328
Published on জুলাই 23, 2016জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবেলার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেছেন, জনগণের শক্তিই বড় শক্তি। এই জনগণই যে কোনো দুর্যোগ-দুর্বিপাকে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। আমরা জনগণের শক্তিতে বিশ্বাসী। জনগণের শক্তিতেই এদের প্রতিরোধ করা হবে। জনগণ সচেতন থাকলে এ দেশে কখনোই জঙ্গিবাদের ঠাঁই হবে না।
গতকাল শনিবার রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, সারাদেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছে। জনগণ জেগে উঠেছে। সবাই মিলেই আমরা দেশকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদমুক্ত করবই।
গুলশানের জঙ্গি হামলার ঘটনায় বিশেষ তদন্ত টিম গঠনের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই ঘটনায় নিহত জঙ্গিদের মরদেহ রেখে দেওয়া হয়েছে। এগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। যেসব পরীক্ষা দেশে করা সম্ভব তা করা হচ্ছে। আর যেগুলো দেশে সম্ভব নয়, সেসব পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনে বিদেশে নমুনা পাঠানো হচ্ছে। কীভাবে তারা ঠাণ্ডা মাথায় এত নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে, তা খতিয়ে দেখা হবে। আমরা দেখব এর পেছনে কী কাজ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকের ধারণা ছিল গুলশানের ঘটনায় দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে, বিশ্বের কাছে দেশ হেয় হবে। কিন্তু বিশ্বের প্রতিটি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরাসহ অনেক সংস্থা থেকে চিঠি দিয়ে এ ঘটনার নিন্দা জানানোর পাশাপাশি সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশের পাশে থাকার কথা জানিয়েছেন। আমরা যেভাবে এ ঘটনা মোকাবেলা করেছি তার প্রশংসা করেছেন। বিশ্বের বহু দেশে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে মোকাবেলায় অনেক সময় লেগে যায়। কিন্তু বাংলাদেশ দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটি মোকাবেলা করেছে।
তিনি জানান, প্রতিদিনই তিনি বিশ্বনেতাদের কাছ থেকে আসা চিঠির জবাব দিচ্ছেন। তারা যে সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছেন, তার জন্য ধন্যবাদও জানাচ্ছেন।
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের শিকড় খুঁজে বের করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা জঙ্গিবাদের শিকড় খুঁজতে নেমেছি। খুনিরা শাস্তি পাবেই। জঙ্গি সন্ত্রাসীদের যারা মদদ দিয়েছে, অর্থ ও অস্ত্র দিয়েছে, লালন-পালন করেছে তাদের সবাইকে খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।
গুলশান হামলার ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করে তিনি বলেন, সে সময় আইন-শৃঙ্খলা সংস্থাগুলো সময়োচিত পদক্ষেপ নিয়েছে। গুলি নিক্ষেপের পর পরই পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে ছুটে গেছে। যে যেখানে ছিল সবাই ঘটনাস্থলে চলে গেছে। এসব বাহিনীর তৎপরতায় আমরা ১৩ জনকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুসলমানদের বিশ্বের মানুষ ঘৃণার চোখে দেখে। আমরা অন্যের কাছে ছোট হয়ে যাই। আর যারা আল্লাহু আকবর বলে রোজার মাসে তারাবির নামাজের সময় মানুষ হত্যা করে, তারা বেহেশতে নয়, দোজখে যাবে। পরকালে এমন শাস্তি তারা পাবে, নিশ্চয়ই সেটি উপলব্ধি করতে পারছে।
জঙ্গিবাদ দমনে তার সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী এতে দেশবাসীর সাড়া পাচ্ছেন বলেও জানান। এ সময় সন্তানদের ওপর নজর রাখতে মা-বাবা ও অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীদের প্রকৃত শিক্ষা দিতে শিক্ষকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, যুব সমাজ, শিশু-কিশোর ও শিক্ষার্থীদের ধর্মের শিক্ষা নিতে হবে। অন্য ধর্মের প্রতি সহনশীলতা দেখাতে হবে। ধর্মের নামে যেন বাড়াবাড়ি না হয়।
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ভূমিকা রাখার পাশাপাশি দলকে শক্তিশালী করারও আহ্বান জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি বলেন, সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি করে নিজ নিজ এলাকাকে নিরাপদ রাখতে হবে। অনেক চড়াই-উতরাই পার হয়েই আওয়ামী লীগ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের হাতকে শক্তিশালী করুন। উন্নয়নকে এগিয়ে নিন।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠকে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ নেতারা যোগ দেন। এ সময় সারাদেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ কমিটিগুলো দ্রুততম সময়ের মধ্যে গঠনের জন্য যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের তিনি কঠোর নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, এটা হলে জঙ্গি তৎপরতা অর্ধেক কমে যাবে। দেশে বঙ্গবন্ধু হত্যার আগেকার পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, সুপরিকল্পিতভাবে দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির ষড়যন্ত্র চলছে।
এ সময় দলের নওগাঁ ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন করা হয়। এ ছাড়া ময়মনসিংহ জেলা ও মহানগর এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটি গঠন বিষয়ে আলোচনা হয়। ময়মনসিংহ জেলা কমিটির সভাপতি হিসেবে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ও জেলা পরিষদ প্রশাসক জহিরুল হক খোকা, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল, মহানগরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমিনুল ইসলাম তারা, সাদেক খান মিল্কি তজু ও আশরাফ হোসাইন এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা সভাপতি হিসেবে জেলা পরিষদ প্রশাসক আবদুল হাই, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নজরুল ইসলাম বাবু, আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদল ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দীপুর নাম প্রস্তাব করা হয়।
বৈঠকে ২২-২৩ অক্টোবর দলের ২০তম জাতীয় সম্মেলনের প্রস্তুতি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসসহ শোকের মাস আগস্ট উপলক্ষে মাসব্যাপী কর্মসূচি এবং ৭ আগস্ট কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যুবার্ষিকী, ৮ আগস্ট বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী, ১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলা দিবস, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা দিবস, ২৭ আগস্ট বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যুবার্ষিকী ও ১৮ অক্টোবর শেখ রাসেলের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দলীয় কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হয়। তবে ২৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে দলীয় কর্মসূচি নেওয়ার প্রস্তাব নিজেই নাকচ করে দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
ছবিঃ ফোকাস বাংলা