471
Published on মার্চ 8, 2016সোমবার ঢাকায় আর্মি স্টেডিয়ামে এই আয়োজনে ছিল স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের উদ্দীপনামূলক গান থেকে এই সময়ের জনপ্রিয় বিভিন্ন ব্যান্ডের গান। ছিল পাকিস্তানি শোষণের বিরুদ্ধে বাঙালির সংগ্রামের চিত্রায়ন ‘ড্রামা শো’।
সাদাকালো ক্যামেরায় ধারণ করা ৭ মার্চের ভাষণের রঙিন সংস্করণ হাজারো তারুণ্যের উচ্ছ্বাসে দিয়েছিল অন্য রকম মাত্রা।
সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) এবং সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘ইয়াং বাংলা’র উদ্যোগে আয়োজন করা এই কনসার্টে হরেক রঙের আলোর খেলা, আতশবাজি আর লেজার শোতে মধ্যরাত পর্যন্ত মেতে ছিল প্রায় ৩০ হাজার দর্শক।
বিকালে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্যে দিয়ে কনসার্টের দ্বিতীয় আসরের পর্দা উঠে। ২০১৫ সালের একই দিনে বসেছিল প্রথম আয়োজন।
কনসার্ট শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুর দুই দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়, রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববিসহ সরকারের বেশ কয়েকজন তরুণ প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য স্টেডিয়ামে ঢোকেন।
ঐতিহাসিক ৭ই মার্চে ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে সোমবার ‘জয় বাংলা কনসার্টে’ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের উপর শিল্পীদের পারফর্মিং আর্ট। ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে সোমবার ‘জয় বাংলা কনসার্টে’ বড় পর্দায় দেখানো হয় বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ। জাতীয় সঙ্গীতের পর গান নিয়ে একের পর এক আসতে থাকে দেশের স্বনামধন্য ও জনপ্রিয় বিভিন্ন ব্যান্ডদল। তারা প্রত্যেকেই নিজেদের গানের পাশাপাশি দেশাত্মবোধক গান ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান পরিবেশন করে। 'এক সাগর রক্তের বিনিময়ে', ‘ধন ধান্যে পুষ্পভরা’ , ‘রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি বাংলাদেশের নাম’, ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেবো রে', একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি', ‘ও আমার দেশের মাটি তোমার পরে ঠেকায় মাথা’ ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে’ এই গানগুলি আরবোভাইরাস, নেমেসিস, শুন্য, লালন, শিরোনামহীন, ক্রিপটিক ফেইট ও ওয়ারফেইজের গিটারে পায় নতুন রূপ।
ব্যান্ডদলগুলোর পরিবেশনার ফাঁকে প্রদর্শিত হয় বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের রঙ্গিন ভিডিও। এই ভিডিওই ছিল এই কনসার্টের মূল আকর্ষণ। কনসার্টে আগত তরুণ-তরুণীরা সেই উত্তাল দিনটিকে উপলদ্ধি করার সুযোগ পায়।
তার সঙ্গে দেখানো হয় বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা নিয়ে নির্মিত ‘গর্জে ওঠো বাংলাদেশ’ প্রামাণচিত্র। ‘গর্জে ওঠো বাংলাদেশ’ প্রদর্শনের পর মঞ্চের পেছন থেকে আকাশের দিকে উঠে লাল সবুজের আতজবাজির ঝলকানি। এরপর আলো বন্ধ করে লেজারের প্রদর্শনীর সঙ্গে চলে আতশবাজি। এ সময় আর্মি স্টেডিয়ামের গ্যালারি থেকে মোবাইলের লাইট জ্বলে ওঠে।
মঞ্চে নাটকের দল ‘প্রাচ্যনাট’ পরিবেশনায় ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর থেকে ৭ মার্চ ১৯৭১ সাল পর্যন্ত নানা ঘটনাক্রম তুলে ধরার মধ্যে মঞ্চে আসেন ‘রঙিন বঙ্গবন্ধু’।
জাতির জনকের ১৯ মিনিটের এই ভাষণের সঙ্গে শ্রোতা-দর্শকরা যেন ফিরে যান একাত্তরের মার্চের উত্তাল সেই সময়ে।
বন্ধুদের সঙ্গে কনসার্টে থাকা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মেহেদি হাসান বলেন, “আজকে মূলত এই ভাষণটির রঙিন সংস্করণ দেখানো হবে জেনেই এখানে এসেছি।
“বাঙালি মাত্রই বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণটির সঙ্গে খুবই পরিচিত। আজ সেই পরিচয়ে নতুন মাত্রা পেয়েছে। আমরা ভিন্নভাবে এই ভাষণটি দেখতে পেরেছি। এটা যেন একাত্তরের সেই ৭ মার্চের ভাষণের ক্ষণের মতোই।”
প্রথমবারের মতো রঙিন ফরম্যাটে আনা বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ দেখানোর পর বড়পর্দায় দেখানো হয় ইয়ং বাংলার বিভিন্ন উদ্যোগ।
তাদের উদ্যোগে দর্শকদের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা আর করতালির দিয়ে স্বাগত জানানোর মধ্যে মঞ্চে আসে ‘ক্রিপটিক ফেইট’ ব্যান্ড।
ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে যখন বাজছিল বঙ্গবন্ধুর উচ্চারণ ‘প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল’, তখন লেজারে বাংলাদেশের নানা রকমের ঘর দেখানো হয়। বঙ্গবন্ধু যখন বলছিলেন, ‘তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলায় প্রস্তুত থাক’ তখন লেজারে ফুটে উঠে কাস্তে, হাতুড়ি, লাঠি।
গান পরিবেশনের পর তারা নিয়ে আসে ‘সারাবেলা বন্ধ জানালা’, ‘আবার হাসিমুখ’ এর মতো জনপ্রিয় সব গান।
জয় বাংলা কনসার্ট রাত ১১টা পর্যন্ত চলার কথা থাকলেও তা গড়িয়ে যায় আরও অনেকক্ষণ।
কনসার্ট উপভোগ করেন টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক, মুরাদ আহমেদ, মাহজাবিন খালেদ, তানভির শাকিল জয় ও জাহিদ আহসান রাসেল।
কনসার্টের অন্যতম আয়োজক সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) নির্বাহী পরিচালক সাব্বির বিন শামস জানিয়েছেন, কনসার্ট উপভোগ করতে ৪০ হাজার দর্শকশ্রোতা নিবন্ধন করেন। স্টেডিয়ামে প্রবেশ করেন প্রায় ৩০ হাজারের মতো।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণের দিনটিতে গত বছর থেকে জয় বাংলা কনসার্টের আয়োজন করে আসছে সিআরআই।