1500
Published on মে 2, 2016প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বাংলাদেশ সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার সাপ্তাহিক নিয়মিত বৈঠকে এই অনুমোদন দেয়া হয়।
বৈঠকের সাংবাদিকদের কেবিনেট সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী সামরিক শাসনামলে জারি করা অধ্যাদেশগুলো অবৈধ ঘোষিত হওয়ায় বিদ্যমান ‘রেলওয়ে সম্পত্তি (অবৈধ দখল) অধ্যাদেশ, ১৯৭৯’ অনুবাদ করে নতুন আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, খসড়া আইন অনুযায়ী অবৈধ দখলে থাকা রেলওয়ের সম্পত্তি থেকে আয় ও দখলে রাখা শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হবে।
এই ধরনের অপরাধ করার শাস্তি সম্পর্কে আলম বলেন, রেলওয়ের সম্পত্তির যে কোন ধরনের চুরি এবং এই ধরনের সম্পত্তি অবৈধভাবে দখলে রাখার জন্য সর্বোচ্চ ৭ বছরের সশ্রম কারাদন্ড বা জরিমানা অথবা উভয় দন্ড প্রদানের বিধান খসড়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এছাড়া, রেলওয়ের সম্পত্তি অবৈধভাবে দখলে রাখার ব্যাপারে কেউ সাহায্য করলে ৫ বছরের সশ্রম কারাদন্ড বা জরিমানা অথবা উভয় দন্ড প্রদানের বিধান রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে তদন্ত সম্পর্কে ব্যাখ্যা প্রদান করে কেবিনেট সচিব বলেন, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে এই ধরণের কর্মকান্ড ‘আমলযোগ্য অপরাধ’ হিসেবে বিবেচিত হলে কোন গ্রেফতারী পরোয়ানা ছাড়াই যে কোন অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে পারবে।
এ প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন যে, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট অফিসার ইন চার্জ (ওসি) একটি থানার ওসি’র মতোই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন।
তিনি বলেন, রেলওয়ে বাহিনীর ওসি অভিযুক্তকে আদালতে পাঠাতে অথবা আইনসঙ্গতভাবে সংশ্লিষ্ট আদালতে আত্মসমর্পন করবে বলে শর্ত সাপেক্ষে বা শর্ত ছাড়াই মুক্তি দিতে পারবে।
তিনি আরো বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তিকে সন্দেহ করার মতো যথাযথ সাক্ষ্য প্রমাণ বা যৌক্তিক ভিত্তি না থাকলে, ওসি সন্দেভাজন ব্যক্তিকে মুচলেকা নিয়ে মুক্তি দিতে পারবেন।
কেবিনেট সচিব উল্লেখ করেন যে, বিদ্যমান অধ্যাদেশের অধীনে পূর্বে বাস্তবায়িত সকল সিদ্ধান্ত এই খসড়া অনুযায়ী করা হয়েছে বলে বিবেচিত হবে।
আলম বলেন, মন্ত্রিসভা বৈঠকে কোম্পানী আইন, ১৯৯৪ এর ২ অনুচ্ছেদে উল্লেখিত ফি পুননির্ধারণ/বৃদ্ধি (কর বহির্ভুত রাজস্ব) সংক্রান্ত ফি প্রায় দ্বিগুণ করার একটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে।
তিনি বলেন, এই ধরনের ফি এর আগে ২০০৭ সালে পুননির্ধারণ করা হয়েছিল এবং দীর্ঘ আট বছর পর অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান আকার বিবেচনা করে এই ধরনের ফি বৃদ্ধি করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
কেবিনেট সচিব বলেন, সরকার এই ধরনের ফি থেকে প্রায় ৭০ কোটি টাকা পাচ্ছে এবং বাড়তি ফি আদায় করা সম্ভব হলে সরকারের রাজস্ব আয় প্রায় ১৫০ কোটি টাকায় দাঁড়াবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বৈঠকে বাংলাদেশ এবং কুয়েতের মধ্যে বিনিয়োগ উন্নয়ন ও পারস্পরিক সুরক্ষা চুক্তির খসড়া অনুমোদিত হয়েছে।
তিনি বলেন, এতে কুয়েতের বিনিয়োগকারীদের জন্য গভর্নমেন্ট-টু-গভর্নমেন্ট (জিটুজি) ভিত্তিতে বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এছাড়া বাংলাদেশে তেল সরবরাহকারী কুয়েত পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনও জিটুজি ভিত্তিতে বিনিয়োগের সুবিধা পাবে।
এই চুক্তিতে উভয় দেশের উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ ও ভিসা সুবিধা পাবে এবং যা বাংলাদেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
শফিউল আলম বলেন, দু’দেশের মধ্যে কূটনৈতিক, বিশেষ ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের জন্য প্রাক ভিসার পারস্পরিক অব্যাহতি সংক্রান্ত চুক্তির খসড়াও মন্ত্রিসভা অনুমোদন করেছে। কুয়েতের প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন বাংলাদেশ সফরে এ দু’টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে।
বৈঠকে সার্ক দেশগুলোর মধ্যে বিদ্যুৎ বিনিময় সম্পর্কিত সার্ক ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট ফর এনার্জি কো-অপারেশন (বিদ্যুৎ) প্রস্তাবে অনুসমর্থন দেয়া হয়।
তিনি বলেন, মন্ত্রিসভা আসন্ন পবিত্র রমজান মাসের (১৪৩৭) জন্য সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্ত্বশাসিত ও আধা-স্বায়িত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে অফিস সময় সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত নির্ধারণ করেছে। এরমধ্যে দুপুর সোয়া ১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত জোহরের নামাজের বিরতি থাকবে।
সচিব বলেন, বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে ১৪ থেকে ১৫ এপ্রিল তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত ১৩তম ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের অংশগ্রহণ এবং নারী ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে ১৪ থেকে ১৬ মার্চ নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে ‘কমিশন অন দ্য স্ট্যাটাস অব ওমেন’-এর ৬০তম বৈঠকে যোগদান সম্পর্কে অবহিত করা হয়।
বৈঠকের শুরুতে সংসদ সদস্য সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. ক্যাপ্টেন (অব.) মুজিবুর রহমান ফকিরের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়।
ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী আজ সকালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
মন্ত্রিবর্গ, মন্ত্রণালয়ের দাযিত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রীবৃন্দ এবং সংশ্লিষ্ট সচিবগণ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।