394
Published on ডিসেম্বর 3, 2015তিনি বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সমাজের বোঝা নয়। সমাজে এক সময় তাদের ব্যাপারে গুরুতর সংস্কার ছিল। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে। মানুষ এখন তাদেরকে সমাজের অংশ বলে মনে করে।
তিনি বলেন, তাই, প্রতিবন্ধীদের উপেক্ষা করা উচিত নয়। বরং আমাদের উচিত তাদের অধিকার ও কল্যাণের বিষয়ে সংবেদনশীল ও সহানুভূতিশীল হওয়া।
প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার এখানে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ২৪তম আন্তর্জাতিক ও ১৭তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষ্য আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে প্রতিবন্ধীসহ দেশের প্রতিটি মানুষেরই তাদের অধিকার নিয়ে বাঁচতে হবে। প্রতিবন্ধীদের সংখ্যা মোটেও কম নয়। তিনি বলেন, তাই, বাংলাদেশ বিপুল সংখ্যক মানুষের কল্যাণ বিবেচনা করে দিবসটি পালন করার লক্ষ্যে জাতিসংঘের সঙ্গে যোগ দিয়েছে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বিশেষ অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ড. মোজাম্মেল হোসেন এতে সভাপতিত্ব করেন।
প্রতিবন্ধী জাতীয় ফোরামের সভাপতি সাইফুল হক এবং সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব তরিকুল ইসলাম অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘ যথাযথভাবেই এসডিজি কর্মসূচিতে প্রতিবন্ধীদের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করেছে যাতে আগামী ১৫ বছরের জন্য গৃহীত বিশেষ উন্নয়ন কর্মসূচি থেকে কেউ বাদ না পড়ে। বাংলাদেশে এ ব্যাপারে যত্নশীল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিবন্ধীদের সক্ষমতার ভিত্তিতে তাদের প্রত্যেকের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতিবন্ধী দিবসের এ বছরের প্রতিপাদ্যে ‘অন্তর্ভুক্তি’র বিষয়টি রাখা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার জাতীয় কর্মকান্ডের মূল ধারায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সম্পৃক্ত করে তাদের সহজাত মেধা ও মননের বিকাশ ঘটাতে চায় এবং এলক্ষ্যে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
তিনি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সুরক্ষায় বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা দেশে-বিদেশে অটিজম সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টিতে তাঁর কন্যা সায়মা হোসেইনের প্রয়াসের কথা উল্লেখ করে বলেন, এ বিষয়ে মানুষ এখন সচেতন। সায়মার প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের উত্থাপিত অটিজম সম্পর্কিত প্রস্তাব জাতিসংঘে গৃহীত হয়েছে এবং যা বিশ্বের আনাচে-কানাচে প্রত্যেক মানুষের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ডাটাবেজ তৈরি হচ্ছে। একজন নাগরিক হিসেবে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে প্রত্যেক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে পরিচয়পত্রও দেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়নের পাশাপাশি তাদের সহায়তার জন্য একটি ট্রাস্টও গঠিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী সারাদেশে প্রায় ৬ লাখ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধির ঘোষণা দেন। ৬০ হাজার প্রতিবন্ধী শিশু শিক্ষা বৃত্তি পাচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সেবার জন্য ইতোমধ্যে ১০৩টি কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এছাড়া তাদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় ২০টি মোবাইল ভ্যান ক্রয় করা হয়েছে। শিগগিরই আরো ১৪টি ভ্যান এ বহরে যুক্ত হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবন্ধীতা বিষয়ে আরো গবেষণার উদ্যোগ নেবে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য গঠিত ন্যাশনাল ফাউন্ডেশনের কর্মকান্ড সম্প্রসারণে একটি কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠার প্রকল্প নিয়েও কাজ চলছে।
ক্রীড়াঙ্গনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সাফল্যের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের জন্য সংসদ ভবন চত্বরে বধির ও বোবা স্কুলের স্থানে একটি ক্রীড়া প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে।
তিনি বলেন, তাঁর সরকার প্রতিবন্ধীত্বে আক্রান্তসহ সমাজের প্রত্যেক শ্রেণীর মানুষের কল্যাণে অবিরত প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মেধা বিকাশে সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে ব্যবসায়ী, কর্পোরেট সেক্টর ও বেসরকারি সংস্থাগুলো সরকারের প্রয়াসে সহায়তা করতে পারে।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের স্বাস্থ্যসেবায় বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জাম সজ্জিত ‘মোবাইল থেরাপী ভ্যান’-এর উদ্বোধন করেন। এই ভ্যান সারাদেশে চলাচল করবে। তিনি প্রতিবন্ধী শিশুদের শিল্পকর্ম প্রদর্শনের স্থান পরিদর্শন এবং তাদের মাঝে কিছু শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে পরিচয়পত্র প্রদান করেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী প্রতিবন্ধী শিশুদের পরিবেশিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।