491
Published on জুলাই 23, 2017প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই বছর এইচএসসি’র রেজাল্ট একটু খারাপ হলেও আমরা শিক্ষা ব্যবস্থাকে আধুনিক করে গড়ে তুলে এর গুণগত মানের দিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রয়োগ করেছি। সকল বিষয়ের প্রতি বিশেষ করে উত্তরপত্র মূল্যায়ণে বিশেষ নজর দেয়া হয়েছে যাতে ভবিষ্যত প্রজন্ম বর্তমান বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেড়ে উঠতে পারে।’
তিনি আজ সকালে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে এইএসসি এবং সমমানের পরীক্ষার ফলাফল গ্রহণকালে একথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ১০টি শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানকে সঙ্গে করে আজ প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই ফলাফল হস্তান্তর করেন।
প্রধানমন্ত্রী পরীক্ষায় পাস-ফেল নিয়ে না ভেবে শিক্ষার মান বাড়াতে নজর দেয়ার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মনোযোগী হতে হবে এবং এই বয়সে তাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সঠিক গাইডলাইন দেয়া।
এসময় ছেলেমেয়েরা যেন মাদকাসক্তি ও জঙ্গিবাদে জড়িয়ে না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
ছেলেমেয়েরা নিজেদের কথাগুলো যেন বন্ধুর মত তার বাবা-মাকে বলতে পারে সে বিষয়ে খেয়াল রাখার পরামর্শ দেন তিনি।
ফলাফল নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ক্ষমতায় আসার আগে পাসের হার কী ছিল, আর এখন কী?
তিনি বলেন, আমরা পরীক্ষা নেয়া ও ফল প্রকাশের বিষয়টি একটা নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে এসেছি। ফল পাওয়া নিয়ে এখন আর আগের মতো ঝামেলা পোহাতে হয় না। ঘরে বসেই এখন সবাই ফলাফল পেতে পারে।
আজ এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল ঘোষণা করা হয়েছে। সারাদেশে মোট পাসের হার ৬৮ দশমিক ৯১ শতাংশ।
এ বছর মোট পাস করেছে ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৯৪২ জন পরীক্ষার্থী। মোট জিপিএ ৫ পেয়েছে ৩৩ হাজার ২৪২ জন।
এবার ১০ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১১ লাখ ৮৩ হাজার ৬৮৬ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। তাদের লিখিত পরীক্ষা শেষ হয় ১৫ মে। ব্যবহারিকসহ পরীক্ষা শেষ হয় ২৫ মে।
বক্তব্যের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী যারা কৃতকার্য হয়েছে তাদের অভিনন্দন এবং অকৃতকার্যদের মন দিয়ে পড়াশোনা করে আগামীর জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেন।
বিজ্ঞান শিক্ষার্থীর সংখ্যা আগের থেকে কিছুটা কমে আসায় উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিজ্ঞান শিক্ষার প্রতি আগ্রহটা কম। অথচ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষাটা একান্ত ভাবে প্রয়োজন। বিজ্ঞান শিক্ষাকে উৎসাহিত করতে ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ড প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত বৃত্তি দেয়া হচ্ছে।
তাঁর সরকারের উদ্যোগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনুকূল পরিবেশ ফিরিয়ে আনার প্রসংগ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষার সুন্দর পরিবেশ থাকবে, শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া করবে মনযোগ দিয়ে। সেই সাথে নিজেদেরকে গড়ে তুলবে উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে। পিতা-মাতার প্রতি তাদের দায়-দায়িত্ব পালন করবে সেই সাথে দেশের প্রতি তাদের দায়িত্ব-কর্তব্যও পালন করবে।
তিনি বলেন, পাশ করার জন্য, ভালো ফলাফল করার জন্য প্রত্যেকটা ছেলেমেয়ের আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকতে হবে। ভালো ভাবে পড়তে হবে। পড়াশোনায় মন দিতে হবে। প্রতিদিনের কোন সময়টা ভালো সেটা পড়াশোনার জন্য বেছে নিতে হবে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
কারো ছেলেমেয়েই যেন বিপথে না যায়-এই আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, লেখাপড়া শিখে মানুষের মতো মানুষ হতে হবে। কারণ, ভবিষ্যতে এদেশের নেতৃত্ব তোমাদেরই দিতে হবে। ভালো বিজ্ঞানী হতে হবে, ভালো শিক্ষক হতে হবে। নাগরিক হতে হবে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই তো এখনকার প্রজন্মই সামনে আসবে। নিজেদেরকে সেভাবে তৈরি করতে হবে।
আমরা বাংলাদেশকে বিশ্বে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে যেতে চাই।
আমার লক্ষ্য বাংলাদেশকে এমন ভাবে গড়ে তুলবো যেন সারা বিশ্ব বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে থাকবে বিস্ময়ের সাথে। আল্লাহর রহমতে আমরা সেটা করতে পেরেছি। আজকে বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে রোল মডেল।
আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী স্বাধীন জাতি। আমরা গর্বিত জাতি হিসেবে বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবো সেভাবে নিজেদেরকে গড়ে তুলতে হবে।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে মুখ্য সচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব সুরাইয়া বেগম, সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন, প্রেস সচিব ইহসানুল করিম উপস্থিত ছিলেন।
ছবিঃ সাইফুল ইসলাম কল্লোল