জঙ্গিবাদবিরোধী লড়াইয়ে ভারত বাংলাদেশকে পূর্ণ সমর্থন দিয়ে যাবেঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নরেন্দ্র মোদী

345

Published on জুলাই 21, 2016
  • Details Image

জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ বিরোধী ভূমিকার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেছেন, “সন্ত্রাস- জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আপনি একা নন, এর বিরুদ্ধে আপনি যে লড়াই করছেন তাতে ভারত সব সময় আপনাকে পূর্ণ সমর্থন দেবে।”

বৃহস্পতিবার ভিডিও কনফারেন্সে বেনাপোল ও পেট্রাপোল সমন্বিত চেকপোস্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একথা বলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।

সম্প্রতি ঢাকার গুলশানের একটি ক্যাফেতে এবং কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈগদাহ ময়দানের কাছে জঙ্গি হামলায় ১৭ বিদেশিসহ ২৫ জন নিহত হন। গুলশানে নিহতদের মধ্যে ভারতের এক নাগরিকও ছিলেন।

জঙ্গি হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে নিহতদের জন্য শোক প্রকাশ করেন নরেন্দ্র মোদী।

তিনি বলেন, “আমার ও আমাদের দেশের মানুষের জন্য এটা খুবই কষ্টের যে, পবিত্র রমজান মাসে ঢাকা ও কিশোরগঞ্জে দুটি সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন মন্দির ও এর পুরোহিত এবং সাধারণ মানুষের ওপর হামলার ঘটনাও দুঃখজনক।”

চেকপোস্ট উদ্বোধনের এই অনুষ্ঠানে প্রথমে বাংলায় বক্তব্য শুরু করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আজ থেকে আমাদের দুই দেশের মধ্যে আদান-প্রদান আরও সহজ হবে। আমরা আরও কাছাকাছি এলাম। এ শুভ অনুষ্ঠানে সকলকে জানাই অভিনন্দন।”

এরপর মোদী হিন্দিতে কথা শুরু করে শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের জনগণকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান।

দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সমন্বিত চেকপোস্টের উদ্বোধন করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “আজ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ও স্মরণীয় দিন। পারস্পরিক আদান-প্রদানের নিরিখেও আজকের দিনটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।”

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের বিভিন্ন জায়গায় এরকম আরও আটটি সমন্বিত চেকপোস্ট স্থাপনের পরিকল্পনার কথা জানান মোদী।

বেনাপোল-পেট্রাপোল দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় স্থল বন্দর। সমন্বিত চেকপোস্টের মাধ্যমে এখান দিয়ে দুই দেশের মানুষ ও পণ্য পরিবহন আরও সহজ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ভিডিও কনফারেন্সের এই অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতাও বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, “আজ ঐতিহাসিক দিন। ভারত এবং বাংলাদেশের সম্পর্ক চিরকালের, চিরদিনের, চিরগভীর।”

মমতা তার বক্তৃতায় ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে বাংলাদেশ ও অন্যান্য প্রতিবেশী দেশের যোগাযোগের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, “এর মধ্য দিয়ে সম্পর্ক যেমন বাড়বে, তেমনি বাণিজ্যও বৃদ্ধি পাবে।”

শেখ হাসিনা বলেন, “আন্তঃদেশীয় বাণিজ্য দেশীয় অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আন্তঃদেশীয় বাণিজ্যের গুরুত্ব অপরিসীম।”

দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক টেকসই ও জোরদার করার লক্ষ্যে উভয় সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “কাজেই সেগুলি আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানো, মানুষে মানুষে যোগাযোগ বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিরাট অবদান রাখছে।”

সড়ক, রেল, নৌপথে দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ শুরু করা এবং মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদানের কথাও তার বক্তৃতায় তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “প্রতিবেশী দুদেশের মধ্যে সম্পর্ক সব সময় সুন্দর থাকবে, সৌহার্দ্যপূর্ণ থাকবে এবং যে কোনো সমস্যা আমরা দ্বি-পাক্ষিক আলোচনার মধ্য দিয়ে সমাধান করতে পারব; যা অতীতেও আমরা করেছি।

“দুই বন্ধুপ্রতীম দেশ; দুদেশের জনগণের কল্যাণে, স্বার্থেই আমাদের এই যোগাযোগটা একান্তভাবে প্রয়োজন ছিল।”

শেখ হাসিনা এসময় ভারত-বাংলাদেশের পাশাপাশি আঞ্চলিক যোগাযোগের বিষয়টিও তুলে ধরেন।

“আঞ্চলিক যে যোগাযোগ আমরা স্থাপন করেছি; যেমন নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া। অপরদিকে মিয়ানমার, ইন্ডিয়া, বাংলাদেশ, চায়না। এই যোগাযোগের ফলে এই অঞ্চলের মানুষ সব থেকে বেশি লাভবান হবে এবং আমাদের দুদেশের অর্থনীতি আরও মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড়াবে- সেটাই আমি বিশ্বাস করি।”

মোদী ও মমতার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে সমন্বিত চেকপোস্ট উদ্বোধনের পর বেনাপোলের প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নতি করতে হলে প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে সদ্ভাব থাকা প্রয়োজন।

বেনাপোল বন্দর সুষ্ঠুভাবে যাতে পরিচালিত হতে পারে, সেজন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে ‘স্ব-স্ব’ দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন “এমন কিছু করবেন না যাতে আমাদের দেশের বদনাম হয়।”

সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার ঘটনা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আপনাদের সকলকে উদ্যোগ নিতে হবে, স্ব-স্ব এলাকায়, প্রতিটি পাড়া-মহল্লায়। কারা বা কাদের ছেলে-মেয়েরা এই সন্ত্রাসের সাথে জড়িত বা সন্ত্রাসীদের দোসর, তাদের খুঁজে বের করা দায়িত্ব এবং বিশেষ করে এই পথে যে কোমলমতি ছেলেরা যাচ্ছে তাদের বিরত করা।”

এই বিষয়গুলির দিকে বিশেষভাবে নজর দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা ব্যাহত করছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত