১০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

4118

Published on ফেব্রুয়ারি 28, 2016
  • Details Image

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।

উল্লেখ্য, বর্তমান সরকার দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে অর্থনৈতিক অঞ্চল আইন, ২০১০-এর ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কতৃর্পক্ষ (বেজা) প্রতিষ্ঠা করে। এ প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে সমগ্র দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবে আজ ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়।
এগুলোর মধ্যে সরকারী উদ্যোগে ৪টি এবং পাবলিক পাইভেট-পার্টনারশীপের (পিপিপি) আওতায় বেসরকারী উদ্যোগে ৬টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ (রোববার) ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভিত্তিপ্র্রস্তর স্থাপিত হলো। কিন্তু আমরা সমগ্র দেশব্যাপী ১শ’টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলবো। একাজে স্থানীয় জনসাধারণসহ সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।’

প্রধানমন্ত্রী এসব শিল্প স্থাপনে জমি দিয়ে সহযোগিতা প্রদানকারী স্থানীয় জনগণকে অর্থনৈতিক অঞ্চলের এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানে কাজ দেয়ার জন্য উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, শিল্প স্থাপনের ক্ষেত্রে সরকারি, বেসরকারি, সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগ, জি টু জি, পিপিপি সহ সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া হবে।

অনুষ্ঠানে নির্মাণাধীন অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহ নিয়ে একটি ভিডিও চিত্র পরিবেশন করা হয়। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ আগামী ১৫ বছরের মধ্যে ১শ’টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করে এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি অতিরিক্ত ৪০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।

প্রধানমন্ত্রী রো্‌ববার বেসরকারি উদ্যোগে পিপিপি’র আওতায় নির্মাণাধীন নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে ‘আমান অর্থনৈতিক অঞ্চল’, গাজীপুরের ‘বে অর্থনৈতিক অঞ্চল’, নারায়ণগঞ্জের মেঘনা ঘাট সংলগ্ন ‘মেঘনা ইকোনমিক জোন লিমিটেড অর্থনৈতিক অঞ্চল’ ও ‘মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোন লিমিটেড অর্থনৈতিক অঞ্চল’, নরসিংদীর পলাশে ‘এ কে খান অর্থনৈতিক অঞ্চল’, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় ‘আব্দুল মোনেন অর্থনৈতিক অঞ্চল’ প্রতিষ্ঠার এবং একইসঙ্গে সরকারি উদ্যোগে নির্মাণাধীন ‘মংলা অর্থনৈতিক অঞ্চল’, ‘মিরেরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল’, কক্সবাজার এলাকার ‘সাবরাং টুরিজম পার্ক’ এবং মৌলভীবাজারে ‘শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল’ স্থাপনের ফলক উন্মোচন করেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। মিরেরসরাই অঞ্চল থেকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েরর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন।

অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সচিব সুরাইয়া বেগম, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কতৃর্পক্ষের চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী, মন্ত্রী পরিষদ সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, সরকারের বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, কূটনৈতিক মিশনের সদস্য, আন্তর্জাতিক সহযোগী সংগঠনের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

বেসরকারি উদ্যোক্তারা এগিয়ে না এলে দেশের অর্থনীতি গতিশীল হবে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের বিভিন্ন শিল্প এলাকার নির্দিষ্ট স্থানে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। যত্রতত্র শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুললে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটবে।

তিনি বলেন, আমাদের নদী-পরিবেশ যাতে দূষণ না হয়, সে লক্ষ্যেই শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলার জন্য সরকারের এসব উদ্যোগ।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘শিল্প স্থাপনের এলাকায় জলাধার থাকতে হবে, সবুজ বৃক্ষরাশি থাকতে হবে, আর বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকতে হবে- এ তিনটিই আমার পূর্বশর্ত।’

শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, একটা সময় সরকারি বিটিভি ছাড়া বেসরকারি খাতে কোনো টেলিভিশন ছিল না। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে বেসরকারি খাতে টেলিভিশন চালানোর সুযোগ দেয়। একটি মাত্র মোবাইল কোম্পানি ছিল, এক লাখ ৩০ হাজার টাকা ছিল মোবাইল সেটের দাম, কল করলেও মিনিটে ১০ টাকা ধরলেও মিনিটে ১০ টাকা খরচ হতো, সেখান থেকে আজ মানুষের হাতে হাতে মোবাইল ফোন চলে এসেছে। বর্তমান সরকারের উদ্যোগে বেসরকারী খাত উন্মুক্ত করে দেয়াই এর মূল কারণ বলে তিনি উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের অর্থনীতি ব্যবস্থাপনায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু যে সরকারি, বেসরকারি ও কো-অপারেটিভ উদ্যোগের কথা বলেছিলেন, সরকার এখন সে পথ অনুসরণ করেই এগোচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী উদ্যোক্তাদের পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে বলেন, এসব অঞ্চলে শিল্প-কারখানা গড়ার ক্ষেত্রে পরিবেশকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে, যেন পরিবেশ নষ্ট না হয়, যেন ফসলী জমি নষ্ট না হয়।

তিনি বলেন, জমি বাড়ছে না। বৃহৎ এই জনগোষ্ঠীর খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করেই আমাদের শিল্পোন্নয়ন করতে হবে। আবার পরিবেশ সুন্দরভাবে রক্ষা করাও আমাদের দরকার। সেজন্য উদ্যোক্তাদের পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগের আহ্বান জানাচ্ছি।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে আমরা মধ্যম আয়ের দেশ গড়ার যে লক্ষ্য নিয়েছি, তা বাস্তবায়নে এসব শিল্পাঞ্চল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

আমাদের যুব সমাজের কর্মসংস্থানে অর্থনৈতিক অঞ্চল বিশেষ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কর্মক্ষম যুব সমাজ নিয়ে আমরা কাজ করবো, এখানে তাদের কর্মসংস্থান হবে।

বিশ্ববাজারে পণ্য রফতানির জন্য আমাদের কাজ করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের বাজার ধরতে হবে, বহির্বিশ্বের পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরের এত বড় বাজারকেও কাজে লাগাতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আধুনিক শিল্পের বিকাশ ঘটানোর জন্য দেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়াতে হবে। যত বেশি ক্রয় ক্ষমতা বাড়বে তত বেশি শিল্পের বিকাশ ঘটবে।

প্রস্তাবিত পায়রা সমুদ্র বন্দর, পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজারসহ অন্যান্য উন্নয়ন পরিকল্পনার কথাও এ সময় তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বিদ্যুৎ-গ্যাসসহ বিভিন্ন খাতে সরকারের সফলতার কথাও উল্লেখ করেন।

বর্তমান সরকার ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকার ব্যবসা করতে আসেনি। আমরা বরং ব্যবসায়ীদের ব্যবসায়ীবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলে ব্যবসার সুযোগ করে দিতে চাই।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা বিনিয়োগবান্ধব নানা পদক্ষেপ নিয়েছি। নীতিমালা করেছি। অর্থনৈতিক অঞ্চলে যেন নারী উদ্যোক্তাদের ভালো ব্যবস্থা থাকে সেই ব্যবস্থাও করবো।

সম্ভব হলে অর্থনৈতিক অঞ্চল এলাকায় নারী উদ্যোক্তাদের জন্য স্থান বরাদ্দ রাখার জন্যও প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠাকারী উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান।

নারী উদ্যোক্তারা এগিয়ে এলে তাদের আরো কি সুবিধা দেয়া যায় তা চিন্তা করে দেখারও আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী।

শ্রমিকদের সুবিধার্থে অর্থনৈতিক অঞ্চল এলাকায় আবাসন সুবিধা বিশেষ করে নারী শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ আবাসন ব্যবস্থার উদ্যোগ নেয়ার জন্য উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শ্রমিকদের বিশেষ করে নারী শ্রমিকদের আবাসন ব্যবস্থা করা গেলে উৎপাদন বেশি হবে। প্রয়োজনে শ্রমিকেরা ওভারটাইম কাজ করলেও পর্যাপ্ত বিশ্রামের সুবিধা পাবে।

শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকার দেশের প্রবৃদ্ধি ৬-এর ওপরে উন্নীত করেছে। দারিদ্র্যের হার ২২ শতাংশে নামিয়ে এনেছে, ২০২১ সাল নাগাদ আরও অন্তত ১০ শতাংশ কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে। মাথাপিছু আয় এক হাজার ৩১৬ ডলারে উন্নীত করেছে। আমাদের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে দেশে বর্তমানে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী দেশী-বিদেশী উদ্যোক্তাদের জন্য ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালুসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার উল্লেখ করে বলেন, ‘অর্থনৈতিক অঞ্চলের ডেভেলপার ও শিল্প ইউনিটগুলোর জন্য আমরা অত্যন্ত আকর্ষণীয় প্যাকেজ ও প্রণোদনা ঘোষণা করেছি। এ সব প্যাকেজের মধ্যে বিভিন্ন মেয়াদে কর অবকাশ, শুল্কমুক্ত আমদানি ও রপ্তানী এবং সহজ বৈদেশিক মুদ্র বিনিময় নীতিমালা রয়েছে।

সরকারের এসব প্রণোদনাকে প্রধানমন্ত্রী দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর চাইতে প্রতিযোগিতামূলক উল্লেখ করে উৎপাদনে সক্ষম আমাদের দক্ষ ও কার্যকর জনশক্তি থাকার বিষয়টিও উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার বিশ্বাস দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীগণ সরকার ঘোষিত বিনিয়োগ প্রণোদনার সুযোগ গ্রহণ করে দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বিনিয়োগে এগিয়ে আসবেন।’

বক্তৃতার পর আনুষ্ঠানিকভাবে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তৃতা করেন সিকদার গ্রুপের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান পাওয়ার প্যাক ইকোনমিক জোনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রন সিকদার, আমান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল ইসলাম, বে গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জিয়াউর রহমান, মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাষ্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা কামাল, এ কে খান প্রুপের ব্যবস্থপনা পরিচালক সালাউদ্দিন কাশেম খান এবং আব্দুল মোনেম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএসএম মাঈনউদ্দিন মোনেম।

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত