পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগার ঘুরে আবেগাপ্লুত বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা

582

Published on নভেম্বর 5, 2016
  • Details Image

শনিবার (০৫ নভেম্বর) বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রবেশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রথমেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছোট বোন শেখ রেহানা ও ববিকে নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কারা স্মৃতি জাদুঘরে যান।

জাদুঘরের সামনে নির্মিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী।

এরপর স্মৃতি জাদুঘরের বঙ্গবন্ধু কারা স্মৃতি স্মৃতি নির্দশন গ্যালারিতে যান। সেখানে বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন সময়ের ছবি রয়েছে। তিনি ঘুরে ঘুরে ছবিগুলো দেখেন। সংগ্রামী জীবনের বিভিন্ন সময় বঙ্গবন্ধু যে কক্ষটিতে বন্দী ছিলেন সেখানে যান প্রধানমন্ত্রী ও তার বোন রেহানা।

কক্ষটিতে বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত টেবিল, চেয়ার, হাড়ি-পাতিলসহ বেশ কয়েকটি আসবাবপত্র রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘ সময় এ কক্ষটিতে অবস্থান করেন। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বাবার বন্দী থাকার কক্ষ ও ব্যবহৃত বিভিন্ন তৈজসপত্র দেখেন।

এ সময় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার চেহারায় বিষাদের চাপ ফুটে ওঠে। চোখে-মুখে বেদনার নীল রং স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

বঙ্গবন্ধুর কারা স্মৃতি জাদুঘর থেকে বেরিয়ে প্রধানমন্ত্রী পুরাতন কারগারের বর্তমান নকশা দেখেন। এ সময় একজন কর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রী নকশার বিভিন্ন অংশ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নিকট তুলে ধরেন।

এখান থেকে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় চার নেতা কারা স্মৃতি জাদুঘরে যান। সেখানে প্রবেশ মুখেই রয়েছে জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পর লাশ হস্তান্তরের আগ পর্যন্ত যে জায়গাটিতে মরদেহ রাখা হয়েছে সেই স্মৃতি চিহ্ন।

জাতীয় চার নেতা কারা স্মৃতি জাদুঘরে প্রবেশের আগে এ জায়গাটিতে এসে মর্হুত্বের জন্য থেমে যান প্রধানমন্ত্রী।

জাদুঘর প্রাঙ্গণে থাকা জাতীয় চার নেতার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী।

এর পর ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের যে কক্ষটিতে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহচর জাতীয় চার নেতাকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয় সেখানে প্রবেশ করেন।কক্ষটিতে প্রধানমন্ত্রী বেশ কিছুক্ষণ অবস্থান করেন।

কারাগার পরিদর্শন শেষে যখন বেরিয়ে যাচ্ছিলেন তখনো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন রেহানার চেহারায় বিষাদের ছায়া ছিলো।

১৭৮৮ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আমলে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে নির্মিত হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার। প্রথমে এটি ক্রিমিনাল ওয়ার্ড নামে পরিচিত ছিল। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ইংরেজ, পাকিস্তান এবং স্বাধীন বাংলাদেশের নানা ঘটনার সাক্ষী।

চলতি বছরের জুলাই মাসে কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া ইউনিয়নের রাজেন্দ্রপুরে স্থানাত্তর করা হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার।

দেশের প্রাচীনতম এবং এক সময়ের সর্ববহৎ কারাগার পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার এখন শুধুই ইতিহাস।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার যখন যাত্রা শুরু করে তখন এর ধারণ ক্ষমতা ছিলো ৫০০ শতের মতো। ১৯০২ সালে ক্রিমিনাল ওয়ার্ড থেকে আড়াই হাজার ধারণ ক্ষমতার একটি পূর্ণাঙ্গ কারাগার হিসাবে রূপ পায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারগার। সর্ব শেষ এতে আট হাজারের বেশি বন্দী থেকেছে যা ছিলো ধারণ ক্ষমতার অনেক বেশি।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে দুর্ধষ সন্ত্রাসী থেকে শুরু করে জঙ্গী, খুনীসহ কুখ্যাত অপরাধীদেরও বন্দী রাখা হয়, বিচার হয়েছিলো।

উপনেবেশিক আমল থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে শুধু অপরাধীরাই বন্দী থাকে নি, থেকেছে দেশপ্রেমিক, মানুষের মুক্তি সংগ্রামে অনেক লড়াকু বীর।

রাজনৈতিক জীবনে বহুবার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জেল খেটেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

ভাষা আন্দোলন ছাড়াও ছয় দফা, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামরিক সরকার বিরোধী আন্দোলনে পাকিস্তান আমল থেকে স্বাধীন বাংলাদেশেও জেল খেটেছেন অনেক সংগ্রামী।

১৯৭১ সালে যুদ্ধ শুরু হলে কয়েদীখানা খুলে দেয় কারারক্ষীরা। মুক্তিযুদ্ধে কারারক্ষী ও কর্মকর্তারাও যুদ্ধে অংশ নেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাত্র ৮০ দিনের মাথায় জাতীয় চার নেতাকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে।

সংবাদঃ বাংলানিউজ২৪.কম

ছবিঃ ইয়াসিন কবির জয়

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত