শিক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে ছাত্রলীগের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহবান

764

Published on জানুয়ারি 24, 2017
  • Details Image

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেহেতু ছাত্রলীগের মূল নীতিতেই আছে শিক্ষা, শান্তি, প্রগতি-তাই ছাত্রলীগ কর্মীদের শিক্ষাকে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে।’

ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের শিক্ষা অর্জনে বেশি সময় ব্যয় করার আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তোমাদেরকে শিক্ষার আলো জ্বালিয়ে শান্তির পথে এগিয়ে যেতে হবে প্রগতির মধ্য দিয়ে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আর ঐ মাদকাশক্তি বা জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস থেকে দূরে থাকতে হবে। আর এপথে যারা যাবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেব, এতে কোন সন্দেহ নেই।’

প্রধানমন্ত্রী এ সময় একজন শিক্ষার্থীর জীবনকে দেশ ও জাতির জন্য অনেক মূল্যবান আখ্যায়িত করে বলেন, কারণ তারা দেশ ও জাতিকে অনেক কিছু দিতে পারবে। কিন্তুু নিজেকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাবে, এটা কখনও হয়না। হতে দেয়া যায় না।

তিনি মঙ্গলবার রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৬৯ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়েজিত পুণর্মিলনী এবং সমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘যখন খালেদা জিয়া হুমকি দিল আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে তার ছাত্রদলই যথেষ্ট তখন আমি ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হাতে কাগজ, কলম, বই তুলে দিয়ে বলেছিলাম- ওটা পথ না। পথ হচ্ছে শিক্ষার পথ। আমরা বাংলাদেশকে নিরক্ষরতা মুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছাত্রলীগের নেতা-কর্র্মীদের প্রতি আমার আহবান থাকবে-ছাত্রলীগ কর্মীদের নিজ নিজ এলাকায়, গ্রামে, মহল্লায় কোন অক্ষরজ্ঞানহীন লোক আছে কিনা তার খোঁজ নিতে হবে এবং নিরক্ষরকে অক্ষর জ্ঞান দিতে হবে। এজন্য সবাইকেই একযোগে কাজ করতে হবে যেন বাংলাদেশকে আমরা দ্রুত নিরক্ষরতা মুক্ত করতে পারি।

সমাবেশে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের পক্ষে বক্তৃতা করেন ’৬৯ এর গণ অভ্যুত্থানের অগ্রজ এবং সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ সভায় সভাপত্বি করেন এবং সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন।

অনুষ্ঠানের মঞ্চে উপস্থিত ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের বর্তমান ছাত্র সমাজের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়।

মন্ত্রী পরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ, জাতীয় সংসদের সদস্যবৃন্দ, ১৪ দলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ এবং ছাত্রলীগের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

এরআগে প্রধানমন্ত্রী বিকেল সাড়ে ৩ টায় সমাবেশস্থলে এসে পৌঁছান। তাঁর আগমনে সোহরাওয়ার্র্দি উদ্যানসহ আশপাশের এলাকাটি নবীন-প্রবীন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের এই মিলনমেলা এক জনসমুদ্রে পরিণত হয়।

মুহুর্মুহু করতালির মধ্যে পায়রা উড়িয়ে পুনর্মিলনীর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় পুনর্মিলনীর থিম সঙ রবীন্দ্র সঙ্গীত ‘পুরনো সেই দিনের কথা’ পরিবেশিত হয়।

দেশের বর্তমান উন্নয়ন অগ্রগতিকে ‘আলোর পথের যাত্রা’ অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দকে নিজেদেরকে যোগ্য করে গড়ে তোলার আহবান জানিয়ে তাঁর ভাষণে বলেন, আলোর পথের যাত্রা আমরা শুরু করেছি। দেশকে প্রগতির পথে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। এই অগ্রযাত্রা যেন থেমে না যায় সেজন্য ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতা-কর্মীকে নিজেকে তৈরী করতে হবে। কেননা, এই দেশ এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় একদিন তোমাদের মধ্য থেকেই কেউ না কেউ উঠে আসবে।

‘সে সময় যেন আর কোন কারণে পিছনে ফিরতে না হয়। আমরা যেন সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারি,’ যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

বক্তৃতার শুরুতে নিজেকে ছাত্রলীগের একজন কর্মী আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি এই ছাত্রলীগের নেতা নয় একজন কর্মী ছিলাম এবং এখনো কর্মীই আছি।

তিনি বলেন, ছাত্রলীগের ইতিহাস বাঙালির ইতিহাস-বলেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার কারণ ছাত্রলীগের জন্ম হয়েছিল এমন একটি সময়ে যখন আমাদের এই মাতৃভাষা বাংলাকে কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। উর্দ্দুকে রাষ্ট্রভাষা করে বাংলাকে বাদ দেবার ঘোষণা যখন পাকিস্তানী শাসকরা দিল তখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের একজন ছাত্র। তিনি তখন ছাত্রলীগ সংগঠন গড়ে তোলেন এবং রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকে মর্যাদা দেযার জন্য ভাষা সঙগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ৪ জানুয়ারি ১৯৪৮ সালে ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা হয় আর ১১মার্চ ভাষার জন্য প্রথম আন্দোলনের কোন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। কর্মসূচি থেকে হরতালের ডাক দেয়া হলে বঙ্গবন্ধুসহ অনেক ছাত্রনেতা সেদিন গ্রেপ্তার হন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের মধ্যদিয়েই ছাত্রলীগের জন্ম। আর প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই বাঙালির প্রতিটি অর্জনের সাথে ছাত্রলীগের ইতিহাস জড়িত রয়েছে। প্রতিটি অর্জনের সাথে ছাত্রলীগের অবদান রয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, দেশের সব আন্দোলন-সংগ্রামেই অগ্রসেনানীই ছিল ছাত্রলীগ। জাতির পিতা যখন যেটা করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিতেন তখন সেই বিষয়ে তিনি ছাত্ররীগকেই সর্বপ্রথম নির্দেশ দিতেন, তারাই মাঠে যেত। কি শ্লোগান হবে, জাতির পিতা তা বলে দিতেন। ছাত্রলীগ সেটা মাঠে নিয়ে যেত।

এভাবেই প্রত্যেকটি সংগ্রামে ছাত্রলীগ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই-আমাদের ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া শিখে নিজের পায়ে দাঁড়াবে। মানুষের মত মানুষ হবে। আর এজন্যই জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদকাশক্তির বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি করতে হবে। প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। কারণ মাদকাশক্তি শুধু একজন মানুষ নয় পুরো পরিবারটাকেই ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়।

তিনি বলেন, আরেকটা যে নতুন উৎপাত শুরু হয়েছে-জঙ্গিবাদ। এই সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ শুধু বাংলাদেশ নয় সমগ্র বিশ্বব্যাপীই একটি সমস্যা।

প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেন, কিন্তুু এই সমস্যার উৎসটা কি? আমরা ধর্মে বিশ্বাস করি এবং ইসলামে জঙ্গিবাদ সন্ত্র্রাসের কোন স্থান নাই। কোথাও মানুষ খুনকে সমর্থন করা হয়নি। আত্মাঘাতী হলে দোজখে যেতে হয়। কেউ বেহেশতে যেতে পারে না।

তিনি বলেন, আমার অবাক লাগে যখন দেখি আমাদের কোমলমতি এমনকি কোন ইংলিশ মিডিয়ামে পড়া ছেলে-মেয়ে জঙ্গিবাদের পথে চলে যাচ্ছে। তারা কিভাবে বিত্তশালী পরিবারের সন্তান হয়ে উচ্চশিক্ষা নিয়ে জঙ্গিবাদের পথে পা বাড়ায়।

কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম, এই ধর্ম আমাদের শান্তির পথ দেখায়। কিšু‘ যারা ধর্মের নামে মানুষকে বিভ্রান্ত করে তাদের ব্যাপারেও আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে। কাজেই আমরা ইতোমধ্যেই সিদ্ধান্তÍ নিয়েছি বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের কোন স্থান হবে না।

তিনি ’৯৬ সালে ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসেই দেশের স্বাক্ষরতার হার বৃদ্ধি, দারিদ্র বিমোচন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্লতা অর্জন, বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি সহ সে সময়ে দেশের বিভিন্ন উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন। পরবর্তীতে বিএনপি-জামাত জোটের শাসনে দেশ এগোনোর পরিবর্তে পিছিয়ে যাওয়ায় খালেদা সরকারের কঠোর সমালোচনাও করেন।

২০০৮ সালে পুনরায় ক্ষমতায় এসে আবারো বিএনপি জোটের বন্ধ করে দেয়া উন্নয়ন প্রকল্পগুলো চালু এবং বহুমুখী উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে তাঁর সরকারের আমলে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ খাত, তথ্যপ্রযুক্তিসহ সামগ্রিক আর্থ সামাজিক উন্নয়নের পরিসংখ্যানও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

আওয়ামী লীগ সভাপতি অভিযোগ করেন, বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা সেনাশাসক জিয়াউর রহমান, সে সময় খন্দকার মোস্তাকের সঙ্গে মিলে পঁচাত্তরের বিয়োগান্তক অধ্যায় সংগঠন ও অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

দেশে হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রে রাজনীতির প্রবক্তা হিসেবে জিয়াউর রহমানকে আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী এ সময় মুক্তিযুদ্ধের গৌরবজ্জ্বল ইতিহাস বিকৃতির ষড়যন্ত্রের জন্যও জিয়াউর রহমানকে অভিযুক্ত করেন।

জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে সংবিধান সংশোধন করে যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতিতে পুণর্বসান এবং দালাল আইন বাতিল করে কারাগারে আটক যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি প্রদানের অভিযোগ করেন শেখ হাসিনা।

তারই ধারাববাহিকতায় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীদেরকেও খালেদা জিয়ার মন্ত্রীসভার মন্ত্রী করা হয় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা যুদ্ধাপরাধীদের মত এসব মদদ দাতাদেরও বাংলার মাটিতে একদিন বিচারের সম্মুখীন হতে হবে বলে মন্তব্য করেন।

মাত্র সাড়ে তিন বছরে একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলায় জাতির পিতা যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তা দেখে আজকের দিনেও অবাক হতে হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য। জাতির পিতা বেঁচে থাকলে অরো অনেক আগেই বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ দেশের কাতারে সামিল হত।

একাত্তরের পরাজিত শক্তির চক্রান্তে তাঁকে নির্মমভবে নিহত হতে হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমার মাঝে মাঝে মনে হয় কি দোষ ছিল আমার বাবার। তিনি দেশের মানুষের অধিকারের জন্য নিজের পুরো জীবনটাইতো দিয়ে দিয়েছিলেন। তাহলে তাঁকে কেন হত্যা করা হলো? তাঁর দোষ তিনি একটি নির্যাতিত-নিপীড়িত জাতির মাঝে জাতিস্বত্তার উন্মেষ ঘটিয়ে তাঁদেরকে একটি স্বাধীন দেশ এনে দিয়েছিলেন!

’৬৯’র ঐতিহাসিক গণঅভ্যূত্থান দিবসের প্রেক্ষাপট স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে স্বাধীনতা অর্জনের মধ্যদিয়ে বিশ্বসভায় যে সন্মান এনে দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু সেই সন্মান ও মর্যাদা সমুন্নত রাখতে হবে। আমরা বিজয়ী জাতি। সবসময় মনে এই জোরটা রাখতে হবে- আমরাও পারি। কারণ, আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে এই বিজয় অর্জন করেছি।

আত্মবিশ্বাস থাকলে কঠোর লক্ষ্যও অর্জন করা সম্ভব উল্লেখ করে প্রধোনমন্ত্রী এ সময় পদ্মাসেতু নির্মাণ নিয়ে বিশ্বব্যাংকের কল্পিত দুর্নীতির অভিযোগে একতরফাভাবে বরাদ্দের অর্থ প্রত্যাহারকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে নিজস্ব অর্র্থে পদ্মাসেতু নির্মাণের উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন।

তিনি প্রশ্ন তোলেন ‘আমরা নিজস্ব অর্থায়নে যদি নিজেরাই পদ্মাসেতুর মত মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করতে পারি তাহলে দেশকে স্বনির্ভরভাবে গড়ে তুলতে পারব না কেন?

বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে অবশ্যই মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে দক্ষিণ এশিয়ার একটি উন্নত-সমৃদ্ধ শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা পাবে বলেও এ সময় দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত