2530
Published on ফেব্রুয়ারি 2, 2016শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ অনেক ত্যাগী ও অঙ্গীকারবদ্ধ নেতা তৈরি করেছে। সে কারণেই, দেশের সবচেয়ে পুরাতন এই রাজনৈতিক দলের ওপর বারবার হামলা করা হয়েছে। কেউ এ দলের ক্ষতি করতে পারেনি কারণ, দলের নেতারা দলীয় আদর্শ ও নীতিতে বিশ্বাসী এবং তারা অর্থ-সম্পদ কুক্ষিগত করার চেষ্টা করেনি।
প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে বলেন, দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিশেষ অবদান রাখা এবং গণতন্ত্র ও স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা রাখার জন্য দলের এ সব ত্যাগী নেতার নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার বিকেলে বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে (আইইবি) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজ এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নূরুল ইসলামের স্মরণে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এই সভার আয়োজন করা হয়।
সভায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু এবং আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ এবং জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাধারণ সম্পাদক ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক এবং খাদ্যমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, যুগ্ম-সম্পাদক হাজী মোহাম্মদ সেলিম এমপি, ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এমপি, এ কে এম রহমতউল্লাহ এমপি এবং প্রয়াত নেতা এম এ আজিজের ছেলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ওমর বিন আজিজ এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কামাল আহমেদ মজুমদার এমপি সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভা পরিচালনা করেন প্রচার সম্পাদক আব্দুল হক সবুজ।
এর আগে দলের এই দুই নেতার স্মরণে শ্রদ্ধা জানাতে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
দেশ, জনগণ ও দলের জন্য আত্মত্যাগ করায় দলের নিবেদিত নেতাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি দলের নিবেদিতপ্রাণ নেতাদের কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করে সংগঠনকে আরো শক্তিশালী করার জন্য ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বলতে চাই যে, তারা দেশ, জনগণ ও দলের জন্য কিভাবে আত্মত্যাগ করেছেন তা থেকে আপনারা শিক্ষা গ্রহন করুন। তাদের কাছ থেকে সকলে শিক্ষা গ্রহণ করলে দল আরো এগিয়ে যাবে। তাহলে, এসব নিবেদিতপ্রাণ নেতার আত্মা শান্তি পাবে।
তিনি বলেন, দেশে ফিরে আসার পর আমি ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতার বাড়িতে গিয়েছি এবং তাদের কাছ থেকে অনেক স্নেহ-মমতা পেয়েছি। সবকিছু হারানোর পর আমি ১৯৮১ সালে দেশে ফিরেছিলাম। সত্যি বলতে কি তখন দলের প্রবীণ নেতারা আমাকে অনেক স্নেহ-মমতা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, সেই সময় তার রাজনৈতিক জীবন সহজ ছিল না। একদিকে তখন তাকে তৎকালীন সরকারের নিপীড়ন সহ্য এবং অন্যদিকে দলের অভ্যন্তরে অনেক সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়েছে। তবে, দলের নেতাকর্মী যারা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিলেন তারা আমার সঙ্গেও ছিলেন। তাদের কাছ থেকে আমি সব ধরনের সহযোগিতা পেয়েছি। তাই, দল এখন এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মাটির গভীরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সম্পর্ক। তিনি উল্লেখ করেন, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দলকে ধ্বংস করার জন্য চেষ্টা করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার জন্য একটি ধারণা। তারা ‘কিংস পার্টি’ গঠনের চেষ্টা চালিয়েছিল। আরো কিছু সরকার এই ধরনের প্রয়াস চালিয়েছিল। কিন্তু তারা আওয়ামী লীগকে সরাতে পারেনি। কারণ, দেশের মাটির গভীরে এ দলের সম্পর্ক।
এ প্রসঙ্গে তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ভূমিকার কথা স্মরণ করে বলেন, তখন তাদেরকে তৎকালীন সরকারের নির্দয় নিপীড়ন-নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তখন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তার মুক্তির দাবিতে সর্বস্তরের জনগণের কাছ থেকে ২৫ লাখ স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছিলেন এবং সেই স্বাক্ষরের তালিকা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানের কাছে পাঠিয়েছিলেন। তারা তখন অসম্ভবকে সম্ভব করেছিলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের তখন উপলব্ধি করতে পেরেছিল যে, আওয়ামী লীগকে এতো তাড়াতাড়ি ধ্বংস করা যাবে না।
প্রধানমন্ত্রী দলের জন্য নূরুল ইসলাম ও এম এ আজিজের অবদানের কথা স্মরণ করে বলেন, তাদের মৃত্যু দেশের প্রবীন রাজনৈতিক দলটির জন্য একটি অপূরণীয় ক্ষতি।
সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নূরুল ইসলামের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি তাকে শৈশব কাল থেকেই চিনতেন। ১৯৫৮ সালে মার্শাল ল’ চলার সময় থেকে তিনি অনেকবার কারাবরণ করেছেন এবং তিনি দলের জন্য পোস্টার লিখতেন।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর হাতে সবসময় পোস্টার লেখার জন্য কাগজ থাকতো। তিনি দিনের পর দিন রাতের পর রাত পোস্টার লিখেছেন এবং নিজের হাতে সেগুলো দেয়ালে সেঁটে দিতেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালে নৃশংসভাবে বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর সেই খারাপ দিনগুলোতে তিনি বারবার বঙ্গবন্ধুর পরিবারের খোঁজখবর নিয়েছেন। তিনি বলেন, নূরুল ইসলাম চাচা সবসময়ই লন্ডনগামী কাউকে খোঁজে বের করতেন এবং শেখ রেহানার জন্য তাদের মাধ্যমে কৎবেল, আম তেতুঁল ইত্যাদি পাঠাতেন।
এম এ আজিজের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি সবসময় তাকে আজিজ ভাই বলে ডাকতেন। দলের জন্মলগ্ন থেকেই এম এ আজিজের পরিবারের সঙ্গে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সম্পর্ক ছিল। তার পরিবার ভাষা আন্দোলন সহ সকল আন্দোলনে অমূল্য অবদান রেখেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এম এ আজিজের পরিবার মঞ্চ নির্মাণ ও খাদ্য সরবরাহ সহ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সকল কর্মসূচি সফল করার জন্য আর্থিক সহায়তা দিয়ে গেছে।
শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তার মুক্তি লাভ এবং পুরনো ঢাকার নীমতলীতে মর্মান্তিক অগ্নিকা-ের পর তিন কন্যার বিয়ের ব্যবস্থা করার জন্য এম এ আজিজের ভূমিকার কথা স্মরণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী পরিবারের ঐতিহ্য সমুন্নত রেখে এবং পিতার আদর্শ অনুসরণ করে কাজ করার জন্য ঢাকা দক্ষিণের কাউন্সিলর এম এ আজিজের পুত্রের প্রতি আহ্বান জানান।