644
Published on এপ্রিল 7, 2017প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম, ভ্রাতৃত্বের ধর্ম, উন্নতির পথে এগিয়ে যাবার ধর্ম। ইসলাম ধর্মে অসহায় এতিমদের সাহায্য করার কথা বারবার বলা হয়েছে। এই ধর্মকে কেউ হেয় করবে, কলুষিত করবে, এটা কখনই আমরা সহ্য করতে পারি না। কাজেই এক্ষেত্রে যারা আন্তর্জাতিক বিশ্বে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বাংলাদেশ তাঁদের পাশে থাকবে। তিনি বলেন, আমি মনে করি আমরা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যে পদক্ষেপ নিয়েছি তা আরো শক্তভাবে কার্যকর করতে পারব। এ প্রসঙ্গে তিনি সৌদি বাদশাহের জঙ্গিবিরোধী ভূমিকায় বাংলাদেশ সবসময় সহযোগিতা দেবে বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সবসময় তাঁর পাশে আছে । সেই কথাটিই আমি জানাতে চাই।’
ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। স্বাগত বক্তৃতা করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচারক শামীম মোহাম্মদ আফজাল।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন- সৌদি আরবের পবিত্র মসজিদে হারাম এবং মসজিদে নববীর ভাইস প্রেসিডেন্ট শায়খ ড. মোহাম্মদ বিন নাসির বিন মোহাম্মদ আল খুজাইম এবং মসজিদে নববীর ইমাম ও খতিব শায়খ আব্দুল মোহসিন বিন মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল কাশেম।
মঞ্চে অন্যান্যের মধ্যে- পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত আব্দুল্লাহ আল মুতাইরি উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে সৌদি আরবের পবিত্র মসজিদে হারাম এবং মসজিদে নববীর ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. শায়খ মোহাম্মদ বিন নাসির বিন মোহাম্মদ আল খুজাইম এবং মসজিদে নববীর ইমাম ও খতিব ড. শায়খ আব্দুল মোহসিন বিন মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল কাশেম বক্তৃতায় বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম এবং এখানে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ এবং মানুষ হত্যাকারীর কোনো স্থান নেই। জঙ্গিদমনে বাংলাদেশ অনেকাংশে সফল হয়েছে উল্লেখ করে তাঁরা বলেন, আল্লাহর নেয়ামতের মধ্যে একটি নেয়ামত হচ্ছে দেশে শান্তিতে বাস করা। দেশে শান্তি স্থাপনে ইসলামী সংস্কৃতি মজবুত করার পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীকে সহায়তা করতে হবে। এ সময় জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সৌদি সরকারের অবস্থান জানিয়ে তাঁরা এ বিষয়ে সবাইকে সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা সম্মেলনে উপস্থিত মসজিদের ইমাম এবং ওলামা-মাশায়েখ, খতিবদের এই বক্তব্য সকলের কাছে পেীঁছে দেয়ার আহবান জানান। তিনি বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে আজকের এই সম্মেলন গুরুত্বপূর্ণ। এখানে সৌদি আরবের যে দুই জন মেহমান এসেছেন তাদের বক্তব্য জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের যে অবস্থান তা আরও সুদৃঢ় করবে। আপনারা যারা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসেছেন সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তারা যে মুল্যবান বক্তব্য রেখেছেন তারাও শুনে গেলেন। সমাজের ওলামা-মাশায়েখ ও অভিভাবকসহ সকলেই ইসলাম ধর্মেও এই শান্তির বার্তা সকলের কাছে পৌঁছে দেবেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা স্ব-স্ব এলাকায়, নিজ নিজ গ্রামে তাঁদের বক্তব্যে আসা পবিত্র কোরআনের বাণী পৌঁছে দিন।’ ‘সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে পবিত্র দুই মসজিদের খতিবদের বক্তব্য সরকারের প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নেবে এবং সহজ করবে।’
নিজের বক্তব্যের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যকার সম্পর্ক অনেক মজবুত অবস্থানে রয়েছে। দু’দেশের সম্পর্কোন্নয়নে ভূমিকা রাখায় বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত এবং সৌদিতে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতকে বিশেষ ধন্যবাদ দেন প্রধানমন্ত্রী।
বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইসলাম ধর্ম প্রচার ও প্রসারের জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। স্বাধীনতার পর জাতির পিতা মদ-জুয়া সব বন্ধ করে দিয়েছিলেন। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পচাত্তর পরবর্তি সরকারগুলো কেবল ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করেছে কিন্তুু ইসলামের উন্নয়ন ও প্রসারে কিছুই করে যায়নি। ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে ইসলাম থাকবে না, ৭৫-এর পরে যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা এ ধরনের অপপ্রচার করেছে। কিন্তু ক্ষমতায় এসে যারা মদের লাইসেন্স দিয়েছিল।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা সৌদি আরবের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে মুসলমানদের হজে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন। হজে পাঠাবার জন্যে হিজবুল বাহার নামে একটি জাহাজও ক্রয় করেছিলেন। অল্প খরচে সে সময়ে হজে পাঠানো হতো। কিন্তু জাতির পিতাকে ৭৫-এ হত্যা করে যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা বরং জাহাজটিকে প্রমোদ বিহার হিসাবে ব্যবহার করে। তারা মুখে ইসলামের নাম করে ইসলামবিরোধী কাজ করে। ইসলাম প্রচার-প্রসারে প্রকৃত অর্থে তারা কোন কাজই করে নাই। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের উত্থান তারাই করে।’
শেখ হাসিনা এ সময় তাঁর সরকারের উদ্যোগে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সংস্কার, সেখানে নারীদের জন্য পৃথক নামাজের ব্যবস্থা, আরবি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন,অনলাইনে আরবি, বাংলা ও ইংরেজীতে তিনটি ভাষায়য় পূর্ণাঙ্গ কোরআন শরীফ তরজমাসহ সংরক্ষণ, দেশের সকল জেলায় ইসলামী ফাউন্ডেশনের কার্যালয় স্থাপন এবং তাঁদের চাকরিকে সরকারিকরণ, ৮০টি মাদ্রাসায় অনার্স কোর্স চালু, হজ ক্যাম্পের উন্নয়ন, হজেও কার্যক্রম ডিজিটাউজডকরণ, ১ লাখ ৭৫ হাজার শিক্ষার্থীকে দ্বীনি ও কম্পিউটার প্রশিক্ষণ প্রদান, সারাদেশে মসজিদ পাঠাগার তৈরির অংশ হিসেবে ২৮ হাজার ৭৪২টি মসজিদ পাঠাগার নির্মাণ,ডিজিটাল আর্কাইভ নির্মাণ এবং ইমাম-মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্ট স্থাপনসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলে ধরেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের এই ভূ-খন্ডে প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ মুসলমান। ইসলামের যে ধর্মীয় শিক্ষা সেটা আমাদের পালন করতে হবে। অন্য ধর্মের মানুষ এখানে বাস করে, তাদের প্রতি আমাদের সম্মান দেখাতে হবে। যেন সবাই সবার ধর্ম পালন করতে পারে। আমাদের নবী করিম (সা:) এটাই আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনেই বলা হয়েছে ‘লাকুম দিনুকুম ওয়ালিয়াদিন।’
ধর্মের নামে কেউ যেন কারও ক্ষতি না করে এবং জঙ্গিবাদী কর্মকান্ডে না জড়ায় সেদিকে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেককে এক হয়ে ইসলামের জন্য কাজ করতে হবে। কেউ যেন জঙ্গিবাদের পথে না যায়। সেটা খেয়াল করতে হবে। ইসলাম সবসময় মানবতাবাদে বিশ্বাস করে। ইসলাম ক্ষমা ও ভ্রাতৃত্বের ধর্ম। অসহায়দের সহায়তা করতে ইসলাম শিক্ষা দেয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘অত্যন্ত দুঃখের কথা, যারা ইসলামকে হেয় প্রতিপন্ন করতে চায় তাদেরকে সুযোগ করে দেয়া হয়। ইসলাম ধর্মের বিপক্ষে এভাবে পথে নামা, এখানেই সবচেয়ে দুভার্গ্য। তিনি বলেন, আমি আপনাদের আহ্বান জানাবো, ইসলাম ধর্ম যে প্রকৃত শান্তির ধর্ম এমন শিক্ষা দেয়া উচিত যাতে কেউ ভুল পথে না যেতে পারে।’ তিনি বলেন, যারা নিরীহ মানুষকে হত্যা করে তারা জান্নাতে যেতে পারবে না। তাদেরকে জাহান্নামে যেতে হবে।ইসলামকে হেয় করা, কলূষিত করা কখনোই সহ্য করা হবে না।
এসময় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যেখানেই সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদ মাথা চাড়া দেবে, সেখানে আপনাদের ব্যবস্থা নিতে হবে। অবশ্য এরইমধ্যে আপনারা সে ব্যবস্থা নিয়েছেনও।
তিনি বলেন, অনেক সময় গুটিকতক বিপদগামী মানুষের জন্য ইসলামকে জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলা হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক ফোরামে যখনই এ ধরনের কথা ওঠে তিনি তাঁর প্রতিবাদ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গুটিকতক মানুষের জন্য শান্তির ধর্ম ইসলামকে বদনাম করা ঠিক নয়। যারা জঙ্গিবাদে বিশ্বাস করে, তাদের কোনো ধর্ম নেই। জঙ্গিবাদই তাদের ধর্ম। যারা ইসলামকে হেয় করতে চায়, তাদের সেই ভুল পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে।
সরকার প্রধান জানান, যারা জঙ্গিবাদে চলে গছে, তারা যদি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চায়, তবে তাদের সব ধরনের সহযোগিতা সরকার করবে। অর্থনৈতিক মুক্তির পথে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ দেশে কোনো মানুষ না খেয়ে মরবে না, আমরা সেই ব্যবস্থা করেছি। সবাইকে নিয়ে আমরা শান্তির দেশ গড়বো।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় ২০২১ সাল নাগাম মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ এবং ২০৪১ নাগাদ দক্ষিণ এশিয়ার উন্নত সমৃদ্ধ একটি দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে বলেও তার রাজনৈতিক অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
মসজিদে নববীর ইমাম ও খতিব ড. শায়খ আবদুল মোহসিন বিন মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল কাশেম সম্মেলন শেষে মোনাজাত পরিচালনা করেন।