346
Published on জুলাই 12, 2016প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জঙ্গিবাদি কর্মকান্ড দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেয়, ব্যবসা-বাণিজ্য তথা প্রতিটি নাগরিকের জীবন যাত্রা হুমকির মুখে ফেলে।’
তিনি জঙ্গি তৎপরতাকে এক শ্রেণীর দেশীয় অশুভ চক্রের দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্র বলেও আখ্যায়িত করেন।
প্রধানামন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার গণভবন থেকে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তুলতে তাঁর উদ্যোগের অংশ হিসেবে ঢাকা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী এবং রংপুর বিভাগের ৩২টি জেলার সরকারি কর্মকর্তা, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, সমাজকর্মী, সাংবাদিক, মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষকদের সঙ্গে এক ভিডিও কনফারেন্সে এ আহ্বান জানান।
শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ভিডিও কনফারেন্সে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার তাঁর রাজনৈতিক অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, আমরা বাংলাদেশকে শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে চাই, যেখানে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের কোন ঠাঁই নেই।
জঙ্গিবাদ উচ্ছেদে সকলের সম্মিলিত প্রয়াসের ওপরও এই সময় প্রধানমন্ত্রী গুরুত্বারোপ করেন।
ভাল ঘরের ছেলেদের বিভ্রান্ত করে ধর্মীয় জঙ্গিগোষ্ঠীতে পরিণত করা হচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, যুব সমাজকে বিভ্রান্তকারি এই চক্রকে আমাদের খুঁজে বের করতে হবে, কেন এবং কি জন্য তারা এই কাজ করছে তা বের করতে হবে। একইসঙ্গে তরুণ-যুবকেরা এই ধ্বংসাত্মক পথে আর যেন পা না বাড়ায় তারও ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা ঈদের নামাজে না গিয়ে কিংবা রমজানে তারাবির নামাজে অংশ না নিয়ে মানুষ হত্যা করতে যায় তারা কখনও মুসলিম হতে পারে না। এগুলো করার মাধ্যমে তারা বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে ইসলামকে হেয় করছে। 'এরা কিসের মুসলিম?' বলেও এ সময় প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন উত্থাপন করেন।
শেখ হাসিনা ইসলামকে ধ্বংসের এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, তাঁর সরকার কখনও দেশে এই জঙ্গিবাদকে শাখা-প্রশাখা বিস্তার করতে দেবে না।
বাংলাদেশের চলমান উন্নয়ন দেখে অনেকে ঈর্ষান্বিত হয়ে উঠেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এ সময় দেশের এই অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করার প্রচেষ্টাতেও জঙ্গি হামলা চালানো হতে পারে বলেও মন্তব্য করেন।
সাম্প্রতিককালের গুলশানের একটি রেস্তোরাঁয় এবং শোলাকিয়ার ঈদ জামাতে জঙ্গি হামলার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসলাম কখনও এ ধরনের বর্বরতাকে সমর্থন করে না। ধর্মকে বিনষ্টে এটা তাদের ষড়যন্ত্র, কেননা ইসলাম সর্বদা শান্তি ও সৌহার্দ্যরে শিক্ষা দেয়।
এই অপশক্তির বিরুদ্ধে সমাজের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজ নিজ অবস্থান থেকে সবাইকে দেশ ও সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাওয়ার আহবান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের জনগণ ধর্মভীরু, তাই বলে তারা উগ্রবাদী নয়। সুতরাং একটি ইংরেজী মাধ্যমে পড়ুয়া বালক কি করে এ ধরনের উগ্রবাদের পক্ষে পা বাড়ায়? প্রধানমন্ত্রী পিতা-মাতা, অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে এই প্রশ্ন উত্থাপন করে নিজেদের সন্তানদের প্রতি যত্নবান হওয়ারও আহবান জানান।
জঙ্গিবাদ দমনে সকলের সম্মিলিত প্রয়াসের প্রতি গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী প্রত্যেক এলাকায় জঙ্গিবাদ বিরোধী কমিটি গড়ে তুলে ঘাপটি মেরে থাকা জঙ্গি, নিখোঁজ ব্যক্তি এবং গোপন তৎপরতাকে খুঁজে বের করার আহবান জানান।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন জেলার কর্মকর্তাবৃন্দ নিজ নিজ এলাকায় জঙ্গিবাদ দমনে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করায় তিনি তাদের ধন্যবাদ জানান এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দল-মত নির্বিশেষে সকলকে এ ক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করারও আহবান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখার মাধ্যমে আমাদের জাতি, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে একজোট হয়ে দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় এবং উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য কাজ করে যেতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী এ সময় দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়েও সকলকে সতর্ক করে দেন।