422
Published on জানুয়ারি 31, 2016প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্রের প্রধান প্রতিষ্ঠান হিসেবে এসডিজি বাস্তবায়নে পার্লামেন্টের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করে বলেন, জাতীয় পর্যায়ে এসডিজি লক্ষ্যকে সমন্বিতভাবে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে এবং এর কার্যক্রম মনিটর করার জন্য বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ নিতে হবে।
তিনি বলেন, ’আমি মনে করি, ২০৩০ এজেন্ডা হচ্ছে একটি সম্মিলিত পথ-পরিক্রমা। এর বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের সরকারি এবং বেসরকারি, দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক, সকল উৎস থেকে অধিক পরিমাণে সম্পদের সরবরাহ প্রয়োজন। সুতরাং শুরু থেকেই বৈদেশিক উন্নয়ন সহায়তা বা ওডিএ-এর লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা হবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।’
তিনি বিভিন্ন স্টোকহোল্ডার যেমন- নারী-পুরুষ, নাগরিক সমাজ, কম্যুনিটি এবং ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ, যুবসমাজ ইত্যাদির সঙ্গে অংশীদারিত্ব, আলোচনা এবং সহযোগিতার মাধ্যমে এসডিজি বাস্তবায়নের জন্য আমি দক্ষিণ এশিয়ার পার্লামেন্টগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তি গড়ে তোলার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
প্রধানমন্ত্রী এসডিজি’র পূর্ণ বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন দেশের স্পীকার এবং সংসদ সদস্যদের প্রয়োজনীয় বাজেট অনুমোদনেরও উদাত্ত আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ স্থানীয় একটি হোটেলে ’সাউথ এশিয়ান স্পীকারস সামিটের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
দু’দিনব্যাপী সম্মেলনের আজ ছিল শেষ দিন। সম্মেলনের যৌথ আযোজক ইন্টার পার্লামেন্টারী ইউনিয়ন (আইপিইউ) এবং বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ। সহযোগিতায় ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো-ফ্রি কিডস।
আইপিইউ সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী এমপি’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ভারতের লোকসভার স্পীকার সুমিত্রা মহাজন, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পীকার এবং কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারী এসোসিয়েশন (সিপিএ) চেয়ারপার্সন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, শ্রীলংকার পার্লামেন্টের ডেপুটি স্পীকার থিলাঙ্গা সুমাথিপলা, আফগানিস্তানের ওলেসি জিগরার স্পীকার আব্দুর রউফ ইব্রাহিম, ভূটানের জাতীয় সংসদ সংগুর স্পীকার জিগমে জাংপো, মালদ্বীপের মজলিসের স্পীকার আব্দুল্লাহ মাসেহ মোহামেদ বক্তব্য রাখেন।
আইপিইউ সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী অনুষ্ঠানে সম্মেলনের ঢাকা ঘোষণা পড়ে শোনান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে তামাকের ব্যবহার মহামারী আকারে দেখা দিয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো যেমন- বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান, মিয়ানমার এবং শ্রীলঙ্কায় তামাক-গ্রহণকারীর মোট সংখ্যা প্রায় ৩৮৩ মিলিয়ন। এটা বিশ্বের মোট ১ দশমিক ১ বিলিয়ন তামাকগ্রহণকারীর সংখ্যার ৩৪ দশমিক ৮ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় এক-তৃতীয়াংশ।
তিনি বলেন, এসব দেশে তামাকজনিত আর্থিক এবং স্বাস্থ্যগত ক্ষতির পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। শুধু ভারত এবং বাংলাদেশে তামাক গ্রহণজনিত কারণে প্রতিবছর কমপক্ষে ১ দশমিক ১ মিলিয়ন মানুষ মারা যায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার সরকার জনস্বাস্থ্যকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত কনভেনশন ‘এফসিটিসি’ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে আমরা ২০১৩ সালে ধূমপান এবং তামাক জাতীয় পণ্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন সংশোধন করেছি এবং ২০১৫ সালে সংশ্লিষ্ট বিধি পাশ করেছি।
তিনি বলেন, ২০১৩ সালের তামাক জাতীয় পণ্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন এবং ২০১৫ সালের বিধি অনুসরণ করে আগামী মার্চ থেকে আমরা তামাকজাত পণ্যের মোড়কে ছবি সম্বলিত সতর্কবার্তা সংযোজন করতে যাচ্ছি। আমাদের প্রতিবেশি ভারত, নেপাল এবং শ্রীলঙ্কায় এটা ইতোমধ্যে চালু করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনস্বাস্থ্য রক্ষা এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মকা-কে উৎসাহ দিতে আমরা ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে তামাকের উপর ১ শতাংশ হারে সারচার্জ আরোপ করেছি। বাংলাদেশে এটাই এ ধরণের প্রথম পদক্ষেপ।
দেশকে তামাকমুক্ত করার দৃঢ় আশাবাদ ব্যাক্ত করে বলেছেন, আমরা ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে তামাকের ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করতে চাই।
তিনি বলেন,এই ঈপ্সিত লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য আমরা যে বিষয়গুলোর উপর গুরুত্বারোপ করছি সেগুলো হচ্ছে প্রথম পদক্ষেপে স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ ব্যবহার করে একটি তহবিল গঠন করা, যা দিয়ে দেশব্যাপী জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দ্বিতীয় ধাপে, আমরা তামাকের উপর বর্তমান শুল্ক-কাঠামো সহজ করে একটি শক্তিশালী তামাক শুল্ক-নীতি গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিব।’
এর উদ্দেশ্য হবে দেশে তামাকজাত পণ্যের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস এবং একইসাথে এ অঞ্চলের সর্বোত্তম ব্যবস্থা থেকে শিক্ষা নিয়ে সরকারের শুল্ক আয় বৃদ্ধি করা বলেও প্রধানমন্ত্রী জানান।
তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মকাণ্ড সমন্বিতভাবে পরিচালনার জন্য তাঁর সরকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল গঠন করেছে এবং জাতীয় পর্যায়ে প্রস্তুতি হিসেবে পরিকল্পনা কমিশন বৈশ্বিক এজেন্ডার সাথে মিল রেখে সম্প্রতি ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বলেও প্রধানমন্ত্রী জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় দুটি গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা প্রণয়ন করছে। এগুলো হচ্ছে- তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ নীতি প্রণয়ন। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে- তামাক চাষ প্রসারের ব্যাপকতা হ্রাস এবং খাদ্য নিরাপত্তার হুমকি মোকাবিলা। অন্যটি হচ্ছে তামাকের চাহিদা এবং সরবরাহ হ্রাসের জন্য একটি ব্যাপকভিত্তিক জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতি প্রণয়ন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যদিও আমরা তামাক নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছি, কিন্তু আমরা এ নিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভুগছি না। এফসিটিসি বাস্তবায়ন এবং বাংলাদেশে তামাকের ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাসের জন্য আমাদের আরও অনেক কিছু করতে হবে। ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে তামাকের ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করতে চাই।’
শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা জানেন সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য পূরণে বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। আমরা অতি দারিদ্র্যের হার অর্ধেকে নামিয়ে এনেছি। শহর এবং গ্রামীণ উভয় অঞ্চলেই আমরা শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, পানি সরবরাহ এবং পয়ঃসেবার মত মৌলিক বিষয়ে অধিকতর সুবিধা নিশ্চিত করেছি।
বিশ্বমন্দা সত্ত্বেও গত ৭ বছর ধরে আমাদের জিডিপি’র প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের উপর ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত এক দশকে আমাদের রপ্তানি আয় ৩ গুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে প্রায় ৮ গুণেরও কাছাকাছি।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের মান অনুযায়ী গতবছর বাংলাদেশ নি¤œ-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। তবে, আমরা নিম্ন থাকতে চাই না। আমরা এখন ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়ন এবং সুস্বাস্থ্যের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বিদ্যমান। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি তামাকজনিত রোগ-বালাই এবং অসংক্রামক রোগের অব্যাহত প্রকোপ হ্রাসে এ অঞ্চলের এবং এর বাইরের সংসদকে এসডিজি-৩-তে বর্ণিত সুস্থ জীবনযাপন নিশ্চিত করতে তাদের আরও তৎপর হতে হবে। এসব রোগের ব্যাপকতা আমাদের দেশে ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অনুষ্ঠানে আইপিইউ সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীকে ক্রেস্ট উপহার দেন।
ছবিঃ সাইফুল ইসলাম কল্লোল