667
Published on জুলাই 17, 2016রোববার তাঁর সরকারি বাসভবন গনভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, গুলশানে হামলার ঘটনা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ভাবমূর্তির ক্ষতি করেছে, যদিও সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গীবাদ বর্তমানে একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
মঙ্গোলিয়ার উলানবাটোরে ১৫-১৬ জুলাই অনুষ্ঠিত আসেম সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর যোগদান উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ও বিশ্বের অন্যত্র সংগঠিত সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষিতে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ বিষয়টি প্রাধান্য পায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গীবাদ শুধুমাত্র একক কোন রাষ্ট্রের বিষয় নয়। সারা বিশ্ব এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে এবং সন্ত্রাসী ও জঙ্গীদের ব্যাপারে ইতিমধ্যেই একটি বৈশ্বিক সমঝোতা রূপলাভ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গুলশানে সন্ত্রাসী হামলার পেছনে দেশীয় ও বিদেশী গোষ্ঠিগুলোর হাত থাকতে পারে, যারা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা স্বত্ত্বেও আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করতে পারেনি।
শেখ হাসিনা বলেন, জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদের সাথে যাদের যোগসূত্র আছে এবং যুদ্ধাপরাধ ও জীবন্ত মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে মারার রেকর্ড যাদের রয়েছে তারা ব্যতীত দেশের জনগনের মধ্যে সন্ত্রাসবাদ ও উগ্র সহিংসতার বিষয়ে একটি জাতীয় ঐক্যমত্য সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘কিন্তু সন্ত্রাসীদেরকে নির্র্মূল করার জন্য সত্যিই সাধারন জনগনের মধ্যে ঐক্য প্রয়োজন, যা ইতিমধ্যে সৃষ্টি হয়েছে এবং এই ঐক্য বজায় থাকবে।’
আন্তর্জাতিক গনমাধ্যম বাংলাদেশের সন্ত্রাসের খবরাখবর ফলাও করে প্রচার করেছে- এমন বক্তব্য বাতিল করে দিয়ে বরং দেশীয় গনমাধ্যমকে দোষারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক গনমাধ্যমগুলো দেশীয় গনমাধ্যমগুলোর মতো ঘটনার সরাসরি সম্প্রচারের ব্যাপারে অতটা কৌতুহলি নয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা (বিদেশী গনমাধ্যম) ভয়ঙ্কর দিকটি বাদ দিয়ে একটি ঘটনার প্রচার করে। কিন্তু আমাদের গনমাধ্যম এ বিষয়ে কোন তোয়াক্কা করে না এবং এমনকি তারা অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর প্রস্তুতির বিষয়টি প্রকাশ করে দেয় ও সেটা সরাসরি সম্প্রচার করে। ’
আন্তর্জাতিক গনমাধ্যম সবসময়ই দেশীয় গনমাধ্যমগুলোকে সূত্র হিসেবে ব্যবহার করে- একথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, গুলশানে সন্ত্রাসী হামলার সময় সিএনএন-সহ আন্তর্জাতিক গনমাধ্যমগুলো বাংলাদেশী টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর সংবাদ ও ছবি প্রচার করেছে। তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘আমরা কাকে দোষ দিব?’
শেখ হাসিনা বলেন, কারা স্বচ্ছল পরিবারের ছেলেদেরকে উগ্রপন্থার প্রতি মগজ ধোলাই করছে তথা কারা তাদের অর্থায়নকারি, অস্ত্রের যোগানদার এবং প্রশিক্ষক, তা চিহ্নিত করার লক্ষ্যে তাঁর সরকার অন্য দেশগুলোর সাথে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদানকে গুরুত্ব দিচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের সর্বত্র সন্ত্রাসী হামলা হচ্ছে। সারাবিশ্ব এ নিয়ে শংকিত। এ ধরনের জঘন্য হামলার ব্যাপারে জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হচ্ছে। তারা এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি চায় না।
গুলশান হামলার মতো দেশে আরো হামলা হতে পারে বলে যে গুজব চলছে সে প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেকেই এ ধরনের হামলার আশংকায় শংকিত হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু জীবন কখনো থেমে থাকে না। জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে ও তাদের নিরাপত্তা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় পুলিশ পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে প্রত্যেককে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ নয়, তবে ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কর্মকান্ড থেকে ছাত্রদের বিরত রেখে নিজস্ব নিয়ম-কানুনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালাতে হবে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গুলশানে সন্ত্রাসী হামলাই দেশে প্রথম বর্বর হামলা নয়। তাঁকে টার্গেট করে এ ধরনের হামলা দেশে বেশ কয়েকবার ঘটেছে।
২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের সমাবেশে বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলায় আইভি রহমানসহ ২২ ব্যক্তি নিহত হয়েছে। আমাকে হত্যার জন্য প্রকাশ্য দিবালোকে কোটালিপাড়ায় ৭৬ কেজি ওজনের একটি বোমা পুঁতে রাখা হয়েছিলো। ১৯৮৮ সালে চট্টগ্রামে পুলিশ গুলি চালিয়ে ২৪ ব্যক্তিকে হত্যা করে। অল্পের জন্য আমি বেঁচে যাই।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৮১ সালে বাংলাদেশে ফেরার পর থেকে তিনি ও তাঁর দল অনেকবার এ ধরনের হামলার শিকার হয়েছে। এসব হামলায় তাঁর দলের বহু নেতা-কর্মী শাহাদাৎবরণ করে।
তিনি বলেন, জিয়া ও এরশাদের শাসনামালে ফ্রান্সের নিস শহরের মতো রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এবং ফুলবাড়িয়াতে মিছিলের ওপর ট্রাক চালিয়ে দেয়া হয়।
গুলশান হামলার মতো ঘটনা শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়। এ ধরনের ঘটনা আমরা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছি। এ ধরনের ঘটনা এখন সারা বিশ্বে ঘটছে। এমনকি অনেক উন্নত দেশেও এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।
সন্ত্রাস দমনে বিভিন্ন দেশের মধ্যে ব্যাপক সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ব্যাপারে প্রতিটি দেশকে একে অপরের সঙ্গে সহযোগিতা করতে হবে। তিনি বলেন, এসব হামলার পেছনে কারা রয়েছে তা জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
শেখ হাসিনা বলেন, আসেম শীর্ষ সম্মেলনে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে। কারণ, এ সময় বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে ফ্রান্সের নিস শহরে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সহকারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়ালের সঙ্গে বৈঠকে তথ্য আদান-প্রদান, লাশের ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য কারিগরি সহযোগিতা এবং অস্ত্র সরবরাহ চেইন শনাক্তকরণের বিষয়টি সর্বাত্মক গুরুত্ব পায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গুলশানে হামলাকারীরা বার বার তাদের নাম পরিবর্তন করেছে। তাই তাৎক্ষণিকভাবে তাদের শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে। পুলিশ কোন অপরাধীর নাম গোপন করার চেষ্টা করেনি।
শেখ হাসিনা বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে তাঁর সরকার ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, স্কুল শিক্ষক ও সমাজের অন্যান্য শ্রেণী-পেশার লোকজনকে সংশ্লিষ্ট করে গ্রামপর্যায় পর্যন্ত কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে।