346
Published on এপ্রিল 11, 2016দলের ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ শাখার নবনির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা সোমবার সন্ধ্যয় গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করতে গেলে তিনি এ কথা বলেন।
ভবিষ্যতে নির্বাচনে সমর্থন পেতে বর্তমান সরকারের সাফল্য তাদের সামনে তুলে ধরতে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। আপনাদেরকে দলের প্রতীক নিয়ে জনগণের কাছে প্রতিনিয়ত যেতে হবে। তাই জনগণের আস্থা অর্জন জরুরি। তাদেরকে বলতে হবে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাবে এবং জনগণ শান্তি ও সমৃদ্ধির সঙ্গে বসবাস করতে পারবে।’
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তাঁর সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী এই অভিশাপের বিপদ সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে যথাযথ ভূমিকা পালনের জন্য নবনির্বাচিত নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি নগরীর সর্বত্র সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সদা সতর্ক থাকার এবং যে কোন স্থানে এ ধরনের কোন দুর্বৃত্তের সন্ধান পেলে দ্রুত আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে জানানোর জন্যও তাদের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘নেতৃত্ব শুধু বক্তৃতা দেয়ার জন্য নয়। জনগণের প্রতি দায়িত্ব পালন এবং সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। ’ ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, রাজনীতিতে সহনশীলতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ঢাকা উত্তরের সভাপতি একেএম রহমত উল্লাহ এমপি ও সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান এবং ঢাকা দক্ষিণের সভাপতি আবুল হাসনাত ও সাধারণ সম্পাদক শাহী আলম মুরাদ প্রধানমন্ত্রীকে ফুলের তোড়া উপহার দেন।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ফারুক খান, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ড. আবদুর রাজ্জাক, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ এবং ৩৯টি থানা ও ১৩টি ইউনিয়ন কমিটির নবনির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন।
নতুন নেতৃবৃন্দকে অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী ঢাকা মহানগরীকে বিভক্ত করা হয়েছে। কিন্তু বিএনপি-জামায়াতের সৃষ্ট হাঙ্গামার কারণে অনেক উত্থান-পতনের পর কমিটিগুলো গঠন করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা পূর্বসূরীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে নগর ইউনিট, থানা ও ইউনিয়নগুলোতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার জন্য নবনির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, দেশের প্রধান নগরী হিসেবে ঢাকায় দৃঢ় সাংগঠনিক ভিত্তি থাকা গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশেষ করে ২০০৭ সালে যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাঁকে দেশে প্রবেশ করতে বাধা দিয়েছিল সেই মুহূর্তে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভূমিকার জন্য নেতা-কর্মীদের প্রশংসা করেন।
তিনি বলেন, তৃণমূলের কর্মীরা সবসময় আদর্শ লালন করেন, তারা সংগঠনকে রক্ষা করেন এবং কঠিন সময়ে তাদের নিবেদিতপ্রাণ ভূমিকার জন্য আওয়ামী লীগ এখন শক্তিশালী। তিনি আরো বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ দেশের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ দীর্ঘ সংগ্রাম ও অনেক ত্যাগ স্বীকার করার মাধ্যমে এখন একটি দৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে। বারবার দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে, কিন্তু কেউ ভিত্তি নড়াতে পারেনি।
তিনি আরো বলেন, নিঃসন্দেহে আওয়ামী লীগ একটি শক্তিশালী সংগঠন, কিন্তু পরিবর্তিত আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি, পছন্দ, দাবি ও জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী দলকে পুনর্গঠিত করতে হবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, বাংলাদেশকে একটি ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে নতুন নেতৃবৃন্দ সংগঠনকে নতুন করে গড়ে তুলবেন।
দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অগ্রগতি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে কেবল বঙ্গবন্ধুর সময়ে ৭ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল এবং বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারই অনুরূপ সাফল্য দেখাতে পেরেছে।
তিনি বলেন, প্রতিটি ক্ষেত্রে জনগণের মাথপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে এবং ব্যাপক ও দৃশ্যমান অবকাঠামোগত উন্নয়ন পরিলক্ষিত হচ্ছে।
মহানগরীর মানুষের কিছু দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক সমস্যা বিশেষ করে যানজট ব্যক্তিগত পরিবহন বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সৃষ্টি হয়েছে। অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হওয়ার কারণে জনগণ এগুলো ক্রয় করতে পারছে।
তিনি বলেন, কিন্তু আমরা বসে নেই, আমরা এই সমস্যার সমাধান এবং নগর ও পল্লী এলাকার সুষম উন্নয়র নিশ্চিত করার জন্য অব্যাহত প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, টেকসই উন্নয়নের জন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশ গুরুত্বপূর্ণ। সহিংসতা ও ধ্বংসাত্মক রাজনীতি না থাকলে বাংলাদেশ নিশ্চিতভাবেই আরো আগেই ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হার অর্জন করতে পারতো।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন সমৃদ্ধি অর্জনের পথে রয়েছে এবং স্বাধীনতা অর্জনের সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের আগেই ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের মর্যাদা লাভ করতে সক্ষম হবে।
ছবিঃ ফোকাস বাংলা নিউজ