯ মাসের যুদ্ধের পর স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। সেই যুদ্ধে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অবদান অবিস্মরণীয়। মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের আর্থিক সহায়তার জন্য বাংলাদেশের ফুটবলার ও সংগঠকরা একত্রিত হয়ে ‘স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল’ নামে পশ্চিম বাংলার আনাচে-কানাচে ফুটবল খেলেছেন। লাল-সবুজ পতাকা উড়িয়ে জাতীয় সংগীত গেয়ে উদ্বুদ্ধ করেছেন গোটা দেশকে। বাংলাদেশের ইতিহাসে অমর হয়ে যাওয়া একটি নাম ‘স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল’।

বিজয়ের ৪৬ বছর উদযাপন করছে গোটা দেশ। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অনেকেই আজ বেঁচে নেই।

যারা আছেন, তারা এখনো মুক্তিযুদ্ধের সেই সময়গুলোকে লালন করে বেঁচে আছেন মাথা উঁচু করে। বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফুটবলার ও স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অন্যতম সদস্য কাজী সালাউদ্দিন আবেগতাড়িত হয়ে সে জন্যই বলেন, ‘আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ কাজগুলোর একটি মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের জন্য কাজ করতে পারা। ’

মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস কেউ সম্মুখ সমরে জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন, কেউ গান শুনিয়ে উদ্বুদ্ধ করেছেন মুক্তিযোদ্ধাদের। কেউ ফুটবল খেলে। বাংলাদেশের ৩১ জন ফুটবলযোদ্ধা পশ্চিম বাংলার বিভিন্ন একাদশের সঙ্গে ফুটবল ম্যাচ খেলে দেশের স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলেছেন। বিশ্ব ইতিহাসে এমনটি দেখা যায়নি কখনো। কোনো দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ফুটবলযোদ্ধা দেখা যায়নি। ইতিহাসের কোথাও লেখা নেই এমন ফুটবলযোদ্ধাদের কথা। ‘স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল’ বিশ্ব ইতিহাসে একমাত্র যোদ্ধা, যারা দেশমাতৃকার স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। দলটির অনেকেই আজ বেঁচে নেই। অনেকেই আছেন আমজনতা হয়ে। যারা মারা গেছেন এবং যারা ভালো অবস্থানে নেই, তাদের জন্য মন কাঁদে বাফুফে সভাপতি সালাউদ্দিনের, ‘মুক্তিযুদ্ধের সেই সময়টার কথা আমৃত্যু মনে থাকবে। দেশের বাইরে থাকলেও মন কাঁদত দেশের জন্য। আমরা একে অপরকে উৎসাহিত করতাম। আমরা ছিলাম একটি পরিবার হয়ে। আজ অনেকেই বেঁচে নেই। অনেকেই খুব ভালো অবস্থানে নেই। এসব ভেবে খুব কষ্ট পাই। দেখতে দেখতে ৪৬ বছর হয়ে গেছে। অথচ মনে হয়, এই তো সেদিন আমরা দেশের জন্য যুদ্ধ করেছি। ’

বাংলাদেশ এখন স্বাধীন একটি দেশ। বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে পরিচিত একটি মুখ। তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে ‘স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল’ চিরন্ময় হয়ে থাকবে।

সৌজন্যেঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত