385
Published on ডিসেম্বর 14, 2015শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে গতকাল সোমবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া একাত্তরে এদেশের বুদ্ধিজীবীদের ঘাতক আল বদর-রাজাকার-আল শামস’র প্রধানদের মন্ত্রী বানিয়েছিলেন এবং তাদের গাড়িতে লাখো শহীদের রক্তে ভেজা পতাকা তুলে দিয়েছিলেন। আর যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় আন্দোলনের নামে ৯৩ দিন শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছেন। এরপর উনি কোন্ মুখে গতকাল বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধা জানাতে গেলেন? আসলে তার এই শ্রদ্ধা জানাতে যাওয়া জাতিকে ধোঁকা দেয়া ও তামাশা ছাড়া আর কিছু নয়। সামান্য লজ্জা ও শরম থাকলে উনি স্মৃতিসৌধে যেতে পারতেন না। কিছু মুক্তিযোদ্ধাদের দেখলাম তার সঙ্গে গেছেন। তারাও কোন্ মুখে এবং কার সঙ্গে শ্রদ্ধা জানাতে গেলেন তাদের একটু ভেবে দেখার অনুরোধ রইল।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের জনগণের ওপর আমার বিশ্বাস আছে। মৃত্যু নিয়ে আমি ভাবি না। আমার হারানোর কিছু নেই। মা-বাবাসহ সবাইকে হারিয়ে বাংলাদেশের মানুষকেই তো আপন করে নিয়েছি। আমাকে হত্যার জন্য অসংখ্যবারই চেষ্টা করা হয়েছে। মৃত্যুকে আমি ভয় করি না। আমার একটাই লক্ষ্য, এদেশের একটি মানুষও যেন গৃহহারা না থাকে। দু’বেলা পেটভরে যেন খেতে পারে। তিনি বলেন, কোনো কাজ করতে গেলে একবার সিদ্ধান্ত নিয়েই তাতে অটল থাকতে হবে। দেশকে অভিশাপমুক্ত করতে হবে। নতুবা দেশে শান্তি আসবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচারের রায় কার্যকরের মাধ্যমে দেশ প্রথম কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। এখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর করা হচ্ছে। এতে এক ধাপ করে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করতে পারে পৃথিবীর এমন কোনো শক্তি নেই।
যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির রায় কার্যকরের আগে প্রচণ্ড আন্তর্জাতিক চাপ সহ্য করতে হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের যাতে বিচার ও রায় কার্যকর না হয় সেজন্য বিশ্বের বড় বড় কেউ কেউটে যারা আছেন তারা টেলিফোন করেছেন এ বিচার বন্ধ করতে। এমনকি বিচার প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন তোলার চেষ্টা হয়েছে। গণহত্যাকারীদের মানবাধিকার নিয়ে তারা কথা বলেন! কিন্তু আমরা একটা আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করি। কোনো ষড়যন্ত্রই যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করতে পারেনি, পারবেও না।
শেখ হাসিনা বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের লাখো শহীদের রক্তের সঙ্গে জিয়াউর রহমান বেঈমানি করেছেন। বিজয়ের মাত্র দু’দিন আগে (১৪ ডিসেম্বর) দেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে এ দেশকে অকার্যকর করতে চেয়েছিল, কিন্তু পারেনি। পরে দেশ স্বাধীন হলো। একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ যখন জাতির গড়ে তুলছিলেন, তখনই তাঁকে হত্যা করা হলো। তিনি বলেন, মীর জাফর যেমন টিকতে হত্যা-ক্যু-ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে, জিয়াউর রহমানও সেই একই কায়দায় ক্ষমতায় এসেছিলেন। জাতির পিতার হত্যার পেছনে যে জিয়াউর রহমান মূল ব্যক্তি হিসাবে ছিলেন পরে তা সবার সামনে চলে আসে। আসলে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি জিয়াউর রহমানের মাধ্যমেই প্রতিশোধ নিয়েছে।
২১টি বছর ক্ষমতা দখলকারীরা দেশের মানুষকে ভিক্ষুকের জাতি করে রেখেছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন তারা ক্ষমতায় থেকে শুধু নিজেদের আখের গুছাতে পারে, দেশের মানুষের জন্য কিছু করতে পারে না।
আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন দলের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আবদুল আলিমের কন্যা ডা. নুজহাত হালিম চৌধুরী, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজ, সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, কেন্দ্রীয় নেতা আখতারুজ্জামান ও খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম।