313
Published on জানুয়ারি 1, 2016নতুন বছরটি শুরু হোক শুভ সংবাদ দিয়ে। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম প্রবৃদ্ধির দেশ। এই বছরটিতে বাংলাদেশ ছাড়িয়ে যাবে চীনের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হারকেও।
নতুন বছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। এর চেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হবে কেবল ইরাক ও ভারতের। এর মধ্যে ৭ দশমিক ৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে ইরাক থাকবে তালিকার শীর্ষে। ভারতের প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ।
জাতিসংঘ ও বহুজাতিক দাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বছর শেষে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি নিয়ে প্রাক্কলন প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে। এবারও করেছে। সেখানে প্রতিটি দেশ নিয়েও প্রাক্কলন রয়েছে। এর মধ্যে মূলত আইএমএফের দেওয়া তথ্য ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সিএনএন মানি প্রবৃদ্ধি ও আকারের দিক থেকে শীর্ষ ১০টি দেশের একটি তালিকা তৈরি করেছে। সেই তালিকায় তৃতীয় স্থানেই আছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের জন্য কিন্তু আরও শুভ সংবাদ দিয়েছে সিএনএন মানি। তারা আগামী ২০২০ সাল পর্যন্ত দেশগুলোর সম্ভাব্য অবস্থান নিয়েও তালিকা করেছে। সেখানেও বাংলাদেশ আছে ওপরের দিকেই। যেমন, ২০১৭ সালে বাংলাদেশ থাকবে তৃতীয় অবস্থানেই (৭%), পরের দুই বছরে চতুর্থ স্থানে (৭%)। ২০২০ সালে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে বাংলাদেশ থাকবে চতুর্থ স্থানে। এই সময়ের মধ্যে প্রবৃদ্ধির দিক থেকে বাংলাদেশকে ছাড়িয়ে যাবে মিয়ানমার। মূলত ১০০ বিলিয়ন (১০ হাজার কোটি) ডলারের বেশি অর্থনীতির আকার এমন দেশগুলো নিয়েই তালিকাটি করা হয়েছে।
আইএমএফ বলছে, ২০১৬ সালে বিশ্বমন্দা আরও গভীর হবে। গত অক্টোবরে তারা বলেছিল, নতুন বছরে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হবে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। কিন্তু এখন মনে করা হচ্ছে প্রবৃদ্ধি আরও কম হবে। জাতিসংঘ প্রতি নতুন বছরের শুরুতে অর্থনীতির আরেকটি প্রাক্কলন প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এবারের প্রতিবেদনের একটি সারাংশ গত সপ্তাহে প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হবে ২ দশমিক ৯ শতাংশ।
বিশ্ব অর্থনীতির এ রকম এক হতাশাজনক প্রেক্ষাপটে নতুন বছরে বাংলাদেশ নিয়ে সবাই সাড়ে ৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশা করছে। ডিসেম্বরে বাংলাদেশে এসেছিলেন বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু। তিনিও বাংলাদেশের সাড়ে ৬ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রশংসা করে এ জন্য বাংলাদেশের নাগরিকদের গর্বিত হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে বাংলাদেশ পাল্লা দেবে, এটা কয়েক বছর আগেও ভাবা যেত না।
সিএনএনের তালিকায় বাংলাদেশ ছাড়িয়ে যাচ্ছে চীনকেও। তালিকায় ২০১৫ সালে বাংলাদেশ ছিল পঞ্চম স্থানে। আর প্রবৃদ্ধি হবে বলে প্রাক্কলন ছিল ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০১৬ সালে এসে বাংলাদেশ দুই ধাপ এগিয়ে তৃতীয় স্থান দখল করেছে। তালিকায় থাকা অন্য দেশগুলো হচ্ছে যথাক্রমে কাতার (৬.৫%), চীন (৬.৩%), ফিলিপাইন (৬.৩%), ভিয়েতনাম (৫.৮%), ইন্দোনেশিয়া (৫.৫%), মেক্সিকো (৫.৫%) এবং নাইজেরিয়া (৫%)।
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য শামসুল আলম বলেন, ‘আইএমএফ বলছে, ৬ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে; বিশ্বব্যাংক বলছে সাড়ে ৬ শতাংশ। এরা সব সময়ই রক্ষণশীল হিসাব দেয়। প্রতিবছরই আমরা তাদের প্রাক্কলনের চেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করি। এমন কোনো বছর পাওয়া যাবে না, তাদের প্রাক্কলনের চেয়ে কম প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি। বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা রাজনৈতিক অস্থিরতা না হলে আমি নিশ্চিতভাবেই বলতে পারি, এ বছর প্রথমবারের মতো ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। এটাই ২০১৬ সালের বড় সুখবর।’