395
Published on মে 20, 2017তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাদের সংগ্রাম অব্যাহত রাখবে, যে পর্যন্ত না বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণের মাধ্যমে দু:খী মানুষের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হচ্ছে’। শনিবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত সংগঠনের বর্ধিত সভার প্রারম্ভিক ভাষণে তিনি একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল এ দেশের প্রতিটি মানুষ অন্ন পাবে, আশ্রয় পাবে, উন্নত জীবন পাবে এবং আওয়ামী লীগের প্রত্যেকটি নেতা-কর্মীর দায়িত্ব জাতির পিতার সে স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করা। তিনি বলেন, এদেশের দু:খী মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবার আগ পর্যন্ত এই সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে এবং জনগণকে সেই কাক্সিক্ষত জায়গায় পৌঁছানোর জন্য দেশকে সঠিক রাস্তায় পরচালিত করাই আওয়ামী লীগের লক্ষ্য। এটা বার বার প্রমাণিত যে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই কেবল দেশের উন্নতি হয়।
পার্টির সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সভায় উদ্বোধনী বক্তৃতা প্রদান করেন। বৈঠকের শুরুতে সংগঠনের দপ্তর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাম শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন। প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
এক ঘন্টার অধিক সময়ের বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের শাসনামলে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বিএনপি’র রাজনীতির নামে বিভিন্ন ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডের তীব্র নিন্দা করেন। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনকে লক্ষ্য রেখে জনসমর্থন আদায়ে সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড তুলে ধরার জন্য দলের নেতা-কর্মীদের প্রত্যেক ভোটারের কাছে পৌঁছতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরেই দেশের উন্নয়ন অভিযাত্রা শুরু হয়েছে, তা আবার ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়ী হয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার কারণেই দেশের এই উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখা সম্ভব হয়েছে। টেকসই উন্নয়নের প্রয়োজনে দলকে আবারও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় নিয়ে আসতে দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের একযোগে কাজ করে যেতে হবে।
শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সকাল সাড়ে ১০টায় এ সভা শুরু হয়।
সভায় সারাদেশ থেকে আগত জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, তথ্য গবেষণা ও দফতর সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কার্যনির্বাহী কমিটি, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্যরাও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নেতা হয়ে কী পেলাম কী পেলাম না- এটা ভাবা যাবে না। জাতিকে কী দিতে পারলাম সেটাই ভাবনার বিষয়। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও স্বপ্ন বাস্তবায়নে আওয়ামী লীগকে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, বিএনপি বলে তাদের নেত্রী তিনবার প্রধানমন্ত্রী ছিল, জাতীয় পার্টি বলে তারা এতদিন ক্ষমতায় ছিল। তারা ক্ষমতায় থাকার কথা বলে, তবে দেশ উন্নত হয়নি কেন? আওয়ামী লীগ যদি দেশের উন্নয়ন করতে পারে তারা পারেনি কেন? তাদের উদ্দেশ্য হলো লুটপাট করে খাওয়া আর সম্পদের পাহাড় গড়া। তা না হলে ভাঙা সুটকেস আর ছেড়া গেঞ্জি ছাড়া যাদের ঘরে কিছুই ছিল না, তারা কোটি কোটি টাকা, অবৈধ সম্পদ ও বিশাল লঞ্চ বহরের মালিক হয় কীভাবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা ও মুক্তিযোদ্ধা ভাতা প্রদানের মাধ্যমে মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে।’
এ সময় তিনি অভিযোগ করেন, ‘বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে মুক্তিযুদ্ধাকে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে। আর পাকিস্তানিদের তোষামোদ করে।’
বিএনপি ক্ষমতায় গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করে বলেও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
জনগণের কল্যাণে আওয়ামী লীগ সরকারের কর্মকান্ড তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আশ্রয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে হাজারো মানুষের আবাসনের ব্যবস্থা করেছে। ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতিটি পরিবারকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার কাজ চলছে। একটি পরিবার যদি ২০০ টাকা জমাতে পারে তাহলে সরকার তাকে আরও ২০০ টাকা দিচ্ছে, যাতে তার ৪০০ টাকা সঞ্চয় হয়। যাতে তারা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে।'
দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে যেন কোন অনিয়ম না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
তিনি বলেন, ক্ষমতা ভোগের কোন বস্তু নয়, ক্ষমা দায়িত্ব পালনের। প্রতিটি ঘন্টা, প্রতিটি মিনিট, প্রতিটি সেকেন্ড দায়িত্ব পালন করতে হবে। জনগণের কল্যাণে কাজ করে যেতে হবে। কোন বিশ্রাম নেই।
বিএনপি চেয়ারপার্সন ঘোষিত সাম্প্রতিক ভিশন-২০৩০ প্রসংগে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেত্রী একটি ভালো জিনিস শিখেছেন বহু যুগ পরে। এত যুগ পরে তাদের মাথায় এলো, তারা ভিশন-২০৩০ দিয়েছে। যাই হোক, মানুষই মানুষের কাছে শেখে। তারা আওয়ামী লীগের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়েছে। নকল করে হয়তো পরীক্ষায় পাশ করা যায়, কিন্তু দেশের জনগণের দায়িত্ব এটা বিবেচনা করার। চুরিবিদ্যা বড়ো বিদ্যা যদি না পড়ে ধরা।
সরকার প্রধান বলেন, তারা হত্যা ও সহিংসতার পথ ছেড়ে জাতির সামনে একটা বিষয় তুলে ধরেছে, তবু ভালো। খালেদা জিয়াকে ধন্যবাদ যে এতদিন পরে হলেও ভিশন-২০৩০ এর মত পরিকল্পনা ঘোষণা করতে পেরেছেন।
বর্ধিত সভায় উদ্বোধনী বক্তা হিসেবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, 'নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। আর এজন্য স্মার্ট, আধুনিক, সুসংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ হয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আগামী নির্বাচন মোকাবিলা করতে হবে। জনগণের সঙ্গে ভালো আচরণ করতে হবে।'
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন অভিযান শুরু করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এরই মধ্যে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সদস্য পদ নবায়ন করা হয়েছে।
বিশেষ বর্ধিত সভায় নতুন সদস্য সংগ্রহ ও পুরোনো সদস্যের নবায়ন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা।
এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক ও সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবীকে আওয়ামী লীগের সদস্য করা হয়। তারা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক শফিউল আলম ভূঁইয়া ও সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ফারজানা বেগম।
আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুসারে, নির্দিষ্ট হারে চাঁদা দিয়ে প্রতি তিন বছর অন্তর অন্তর দলের সদস্যপদ নবায়ন করতে হয়। সর্বশেষ ২০১০ সালে সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছিল।
শেখ হাসিনা সমাপনী বক্তব্যে সব জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নে দলের নিজস্ব কার্যালয় স্থাপনের তাগিদ দিয়ে বলেন, ‘নিজস্ব অফিস থাকা চাই। আপনারা উদ্যোগ নেন, আমরা সহযোগিতা করব।’
কার্যালয়গুলো সচল রেখে সরকারের উন্নয়নের প্রচার চালাতে তৃণমূল নেতাদের নির্দেশনা দেন তিনি।
সংসদ সদস্যদের জেলা নেতাদের সঙ্গে মিলে-মিশে কাজ করতে বলেন শেখ হাসিনা।
সদস্য সংগ্রহ অভিযান পরিকল্পিতভাবে করার পরামর্শ দিয়ে দলীয় সভানেত্রী বলেন, এজন্য জেলা কমিটিকে প্রতিটি উপজেলায় একটি সাব-কমিটি করে দিতে হবে।
‘মুড়ি বই ফেরত দিতে হবে। আমি এবার হিসাব নেব,’বলেন প্রধানমন্ত্রী।
জামায়াত-শিবিরের অনুপ্রবেশ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, পেশী শক্তি বৃদ্ধিতে অনেকেই জামায়াত-শিবির ও বিএনপির নেতা-কর্মী এবং সন্ত্রাসীদের দলে টেনেছেন।
তিনি বলেন, ‘এরা এসে দলের ক্ষতি করে, খুন করে। দয়া করে দল ভারী করার জন্য এদের টানবেন না।’
মামলা থেকে বাঁচতে এবং উন্নয়ন প্রকল্পের ভাগীদার হতে এরা আওয়ামী লীগে যোগ দিচ্ছে বলে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এরা দলের মধ্যে খুন করে। তারা এতটাই শক্তিশালী হয়ে যায় যে, তাদের কনুইয়ের গুঁতায় আমার নেতা-কর্মীরা টিকতে পারে না।’
সম্মেলনের সাত মাসের মধ্যে বর্ধিত সভার আয়োজন করায় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে ধন্যবাদও জানান সভাপতি শেখ হাসিনা।
ছবিঃ সাইফুল ইসলাম কল্লোল