5904
Published on এপ্রিল 12, 2017সিলেটে ২০০৪ সালের ২১ মে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা ও তিনজন নিহত হওয়ার মামলায় মুফতি হান্নান এবং তার দুই সহযোগী বিপুল ও দেলোয়ারকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগেও তা বহাল থাকে। রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে (রিভিউ) তিনজনের করা আবেদন খারিজ হয়। গত ২৭ মার্চ তিনজনই নিজেদের অপরাধ স্বীকার করে প্রাণভিক্ষা চেয়ে কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেন। তাদের প্রাণভিক্ষার আবেদন রাষ্ট্রপতি নাকচ করেছেন। তিনজনের প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ হওয়ার পর কারাবিধি অনুযায়ী ভয়ঙ্কর জঙ্গিনেতা মুফতি হান্নানসহ তিনজনের ফাঁসি কার্যকর হলো। ২০০৭ সালের ৩০ মার্চ একই সময়ে ফাঁসি কার্যকর হয়েছিল নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির আধ্যাত্মিক নেতা শায়খ আবদুর রহমান, জেএমবির প্রধান সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলাভাইসহ ছয় শীর্ষ জঙ্গির। দীর্ঘদিন পর নিষিদ্ধ কোনো সংগঠনের শীর্ষ নেতাসহ তিন জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে।
১৯৯৯ সালে যশোরে উদীচীর অনুষ্ঠানে হামলার মধ্য দিয়ে দেশে নাশকতা শুরু করে হুজিবি। এরপর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, রমনা বটমূলে হামলাসহ অন্তত ১৩টি বড় ধরনের নাশকতা চালায় হুজিবি। এতে ১০৯ জন নিহত ও সাতশ'র বেশি লোক আহত হন।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবশে গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনা যে হাওয়া ভবনে হয়েছে, সে কথাও স্বীকার করে মুফতি হান্নান (স্বীকারোক্তির ভিডিওঃ https://www.youtube.com/watch?v=4jDIiWRvWZE)। মুফতি হান্নানের বক্তব্য অনুযায়ী, সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে শেখ হাসিনাকে হত্যার নীলনকশা সাজানো হয়েছিল হওয়া ভবনেই। ২০০৪ সালের ১৪ আগস্ট একান্ত গোপনীয় সেই বৈঠকে অংশ নেন বিএনপি-জামায়াতের কয়েকজন শীর্ষ নেতাসহ অন্তত নয়জন। পরবর্তীতে দফায় দফায় মিটিং করে হামলা নিশ্চিত করা হয় এবং বাবরের তত্ত্বাবধানে গ্রেনেড সরবরাহ ও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে আর বাঁচতে দেওয়া হবে না। তাকে মারতেই হবে।
হান্নানের জবানবন্দি অনুযায়ী, ২০০৪ সালের ১৪ আগস্ট হাওয়া ভবনে আলোচনায় বসেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, ভূমি উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের একজন (মেজর নূর), জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামীর (হুজি) দুই প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও জঙ্গি সংগঠন আল মারকাজুল ইসলামীর এক নেতা।
২১ আগস্টের বোমা হামলায় কোনও বাড়তি সময় নিতে চায়নি ষড়যন্ত্রকারীরা। হওয়া ভবনের মিটিং এর পরপরই দ্বিতীয় মিটিং হয় বাবরের মিন্টু রোডের সরকারি বাসভবনে। এরপরের মিটিং হয়েছিল আব্দুস সালাম পিন্টুর বাসায়। হান্নানের দাবি, সেখানে অন্য জঙ্গি নেতাদের নিয়ে যাওয়ার পর সালামের ছোট ভাই তাজউদ্দিনের সঙ্গে দেখা হয়। সে (মুফতি হান্নান) জানায়, ‘আমরা অপেক্ষা করার পরে দুইটা কালো পাজেরো গাড়ি আসে। প্রথম গাড়ি থেকে বাবর ও একজন নামে। দ্বিতীয়টা থেকে তিনজন নামে। তারা বৈঠক করে। এরপর আমরা তাদের সাথে বসি। তিনি যে গ্রেনেডগুলো দিতে চেয়েছিল সেগুলো নিয়ে আসি।’ সেখানে বাবর তাদের কাছে গ্রেনেড হ্যান্ডওভার করে বলে উল্লেখ আছে।
হামলার ঠিক আগের মুহূর্তের কার্যক্রম বর্ণনা করতে গিয়ে হান্নান জানায়, ২১ আগস্ট দুপুরে তারা রামপুরার বাসায় মিলিত হয়। সেখানেই গ্রেনেডগুলো সবার মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। এরপর মুফতি হান্নানসহ ১৫ জন ক্যাডার জনসভার আশপাশে অবস্থান নেয়। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী শেখ হাসিনার বক্তব্য শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। হামলার পর হামলাকারীরা ভিড়ের মধ্যে মিশে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।