358
Published on মার্চ 31, 2016তিনি বলেন,‘ আমরা যারা রাজনীতি করি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে মাত্র ৫ বছরের জন্য সরকার গঠন করি। আমাদের স্থায়িত্বকাল মাত্র ৫ বছর, কিন্তু আপনাদের স্থায়িত্বকাল অনেক দীর্ঘ। কাজেই সরকারের যেকোন কাজ, উন্নয়ন কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার দায়িত্ব আপনাদের ওপরও বর্তায়।’
তিনি দেশটাকে উন্নত-সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলতে সবসময় সচেষ্ট থাকার পাশাপাশি কাজের গতিশীলতা বজায় রাখার জন্যও কর্মকর্তাদের প্রতি আহবান জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বেইলী রোডস্থ অফিসার্স ক্লাব মিলনায়তনে অফিসার্স ক্লাবের নবনির্বাচিত কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে ক্লাবের চেয়ারম্যান এবং মন্ত্রী পরিষদ সচিব মো. শফিউল আলম সভাপতিত্ব করেন। নবনির্বাচিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক অতিরিক্ত সচিব ইব্রাহিম হোসেন খান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, জন প্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ, মন্ত্রী পরিষদ সদস্যবৃন্দ, বিচারপতিগণ, সরকারের বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ এবং ক্লাবের সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ১২৩ ভাগ বেতন বাড়িয়ে দিয়েছি। অনেকেই বকেয়া অনেকগুলো টাকা একত্রে পেয়েছেন। এই টাকা থেকে আপনারা সেভিংস করতে পারেন। সরকারের পক্ষ থেকে এটি ফোর্স সেভিংস হওয়ার ফলে এতগুলো টাকা একসাথে এসেছে।
তিনি সরকারী কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের যেসব সমস্যা রয়েছে, তা আপনারাই মেটাতে পারেন। তিনি বলেন, আমি জানি মাত্র ৭ থেকে ৮ শতাংশ কর্মকর্তারা আবাসন সুবিধা পান।
তিনি বলেন, অন্তত ৪০ ভাগ সরকারী কর্মকর্তাদের জন্য আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করাসহ তারা যেন অবসরের পরেও ‘হাইয়ার পার্চেজে’ ফ্লাট ক্রয় করতে পারেন সে বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণও সরকারের পরিকল্পনায় রয়েছে।
তিনি জানান, ঢাকা এবং সকল জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আবাসন ব্যবস্থাও সরকার করে দেবে।
তিনি অফিসার্স ক্লাবের পুরাতন স্থাপনা ভেঙ্গে আধুনিক আঙ্গিকে গড়ে তোলার জন্যও সদস্যদের উদ্যোগ গ্রহণের আহবান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার রাজধানী ভিত্তিক উন্নয়নের বদলে উন্নয়নকে গ্রাম পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে চায়। গ্রামের সার্বিক উন্নয়নকে ঘিরেই বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড আবর্তিত হচ্ছে যাতে জেলা-উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত যেন সাধারণ মানুষ উন্নয়নের সুফলটা পায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে বাংলাদেশ স্বাধীন বলেই আপনারা সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আসীন হতে পেরেছেন। বহু রক্তমূল্যে আমাদের এই স্বাধীনতাকে অর্জন করতে হয়েছে।
তিনি বলেন, স্বাধীনতা অর্জন করা কঠিন। তারচেয়েও কঠিন একে রক্ষা করা। কাজেই দেশে যেন কোনভাবেই আর কোন জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাসবাদ মাথাচারা দিয়ে উঠে উন্নয়নের গতিকে বাধাগ্রস্থ করতে না করতে পারে, সেদিকে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের সাথে সাথে আমাদের সংবিধানে উল্লেখিত মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করতে হবে। যেমন অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার চাহিদা যাতে আমরা পুরণ করতে পারি সেদিকে আমাদের বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। আমরা ৫ম ও ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছি এবং ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। সেগুলো বাস্তবায়ন করার জন্য আমি আপনাদের সহযোগিতা কামনা করি। আমি আশা করি, আপনারা সকলে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করবেন।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আপনারা দেখেছেন আমাদের অর্থনীতি শক্তিশালী হয়েছে। সাথে সাথেই আপনাদের বেতন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করেছি। আমরা ১২৩ ভাগের মত বেতন বৃদ্ধি করে দিয়েছি যাতে সকলেই একটু সুখে স্বচ্ছন্দে চলতে পারেন।
তিনি বলেন, আমরা দেশের দারিদ্রের হার ২২ শতাংশে কমিয়ে এনেছি। ২০২১ সালের মধ্যে আরো ১০ ভাগ দারিদ্র কমিয়ে আনাই আমাদের লক্ষ্য। প্রধানমন্ত্রী দেশের উন্নয়নের খন্ডচিত্র তুলে ধরে বলেন, বিশ্বমন্দার মধ্যেই আমরা রাষ্ট্রপরিচালনায় এসে দেশের প্রবৃদ্ধির হার আমরা ৬ দশমিক ৫৫ ভাগে রাখতে সক্ষম হয়েছি। মূল্যস্ফীতি বিএনপি-জামাতের আমলের দুই অংক থেকে ৬ ভাগে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। দেশের বাজেটের শতকরা ৯০ শতাংশই বর্তমানে উন্নয়ন খাতে ব্যয় হয়।
তিনি বলেন, আমাদের উন্নয়ন কর্মকান্ডে অনেকেই বিস্মিত হন। দেশকে উন্নত করার মানসিকতায় সঠিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট বলেই আমাদের এই অর্জন সম্ভব হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘৭৫ পরবর্তী সময়ে পরাজিত শক্তি ও তাদের দোসররা ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা ব্যাহত হয়। ‘৯৬ সালে আওয়ামী লীগ উন্নয়নের গতি সঞ্চার করে। ২০০১ এ আবারও পরাজিত শক্তি ক্ষমতায় এসে গতি ব্যাহত করে। ২০০৯ সালে সরকার গঠন করে আমরা আবারো উন্নয়নে গতি নিয়ে আসি।
উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখা দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী পুনরায় দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সরকারী কর্মকর্তাদের সচেষ্ট হবার আহবান জানান।
তিনি দৃপ্তকন্ঠে বলেন,‘আমরা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি। আমরা বিজয়ী জাতি। আমরা বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলতে চাই। কেউ যেন আমাদের আর অবহেলা করতে না পারে।
আমরা যে সেটা পারি তা ইতোমধ্যেই প্রমাণ হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ার একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ। সেভাবেই পরিকল্পনা প্রণয়ণ করে সরকার এগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, আমরা সবাই মিলে সর্বশক্তি দিয়ে একসঙ্গে কাজ করলে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে পারবো।