407
Published on ডিসেম্বর 23, 2016প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কাজেই এই নির্বাচনটা তাদের এতোদিনের যে অভিযোগ তারা করে আসছিল সেই অভিযোগের একটা উপযুক্ত জবাব নারায়ণগঞ্জবাসী দিয়ে দিয়েছে।’
নারায়ণগঞ্জের ভোটার ও জনগণকে অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচন যে সুষ্ঠু করা যায় সেটা আওয়ামী লীগ সরকার বলেই সম্ভব হয়েছে। আমরা দেখিয়ে দিয়েছি আমাদের অধীনে সকল নির্বাচনই সুষ্ঠু হয়।’
তিনি বলেন, জনগণ সুষ্ঠুভাবে তাদের ভোট দিয়েছে এবং যাকে ভোট দিয়েছে সে-ই নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছে। কারণ, বিএনপি নিজেইতো ৫টি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলো।
প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনে যদি কারচুপিই হয় তাহলে ৫টি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তারা বিজয়ী হলো কিভাবে। কই সেখানেতো আওয়ামী লীগ কিছু করতে যায়নি। জনগণ যেটা ম্যান্ডেট দিয়েছে আমরা সেটাই মেনে নিয়েছি।
শুক্রবার সন্ধ্যায় গণভবণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সদস্য বিজয়ী মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী সাক্ষাৎ করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে মেয়র আইভী তার অনুভূতি ব্যক্ত করেন। ডা. দীপু মনি অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ সময় ডায়াজে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সকলেইতো আমার নির্দেশ চায় আমার একটাই নির্দেশ ছিল- নির্বাচন হতে হবে অবাধ, শান্তিপূর্ণ এবং সাধারণ মানুষ যেন তাদের ভোটটা সঠিকভাবে দিতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার এই বিশ্বাস ছিলো, আস্থা ছিল, জনগণের প্রতি বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জের ভোটারদের প্রতি যে, তারা ভোট দেয়ার সুযোগ পেলে নৌকা মার্কাকে ভোট দেবে, আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে। এই বিষয়ে কোন সন্দেহ ছিলো না।
প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন নিয়ে বিএনপির অভিযোগ প্রসংগে বলেন, বিএনপিকে আমি একটা কথা বলবো, তারা আজকে আর কোন কথা খুঁজে পাচ্ছে না। কি যে তারা বলবে, কোথায় কি আছে, আবার দেখলাম তারা জুডিশিয়াল ইনকোয়ারিও চাচ্ছে। মানে যখন কোন কিছু না পায় তখনতো একটা কথা বলতে হয়। আসলে তাদের বলার কোন মুখ নেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে আমার একটা প্রশ্ন- সেটা হচ্ছে বিএনপি’র জন্মটাই হচ্ছে অবৈভাবে ক্ষমতা দখলের মধ্যদিয়ে- যে ক্ষমতা সংবিধান লংঘন করে জিয়াউর রহমান দখল করেছিলো মার্শাল ল’ জারি করে, সেনাপ্রধান হিসেবে অস্ত্র ঠেকিয়ে। মানে তখন সায়েম সাহেব ছিলেন রাষ্ট্রপতি। বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতি সায়েমকে অস্ত্র ঠেকিয়ে জিয়াকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করতে বাধ্য করেছিল। এভাবে জিয়া অবৈধভাবে রাষ্ট্রপতি হলো অস্ত্র ঠেকিয়ে। ক্ষমতায় এসে কি হল- হ্যাঁ-না ভোট। না-এর বাক্স আর কেউ খুঁজে পায় নাই। ১৯৭৯ সালে এসে করলো রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। যতটা ভোট তার চেয়ে বেশি ভোট তার বাক্সে চলে গেলো। শতভাগের ওপরে ভোট চলে গেলো। কারচুপির নতুন নজির দেখালো। সুতরাং, কারচুপির নমুনাটা কোথা থেকে শুরু। তারপর এলো সংসদ নির্বাচন। সে নির্বাচনও যেন একদম ছকবাঁধা নির্বাচন। আওয়ামী লীগকে কয়টা সীট দেবে সেভাবে কারচুপি করে নির্বাচন হলো। এভাবে কারচুপি, রীতিমত ভোট চুরি এবং ইলেকশন ম্যানিপুলেশনের মধ্যদিয়ে যাদের যাত্রা শুরু এবং এর পরবর্তীতে আমরা দেখেছি ’৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন। তার পূর্বে মাগুরার উপ-নির্বাচন। সে কথা নিশ্চয়ই কেউ ভুলে যায়নি কিভাবে জোর করে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে পরাজিত করা হলোÑ ভাট কারচুপি করলো। রি-ইলেকশন হলো মিরপুরে- ভোট কেন্দ্রে কাউকে যেতে না দিয়ে বোমাবাজি-টাজি করে নির্বাচনের রেজাল্ট পাল্টে দিলো। ঢাকার রমনা-তেজগাঁও আসনের নির্বাচন। নির্বাচনে মিরপুরের মতো করেই ফালুকেও ভোট কারচুপি করে জেতানো হলো। কোন ভোটারতো ভোট কেন্দ্রেই যেতে পারে নাই। বাসে করে লোকজন নিয়ে ফ্রি-স্টাইলে সীল মেরেছে। এক পুলিং সেন্টার থেকে আরেক পোলিং সেন্টারে গিয়ে তারা সীল মেরেছে। তারপর ফলাফল ঘোষণা করে। কোন ভোটার নাই। কোন প্রার্থীর কোন এজেন্টও ভোট কেন্দ্রে নাই। রাজধানী ঢাকাতে প্রকাশ্য দিবালোকে এই মিরপুর এবং তেজগাঁওতে ভোট চুরি হলো। সেটাওতো মানুষ দেখেছে। জানি না, তারা ভুলে গেছেন কি-না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর তারা আসলো ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে। সারাদেশে কতো ভোটার ছিলো। কোন ভোটার ছিল না। সারাদেশে আর্মি ডেপ্লয় করে দিয়ে সমস্ত বুথ-টুথ কন্ট্রোলে রেখে ইচ্ছে মতো সীল মারা হলো। ২ থেকে ৩ শতাংশ ভোটারও ভোট কেন্দ্রে যায়নি। ভোট চুরিটা এতো স্পষ্ট ছিল যে, দেশের মানুষ প্রতিরোধ করলো। এটার প্রতিবাদ জানালো। আন্দোলন হলো। সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ সরকারের সাথে অসহযোগ করলো এবং একটা পর্যায়ে ৩০ মার্চ খালেদা জিয়া পদত্যাগ করতে বাধ্য হলো। ভোট চুরির দায় কাঁধে নিয়ে খালেদা জিয়াকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল। এই কথাটা সবাই ভুলে যায় কেন আমি বুঝি না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেককেই দেখি জ্ঞানী-গুণী, অনেক কথা বলেন, কিন্তু তাদের স্মৃতি যেনো কোথায় হারিয়ে গেছে। এরপর ২০০১ সালের নির্বাচন। ভোটতো আওয়ামী লীগই পেলো কিন্তু দেশের সম্পদ বিক্রির মুচলেখা দিয়ে, অন্যের সহযোগিতা নিয়ে, সেই নির্বাচনে জামায়াতকে সাথে নিয়ে বিএনপি ক্ষমতায় আসলো। যুদ্ধাপরাধী হিসেবে সাজাপ্রাপ্ত জামায়াতের দু’জনকে মন্ত্রী বানালো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির কাছে এরা মুখ দেখায় কিভাবে। সেটাই আমার প্রশ্ন। আর এ দেশের মানুষই বা আবার এই বিএনপিকে আবার ভোট দেয় কিভাবে। যারা এতো অপকর্ম করেছে। অপরাধ করে গেছে একটার পর একটা। মানি লন্ডারিং এবং টাকা-পয়সা লুটপাটের জন্য সেই আমেরিকা থেকে এফবিআই এসে খালেদা জিয়ার পুত্রের নামে স্বাক্ষী দিয়ে গেলো। এই অভিযোগে তাদের সাজাও হয়েছে। শাস্তি পেয়েছে।
খালেদা জিয়ার উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি নিজেতো এতিমের টাকা মেরে দিয়ে এখন কোর্টে মামলা মোকাবেলা করতেই হিমশিম খাচ্ছেন ভয় পাচ্ছেন। যদি বুকে সাহস থাকে যে- না এতিমের টাকা চুরি করে নাই, তাহলে মামলা ফেস করতে আবার ভয় কিসের। আমরা কী দেখতে পাচ্ছি! পর পর দুশ’বার শুধু রিটই করেছে। একটার পর একটা রিট করে শুধু কালক্ষেপণ। কারণ, আসলেতো এতিমের টাকা চুরি করে খেয়েছেন। যারা এতিমের টাকা চুরি করে খায়, প্রধানমন্ত্রী হয়ে কালো টাকা সাদা করে, সেই টাকা তাহলে কোত্থেকে আসে। দুর্নীতি এবং চুরির টাকা ছাড়া এটা কোন্্ টাকা। তারপরে জ্বালাও-পোড়াও করে জীবন্ত মানুষ হত্যা। বিএনপি’র অনেক নেতা বলেন, তাদের বিরুদ্ধে মামলা। যেভাবে জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে তাদের নামে মামলা হবে নাতো কি হবে?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের কী শাস্তি হওয়া উচিত। এটা দেশবাসীর কাছে জানতে চাই, তাদের কি শাস্তি হওয়া উচিত।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এই নির্বাচনটা অত্যন্ত চমৎকার একটি নির্বাচন হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের নবনির্বাচিত মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভি শুভেচ্ছা বক্তৃতায় নারায়ণগঞ্জের উন্নয়ন ও দ্রুত বন্দর সেতু তৈরির প্রসংঙ্গ উত্থাপন করায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমগ্র বাংলাদেশের উন্নয়নই আমি করতে চাই। এ জন্য কোন দাবি কিংবা বলার দরকার হবে না। এগুলো যেনো আরো ভালোভাবে হয় তার ব্যবস্থা নিচ্ছি। কারণ, যেমন ঢাকা-চট্টগ্রাম ফোর-লেন হয়ে যাচ্ছে। এদিকে পদ্মা সেতু আমরা নির্মাণ করছি। আর প্রত্যেকটি জায়গায় আমরা যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করছি। কাজেই আইভি যে ব্রিজের কথা বলছে সেই ব্রিজের কাজতো শুরু হয়ে যাওয়ার কথা। বন্দর সেতুর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোন কাজ এবং যোগাযোগই কিন্তু থেমে থাকে না। কারণ, সারাদেশে আমরা একটা যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলছি এবং এতো দ্রুত আমরা কাজ করছি যেটা আপনারা নিজেরাই দেখতে পারেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগে নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা আসতে কতো সময় লাগতো। এখন কত দ্রুত আসতে পারেন সেটাও একটু ভেবে দেখবেন। এভাবে পত্যেক এলাকাতেই আমরা একটা লিংক করে দিচ্ছি। রেল যোগাযোগওতো আমরা করে দিয়েছি। কাজেই উন্নয়নের ব্যাপারে কোন দাবি করা লাগবে নাÑ সেটা আমার নিজেরইতো জানা আছে। কিভাবে একটা দেশকে উন্নত করা যায় সেভাবেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেহেতু আইভি মেয়র হয়ে গেলো, তাই আমি মনে করি উন্নয়নের যে ধারাটা নারায়ণগঞ্জে চলমান সেটা অব্যাহত থাকবে। উন্নয়নের কাজগুলো দ্রুত সম্পন্ন হবে এবং নতুন নতুন আরো প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। কারণ, বিএনপি’র কেউ আসলে তো তারা লুটে খায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা একটু তুলনা করে দেখেন ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আমরা কি করেছি, আর তারা ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত কি করে গেছে। সববিছু বন্ধ করে দিয়ে শুধু টাকা মেরে খাওয়া।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন করলাম, তারা বিদ্যুৎ কমিয়ে জনগণকে দিলো কী- খাম্বা। রাস্তার পাশে পাওয়া যায় খালি খাম্বা শুয়ে আছে। তার মাজেজাটা কি মাজেজা আর কিছুই না, খালেদার ছেলে খাম্বা লিমিটেড কোম্পানী করে, শুধু খাম্বাই বানিয়েছে- বিদ্যুৎ আর উৎপাদন করে নাই। অর্থাৎ কোথায় পয়সাটা বানানো যায় সেদিকেই তাদের দৃষ্টি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দৃষ্টি জনগণকে কিভাবে আরাম দেবো, জনগণের উন্নতি কিভাবে হবে, জনগণের যোগাযোগ কিভাবে সুন্দর হবে, জনগণ যেনো একটু ভালোভাবে বাঁচতে পারে।
ছবিঃ সাইফুল ইসলাম কল্লোল