434
Published on আগস্ট 13, 2016এর মাধ্যমে দেশের তৃতীয় সমুদ্র বন্দর হিসেবে পায়রায় পন্য ওঠা নামা শুরু হল।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পায়রা বন্দরের বহির্নোঙ্গর থেকে পণ্য খালাসের মাধ্যমে অপারেশনাল কার্যক্রমের উদ্বোধনের পাশাপাশি আরো কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বন্দর উদ্বোধনকালে বলেন, এই বন্দর চালু হলে এই অঞ্চলের মানুষগুলোর ভাগ্যের আমূল পরিবর্তন হবে। এই বন্দরকে ঘিরেই এখানে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। সমগ্র অঞ্চলটিই অর্থনৈতিক প্রাণকেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে।
চিনের জাহাজ এম ভি ফরচুন বার্ড আমাদের জন্য সৌভাগ্য নিয়ে এসেছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পায়রা বন্দর কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে পায়রা বন্দর প্রান্ত থেকে বক্তৃতা করেন- নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান এবং নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল নিজাম উদ্দিন আহমেদ।
পায়রা বন্দর প্রান্তে জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, নূরে আলম চৌধুরী এমপি, পররাষ্ট্র সচিব মো.শহীদুল হক, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আব্দুল মালেক এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে সংক্ষিপ্ত অভিব্যক্তি ব্যক্ত করেন-স্থানীয় বালিয়াতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমাযুন কবির এবং চিনের পাথর রপ্তানীকারক ফেলিক্স।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব অশোক মাধব রায় বন্দরের নানা বিষয় তুলে ধরেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বিভিন্ন সময় দক্ষিণাঞ্চল সফর করার সময় ওই অঞ্চলের সম্ভাবনার বিষয়টি নজরে আসার পর পায়রা বন্দর তিনি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন,পায়রা নদী থেকেই পায়রা বন্দরের নামটা আমি দিয়েছি। যদিও সমুদ্র বন্দরটি কলাপাড়া উপজেলার রামনবাদ চ্যানেলে অবস্থিত, পায়রা নামটাও খুব সুন্দর। পায়রা শান্তির প্রতীক।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার কাছাকাছি থাকার সুযোগ হওয়ায় দেশের মানুষের জন্য কি তাঁর পরিকল্পনা কিভাবে তিনি বাস্তবায়ন করবেন সে বিষয়ে তিনি জানতে পেরেছিলেন। সেভাবেই তাঁর সরকার বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়ার জন্য পদক্ষেপ নিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ সবসময়ই খুব অবহেলিত ছিল। এই বন্দরটি পুরোপুরি চালু হয়ে গেলে ঝড়-বন্যা-জলোচ্ছাস সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে যুজতে থাকা মানুষগুলোর ভাগ্যের আমূল পরিবর্তন হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বন্দরকে মূলত গভীর সমুদ্র বন্দর করা হবে। একে ঘিরে শিপ বিল্ডিং ও শিপ রিকনষ্ট্রাকশন শিল্প গড়ে তোলা হবে। অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইপিজেড), বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং বরিশাল পর্যন্ত রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে। পাশাপাশি ওই অঞ্চলে নৌবাহিনীর ঘাঁটি ও সেনানিবাস স্থাপনের কথাও জানান সরকার প্রধান।
এই সমুদ্র বন্দরটি ব্যবহারে প্রতিবেশী দেশ ভারতেরও আগ্রহের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তা থেকে বাংলাদেশও উপকৃত হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নদী ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে উত্তরে আসামের করিমগঞ্জ পর্যন্ত নৌপরিবহণের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। যেটা ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুধু বাংলাদেশ না, আমাদের প্রতিবেশীর সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ সৃষ্টি হবে।’
এটি সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর ব্যবসা-বাণিজ্য এবং উন্নয়নের নবদিগন্ত উন্মোচন করবে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
তিনি এ সময় জমি অধিগ্রহণের মূল্যপরিশোধ সম্পর্কে স্থানীয় চেয়ারম্যানের দাবির প্রেক্ষিতে বলেন,‘আমি নির্দেশ দিয়েছি যেন এলাকাবাসী জমির যথাযথ দাম পায়।’
উদ্বোধনী পর্বে বন্দরের ওপর একটি ভিডিও ক্লিপিংসও দেখানো হয়।
উল্লেখ্য,প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যে ১০টি প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে তার একটি পায়রা ‘গভীর সমুদ্র বন্দর’। এর মধ্যে পদ্মা সেতুও রয়েছে । মহেশখালীতে আরেকটি গভীর সমুদ্র বন্দরও অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে।
২০১৩ সালের ১৮ নভেম্বর পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নে রামনাবাদ চ্যানেলের পশ্চিম তীরে ১৬ একর জমির উপর পায়রা সমুদ্র বন্দর নির্মাণের কাজ শুরু হয়।
এক হাজার ১২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৮ সালের মধ্যে এই সমুদ্র বন্দর নির্মাণের পুরো কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। তবে জাহাজ ভেড়ার অবকাঠামো নির্মিত হয়ে যাওয়ায় আগেই ভিড়তে শুরু করেছে জাহাজ।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে মাদার ভেসেল থেকে লাইটার জাহাজে পণ্য খালাস করে নৌপথে পরিবহন করা হবে। পণ্য খালাস ও পরিবহনের জন্য ইতোমধ্যে বন্দরে এসে পৌঁছেছে ১৫টি লাইটার জাহাজ।
ছবিঃ সাইফুল ইসলাম কল্লোল