424
Published on এপ্রিল 25, 2016প্রস্তাবিত আইনে উচ্চতর আদালত অর্থাৎ আপিল বিভাগ ও সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনের একজন বিচারকের ‘সম্মানজনক প্রস্থান’ করার জন্য একটি বিধি রয়েছে, যখন তিনি তাঁর কোন ‘অসদাচরণের’ জন্য দোষী সাব্যস্ত হবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বাংলাদেশ সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার সাপ্তাহিক নিয়মিত বৈঠকে এই অনুমোদন দেয়া হয়।
বৈঠকের পর কেবিনেট সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
তিনি বলেন, ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে গৃহীত ষোড়শ সংশোধনী অনুযায়ী সংবিধানের ৯৬ (৩) ধারায় সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী আইন ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ খসড়া আইনটি উপস্থাপন করেছে।
তিনি বলেন, সংশোধনীতে ৯৬ ধারার ২,৩ ও ৪ উপ-ধারার পরিবর্তে উপ-ধারা ২,৩, ৪, ৫, ৬, ৭ ও ৮ সংশোধন করে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
সংশোধনী অনুযায়ী, সুপ্রীম কোর্টের কোন বিচারকের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ উত্থাপিত হলে তদন্ত পরিচালনা করা এবং অভিযোগ তদন্ত করতে একটি আইন প্রণয়নের জন্য একটি বিধি রয়েছে।
তিনি বলেন, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী এই আইনটি প্রণয়ন করা হচ্ছে।
কেবিনেট সচিব বলেন, সারা বিশ্বের অন্যান্য সকল গণতান্ত্রিক দেশের মতোই সুপ্রীম কোর্টের বিচারকদের অপসারণ সংক্রান্ত আইনগত প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানের মূল আইনে ফিরে যাওয়ার লক্ষ্যে খসড়া আইনটি অনুমোদন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ১৯৭২ সালের সংবিধানে অনুরূপ একটি আইন ছিল এবং সুপ্রীম জুডিসিয়িাল কাউন্সিল গঠনের বিধি যুক্ত করার মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের পর তা পরিবর্তন করা হয়েছিল। তিনি আরো বলেন, একমাত্র পাকিস্তান ছাড়া কোন দেশেই এখন এই ধরণের কাউন্সিল নেই।
আলম বলেন, খসড়া আইন অনুযায়ী সুপ্রীম কোর্টের কোন বিচারকের অসদাচরণের বিরুদ্ধে যে কোন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি জাতীয় সংসদের স্পিকারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন।
স্পিকার অভিযোগের কোন ভিত্তি থাকলে বিষয়টি তদন্ত করার জন্য অনধিক ১০ জন সংসদ সদস্য নিয়ে একটি ‘সংসদীয় কমিটি’ গঠন করবেন। কমিটি সাত দিনের মধ্যে স্পিকারের কাছে প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট পেশ করবে।
কেবিনেট সচিব বলেন, অভিযোগের যুক্তিসঙ্গত ভিত্তি থাকলে একজন সাবেক প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে একজন সাবেক এটর্নী জেনারেল ও একজন বিশিষ্ট নাগরিককে বা একজন জুরিস্টকে সদস্য করে অভিযোগ তদন্ত করার জন্য একটি তিন সদস্যের নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করবেন।
আলম আরো বলেন, তদন্ত শেষ হলে জাতীয় সংসদ কমিটির পেশ করা রিপোর্টের ওপর আলোচনা করবে।
তিনি বলেন, দোষী সাব্যস্ত হলে একজন বিচারককে অপসারনের জন্য জাতীয় সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে অনুমোদিত সুপারিশ মাননীয় রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের জন্য পাঠানো হবে।
তিনি বলেন, সুপ্রীম কোর্টের কোন বিচারকের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অসত্য ও ভিত্তিহীন অভিযোগ আনা হলে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে দুই বছরের কারদ- বা পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে।
আপিলেট ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারকবৃন্দসহ সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনার পর খসড়া আইনটি প্রস্তুত করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, খসড়া আইনে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের আরো সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত করার এখনও সুযোগ রয়েছে।
আলম বলেন, সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আরো আলোচনার পর খসড়া আইনটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য আবার মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হবে।
আলম বলেন, মন্ত্রিসভায় দেশের প্রত্যেক নাগরিকের জন্য আবাসন সুবিধা দেয়ার লক্ষ্যে ‘জাতীয় গৃহায়ন নীতি ২০১৬’র খসড়ার অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
এই নীতিতে যথাযথ গৃহায়ন ও টেকসই মানববসতি উন্নয়নের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, পরিবেশগত, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও রীতিনীতি বিবেচনা করা, বন ও প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়ন্ত্রণের বিধান রেখে পরিবেশ সুরক্ষার ওপর গুরুত্ব আরোপ, বিভিন্ন গৃহায়ন প্রকল্প প্রণয়নকালে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষা, প্রকৃতিক জলধার সুরক্ষা, ডিটেইলড এরিয়া প্লান (ডিএপি) সম্পর্কে আলোচনা, বৃষ্টি পানি সংরক্ষণ এবং পরিবেশগত বিষয়গুলো মোকাবেলাসহ বিভিন্ন ইস্যু অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এছাড়া খসড়ায় মধ্যবিত্ত ও নি¤œ আয়ের মানুষের জন্য শহর ও গ্রামে খাস ও অব্যবহৃত জমি নিয়ে ভূমি ব্যাংক ও গৃহায়ন ঋণ তহবিল গঠনের প্রস্তাব রয়েছে। এতে ভবনের মান ও নিরাপত্তায় জাতীয় বিল্ডিং কোড নিশ্চিত করার প্রস্তাব রয়েছে।
সচিব বলেন, ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনেইরোতে জাতিসংঘ পরিবেশ বিষয়ক সম্মেলনে এনিয়ে দাবি উত্থাপিত হলে সরকার ১৯৯৩ সালে প্রথম এই নীতিমালা প্রণয়ন করে এবং ১৯৯৯ সালে তা হালনাগাদ করা হয়। এবার এটি বিস্তারিতভাবে প্রণীত হয়েছে।
তিনি বলেন, মন্ত্রিসভা একটি স্বাধীন কমিটির মাধ্যমে বাংলাদেশ রেলওয়ের কন্টেইনার পরিবহন সার্ভিস পরিচালনার জন্য কন্টেইনার কমিটি অব বাংলাদেশ গঠনের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ এবং বিএসটিআই ও সৌদি আরবের সাসো’র মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের লক্ষ্যে ১-৫ মার্চ পর্যন্ত সৌদি আরবে শিল্পমন্ত্রীর সফর এবং ১৭ থেকে ১৯ ডিসেম্বর মরক্কোতে ওআইসি মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে তথ্যমন্ত্রীর অংশগ্রহন সম্পর্কে মন্ত্রিসভাকে অবহিত করা হয়।
এর আগে মন্ত্রিসভায় জাতিসংঘ পানি বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের প্যানেলের একজন সদস্য মনোনীত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে সর্বসম্মত এক প্রস্তাব নেয়া হয়।
জাতিসংঘ মহাসচিব এবং বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট ২১ এপ্রিল এই প্যানেলের সদস্য হিসেবে শেখ হাসিনার নাম ঘোষণা করেন। ১০ জন রাষ্ট্র প্রধান বা সরকার প্রধান ও ২ জন উপদেষ্টার সমন্বয়ে এই প্যানেল পরবর্তী ২ বছরের জন্য দায়িত্ব পালন করবে।
মন্ত্রিবর্গ, মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রীবৃন্দ এবং সংশ্লিষ্ট সচিবগণ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।