‘সরকার প্রধান হিসেবে আমি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নের প্রয়োজনীয় সবকিছু করবোঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

529

Published on নভেম্বর 12, 2015
  • Details Image

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার প্রধান হিসেবে আমি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উন্নয়নে সব ধরনের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি এবং আগামীতে এ বাহিনীর আরো আধুনিকায়নের প্রয়োজনীয় সবকিছু করবো।’

শেখ হাসিনা আজ সকালে বগুড়া সেনানিবাসে সাঁজোয়া কোর সেন্টার ও স্কুলে সাঁজোয়া কোরের ১২ ল্যান্সার কোরকে ন্যাশনাল স্টান্ডার্ড (জাতীয় পতাকা) প্রদান এবং সাঁজোয়া কোর পঞ্চম পুনর্মিলনী-২০১৫ অনুষ্ঠানে ভাষণকালে একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী সাঁজোয়া কোরের পঞ্চম পুনর্মিলনী প্যারেড পরিদর্শন এবং খোলা জীপে চড়ে অভিবাদন গ্রহণ করেন।

এরপর তিনি সাঁজোয়া কোরের ১২ ল্যান্সার কোরের কমান্ডারের হাতে ন্যাশনাল স্টান্ডার্ড তুলে দেন। ১২ ল্যান্সার কোরের দক্ষতা, কঠোর পরিশ্রম, দায়িত্বশীলতা ও দেশ সেবার স্বীকৃতি হিসেবে তাদের ন্যাশনাল স্টান্ডার্ড প্রদান করা হয়।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী সেনানিবাসের শহীদ বদিউজ্জামান প্যারেড মাঠে পৌঁছলে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মুহাম্মাদ শফিউল হক তাঁকে অভ্যর্থনা জানান।

মন্ত্রিবর্গ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, নৌবাহিনী প্রধান ভাইস এ্যাডমিরাল এম ফরিদ হাবিব, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল আবু ইসরার, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জিওসি ও এরিয়া কমান্ডার, উচ্চ পদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাগণ ও কূটনীতিকবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

শেখ হাসিনা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের নিজস্ব প্রজ্ঞা, পেশাগত দক্ষতা ও কর্তব্যনিষ্ঠা দিয়ে দেশের মঙ্গলের জন্য কাজ করে যাওয়ার নির্দেশ দেন।

তিনি ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের প্রতি আস্থা, পারস্পরিক বিশ্বাস, সহমর্মিতা, ভ্রাতৃত্ববোধ, কর্তব্য পরায়ণতা, দায়িত্ববোধ এবং সর্বোপরি শৃঙ্খলা বজায় রেখে দায়িত্ব পালনের জন্য তাদের প্রতি নির্দেশ দেন।

সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের জন্য তাঁর সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৪ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতির আলোকে তাঁর সরকার জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতি এবং ফোর্সেস গোল-২০৩০ প্রণয়ন করেছে।

তিনি বলেন, উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নের লক্ষ্য এগিয়ে নিতে প্রতিরক্ষা নীতি ও ফোর্সেস গোল অর্জনের জন্য আমরা বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে তাঁর সরকার ১টি পদাতিক ব্রিগেড, ১টি কম্পোজিট ব্রিগেড, স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন, ১টি সাঁজোয়া ইউনিট, ৩টি পদাতিক ইউনিট, ২টি আর্টিলারি রেজিমেন্ট, ১টি রিভারাইন ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়ন, ২টি ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন এবং ১টি সাপোর্ট ও ট্রান্সপোর্ট ব্যাটালিয়ন প্রতিষ্ঠা ও পুনর্গঠন করেছে।

তিনি বলেন, এই উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়ন ও প্রশিক্ষণের মান যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে এনডিসি, বিপসট, এএফএমসি, এমআইএসটি ও এনসিও একডেমির মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানসমূহ গড়ে তোলা হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, পদাতিক রেজিমেন্টের উন্নয়ন ও কার্যক্রমে গতিশীলতা আনার জন্য বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টাল সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। পাশাপাশি উন্নত প্রযুক্তির অস্ত্র সংগ্রহের কার্যক্রম চলছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেনাবাহিনীর উন্নযনে সম্ভাব্য সব ধরণের কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। সিলেটে ১৭ পদাতিক ডিভিশন এবং এর অধীনে ১টি পদাতিক ব্রিগেড সদর ও ২টি পদাতিক ব্যাটালিয়ন এবং পদ্মাসেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের নিরাপত্তা ও তদারকিতে আরও ২টি পদাতিক ব্যাটালিয়ন ও ১টি ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন সমন্বয়ে নতুন ১টি ক¤েপাজিট ব্রিগেড প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এছাড়া কক্সবাজারে রামুতে ১০ পদাতিক ডিভিশনের সদরদপ্তর এবং এর অধীনস্থ ব্রিগেড ও ইউনিটসমূহ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, তাঁর সরকার সেনাবাহিনীর অপারেশনাল সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ব্যাপক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে। ইতোমধ্যে পর্যাপ্ত সংখ্যক এপিসি, এআরভি, ব্যাটেল ট্যাংক-২০০০, আরমার্ড রিকভারি ভেহিকেল, হেলিকপ্টার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সমরাস্ত্র ও সরঞ্জাম ক্রয় করেছে। একইভাবে নৌ বাহিনী এবং বিমান বাহিনীকে আধুনিক ও সময়োপযোগী করে গড়ে তুলতে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, সেনাবাহিনীর সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ এই কোরের মূল লক্ষ্য হচ্ছে যুদ্ধে শত্রু বাহিনীর দাম্ভিকতা চূর্ণ করা এবং যুদ্ধে শত্রু বাহিনীকে পরাজিত করে বিজয় ছিনিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে মিশরের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত-এর কাছ থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া ৩০টি টি-৫৪ ট্যাংক দিয়ে সাঁজোয়া কোরের শুভ সূচনা করেছিলেন।

তিনি বলেন, এ কোরে নতুন অত্যাধুনিক ট্যাংক এমবিটি -২০০০ সংযোজন করা হয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে আরও দুটি সাঁজোয়া রেজিমেন্ট গঠনের পরিকল্পনাও বিবেচনাধীন রয়েছে। এছাড়া সাঁজোয়া কোরের পুরাতন ট্যাংকগুলোকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে আপগ্রেডেশনের প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।
প্রধানমন্ত্র্রী বলেন, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য নিবেদিত প্রাণ। সাঁজোয়া কোরের সদস্য হিসেবে আপনাদের মূল্যবান যুদ্ধ সরঞ্জামগুলোকে নিয়মিত পরিচর্যার মাধ্যমে সচল রাখতে হবে। পাশাপাশি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেদের ব্যবহারিক জ্ঞানকে আরও উন্নত করতে হবে।

ন্যাশনাল স্টান্ডার্ড অর্জনের জন্য সাঁজোয়া কোরের ১২ ল্যান্সারের সকল সদস্যকে অভিনন্দন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, জাতি লাখ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে এই জাতীয় পতাকা পেয়েছে।

তিনি এই কোরের সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, জাতীয় পতাকা লাভ করে আপনারা বিরল সম্মান অর্জন করলেন।

অনুষ্ঠানটি উপলক্ষ্যে পরে তিনি এক যায়তুনের চারা রোপন করেন।

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত