361
Published on নভেম্বর 23, 2015তিনি বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করতে না পারলে এদেশ অভিশাপমুক্ত হবে না। এই বিচারের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ দীর্ঘদিনের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাচ্ছে। এজন্যই বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের উন্নতি হচ্ছে।’
তিনি আজ দশম জাতীয় সংসদের অষ্টম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের ভোটের অধিকার অর্জনের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পথে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ উৎসর্গকারী শহীদ এবং যারা ইজ্জত দিয়ে গেছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। ’৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক অধ্যায়।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের প্রাক্কালে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছিল। যাতে দেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে। তেমনি জাতির পিতাকেও একই উদ্দেশ্যে হত্যা করা হয়। যারা দেশের স্বাধীনতা মেনে নিতে পারেনি তাদের চক্রান্তে এবং যারা এদেশের মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা না করে হানাদার বাহিনীকে সহায়তা করেছে তাদের চক্রান্তে-ষড়যন্ত্রে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়।
তখন থেকেই দেশে হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু হয়। ওই সময় দেশে ১৯টি ক্যু হয়েছে। হাজার হাজার সামরিক বাহিনীর অফিসারকে হত্যা করা হয়। এমনো দিন গেছে, একেক রাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জোড়া জোড়া করে ১০জনকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে। ঢাকার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন কারাগারে সৈনিক অফিসারদের ফাঁসি দেয়া হয়েছে। বিচারের নামে প্রহসন করে মুক্তিযোদ্ধা সামরিক অফিসারকেও সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
৭৫’র ১৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশে প্রতি রাতে কারফিউ ছিল। রাত ১১টার পর কেউ বের হতে পারতো না। ’৭৫ থেকে ৮৬ পর্যন্ত দেশে একটা শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি বিরাজ করেছিল।
তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক সরকার বিশেষ করে যে দল দেশের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করে, ত্যাগ স্বীকার করে, সেই দলই যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে দেশের উন্নয়ন হয়। এই সরকার তা প্রমাণ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছিল। অনেকের বিচার হয়েছিল। আবার অনেকে দেশ ছেড়ে পালিয়েছিল। কিন্তু ’৭৫-এ বঙ্গবন্ধু হত্যার পর এই বিচার বন্ধ করে দিয়ে শাহ আজিজের মতো স্বাধীনতাবিরোধীকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং আব্দুল আলিম, যার হাতে শত শত হিন্দু হত্যা করা হয়েছিল। তাদেরকে জিয়াউর রহমান মন্ত্রী করেছিল।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি যারা দম্ভ করে বলতো তাদের বিচার কেউ করতে পারবে না। সেই হত্যাকারিদের বিদেশী দূতাবাসে চাকরি দিয়েছিল জিয়াউর রহমান। 'জেনারেল এরশাদ তাদের দল করার অধিকার দিয়েছিল। খুনিদের লালন, পালন, আশ্রয়, প্রশ্রয় দেয়া হয়েছিল।
তিনি বলেন, ‘আমরা ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, ৩রা নভেম্বরে জেল হত্যার বিচার এবং যে বিচারের পথ জিয়া বন্ধ করে দিয়েছিল সেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারও আমরা শুরু করেছি। রায়ও কার্যকর করতে সক্ষম হয়েছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে অপরাধ তারা ১৯৭১ সালে করেছিল সেই অপরাধের কোন ক্ষমা নেই। মা-বোনদের হানাদার বাহিনীর হাতে তুলে দেয়া থেকে শুরু করে নির্বিচারে মানুষ ও বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে। এই বিচারের মধ্য দিয়ে এবং রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে, স্বজন হারা বেদনা নিয়ে যারা বেঁচে আছে তাদের মন শান্তি পাবে যে, তারা বিচার পাচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ নিরাপদ না অনিরাপদ এনিয়ে অনেক কথা শুনতে হয়েছে। এক পর্যায়ে জোর করে বাংলাদেশে আইএস ও জঙ্গি আছে বলে ঘোষণা দেয়ার পাঁয়তারা হচ্ছিল। কিন্তু আমরা জোর দিয়ে বলেছি বাংলাদেশকে আমরা কোন জঙ্গিদের স্থান হতে দেব না। এদেশের মানুষ এ ব্যাপারে যথেষ্ট সজাগ ও সচেতন। আমেরিকার একটি সংস্থাও সম্প্রতি বলেছে, বাংলাদেশ আমেরিকার চেয়েও নিরাপদ।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশকে আমরা জঙ্গি রাষ্ট্র বানাতে দেব না। জঙ্গি বা আইএস যেন এদেশে স্থান না পায় এ ব্যাপারে সকলের সহযোগিতার আহবান জানান তিনি।
তিনি বলেন, ২০১৪ সালে নির্বাচন ঠেকানোর নামে বিএনপি-জামায়াত প্রায় দেড়শ’ মানুষকে হত্যা করেছে। কেবল নির্বাচনের দিনই ২৬ জন মানুষকে তারা হত্যা করেছে। বিএনপি নেত্রী সরকারকে ক্ষমতা থেকে না নামিয়ে ঘরে ফিরে যাবেন না বলে ঘোষণা দিয়ে নিজেই নিজেকে তার কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখেন। এরপর তিনি নিজেই ঘরে ফিরে গেছেন। কিন্তু এখনো অবরোধ প্রত্যাহার করেননি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা ৫০৮ জন মানুষকে আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে। ৬৬১ জন মানুষ তাদের আক্রমণের শিকার হয়ে আহত হয়েছে। তাদের আগুনে নিরীহ বাস ড্রাইভার, হেলপার, স্কুল ছাত্র, পরীক্ষার্থী, সাধারণ জনগণ, নিরীহ পথচারি কেউ রেহাই পায়নি। বেগম খালেদা জিয়া দেশে থেকে প্রায় তিন মাস মানুষ হত্যা করেছেন। আর বিদেশ গিয়ে নির্দেশ দিয়ে বিদেশি হত্যা করিয়েছেন। এই বিদেশী হত্যাকারী কয়েকজনকে ধরা হয়েছে। তদন্ত হচ্ছে, আসল অপরাধীরাও ধরা পড়বে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সরকারের সময়ে দেড় কোটি মানুষকে চাকরি দেয়া হয়েছে। একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের মাধ্যমে কর্মসংস্থান এবং সমবায়ের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করাসহ ঋণ বিতরণের জন্য পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক খোলা হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে দরিদ্রসীমা ১৪ শতাংশে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা নিয়ে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রতিবন্ধী ভাতা, দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের প্রাইমারি থেকে ডিগ্রী পর্যন্ত বৃত্তি দেয়া হচ্ছে। প্রাথমিকে মেয়েরা স্কুলে আসছে।
শেখ হাসিনা বলেন, এবারও বিনা মূল্যে শিক্ষার্থীদের হাতে বছরের প্রথম দিন নতুন বই তুলে দেয়া হবে।
তিনি বলেন, সরকারি চাকরিজীবীদের ১২৩ ভাগ বেতন বৃদ্ধি করা হয়েছে। বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘোষণা করে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের সুযোগ করা হচ্ছে। ১শ’টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করার পরিকল্পনা রয়েছে। এবার ৩২ বিলিয়ন রপ্তানী হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাও প্রণয়ন করা হয়েছে। বিশ্ব মন্দার সময়ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে গেছে।
উন্নয়নমূলক কাজগুলো ভালভাবে সম্পন্ন করতে দেশবাসীর কাছে সযোগিতা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাহলে দেশ বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় পরিণত হবে। সারাবিশ্ব বাংলাদেশকে এখন উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে দেখে। আমরা বিজয়ী জাতি, কারো কাছে মাথা নত করে থাকবো না। এই উপলব্ধি দেশের প্রতিটি মানুষের মধ্যে থাকা উচিত। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত জাতি কারো কাছে মাথা নত করে থাকবে না।’
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেঁচে থাকলে দেশ এতো দিনে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতো।
বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এগিয়ে যাবে। কোন ষড়যন্ত্রই আর দেশের অগ্রযাত্রাকে ঠেকাতে পারবে না। বাংলাদেশ উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে টিকে থাকবে।