452
Published on এপ্রিল 19, 2016প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে কৃষিতে ব্যবহারিক শিক্ষা দেয়ার জন্য ক্ষেত-খামারে নিয়ে যেতে হবে এবং প্রয়োজনে তাদেরকে অতিরিক্ত ব্যবহারিক নম্বর দিতে হবে যাতে কৃষি শিক্ষাকে কেউ খাটো করে দেখতে না পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, শিক্ষার্থীদেরকে জানতে হবে, কি ভাবে কৃষি পণ্য উৎপাদিত হয়। তারা সব সময়ে ঘরে বসে কৃষি পণ্য ভোগ করবে অথচ এ সকল কৃষি পণ্য কোথা থেকে আসে, সে সম্পর্কে তারা কিছুই জানবে না, তা তো হতে পারে না।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে বাংলাদেশ কৃষক লীগের ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবাষির্কী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ কৃষক লীগের সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, যুগ্ম-সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এবং বাংলাদেশ কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক রেজা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বঙ্গবন্ধু এবং জাতীয় চার নেতার ও বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের সময়ে সারের জন্য আন্দোলনে নিহত কৃষকদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
এর আগে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কবুতর ও বেলুন উড়িয়ে কৃষক লীগের ৪৪তম প্রতিষ্ঠা বাষির্কীর উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
খাদ্য উৎপাদনের মাধ্যমে জনগণকে ক্ষুধা মুক্তকারী কৃষকদের সর্বোচ্চ সম্মান প্রদানের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দরিদ্র কৃষকদের সন্তানরা অনেক সময় তাদের বাবার পরিচয় দিতে লজ্জা বোধ করে।
তিনি বলেন, মাঠে কাজ করায় কৃষকদের সন্তানরা অনেক সময় শিক্ষা গ্রহণ ও বড় চাকরি পাওয়ার কথা ভুলে যায়। তিনি আরো বলেন, ‘তাদের পিতার কর্দমাক্ত পা ছুঁয়ে সালাম করতে তাদের লজ্জা পাওয়া উচিত নয়, বরং খাদ্য উৎপাদন করে জনগণকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য তাদের পিতাকে সর্বোচ্চ সম্মান প্রদান করা উচিত।’
শেখ হাসিনা বলেন, ক্ষুধার ভোগান্তি কত বড় এবং কৃষকরা তা কিভাবে দূর করে জনগণ তা জানে। তাই তাদের সর্বোচ্চ স্থান দিতে হবে।
কৃষি খাতের প্রতি যথাযথ মনোযোগ না দেয়ার জন্য বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেন, সে সময় কৃষকদের ভর্তুকি ও সহায়তা দেয়া হয়নি। তারা বিআইডিসি’কে প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিলো। কৃষির উন্নয়নে তাদের কোনো পরিকল্পনা ছিলো না। কারণ, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে তারা বাণিজ্য করে রাতারাতি সম্পদশালী হতে পারবে না।
প্রধানমন্ত্রী ১৯৯৫ সালে বিএনপি শাসনামলে সারসহ কৃষি পণ্য বিতরণে ব্যাপক দুর্নীতির প্রতিবাদকালে ১৮ জন কৃষকের জীবনদানের মর্মান্তিক ঘটনার কথা স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, সার চাওয়ায় ১৮ জন কৃষককে হত্যা করা হয়। বিএনপি শাসনামলে ন্যায্য মজুরি দাবি করায় রমজান মাসে ১৭ জন শ্রমিককে খুন করা হয়। কৃষকদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে কৃষক ও কৃষিবান্ধব সরকার হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, তাঁর সরকার ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে খাদ্য উৎপাদনে একটি বহুমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘সে সময় আমরা খাদ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করি। কিন্তু পরবর্তী বিএনপি-জামায়াত সরকার বাংলাদেশকে আবার খাদ্য ঘাটতির দেশে পরিণত করে।’
তিনি বলেন, কৃষক ও কৃষি খাতের ব্যাপক উন্নয়ন নিশ্চিতকরণে আওয়ামী লীগ সরকার ভর্তুকি মূল্যে সার, বীজ ও যন্ত্রপাতি প্রদানের মাধ্যমে গত ৭ বছরে বিভিন্ন বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
তিনি বলেন, ‘দেশে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব।’
কৃষি খাতের উন্নয়নে তাঁর সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর প্রশাসন কৃষকদের জন্য সবধরণের সহায়তা দিতে সবসময় প্রস্তুত।
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা সংগঠনকে আরো শক্তিশালী করার পাশাপাশি কৃষকদেরকে সবধরনের সহায়তা প্রদানের বিষয়ে সরকারের অবস্থান তুলে ধরার জন্য নেতাকর্মীদেরকে পল্লী এলাকায় যাওয়ার নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, স্বাধীনতা লাভের পরপরই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষির উন্নয়ন এবং কৃষকদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১৯৭২ সালের ১৯ এপ্রিল বাংলাদেশ কৃষক লীগ প্রতিষ্ঠা করেন।
এখানে-সেখানে শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠা না করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার আবাদযোগ্য জমি ও বনভূমি বেপরোয়াভাবে ধ্বংস করে শিল্প স্থাপন করতে কাউকে সুযোগ দিবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, বরং তাঁর সরকার সারা দেশে ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছে এবং সেখানে শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠা করা হবে। দেশে অবশ্যই শিল্পায়ন করা হবে, তবে তা হবে কৃষি ক্ষেত্রে বাইরে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু প্রথমেই উপলব্ধি করেছিলেন যে, দেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং দরিদ্র্য ও দুস্থ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের লক্ষ্যে কৃষকদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু ‘সবুজ বিপ্লব’ ঘোষণা করে গ্রামের কৃষকদের জন্য সব ধরণের সহায়তা দিতে শুরু করেন। সেই সময় দেশে প্রথমবার ৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হার অর্জিত হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিন্তু ১৯৭৫ সালের পর ২১ বছর ধরে জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটানোর কোন সুযোগ ছিল না। কারণ, মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তি, যুদ্ধাপরাধী এবং তাদের দোসররা এই সময়ে ক্ষমতায় ছিল।
১৯৯৮ সালের বন্যার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তখন অনেকে আশঙ্কা করেছিল যে, দুই কোটির বেশি মানুষ প্রাণ হারাতে পারে। তাঁর সরকার সাফল্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করার ফলে তা ভুল প্রমাণিত হয়েছিল।
তিনি একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প সহ বিভিন্ন কৃষক বান্ধব ও কৃষি উন্নয়ন ভিত্তিক প্রকল্প গ্রহণ এবং বয়স্ক লোকজন, মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধী ও বিধবাদের জন্য ভাতা প্রদান অব্যাহত রাখার উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এখন মাছ, শাক-সব্জি ও অন্যান্য কৃষি পণ্য উৎপাদনে এবং দেশের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে একটি মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে পৌঁছে গেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও, তাঁর সরকার বিগত সাত বছরে ৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হার বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। অন্যান্য অনেক উন্নত দেশ প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে সেখানে বাংলাদেশ চলতি অর্থবছরে ৭ শতাংশের বেশী প্রবৃদ্ধি হার অর্জন করেছে।
তিনি বলেন, তাঁর সরকারের যথাযথ পরিকল্পনা, পরিকল্পনা অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ এবং জনগণের প্রতি দায়িত্ববোধের কারণে এই সাফল্য অর্জিত হয়েছে।
যারা এই সাফল্যকে বিস্ময়কর বলে মনে করে তিনি তাদের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশবাসী মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করবেন, মাথাউঁচু করে বিশ্ববাসীর সামনে দাঁড়াবেন এবং অন্য কারো কাছ থেকে হাত পেতে কিছু নেবেন না। আর এটাই হচ্ছে জাতির জনকের শিক্ষা।
প্রধানমন্ত্রী দৃঢ় আশা প্রকাশ করেন যে, বাংলাদেশ ২০২০ সালে জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে দেশের স্বাধীনতা লাভের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করবে।