খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনের পর সরকারের বর্তমান লক্ষ্য সবার পুষ্টি নিশ্চিত করাঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

781

Published on জানুয়ারি 13, 2016
  • Details Image

তিনি বলেন, ‘দেশ ইতোমধ্যেই খাদ্য উৎপাদন জোরদারের মাধ্যমে সবার জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। এখন আমাদের লক্ষ্য অপুষ্টি দূর করার মাধ্যমে সবার জন্য পুষ্টি নিশ্চিত করা। এই লক্ষ্য অর্জনে আমরা বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছি।’

বুধবার সকালে রাজধানীর ফার্মগেইটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ মিলনায়তনে দুধ উৎপাদনে বাংলাদেশকে স্বনির্ভর করে তোলার লক্ষ্যে ৫ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ কর্মসূচি উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রাণি সম্পদ বিভাগ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ সচিব মাকসুদুল হাসান খান এতে সভাপতিত্ব করেন।

মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রী মোহাম্মদ ছায়েদুল হক, মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন। ব্যাংক ও ফিনান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন সচিব ড. এম আসলাম আলম স্বাগত বক্তব্য রাখেন।

কর্মসূচির ২ জন সুবিধাভোগী রংপুরের বদরগঞ্জের একজন এবং গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার একজন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।

প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে কর্মসূচির সুবিধাভোগী ১৩ জনের মাঝে ঋণের চেক বিতরণ করেন।

দুধ দ্রুত নষ্ট হতে পারে এমন পণ্যগুলোর অন্যতম বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী দুগ্ধজাত পণ্য বহুমুখীকরণের মাধ্যমে নতুন পণ্য উৎপাদনের পাশাপাশি এসব পণ্য যথাযথভাবে সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে ডেইরি শিল্প বিকাশের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

তিনি বলেন, ‘দুধ উৎপাদনের পাশাপাশি, আমাদেরকে জনস্বাস্থ্যের জন্য এই দুধ নিরাপদ কিনা সে বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের ঝুঁকি, জীবাণু সংক্রমণ ও ক্ষতিকর উপাদানের ব্যাপারে দুগ্ধচাষীদের সচেতন করে তুলতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষুদ্রচাষীরা দেশে দুধ উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত। দেশে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বড় আকারে ডেইরি ফার্ম গড়ে ওঠেনি। তাই, ক্ষুদ্র চাষীদের শ্রম কাজে লাগিয়ে দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি এবং প্রাণি সম্পদ প্রজাতি উন্নয়নের কোন বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, প্রাণি সম্পদ প্রজাতির উন্নয়নে প্রধান কৌশল হচ্ছে কৃত্রিম গর্ভাধান পদ্ধতির প্রয়োগ। কৃত্রিম গর্ভাধানে প্রধান বাধা হচ্ছে সঙ্কর প্রজাতির বাছুরের মৃত্যু হার বেশী। তিনি এই মৃত্যুহার হ্রাসের বিষয়ে গুরুত্ব দেয়ার জন্য প্রাণি সম্পদ বিভাগকে নির্দেশ দেন।

ব্যাপক শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য দেশব্যাপী ১শ’ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় সরকারের উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ অঞ্চলগুলোতে কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের জন্য নির্দিষ্ট স্থান থাকবে।

তিনি বলেন, এসব অর্থনেতিক অঞ্চলে যাতে কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে উঠে, সেদিকে আমাদের নজর দিতে হবে।

হালাল মাংস রফতানিতে বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এ ধরনের মাংস রফতানির প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, অনেক মুসলমান-প্রধান দেশ তাদের জনগণের জন্য বিপুল পরিমাণ হালাল মাংস আমদানি করে।

তিনি বলেন, আমরা হালাল মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ ও রফতানির ক্ষেত্রে পিছনে পড়ে রয়েছি। কিন্তু আমরা আমাদের বিস্তীর্ণ চর ও পাহাড়ী এলাকায় গরুর পাশাপাশি মহিষ ও ভেড়া পালন করতে পারি। এছাড়া বিশ্বব্যাপী আমাদের ‘ব্লাকগোট’-এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বামী ও স্ত্রী উভয়ে চাকরি করার কারণে বাসার বাইরে খাবারের প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় এ ধরণের মাংসের গৃহস্থলী চাহিদা নিত্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।

দুগ্ধ উৎপাদন বাড়াতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, গবেষণার মাধ্যমে উন্নত জাত উদ্ভাবনে বুল স্টেশন ও ল্যাবরেটরী স্থাপনে একটি নতুন প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের অর্থনীতি ও বাজেট সম্প্রসারিত হচ্ছে, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে এবং শিল্পায়ন ও নগরায়নও দ্রুত হচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, এমডিজির মূল লক্ষ্য হচ্ছে- দারিদ্র্য ও অপুষ্টি অর্ধেকে নামিয়ে আনা।

প্রধানমন্ত্রী বলে, তাঁর সরকার দুগ্ধ উৎপাদন বাড়াতে স্বল্প সুদে ঋণ দেয়া ও কৃত্রিম প্রজনন কর্মসূচি কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর ব্যবস্থা নিয়েছে। এ কর্মসূচি সফল করতে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে এসেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহের (এমডিজি) ছয়টির মধ্যে একটি অর্জন করার জন্য বাংলাদেশ পুরস্কার লাভ করেছে। তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ (এসডিজি) নির্ধারণ করা হয়েছে এবং আমাদেরকে এখন টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন বজায় রাখা ও অর্জনের জন্য এসডিজি’র ওপর মনোযোগ দিতে হবে।

এছাড়াও, দেশকে ২০২১ সালের মধ্যে একটি মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত করার লক্ষ্য অর্জন করার জন্য আমাদের দেশকে আরো এগিয়ে নিতে হবে।

দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত অন্যান্য পণ্যের বিপুল চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, তৎকালীন সরকার ১৯৭৩ সালে এফএও, ডানিডা ও ইউএনডিপি সহ অন্যান্য সংস্থার সহযোগিতায় ‘মিল্কভিটা’ হিসেবে সুপরিচিত বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করেছিল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন করেছেন এবং দেশের জনগণকে উন্নয়নের পথ দেখিয়েছেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্ন দেখেছিলেন। তাঁরই পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমরা একটি ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে বিরামহীনভাবে কাজ করে যাচ্ছি।

পাঁচ শতাংশ সুদে ২০১৬ সালে ঋণদান কর্মসূচির সাফল্য কামনা করে শেখ হাসিনা বলেন, গাভী পালন ও দুধ উৎপাদনে প্রান্তিক চাষীদের আরো উৎসাহিত করতে হবে। তাহলেই, দেশ দুধ উৎপাদনে স্বনির্ভর হবে।

এই কর্মসূচির অধীনে আগামী পাঁচ বছরে দুধ উৎপাদন ও কৃত্রিম গর্ভাধান প্রক্রিয়ায় কৃষকদের সহায়তা দিতে ঋণ প্রদানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০০ কোটি টাকার একটি পুনঅর্থায়ন তহবিল গঠন করেছে। সর্বোচ্চ ৪টি বাছুর সংগ্রহ পালনের জন্য প্রত্যেক চাষী ২ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ গ্রহন করতে পারবেন।

এই ধরণের অর্থায়ন ব্যবস্থা থেকে ঋণ লাভের ক্ষেত্রে মহিলা ও প্রান্তিক চাষীরা অগ্রাধিকার পাবেন। সুদ সহ ঋণ পরিশোধের জন্য ঋণ গ্রহীতা ১৪ মাসের রেয়াতি সুবিধা সহ সর্বোচ্চ ৫৪ মাস সময় পাবেন।

সর্বোচ্চ পাঁচ শতাংশ হারে এই ঋণ লাভের সুযোগ দিবে ১৩ টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এই ১৩ টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যাংকের জন্য প্রযোজ্য হারে (বর্তমানে যা পাঁচ শতাংশ) বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এই ধরণের পুনঅর্থায়ন সুবিধা লাভ করবে।

এসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাদের ঋণ বা লোকসান বা ভর্তুকির জন্য অতিরিক্ত পাঁচ শতাংশ সুদ পাবে।

ছবিঃ সাইফুল ইসলাম কল্লোল

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত