782
Published on ডিসেম্বর 20, 2016প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিজিবি’র সদস্য হিসেবে আপনাদের আনুগত্য ও বিশ্বস্ততা প্রশ্নাতীত। কর্মকর্তা ও সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও শ্রদ্ধাবোধ, শৃঙ্খলাবোধ, মানবিকতা এবং সর্বোপরি পারস্পরিক সহানুভূতিশীলতাই এই বাহিনীর বন্ধন দৃঢ়তর করবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার বিজিবি দিবস উপলক্ষে বিজিবি সদর দপ্তর পিলখানার বীরউত্তম ফজলুর রহমান খন্দকার মিলনায়তনে বিজিবি আয়োজিত বিশেষ দরবারে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সীমান্ত রক্ষা, অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং প্রাকৃতিক কিংবা সামাজিক যে কোন দুর্যোগে বিজিবি জাতির আস্থার ঠিকানা। এ জন্য বিজিবি মহাপরিচালকসহ আপনাদের সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগ বিবেচনায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ একটি গৌরবোজ্জ্বল প্রতিষ্ঠান। এই বাহিনী ২শ’ ২১ বছরের ঐতিহ্যমন্ডিত। ১৭৯৫ সালে রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়ন নামে প্রথম গড়ে তোলা হয় এই বাহিনী। সময়ের ব্যবধান ও ভৌগোলিক পরিবর্তনের কারণে নানান নামে দায়িত্ব পালনের পর এখন বিজিবি নামে সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে কাজ করছে।
এদিনের বিশেষ দরবারে আরো বক্তৃতা করেন বিজিবি’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন।
বিজিবি’র সদস্যদের দক্ষতা বৃদ্ধি, পেশাদারিত্ব তৈরি, জওয়ানদের আবাসনসহ সার্বিক উন্নয়নে তাঁর সরকার অনেক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বিজিবি’র উন্নয়নে গৃহিত বিভিন্ন পদক্ষেপের খন্ডচিত্র তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিজিবি’র সদর দপ্তর পিলখানার সঙ্গে রিজিয়ন সদর ও সেক্টর সদরের ডিজিটাল কানেকশন প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় প্রতিনিয়ত ভিডিও কনফারেন্স’এর মাধ্যমে সার্বিক পরিস্থিতি মনিটরিং করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিজিবি’র জন্য প্রথম ভাসমান বিওপি নির্মাণ করে দুর্গম সুন্দরবন রক্ষার ব্যবস্থা করেছি। আরও একটি ভাসমান বিওপি শিগগিরই বিজিবিতে যুক্ত হচ্ছে।
বিজিবি সদস্যদের বাৎসরিক অর্জিত ছুটি বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছুটিতে গমনকালে ২ মাসের বেতন-ভাতা অগ্রিম প্রদান করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি বিজিবি’র জুনিয়র কর্মকর্তাদের পদমর্যাদা দ্বিতীয় শ্রেণীতে উন্নীত করেছেন। পূর্বে যা তৃতীয় শ্রেণীতে ছিল।
তিনি বলেন, আমি আপনাদের সীমান্ত ভাতা ও মূল বেতনের শতকরা ৩০ ভাগ বৃদ্ধি করেছি, পারিবারিক রেশন ৬০ ভাগ থেকে ১০০ ভাগে উন্নীত করেছি।
দরবারে অংশগ্রহণকারী বিজিবি সদস্যদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুনর্গঠনের পর বিজিবি সদর দপ্তরে এটা আমার ৪র্থ দরবার। এখানে এসে নতুন পরিবেশ ও সুশৃঙ্খল আয়োজনে আমি মুগ্ধ। ভবিষ্যতে সবাই বাহিনীর নিজস্ব শৃঙ্খলার বিষয়টি ভালভাবে জেনে নিবে এবং চর্চা করবে।
শেখ হাসিনা বলেন, গত জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে ও পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক সহিংসতা, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড প্রতিরোধ, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং জনসাধারণের জান-মাল রক্ষায় আপনারা দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও তাদের দোসরদের পরিকল্পিত টানা অবরোধে গাড়ি ভাংচুর এবং চলন্ত গাড়িতে পেট্রোল বোমায় জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যাসহ দেশ অচলের ষড়যন্ত্র চালিয়েছিল। আপনারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে তা বানচালে সক্ষম হন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা, মায়ানমার সীমান্তে উত্তেজনা, রামুর বৌদ্ধ পল্লীর নিরাপত্তা ও পুনর্বাসন, পার্বত্য এলাকায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি, ছিটমহলবাসীকে পুনর্বাসনে আপনাদের পদক্ষেপ বিজিবি’র সুনাম ও মর্যাদা বৃদ্ধি করছে।
প্রধানমন্ত্রী প্রত্যেক বিজিবি সদস্যকে দেশপ্রেম, সততা ও শৃঙ্খলার সাথে নিজ-নিজ দায়িত্ব পালনের আহবান জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিজিবি’র কল্যাণ ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে তার সরকারের সবরকম সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী বিজিবি সদর দপ্তরের বীরউত্তম আনোয়ার হেসেন প্যারেড গ্রাউন্ডে বিজিবি দিবস উপলক্ষে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ শেষে বিজিবি সদস্যদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা করেন।
ছবিঃ সাইফুল ইসলাম কল্লোল