টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ

1298

Published on অক্টোবর 20, 2015
  • Details Image

২০১৫ থেকে ২০২০ পর্যন্ত সময়ের জন্য প্রণীত এই পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ১ কোটি ২৯ লাখ কর্মসংস্থানের সৃষ্টির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মঙ্গলবার শেরেবাংলানগরে পরিকল্পনা কমিশনে অনুষ্ঠিত এনইসি’র সভায় এ অনুমোদন দেয়া হয়।

২০১৫-২০১৬ অর্থবছরকে ভিত্তি ধরে প্রণীত এই পরিকল্পনার মোট ৩১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগের মধ্যে ৭৭.৩ ভাগ বেসরকারি খাত এবং অবশিষ্ট ২২.৭ ভাগ আসবে সরকারি খাত থেকে। পরিকল্পনায় ৫ বছরব্যাপী বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭.৪ ভাগ।

এতে দারিদ্র্যের হার বর্তমানের ২৪.৬ ভাগ থেকে ১৮.৬ ভাগে কমিয়ে আনা এবং রফতানি আয় ৩০.৭ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০২০ সালে ৫৪.১ বিলিয়ন ডলারে বৃদ্ধির নির্ধারণ করা হয়েছে।

সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফকালে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, এবারের সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বর্তমান ও ভবিষ্যতের মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করবে। সমাজের সর্বস্তরের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে এটি প্রণয়ন করা হয়েছে।

এবারের পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পনার প্রতিপাদ্য হলো ‘প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিতকরণ, নাগরিকের ক্ষমতায়ন’।

সভায় পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম সপ্তম পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পনার উপর একটি পাওয়ার পয়েল্ট প্রেজেন্টেশন করেন। এতে বলা হয় যে প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিতকরণ, সর্বোচ্চ কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দারিদ্র নিরসনের সাথে প্রত্যেক নাগরিকের ক্ষমতায়নের বিষয়গুলো পরিকল্পনায় তুলে ধরা হয়েছে।

এতে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে জিডিপি প্রবৃদ্ধি এবং জনগণের আয় বন্টন ব্যবস্থা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জনের উপর সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এ লক্ষ্য অর্জনে অন্যতম কৌশল হবে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগে গতিশীলতা আনা। একইসাথে সর্বাধিক কর্মক্ষম জনসংখ্যাকে কারিগরি ও প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য দক্ষ করে গড়ে তোলা।

সভায় আরো জানানো হয় ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রসারের মাধ্যমে মূলধন ও শ্রমের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, রফÍানিমুখী বাণিজ্য ও ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিতকরণ এবং সবুজ প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে একটি টেকসই , সমৃদ্ধ , অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং জলবায়ু সহিষ্ণু ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ে তোলা হচ্ছে এই পরিকল্পনার উদ্দেশ্য।

পরিকল্পনা মন্ত্রী ব্রিফিংয়ে আরো বলেন,‘ সপ্তম পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পনায় গড়ে ৭.৪ ভাগ প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং দারিদ্রের হার বর্তমানের ২৪.৮ ভাগ থেকে কমিয়ে ১৮.৬ ভাগে হ্রাস ও রপ্তানি আয় ৩০.৭ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০২০ সালে ৫৪.১ বিলিয়ন ডলারে উন্নীতকরণের লক্ষমাত্রা ঠিক করা হয়েছে’।

মুস্তফা কামাল বলেন,‘সামাজিক সুরক্ষা খাতে ব্যয় জিডিপি’র ২.০২ ভাগ থেকে বাড়িয়ে ২০২০ সালে জিডিপি’র ২.৩০ ভাগে উন্নীত করা হবে। একইসাথে এবারের পাঁচ বছরে ১ কোটি ২৯ লাখ কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে ।

তিনি বলেন,‘ এবারই প্রথম গবেষণা কার্যক্রমকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে এ খাতে জিডিপি’র ০.৬ ভাগ থেকে বাড়িয়ে ১ ভাগে উন্নীত করা হবে’।

মন্ত্রী বলেন, ‘২০১৫-১৬ অর্থবছরকে ভিত্তিধরে এবারের পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পনায় ৩১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রাক্কলন করা হয়েছে। মোট বিনিয়োগের ৭৭.৩ ভাগ আসবে বেসরকারি খাত থেকে। বাকি ২২.৭ ভাগ আসবে সরকারি খাত থেকে। মোট বিনিয়োগের ৯০.৪ ভাগ অভ্যন্তরীণ সম্পদ এবং বাকি ৯.৬ ভাগ বৈদেশিক উৎস থেকে সংগ্রহ করা হবে।

মন্ত্রী বলেন, মোট বিনিয়োগ বর্তমানে জিডিপি’র ২৮.৯ ভাগ থেকে ২০২০ সালে জিডিপি’র ৩৪.৪ ভাগে উন্নীত করতে হবে। একই সাথে মূল্যস্ফীতি ২০২০ সালে ৫.৫ ভাগে কমিয়ে আনতে হবে। এজন্য ২০২০ সাল নাগাদ রাজস্ব ও জিডিপি’র অনুপাত আজকের ১০.৮ ভাগ থেকে বাড়িয়ে ১৬.১ ভাগে উন্নীত করতে হবে’।

সপ্তম পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তায়ন কার্যক্রম পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন প্রসঙ্গে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিটি খাত কার্যকরভাবে পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়নের লক্ষ্যে ৮৮টি সূচক সম্বলিত একটি ফলাফল ভিত্তিক পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন কাঠামো তৈরি করা হয়েছে। এর ভিত্তিতে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ মধ্যবর্তী ও সমাপ্ত মূল্যায়ণ প্রতিবেদন প্রণয়ন ও প্রকাশ করবে’।

মন্ত্রী বলেন, সভায় প্রধানমন্ত্রী ২০২১-২০৪০ পর্যন্ত ২০ বছর মেয়াদি প্রেক্ষিত পরিকল্পনা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন, যা ৪টি পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পনার আওতায় বাস্তবায়ন করা হবে।

সভায় জানানো হয়, ২০০৯ সালের ২৬ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সিদ্ধান্তের আলোকে বাংলাদেশের প্রথম প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০১০-২০২১) প্রণয়ন করা হয় এবং যা দুটি পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পনার মাধ্যমে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ লক্ষে ২০১১-১৫ মেয়াদে ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সপ্তম পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়।

উল্লেখ্য, অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ-এর নেতৃত্বে গঠিত ‘অর্থনীতিবিদ প্যানেল’ সপ্তম পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পনা দলিলের ধারণাপত্র প্রণয়ন করেন এবং পরিকল্পনা মন্ত্রীর সভাপতিত্বে জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটি এ ধারণাপত্র অনুমোদন করে। ধারণাপত্রের আলোকে প্রণীত খাত ও উপখাতভিত্তিক ৩০টি গবেষণাপত্র এবং প্রয়োজনীয় সামষ্টিক অর্থনৈতিক মডেলের উপর ভিত্তি করে ৫৩টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত নিয়ে দলিল তৈরি করা হয়। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট সবার মতামত গ্রহণ করে পরিকল্পনা দলিলের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়।

সভায় মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবৃন্দ এবং সচিবগণসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত