333
Published on ডিসেম্বর 13, 2015গতকাল রোববার দুপুরে ঢাকা সফরের প্রথম দিনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এন্ড স্ট্যাট্রেজিক স্টাডিজ (বিজ) আয়োজিত অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এই অঞ্চলের বাণিজ্যিক শক্তি কেন্দ্র এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার মধ্যে মানুষ এবং পণ্য পরিবহনে কেন্দ্রীয় ভূমিকা রাখতে পারে। একই সাথে উন্মুক্ত ও নিরংকুশ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই বাংলাদেশ তার সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যেতে পারবে। আর বাণিজ্য ও বিনিয়োগের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র এদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে সচল রাখার সাহায্য অব্যাহত রাখবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিজ এর ডিজি মেজর জেনারেল এ কে এম আব্দুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুল হক।
থমাস এ শ্যানন বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেন। শ্যানন বলেন, বাংলাদেশ আঞ্চলিক যোগাযোগের ক্ষেত্রেও অনেক দিন ধরে নেতৃস্থানীয় অবস্থানে রয়েছে এবং দেশটি দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষ অর্থনীতিতে পরিণত হতে পারে। এ ছাড়া বাংলাদেশ এই অঞ্চলের বাণিজ্যিক শক্তিকেন্দ্র এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার মধ্যে মানুষ এবং পণ্য পরিবহনে কেন্দ্রীয় ভূমিকা রাখতে পারে। আমাদের ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক করিডোর উদ্যোগের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।
বাণিজ্য ও বিনিয়োগের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে সচল রাখার সাহায্য অব্যাহত রাখবে উল্লেখ করে শ্যানন বলেন, ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ বৃহত্তম বৈদেশিক বিনিয়োগকারী দেশগুলোর অন্যতম এবং আমাদের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য নিয়মিতভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে যার পরিমাণ ছয়’শ কোটি ডলারেরও বেশি।
তিনি বলেন, আমাদের দ’ুদেশের সৈন্যরা ও নাবিকেরা স্থলভাগে ও সমুদ্রে একত্রে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে এবং দশক ধরে চলে আসা বাংলাদেশের সাথে আমাদের শান্তিরক্ষা মিশনের অংশীদারিত্ব ব্যাপক সফলতার প্রমাণ রেখেছে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে একটি অপরিহার্য অংশ হিসাবে গড়ে উঠতে সাহায্য করা।
জলবায়ুর প্রভাব ও বাংলাদেশের ভূমিকা নিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে একটি উদাহরণ। তাই আমরা আরও ভাল সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ও আপদকালীন ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র গড়তে বাংলাদেশের সাথে কাজ করার আশা ব্যক্ত করছি যেন তীব্র ঝড় ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার প্রভাব আরও কমানো যায়।
শ্যানন বলেন, ৪৪ বছর আগে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর মার্কিন সিনেটর টেড কেনেডি বাংলাদেশ সফর করে জরুরি ও আন্তরিক বার্তা দিয়েছিলেন, তিনি বলেছিলেন, আমেরিকা বাংলাদেশকে গুরুত্ব দেয়। ৪৪ বছর পর আজকে আমি এসেছি। আমেরিকা এখনও বাংলাদেশকে গুরুত্ব দেয়। দুই দেশ একই লক্ষ্যে কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা এমন একটি বাংলাদেশকে সহায়তা দেই যার অন্তর্ভুক্তমূলক সমৃদ্ধ ও নিরাপদ। যে বাংলাদেশ সহিংস চরমপন্থীরা চায় না।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের সম্ভাবনা উন্নয়নশীল অনেক দেশের কাছে একটি ঈর্ষার বিষয়। সেজন্যই একটি শক্তিশালী এবং সম্মানজনক “ব্র্যান্ড বাংলাদেশ” গড়ে তোলা খুব গুরুত্বপূর্ণ যেখানে শ্রমিকদের অধিকার এবং নিরাপত্তা সুরক্ষিত হয়। শ্রমিকের ক্ষমতায়ন হলে তারা নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আরও বেশি ভালো অবস্থানে থাকেন এবং তাদের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ে এর অর্থ আরও বেশি দক্ষতা, বেশি উৎপাদন, অধিকতর লাভ, এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জীবনমানের উন্নয়ন এবং আরও বেশি অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি।
শ্যানন বলেন, বাংলাদেশ লিঙ্গসমতা ও নারীর ক্ষমতায়নে বিপুল সাফল্য দেখিয়েছে। এর অনেকাংশই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বের কারণে সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশের সাফল্যের অনেকখানিই অর্জিত হয়েছে নারীকে উন্নয়ন কর্মসূচির সম্মুখে রেখে। তবে নারীর প্রতি সহিংসতা কমানো, বাল্য বিয়ে এবং জোরপূর্বক বিয়ে বন্ধ করাসহ আরও অনেক বিষয়ে সাফল্য অর্জন এখনও বাকী রয়েছে। এই বিষয়গুলোর ভয়ঙ্কর সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং স্বাস্থ্যগত নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে।
পৌরসভা নির্বাচনের সময় আবার এগিয়ে আসছে এবং আমি আশা করছি গণতন্ত্রের প্রতি বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতিকে পুনঃনিশ্চিত করতে প্রত্যেকেই এই সুযোগটি সর্বোচ্চভাবে কাজে লাগাতে চাইবে। প্রত্যেকটি দেশ, সেটি যুক্তরাষ্ট্র হোক বা বাংলাদেশ তাদের সম্পূর্ণ সম্ভাবনা তখনই অর্জন করতে সক্ষম হয় যখন জাতীয় বিতর্ক এমনকি মতানৈক্য একটি শান্তিপূর্ণ, উন্মুক্ত এবং নিরঙ্কুশ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে আসে।
তিনি বলেন, আমরা একত্রে অনেক কিছু অর্জন করেছি এবং আরও অনেক কিছু করার আছে। একত্রে আমাদের এমন একটি ভবিষ্যৎ গড়ার লক্ষ্যে কাজ অব্যাহত রাখতে হবে যেখানে আমাদের শিশুরা সুস্থভাবে ও শিক্ষিত হয়ে গড়ে উঠতে পারে; যেখানে আমাদের নারীরা পুরুষের পাশাপাশি শেখার সমান সুযোগ পেয়ে শিখতে পারে, কাজ করতে পারে এবং সফল হতে পারে; যেখানে আমাদের নাগরিকেরা কোনো প্রকার ক্ষতি সাধিত হওয়ার ভয় ছাড়াই তাদের অধিকার ও স্বাধীনতা চর্চা করতে পারে; যেখানে আমরা সবাই আমাদের বিভিন্ন ধর্মীয় ও জাতিগত গোষ্ঠীগুলো তাদের পরিচয় ব্যতিরেকে একত্রে ও সম্প্রীতির সাথে বসবাস করতে পারি; এবং যেখানে আমাদের উত্তরসূরীরা এই ধরণীকে ধ্বংস করার জন্য আমাদেরকে অভিশাপ দেবে না বরং এই ধরণীকে রক্ষা করার জন্য আমাদের প্রশংসা করবে।
জলবায়ু পরিবর্তন আর নিরাপত্তা, নারীর ক্ষমতায়ন, অথবা উন্নয়ন যাই হোক না কেন বিগত চল্লিশ বছর ধরে এটি প্রতীয়মান যে যখন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ একত্রে কাজ করে অসাধারণ সব অর্জন লাভ করতে পারে। এবং আগামী চল্লিশ বছরও তার ব্যতিক্রম হবে না, কারণ আমাদের অংশীদারিত্বটি এমনই যার শক্তি, সহিষ্ণুতা এবং সম্ভাবনা সময়ের সাথে সাথে বৃদ্ধি পায়।